
কুরআনকে বিশ্বাস করা হয় স্রষ্টা প্রদত্ত বিধান সংবলিত পুস্তক, যার একটি শব্দও মানবরচিত নয়। যখন কোন পুস্তককে স্রষ্টার বলা হয় তখন সে পুস্তকের মান কত উচুতে হওয়া উচিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।আমি লেখাটির সংক্ষিপ্ততার স্বার্থে স্রষ্টার পুস্তকে কি কি গুনাবলী থাকা বাঞ্চনীয় তার সবগুলি নিয়ে আলোচনার না করে মাত্র একটি দিক নিয়ে আজ এখানে আলোচনা করবো।সে দিকটি হল-
আইনের একটি প্রধান ও মৌলিক বৈশিষ্ট হল-আইনটি হবে সুস্পষ্ট,দ্ব্যর্থহীন এবং ক্লিয়ার-কাট।
প্রথমে দেখি একটি মানবরচিত আইনের দৃষ্টান্ত:
ব্যংকের জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে ব্যংকগুলোকে যে নির্দেশনা সরকার দিয়েছে তার থেকে একটি আইনের একটি খন্ডাংশ হল নিম্নরুপ:
’ব্যংককে গ্রাহকের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য নিতে হবে।
পূর্নাঙ্গ বলতে গ্রাহকের বা সুবিধাভোগির পরিচিতি যাচাইকল্পে প্রয়োজনীয় সকল তথ্যের সন্নিবেশনকে বুঝাবে।উদাহরণস্বরুপঃগ্রাহকের নাম ও বিস্তারিত ঠিকানা,ব্যংক হিসাব নাম্বার, পাসপোর্ট/জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধনসনদ/গ্রহনযোগ্য পরিচিতমুলক ছবিযুক্ত আইডিকার্ড, ফোন/মোবাইল নম্বর ইত্যাদি।
সঠিক (Accurate)বলতে পূর্নাঙ্গ এরুপ তথ্যকে বুঝাবে যার সঠিকতা যাচাই করা হয়েছে।
পর্যালোচনা:
প্রথম লাইনে আইনটি অতি সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে।এর পর আরো সুস্পষ্টতা ও দ্ব্যার্থহীনতার স্বার্থে আইনটির মৌলিক নির্দেশনাকে (সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ) ব্যখ্যা করা হয়েছে যাতে করে যে যেমন ইচ্ছা ব্যখ্যা করে মতবিরোধ তৈরি না করে। ’সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ’ শব্দদ্বয় সহজ বাংলা শব্দ।ভাষা এমনই জিনিস যার প্রত্যেক শব্দকে বিভিন্নভাবে ব্যখ্যা করা সম্ভব।বহু মানুষ, বহু মত ও ব্যখ্যা সম্ভব।
এখানে আরেকটি কথা উল্লেখযোগ্য যে মানবরচিত আইনের কোন শব্দের অর্থ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সে মতবিরোধ দূরীকরনার্থে আইন রচয়িতার কাছ থেকে ব্যখ্যা নেয়া সম্ভব।
এবার কুরআনের আইনের দৃষ্টান্ত দেয়ার আগে আইন সুস্পষ্ট হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ব্যপারে দু’টি কথা বলা প্রয়োজন বোধ করছি:
আইন এত সুস্পষ্ট করা কেন প্রয়োজন:
প্রত্যেক আইনের কিছু উদ্দেশ্য থাকে।সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের স্বার্থে আইনটি অমান্যকারীর জন্য শাস্তির বিধানও থাকে।কোন আইনের কোন শব্দের অস্পষ্টতার কারনে যাদের জন্য আইন করা হয়েছে তারা আইনের ভিন্ন অর্থ গ্রহণ করলে আইনের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়।আইন প্রনেতা চাইলেন একটি আর যাদের জন্য আইন করা হল তারা বুঝল আরেকটি।দোষটা কার? নিশ্চয়ই আইন প্রনেতার,নয় কি? আপনি যাকে কোন কিছু করতে আদেশ করছেন তাকে আপনার আদেশ সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনারই।এর আগে কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের কোন অধিকারও আপনার নেই।
আইনের অস্পষ্টতাহেতু দলাদলি ও বিবেধ হলে দায়দায়িত্বও আইন প্রণেতার। কারন তিনি পরিস্কার করে দেননি তিনি কোন শব্দ দ্বারা কি বুঝিয়েছেন।
এবার আসি কুরআনের আইনের ব্যপারে:
