somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক বাস্তবিক ব্যার্থ প্রেমিকের উপাখ্যান।

০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকেই সীমান্তের মনটা খুব খারাপ।
মোনার আবদার রাখতে কতই না পরিকল্পনা ছিল আজকের দিনটা নিয়ে।কিন্তু বৃষ্টি সব ভন্ডুল করে দিল। একটানা ৬ঘন্টার বৃষ্টি , রাস্তাঘাট সব হাটু সমান পানির নিচে। এই ভাবে কি বাসা থেকে বের হওয়া যায়।
বৃষ্টি আসার আর সময় পেল না। আজকাল সব কিছুর সাথে প্রকৃতিও সীমান্তকে নিয়ে খেলা করছে। ওকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। দমকা হাওয়া গুলো যেন কানে কানে এসে উপহাস করে বলে যাচ্ছে তোর কোন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হবে না। নে এবার সারাদিন বাসায় বসে বসে গান শোনঃ
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে পাগল আমার মন কেদে উঠে।


গতকাল সারাটা রাত কতই না পরিকল্পনা করেছে।কতই না উত্তেজনায় কেটেছে। সকাল বেলা বাসা থেকে বের হবে। মোনার কত দিনের সখ একটু ট্রেনে চড়বে। তাই এয়ারপোর্ট থেকে ট্রেনে উঠে কমলাপুর যাবে।সেখান থেকে নারায়নগঞ্জের বাসে ঊঠে সোনারগাঁ যাবে। সারাদিন সেখানে ঘুরে বেড়াবে, ছবি তুলবে, সেই ছবি গুলো এনে ফেসবুকে শেয়ার করবে। দুপুর বেলা একসাথে লাঞ্ছ করবে। পড়ন্ত বিকেলে ঢাকায় ফিরে আসবে। নাহ কিছুই হল না।তিন দিনের একটা ছুটি নিয়েছে সীমান্ত অফিস থেকে মোনাকে একটু সময় দিবে বলে। ছুটিটা নিতে বসকে বুঝাতে কতই না বেগ হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি সব উলট পালট করে দিল।


বিছানার এপাশ ওপাশ করছে সীমান্ত। ১ সপ্তাহ হল মোনার সাথে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না সীমান্তের। ছোট একটি আবদার ছিল শুধু মাত্র মোনাকে একটু ইউনিভার্সিটি থেকে নিয়ে আসবে সীমান্ত যাতে সারাটা পথ মোনা সীমান্তের কাধে মাথা রেখে বাসায় ফিরতে পারে। কিন্তু তা রক্ষা করতে পারেনি সীমান্ত। ফলাফল গত সাতটি দিন মোনা একটু হাসেনি, ঠিকমত কথাটাও বলেনি সীমান্তের সাথে।
মেয়েদের মন যে কি অনেক সময় ক্ষুদ্র কারনে তারা যে এত সেন্টিমেন্টাল হয়ে যায়।
ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ নয় সীমান্তের। কিন্তু কি করা গত সাত দিনে সে বুঝেছে মোনা তার জীবনে কতটা জায়গা জুড়ে আছে।

