সেদিন মহাসড়কে সিটি ‘করপোরেশন’ কর্তৃক তিনটি অটোরিক্সা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙ্গে ফেলাই প্রমান করে, এই রাষ্ট্রের ক্ষমতা কোন শ্রেনীর হাতে ন্যাস্ত আছে।
আর সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পর, নানা দিক থেকে ধিক্কার ধ্বনি ওঠার পর, কমপেনসেসন দেয়ার কথা বলা, পিছু হটার এই ভঙ্গী, প্রমান করে জুলাই-অগাষ্টের বিপ্লব মূল শক্তি ছিল - যা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারকে উৎখাত করে বর্তমান সরকারকে বসিয়েছে - সেই দলিত বঞ্চিত লাঞ্চিত শ্রেনী, রাজপথে যারা বারে বারে জীবন দেয় রক্ত দেয় নতুন জীবনে বুবুক্ষায়।
শ্রেণী-সংগ্রামের বারুদ ব্যবহার করে একদল ক্ষমতায় যায়, কিন্তু তারা ভুলে যায় কারা স্যালুট দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছে।
ক্ষমতায় গিয়েই তারা ফুটপাথ হকার-মুক্ত করে উচ্ছেদের মাধ্যমে, অথবা রিক্সা, অটো-রিক্সা (উপহাস করে বলে বাঙলার টেসলা) যান্ত্রিক দানবের নীচে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়; বোঝে না আইনের নামে, তারা একজনের জীবন-জীবিকা তছনছ করে দিচ্ছে; তাঁদের জীবিকার কোন অল্টারনেট ব্যবস্থা না করেই প্রশাসকেরা এটা করতে পারে কোন বিবেকের দংশন ছাড়াই, কারন তার সাপোর্টার শ্রেনী তাকে বাহবাই দেয় ‘আইনের’ রক্ষক হিশাবে।
মনে পড়ে সেই রিক্সাওয়ালার কথা, যে তাঁর রিক্সায় দাঁড়িয়ে স্যালুট করেছিল নির্ভিক, বিপ্লবী ছাত্র জনতাকে, সেই হকারকে মনে পড়ে যে ফ্রী পেয়ারা দিচ্ছিল, একজন হকার ফ্রী সিঙ্গারা দিচ্ছিল, পথশিশুরা তৃষ্ণার্ত সংগ্রামরত ছাত্র-জনতাকে পানি খাওয়াচ্ছিল। এরাই শক্তি যোগায়, এদের সমর্থনেই একটা সামান্য কোটা আন্দোলন, সর্বব্যাপ্ত হয়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।
কিন্তু শেষমেষ এঁরা কী পায় - উচ্ছেদ, অপমান, লাঞ্ছনা আর লাঠির বাড়ি ছাড়া?
ভাবছিলাম, সেই শ্লোগানটার কথা “ইয়ে আজাদী ঝুটা হ্যায়, লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়।” যে সমাজে লাখো কোটি গরীবের সম্মান নেই, গুটিকয় ভদ্রলোকের স্বস্তির জন্য, আইনের কলকাঠি নড়ে, সেই দেশে এ্যাত বার আজাদী আসলেই লাভ কী, শুধুমাত্র গুটি কতকের সুবিধাভোগী শ্রেণীরই কেবল ক্ষমতায়ন হয়, সংখ্যা গরিষ্ঠ যে কাতারে, সে কাতারেই থাকে, সমাজে তার সম্মানও বাড়ে না, টাকা-কড়িও বাড়ে না, মাটিতে নিরুপায় হতাশায় গড়াগড়ি খেয়ে আহাজারী “এইটাই কী স্বাধীন বাংলাদেশ”! হায়রে আইন, কবে তুমি আমার হবে?