আল কুরআনের আয়াতকে যেহেতু দাবী করা হয় স্রষ্টার, সুতরাং এর যে কোন নিরপেক্ষ পাঠক একে মানুষের রচিত আইনের চেয়ে গুনগতভাবে হাজার হাজার গুন উচ্চতর পাবে এমন প্রত্যাশা নিয়েই পাঠ শুরু করার কথা।সুস্পষ্টতার দিক থেকেও এটা হবে অকল্পনীয়ভাবে সুস্পষ্ট এবং ভাষার সম্মোহনী শক্তিও থাকবে অসাধারন।মানবরচিত আইন ও স্রষ্টার আইনের ক্ষেত্রে একজন নিরপেক্ষ পাঠ যে সাধারন কথাগুলো বিবেচনায় নিতে পারে সেগুলো হল:
১. ভাষা একটি জটিল বিষয় যার প্রায় প্রতিটি শব্দ বিভিন্ন অর্থের সম্ভাবনা রাখে যার কারনে মানুষ আইনের প্রতিটি শব্দকে স্পষ্ট করার প্রয়োজন বোধ করে।
আর স্রষ্টা হলেন সকল দূর্বলতার উর্ধে।যেহেতু তিনি মানুষের জন্য বিধান দিবেন তিনি মানুষের ভাষাকে এসব জটিলতা থেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম।অথবা ভাষার জটিলতা সত্ত্বেও তিনি এ জটিল ভাষা দ্বারাই সুস্পষ্ট আইন দিতে সক্ষম। কারন তার অক্ষমতা বলে কিছু নেই।
২. ভাষা এমনিতেই জটিল। যদি তা ভাষান্তরিত হয় তা হলে এর জটিলতা তথা অর্থের বিভিন্নতা আরো বেড়ে যায়।যদি স্রষ্টা মানবজাতীর জন্য কোন বিধানই দিতে চান তিনি সমগ্র মানব জাতীর জন্যে একটি ভাষা সৃষ্টি করার কথা যাতে সে একভাষায় আইন তৈরি হলে সমগ্র বিশ্বের মানুষ সহজে বুঝতে পারে এবং কোনরুপ সংশয়, দ্ব্যর্থতা ও মতবিরোধ তৈরি না হয়।
কুরআনের আইনের কতিপয় দৃষ্টান্ত:
১. কুরআনে সকল কিছুর বর্ণনার দাবী (সুরা নাহল-আয়াত ৮৯):
সকল কিছু বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা পরিস্কার করে বলা হয়নি। সকল কিছু বলতে পৃথিবীর সকল প্রজাতীর প্রাণীর নাম, সকল দেশের নাম ইত্যাদিও বুঝায়। যদি সকল অর্থ ইসলামের সকল বিধান বুঝায় তাহলেও ইসলামের সকল বিধান তো দুরের কথা ইসলামী আইনের মাত্র ১০% কুরআনে পাওয়া যায়।
কুরআন সকল বিধানের দাবীদার অথচ সকল বিধান নেই যা কুরআনের স্ব-বিরোধীতা। যা প্রমান করে কুরআন মানব রচিত।
২. সুদ হারাম অথচ সুদের কোন সংজ্ঞা দেয়া দেয়া হয়নি (সুরা বাক্বারা-২৭৫)
৩. চোরের হাত কাটতে হবে: কিন্তু পরিস্কার করা হয়নি কোন চোরের কতটুকু হাত কাটতে হবে। কলম চুরি করলেও কি হাত কাটতে হবে।যদি কলম চুরি করলে হাত কাটা না হয় তা কুরআনের আয়াতেরে আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।(সুরা মায়েদা-৩৮)
৪. তালাকপ্রাপ্তা তিন কুরু অপেক্ষা করবে। আরবী ভাষার এ কুরু শব্দের দু’টি অর্থ হয়-১. হায়েজকালীন সময় ১. দু’হায়েজের মধ্যেবর্তি সময়। কুরআন পরিস্কার করেনি যে কুরু বলতে দু’অর্থের কোনটি গৃহীত হবে।(সুরা বাক্বারা -২২৮)
কুরআনের প্রায় সকল বিধানই এরুপ অস্পষ্ট।অথচ কুরআন সুস্পষ্ট হওয়ার দাবীদার-যা স্ববিরোধী।আপনি যখন এ সকল অস্পষ্টতার কথা বলবেন তখন উত্তারিধাকারীভাবে পাওয়া ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বলবে যে এগুলোর ব্যখ্যা বা জবাব নিম্নোক্ত ৩ টিতে পাওয়া যাবে:
১. হাদিস ২. ইজমা ৩. ক্বিয়াস
অর্থ্যাৎ কুরআন মানবজীবনের মাত্র ১০% বিধান দিয়েছে, তাও আবার উপরোক্ত ৩ টির উপর পুরাই নির্ভরশীল।এ ৩ টি আবার নির্ভরযোগ্য নয়। সকল ইসলামি বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেন যে দু’চারশ নয় বরং লক্ষ লক্ষ হাদিস নবীর নামে রচিত হয়েছে।এসব জাল হাদিস থেকে সঠিক হাদিস বাছাইয়ের জন্য কিছু পদ্ধতি বের করা হয়েছে। সত্যে বলতে কি এর কোনটিই দ্বারা কোন হাদিস জাল না সঠিক সে ব্যপারে ১০০% নিশ্চিত হওয়া সম্ভব নয়।
