সাম্যের বাংলাদেশ চাই। “কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।”
ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত অবারিত শিক্ষার সুযোগ চাই।
সবার সাধ্যের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা চাই।
আবাসনের নিশ্চয়তা চাই সবার জন্য।
নতুন কথা কিছু না,
খাদ্য,চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান এই মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে রাষ্ট্রকে।
তো রাষ্ট্রতো লোনে জর্জরিত? সব নাগরিকের মৌলিক অধিকারের নিশ্চিত করার মতো আর্থিক সঙ্গতি কি বাংলাদেশের আছে?
এটার জবাব দিতে পারবেন অর্থনিতীবিদরা। কিন্তু আমি এইটা বলতে পারি যা দুই চোখে দেখছি।
দেখতে পাচ্ছি,
সমাজের সর্বত্র বৈষম্য।
আকাশ পাতাল বৈষম্য।
মেরে কেটে
যতটুকু সম্পদ আছে
তার সুষম বন্টন যে হচ্ছে না সেটা খালি চোখে অংক না করেই বলা যায়।
আরেকটা জিনিস দেখছি দেশের সম্পদ দেশে থাকছে না। ফাটা বালতীর মত সব পানি গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে।
আরেকটা জিনিস খালি চোখেই দেখতে পাচ্ছি। কর দেয়ার ব্যবস্থাপনার অত্যন্ত ত্রুটিযুক্ত। যত আদায় সম্ভব তা আদায় করা যাচ্ছে না।
ব্যাঙ্ক ব্যবস্থাপনা প্রায় বিধ্বস্ত। ক্ষমতাশালীরা যে যার মত হরিলুটের মত লোন নিয়ে ভেগে যাচ্ছে।
আরেকটা জিনিস হচ্ছে মানুষের করের টাকায় আর বিদেশ থেকে লোন নিয়ে করা জনগুরুত্বহীন অপ্রোয়জনীয় প্রজেক্ট।
কেমন বাংলাদেশ চাই?
শক্তিশালী ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
কর ব্যবস্হাপনাকে আরো এফিসিয়েন্ট কার্যকর করা।
মানি লন্ডারিংয়ের পথ বন্ধ করা।
জনবান্ধব প্রকল্প গ্রহন করা।
বাজেটে খাদ্য শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা যাতে সব মৌলিক চাহিদার ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করা যায়, এবং তাদের উৎকর্ষতা আর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
আর কী চাই বাংলাদেশের জন্য?
আমি চাই নদীগুলি খালগুলো আবার নাব্য হবে। নদীদের উদর ভরে উঠবে মাছে।
সারাদেশে নদী পথে যাতায়াত করা যাবে যেমন এক শতাব্দী আগে যেতো।
শহরের রাস্তাগুলি ভরে উঠবে গাছে।
এদিকে সেদিকে ঐদিকে ফুটে থাকবে দৃষ্টি সুখকর ফুল।
পর্যাপ্ত পাবলিক বাথরুম গড়ে উঠবে সব ব্যাস্ত সড়ক মহাসড়কের পাশে যেন নারীদের চেপে রাখতে না হয়, পুরুষদের সেরে নিতে না হয় খোলা নর্দমায়।
শহরের ভিতর কোন প্রাইভেট কার চলবে না। শুধু গণপরিবহন থাকবে আর সাইকেল রিক্সা। যানযট শুন্য ধোঁয়া আর ভেপুমুক্ত শব্দ-দূষণমুক্ত শহর।
মানুষ প্রচুর বই পড়বে, পাড়ায় মহল্লায় ষ্টেম ক্লাব ডিবেট ক্লাব গড়ে উঠবে, মানুষ টিভিতে আর ফোনে বেশী সময় না দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে ভলান্টিয়ার হিসাবে যুক্ত হবে। ভলান্টিয়ারিসম ব্যাপারটা সমাজে বিস্তৃত করতে হবে। নেতা হিসাবে কেরিয়ার করতে চাইলে কার কত ভলান্টিয়ারিম আওয়ার সেটা বিবেচনায় আনতে হবে। শুধু নেতার জন্যই নয় সমাজের আরো ব্যাপক পরিসরে স্বেচ্ছাসেবাকে বিশেষ যোগ্যতা হিসাবে পরিগ্রহন করতে হবে।
ভিন্ন মত ভিন্ন পথ সব সময় ছিল থাকবে, সেই কারনে মনে হয় না শিক্ষা ক্ষেত্রে এক পদ্ধতির শিক্ষা প্রনয়ন করা সম্ভব, কিন্তু এই বিভিন্ন ধারার শিক্ষার মধ্যে উৎকর্ষ আর বিষয় বৈচিত্র্যে সমন্বয় আনতে হবে, যেন কারো পড়ালেখা অবমূল্যায়ন না হয়, কর্মক্ষেত্রে অথবা সামাজিক পরিসরে।
কেমন বাংলাদেশ চাই?
না, বাংলাদেশ আমেরিকা কানাডা ইউরোপ বা নিদেনপক্ষে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া হয়ে যাক, সেটা মোটেই চাইনা।
চাই বাংলাদেশ মানবিক হোক।
সাদা কালো ছোট বড় সব মানুষ সম্মানিত হোক।
শুধু মানুষ না পশুদের সাথে মানবিক হোক বাঙলাদেশ, প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সদয় হোক বাঙলাদেশ।
তরুনরা সৃষ্টিশীল, অনুসন্ধানী, দুঃসাহসিক হয়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশে। তরুনেরা এক একজন সাধক জ্ঞানতাপস হয়ে উঠবে নতুন বাংলাদেশে।
নতুন বাংলাদেশে এমনকি সামাজিক সম্পর্কগুলি নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। রাষ্ট্রে সমাজে কর্মক্ষেত্রের ইউনিটগুলিতে সম্পর্কগুলি হবে সমতলে, অনুক্রমিক নয়, সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে পারষ্পরিক নির্ভরতা আর সহযোগীতার পরিবেশ, যেখানে নেতার ভূমিকা হচ্ছে সেবকের। উচ্চমন্নতা আশরাফ আতরাফের ভেদ দূর হবে নতুন বাংলাদেশে তার জায়গায় স্থান নেবে টিম স্পিরিট। ২ শতাধিক বছরের ঔপনিবেশিক শাসনের ভূত বর্তমান সাহেব-গোলামের সিভিল প্রশাসন আর কতবার স্বাধীন হলে আমরা কাঁধ থেকে নামাতে পারব।
পুনশ্চ: কখন বুঝবেন যে আমরা অভীষ্ঠ লক্ষে পৌঁছে গেছি?
একটা সহজ কিন্তু অব্যার্থ পরীক্ষা আছে।
যখন দেখবেন পাবলিক টয়লেটগুলি চকচক ঝকঝক করছে
ঠিক তিব্বত টুথ-পাউডার দিয়ে মাজনের পর আপনার দাঁত যেমন চমকায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:০৮