প্রতিটা সেকেন্ড কি এক অসস্তিতে কেটেছে। কাজে ঠিকমত মন দিতে পারছে না। হিসাব নিকাশে বেশ কিছু ভুল করেছে ফেলেছে। এই জন্য বস ঝাড়ি ও দিয়েছে। এই ভাবে চললে চাকরিটাই চলে যেত। সবে মাত্র নতুন জয়েন করেছে। বেতনটা একটু বাড়লে মোনাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে। সংসার জীবন শুরু করবে। ছেলের মেয়ের বাবা হবে। নাম ও ঠিক হয়ে গেছে ছেলে হলে আরাবী আর মেয়ে হলে আরিবা। মোনার ছেলে চাই আর সীমান্তের মেয়ে। এই নিয়ে কতই না তাদের মাঝে খুনশুটি হয়েছে। এটাই বোধহয় ভালবাসা।
সকাল ১০ হয়ে যাচ্ছে এখনও মোনার কোন খবর নাই। ফোনটাও বন্ধ রেখেছে। কি যে হল ওর। দিনদিন ও খুব বদলে যাচ্ছে। অথচ এই মোনাই দিন রাত তাকে ফোন দিয়ে অস্থির করে ফেলত। সকালে ঘুম থেকে সীমান্তকে ফোন করাই ছিল ওর প্রথম কাজ। অথচ সেই মোনা সকাল ১০ হয়ে গেল তবুও কোন ফোন দিচ্ছে না।
দেখতে দেখতে তিটি বছর কেটে গেল, অথচ মনে হয় এইত সেই দিন মোনার সাথে পরিচয় হয়েছে। আসলে আনন্দের মুহুর্ত কেটে যায় খুব দ্রুত। আর কস্টের মুহুর্ত গুলো পার কচ্ছপ গতিতে। এটাই বোধহয় রীতি হয়ে দাড়িয়েছে। রাস্তায় চলতি পথে মোনাকে প্রথম দেখা তারপর তার পিছু পিছু তার বাসা পর্যন্ত যাওয়া। দুই দিন পর প্রপোজ করা। মোনার সম্মতি পেতে প্রেমের শুরু তারপর মনের মিলন। সর্বশেষ দেহের ও মিলন। অথচ এরই মধ্যে তিনটি বছর কেটে গেল। সত্যি কি সেলুকাস ব্যাপার ভাবাই যায় না।

দুপুর ১ টা বেজে ৩০ মিনিট। এখন মোনার কোন ফোন নেই,ব্যাপার কি? অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে মোনাকে খুব চিন্তিত আছে। ওর নাকি খুব প্রস্তাব আসছে। গুনে গুনে ৮ টি প্রস্তাব ফিরিয়েছে। ফিরাবে না কেন একে যে কয়টা প্রস্তাব এসেছে তাদের ছেয়ে সীমান্তই উত্তম পাত্র। তার উপর তিন বছরের প্রেম। সব কিছুই হয়েছে.................... তাদের মাঝে হয়েছে খালি বিয়েটাই বাকি।

ভাল কথা গতকাল মোনা বলেছিল ওর নাকি কি একটা প্রস্তাব এসেছিল আজ নাকি তারা দেখতে আসবে। আচ্ছা মোনাটা কি কুরবানি হাটের গরু, যার ইচ্ছে দেখবে পছন্দ হলে নিয়ে যাবে। আশ্চর্য কতবার বলেছি তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ের কাজ এগিয়ে নিয়ে আসি। কিন্তু দিলে না। বারবার এক উত্তর আগে ভাল উপার্জন করতে হবে, ভাল পোস্টে চাকরি করতে হবে। তারপর বাবা মার সাথে কথা। আচ্ছা মোনা কি এটা কোন কথা বলল?? চাকরির কাছে প্রেম টাই ছোট করে দিল। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে একাউন্টের চাকরি খারাপ কিসে। তবু ওর কথা ব্যাঙ্কে চাকরি নিতে হবে। আশ্চর্য এটা কোন চাওয়া হল??
তাই হাজার ও ভাবনা সীমান্তের মাথা জুড়ে। ভাবনায় ছেদ পড়ল মোবাইলের রিং টোনে। হাতে নিতেই দেখে একটি মেসেজ, তাও আবার মোনার নাম্বার থেকে।
মেসেজ টি ওপেন করতেই তাতে লেখাঃ

“Sorry Shimanto , akTu age amar biye thik hoye geche. Cele govt.doctor. Baba ei biyete khub khusi. Tai tumi amake vule jeo. Ekta sundori meye dekhe biye kore nio.”

মেসেজটি পড়তেই সীমান্তের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা।
শুধু নিজের মনের কাছে উত্তর খুজে বেড়ায় তবে কি মোনা আমাকে ব্যবহার করতেই প্রেমে সম্মতি দিয়েছিল?




সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×