ইজমা মানে ঐক্যমত । প্রকৃত পক্ষে ১০০% ঐক্যমত বলে কোন বিধান নেই বললেই চলে । আর কিয়াস । যে বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে কোন সমাধান পাওয়া যায় না সে বিষয়ে কুরআন-হাদিস বিশেষজ্ঞগন যে সিদ্ধান্ত বা সমাধান দেন সেটিই কিয়াস বলে পরিচিত। অতএব কুরআন ছাড়া বাকি ৩ টির নির্ভরযোগ্যতা নেই।
তাহলে কি দাড়াল।স্রষ্টার আইন কোথায়? স্রষ্টার আইনের মান এতই নীচ।
যারা কুরআনকে স্রষ্টার বিধান হিসাবে বিশ্বাস করে তারা স্রষ্টাকে মুলত এত নীচ মনে করে স্রষ্টাকেই খাটো করে।
আমার স্রষ্টা এর চেয়ে অনেক অনেক বড় ও মহান।
রেফারেন্সে উল্লেখিত আয়াতগুলো নিম্নে তুলে ধরা হল:
১. কুরআনে সকল কিছুর বর্ণনার দাবী:
The analysis above refers to the 89th verse of chapter 16 (sūrat l-naḥl):
Sahih International: And [mention] the Day when We will resurrect among every nation a witness over them from themselves. And We will bring you, [O Muhammad], as a witness over your nation. And We have sent down to you the Book as clarification for all things and as guidance and mercy and good tidings for the Muslims.
২. সুদ হারাম অথচ সুদের কোন সংজ্ঞা দেয়া দেয়া হয়নি:
The analysis above refers to the 275th verse of chapter 2 (sūrat l-baqarah):
Sahih International: Those who consume interest cannot stand [on the Day of Resurrection] except as one stands who is being beaten by Satan into insanity. That is because they say, "Trade is [just] like interest." But Allah has permitted trade and has forbidden interest. So whoever has received an admonition from his Lord and desists may have what is past, and his affair rests with Allah. But whoever returns to [dealing in interest or usury] - those are the companions of the Fire; they will abide eternally therein.
৩. চোরের হাত কাটতে হবে: কিন্তু পরিস্কার করা হয়নি কোন চোরের কতটুকু হাত কাটতে হবে। কলম চুরি করলেও কি হাত কাটতে হবে।যদি কলম চুরি করলে হাত কাটা না হয় তা কুরআনের আয়াতেরে আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।
the 38th verse of chapter 5 (sūrat l-māidah):
Sahih International: [As for] the thief, the male and the female, amputate their hands in recompense for what they committed as a deterrent [punishment] from Allah. And Allah is Exalted in Might and Wise.
৪. তালাকপ্রাপ্তা তিন কুরু অপেক্ষা করবে। আরবী ভাষার এ কুরু শব্দের দু’টি অর্থ হয়-১. হায়েজকালীন সময় ১. দু’হায়েজের মধ্যেবর্তি সময়। কুরআন পরিস্কার করেনি যে কুরু বলতে দু’অর্থের কোনটি গৃহীত হবে।
the 228th verse of chapter 2 (sūrat l-baqarah):
Sahih International: Divorced women remain in waiting for three periods, and it is not lawful for them to conceal what Allah has created in their wombs if they believe in Allah and the Last Day. And their husbands have more right to take them back in this [period] if they want reconciliation. And due to the wives is similar to what is expected of them, according to what is reasonable. But the men have a degree over them [in responsibility and authority]. And Allah is Exalted in Might and Wise.
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



