১৯২১ সালে একবার প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত আসেন মন্তেগু চেমসফডের সংস্কার পরিকল্পনার উদ্বোধনের জন্য। তৎকালীন ভারত সরকার বড়লাট ব্রিটিশ সরকারকে কথা দিয়েছিলেন, যদি প্রিন্স ভারতে আসেন তাহলে উনি এদেশে বিপুল সংবর্ধনা পাবেন। যথারীতি ভারত সরকার সংবর্ধনা দেয়ার জন্য এলাহি বাবস্থা করলেন। কিন্তু গান্ধীজীর নেতৃতে কংগ্রেস সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত গ্রহন করলে ভারত সরকার বিপাকে পড়ে যাই এবং কংগ্রেসের হাতে একটা সুযোগ আসে ভারত সরকারে সাথে গোলটেবিল বৈঠকে বসা। পণ্ডিত মদনমোহন মালব্ব তখন কংগ্রেস এবং সরকারের মধ্যে একটা রফা করার চেষ্টা করেন। এটা ছিল কংগ্রেস এর জন্য বড় সুযোগ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, এবং শ্রী সি আর দাস সহ যারা ইতিমধ্যে অসহযোগ আন্দোলনের জের ধরে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা কর্মীদের মুক্তি দাবি কারার। এমনকি সরকার আনেকটা রাজিও হয়ে গেছিল। কিন্তু গান্ধীজী এই সুযোগটি কিছু শক্ত শর্ত আরোপ করার ফলে বড়লাট সমজতার পথ থেকে পিছু হঠে। অপরদিকে বয়কট দারুন ভাবে সফল হল বটে, কিন্তু রাজনৈতিক আপোস রফার একটি দুর্লভ সুযোগ কংগ্রেস হারিয়েছিল।
মজার ব্যাপার হল, কিছু দিন পর গান্ধীজী নিজেই একটি গোলটেবিল বৈঠকের প্রস্তাব সরকারকে দেন, এবং পণ্ডিত মালব্বর আনা চুক্তির প্রায় অনুরূপ শর্তবলি আরোপ করেন। ততদিনে প্রিন্স অব ওয়ালস ভারত ছেড়ে চলে গেছেন। সরকার গান্ধীজীর প্রস্তাব সাথে সাথে খারিজ করে দেয়।
এরপর গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা দিলে কংগ্রেসের নেতাকর্মীসহ সারা দেশে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ল, আন্দোলন মুষড়ে পড়ল। এবং সরকার সুযোগ হাত ছাড়া না করে গান্ধীজী কে গ্রেপ্তার করে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে দিল। নেতাকর্মীদের মন ভেঙে গেল। গান্ধীজীর আন্দোলন তুলে নেওয়ার সিধান্ত যে সাংঘাতিক রকমের ভুল ছিল তার কোন সন্দেহ রইলো না। গান্ধীজীর কারনেই ১৯২১ সালের নির্বাচনও বর্জন করেছিল কংগ্রেস। ফলে কংগ্রেস এর বেশকিছু গুরুতপূর্ণ নেতা অখুশি ছিল গান্ধীজীর বেশ কিছু ভুল সিধান্তর উপর।
কংগ্রেসের এই দূর অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য শ্রীযুক্ত দাস কংগ্রেস কে ১৯২৪ সালে আইনসভা দখলের জন্য কংগ্রেস কে তৈরি হতে তাগাদা দিলেন। দাসের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করলেন পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেল। কিন্তু শ্রীরাজাগোপালাচারি নেতৃতে একটি গ্রুপ দাসের বিরোধিতা করল কারন তাঁদের মনে হয়েছিল গান্ধীজীর নেতৃত্ব অস্বীকার করা হচ্ছে। পুরা কংগ্রেস চরমপন্থি এবং নরমপন্থিতে বিভক্ত হয়ে গেল। কংগ্রেসকে যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করার কথা তখন কংগ্রেস নিজেরা নিজেরা কামড়াকামড়ি করতে বাস্ত।
আস্তে আস্তে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, শ্রীযুক্ত দাস এর বলিষ্ঠ নেতৃতে কংগ্রেস আবার শক্তিশালী হতে থাকল, এবং ১৯২৯ সালে কংগ্রেস স্বাধীনতা দাবি করে প্রস্তাব পাশ করে। শুরু হল কংগ্রেসের উপরে নতুন করে দমন নীতি, জেল জুলুম। অতঃপর ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ হল।
এই আইনে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এর বিধান থাকলেও গভর্নরের হাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার সংরক্ষিত করা হয়েছিল এবং জরুরি অবস্থা জারির সাথে সাথে গভর্নর প্রাদেশিক সরকারে ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারবেন। এই ধরনের বিধানের অধিনে প্রাদেশিক নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে কংগ্রেস আবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেল। মাওলানা আজাদ নির্বাচনে কংগ্রেস কে অংশগ্রহণের জন্য যুক্তি দিয়ে বলেন যে, কংগ্রেস যদি নির্বাচনে না যাই তাহলে গোলমেলে লোকেরা কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক আইনসভা দখল করে ভারতীয় জনগনের মুখপাত্র হয়ে কথা বলবে। তাছাড়া আমরা জনগনের কাছে নির্বাচনের সময় ভারতীয় রাজনীতির মুল সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারব। এই যুক্তির উপর ভরসা করে কংগ্রেস নির্বাচনে যাই এবং জয় লাভ করে।
সারকথাঃ
শ্রীযুক্ত দাস, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, পণ্ডিত মতিলাল নেহেরু, সর্দার প্যাটেল এবং গান্ধীজীর মত নেতা থাকার পরও কংগ্রেস কে বেশ কিছু রাজনৈতিক ভুল করতে দেখা গেছে, যার ফলে কংগ্রেস কে আনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছিল। কিন্তু সেই কংগ্রেসের হাত ধরেই ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস। তারপর টানা ৩ দশক এককভাবে এবং পরবর্তীতে আরও কয়কবার রাষ্ট্র পরিচালনা করার মত ইতিহাস তাঁদের থাকার পরও বর্তমান কংগ্রেস বিরোধী দল হবার জন্য অন্য দলের করুনা চাইতে হয়, তার মানে কংগ্রেস আবারো সংকটে। এটাই বাস্তবতা । সময় চিরকাল একই রকম থাকে না।
আজকে যে বি এন পি ভুল সিধান্ত নিতে নিতে, এবং নেতৃতের সংকটের কারনে খাঁদের কিনারাতে এসে ঠেকছে, তারও হয়তো একদিন ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে যদি এখনও রাজনীতির খেলাটা সঠিক বুদ্ধি দিয়ে খেলতে পারে।কারন বি এন পি যদি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে সরকার এরসাদ কে নিয়ে ধরে বান্দে বিরোধীদল করত না, এবং একজন অপেক্ষাকৃত অযোগ্য সরকার পালিত বিরোধী দল আমরা পেতাম না এবং আমার বিশ্বাস বি এন পি নির্বাচন কারচুপি হলেও একশ এর উপরে সীট পেত, এবং সেক্ষেত্রে সংসদে জোরাল ভূমিকা রাখতে পারত, এমকি দাবি আদাইয়ের জন্য সংসদ থেকে পদত্যাগ করেও সরকারকে চাপে ফেলতে পারত। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তারা দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারেনি। আমি মনে করি বি এন পির আর ভুল করার ঠিক হবে না, তাঁদের উচিৎ হবে এমনকি কারচুপির আশঙ্কা থাকলেও এই সরকারের অধিনেই ঢাকা এবং চাটগাঁও এর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়া। তারপর বিচারের ভার বাংলার জনগনের উপর ছেড়ে দেওয়া। কারন এই বাংলার জনগন দেরিতে হলেও অনন্যায় এর প্রতিবাদ করতে জানে।