somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওয়েটিং রুমে অনেকক্ষণ ধরেই বসে আছি আমি একা। আধঘণ্টা তো হবেই।আশ্চর্য ব্যাপার! ভৈরব বাজারের মত ব্যস্ত স্টেশনের ওয়েটিং রুমে আর কেউ নেই।হোক না প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার! তাতে কি?
আজকের বিকালটা অবশ্য চুপচাপ কোথাও বসে থাকার মত নয়।বৃষ্টি হবে হবে ভাব।হালকা বাতাস বইছে বাইরে।মহানগর গোধূলি আজকেও অনেক লেট করবে।যাত্রীরা সব বাইরে হাটাহাটি করছে।
কাপলগুলো প্ল্যাটফর্ম ধরে হাঁটছে আর ফিসফিস করে কথা বলছে হয়তবা অকারণেই হাসছে তারা।
আমার নিজের যে বসে থাকতে ভাল লাগছে তা নয় বসে রয়েছি অনেকটা চাপে পড়ে।বাথরুম করা দরকার। একবার ঘুরে বমি করার হাত থেকে বেচে এসেছি।আমরা এখনও সভ্য হতে পারলাম না। বাথরুম সেরে নোংরা করে রাখতেই পছন্দ আমাদের।কাজটা শেষ তো দায়িত্বও শেষ।কমপ্লেন করে লাভ হবে না কিছুই তা আমি ভাল করেই জানি তাই কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছি।ট্রেনে উঠেই না হয়.....

চাপ অবশ্য চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলছে।একটা সিগারেট ধরালাম। টেনশন কমানো দরকার।
একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না। ইদানীং দাম বাড়ানোর পর থেকে বেনসন নকল হল কিনা কে জানে! কোনও কোনও প্যাকেট থেকে সিগারেট টানলে কেমন জানি তিতামত লাগে। একদম নতুন প্যাকেট খুললেও।আমার কয়েক ফ্রেন্ডও এমন কথা বলল। এদেশে আসলে সবই সম্ভব। হয়ত বেনসনও নকল করা হয়েছে।অর্ধেকটা টেনে বিস্বাদ সিগারেটটা ফেলে দিব ভাবছি এমন সময় পাশ থেকে একজন ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠল, ভাইজান ফেলার আগে একটা টান দিতে দিয়েন আমায়।
এক সিগারেটখোর আরেক সিগারেটখোরের প্রতি ভালই মহব্বত পোষণ করে আমি আবার এদিক থেকে এককাঠি সরেস।সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আরেকটি নতুন সিগারেট দিয়ে দিলাম লোকটাকে।
লোকটা অবাক হয়ে তার বিরক্তিকর ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল পুরোটা আমায় দিয়ে দিলেন!
হু, আপনার জন্য।
থ্যাংকস।
আমি কথা বাড়াতে চাচ্ছিলাম না লোকটার সাথে।ময়লা পোশাক পরা ইয়ালম্বা নাক ও তার চেয়ে বিরক্তিকর ফ্যাসফ্যাসে গলার কারো সাথে স্বাভাবিক অবস্থাতেই কথা বলার আগ্রহবোধ করার কথা নয় আমার।তাছাড়া লোকটার চোখ দুটি একদম ভাল লাগে নাই আমার। লাল টকটকে।সম্ভবত গাজা-টাজা খায়। আর না খেয়ে করবেই কি? সরকার সিগারেটের দাম বাড়িয়ে বাড়িয়ে জিনিসটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে যে এরচেয়ে এখন সস্তাতে গাজাই পাওয়া যায়।
দশ টাকায় এক পুরিয়া সাথে এক সিগারেট মিশালে ১৭ টাকায় দুই স্টিক। চমৎকার! এই হারে সিগারেটের দাম বাড়া অব্যাহত থাকলে আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যেই সব বেনসনখোর গাজাখোর হয়ে যেতে পারবে।

মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর জন্য ব্যাগ থেকে একটি বই বের করলাম। আর্মেস্তোর সংকলনে“ওয়ার্ল্ড অব মিথস”।আগেও অসংখ্যবার পড়া তারপরও শুরু করলাম। লক্ষ্য করলাম লালচোখওয়ালা আমার বইটার দিকে থাকিয়ে আছে। লোকটাকে অবশ্য দোষ দেয় না। বাঙালি জাতি হিসাবে খুবই ভাল। কেউ একজন বই পড়ুক আর খাতাই দেখুক সাথের লোক ভিড় করে দেখবে কি করছে ভদ্রলোক। আমরা পরস্পরের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশ্বাসী তাই প্রাইভেসি বলতে যে কিছু একটা আছে তাতে আমরা চরম অবিশ্বাসী।
দুয়েকটা পাতা উল্টাচ্ছি পাল্টাচ্ছি এমন সময় লোকটি বলল, পারস্য পুরাণ আসলেই চমৎকার।
একটু নড়েচড়ে বসলাম আমি। এই নোংরা পোশাকের পাগল মত দেখতে লোকটা কি এই বই পড়েছে নাকি?
সোহরাব-রুস্তম এর জন্য পারস্য পুরাণ এর গল্প অবশ্য সবারই জানা তবু এই বই এ পারস্য পুরাণ এর গল্প আছে তা এই লোক জানে ভেবে কিছুটা অবাক হলাম।
লোকটা তার সেই বিরক্তিকর গলায় বলল, আমার অবশ্য মিথরা ও হায়োমার গল্প খুব ভাল লাগে।
এবার আমি উৎসুক হলাম লোকটার প্রতি। পারস্য পুরাণ সম্পর্কে ভাল ধারনা না রাখলে এই দেবতাদের নাম তো জানার কথা নয়।
কথা বলার মত কাউকে পাওয়া গেছে ভেবে লোকটার দিকে ফিরে বললাম, তাই?
হুম। তবে পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লাগে আমার ইনকা পুরাণের গল্প।
হঠাৎ করেই কথা ঘুরাল লোকটি বলল, আচ্ছা আপনি ভূত,প্রেত,জীন এসব বিশ্বাস করেন?
একজন আস্তিক হিসাবে জীন বিশ্বাস না করে তো আমার উপায় নেই তবে ধর্মগ্রন্থের সব কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে আমি আগ্রহী না।জীন ভূত থাকলে থাকতে পারে তবে আমি এসব নিয়ে আগ্রহী না।
তাই বুঝি?
হুম।কেন আপনি বিশ্বাস করেন নাকি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভদ্রলোক বলল, না করে উপায় কি?
কথাটা বলেই যেন বিষন্ন হয়ে গেল লোকটা। চোখদুটো আরও লাল আরও অশান্ত।
আমি বললাম, দেখুন কখনো যদি এসব কিছু দেখি তাহলেই শুধু বিশ্বাসে রাজী আমি এর আগে নয়।
তাই নাকি? দেখতে চান বুঝি?
এবার মেজাজটা গরম হয়ে গেল আমার। লোকটা কি আমাকে বেকুব পেয়ে গেছে নাকি!
বিদ্রুপভরা কণ্ঠে বললাম, মনে হচ্ছে আপনি ভূত,প্রেতের বাড়িঘর দেখে এসেছেন। আমি বললেই আমাকে নিয়ে বেড়াতে চলে যাবেন সেখানে।
লোকটা আমার বিদ্রূপকে পাত্তা না দিয়েই বলল, ভাইরে গত ১০টা বছর ভার বয়ে চলছি আর আপনি বলছেন দেখেছি কিনা!
তা সেই একটা কিছু কি জীন,ভূত নাকি আটার বস্তা? বলেই হেসে ফেললাম আমি।
লোকটা আমার দিকে চুপচাপ চেয়ে রইল। করুন চোখে। আমি কিছুটা লজ্জিত হয়ে পড়লাম।
পরিবেশ হালকা করার জন্য বললাম, ভাই আমি এসব বিশ্বাস করি নাতো তাই....
একথা বলার পরপরই আমি শুনব নাকি শুনব না তার পাত্তা না দিয়েই লোকটা একটানা বলতে লাগল-

শুনুন তাহলে।তখন আমি যুবক। খুব বই পড়ার অভ্যাস।এন্টিক বই খুঁজে বেড়াই।একবার পুরানো কাগজ বেচে এমন এক দোকানে বেশ কিছু পুরানো খাতাপত্রের সাথে একটি বই খুঁজে পেলাম। অনেক পুরানো তা দেখলেই বুঝা যায়। এত পুরানো বই এর আগে আমি কখনই দেখি নি। বইটি ফার্সি ভাষায় লেখা।বই এর মাঝে মাঝে একাধিক পৃষ্টাজুড়ে ক্রস আকৃতিতে ঘরের মত নকশা আকা।ফার্সি আমি বুঝতাম না কিন্তু এই বই পড়ার এমন নেশায় আমায় ধরল যে ফার্সি কিছুদিনের মধ্যেই শিখে নিলাম। তারপর একদিন শুরু করলাম বইটি পড়া।
নাম বেশ অদ্ভুত। “যেভাবে করবেন জয়”। লেখকের কোনও নামগন্ধ নাই। কবে ছাপা তারও কোনও চিহ্ন নাই।
কয়েক পাতা পড়েই চরম বিরক্ত হয়ে গেলাম আমি। মেজাজটা আগুনের মত গরম হয়ে গেল আমার।
বই জুড়ে শুধু কিভাবে প্রেতাত্মাদের বশ করতে হবে তার বিবরণ লেখা। এত কষ্ট করে ফার্সি শিখলাম এমন ফালতু জিনিস শিখার জন্য? এসব নিয়ে তো অজস্র বই বাংলা ও আরবিতেই আছে। যে জিনিসটাই নাই তাকে আবার বশ করা! মানুষ যে কত ফালতু হয়! ভাবলাম আমি। বইটা ফেলে রাখলাম টেবিলে। বুকশেলফে রাখারও ইচ্ছা হল না আমার।
বই টা ছুড়ে দিলেও বই আমাকে ছাড়তে চায়নি।রুমে ঢুকলেই চোখে পড়ে এই বই। যেন নাছোড়বান্দার মত বলতে চায় আমাকে পড়, আমাকে পড়!
ঐ সময় আমার মানসিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার ছিল না। কিছু কারণে আমি খুব বিষন্নতায় ভুগতাম। যাই হোক একাকী সময় পার করার জন্য একদিন আবার বইটি পড়া শুরু করলাম।
মজার ব্যাপার হল জীন,ভূত নামানোর জন্য এই বই এর নিয়ম একেবারেই আলাদা।সাধারণত দেখা যায় ভূত,প্রেতের সাধনার জন্য কুমারী মেয়ের পিরিয়ড কালীন রক্ত,পশু বলি,শশ্মানঘাটের গাছ গাছড়ার শিকড়,মাথার খুলি এসব ব্যবহার করতে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এই বই এর কোথাও ভায়োল্যান্স জাতীয় কিছু নেই।পুরো বই এ প্রেতাত্মা,জীন এসব নামানোর পদ্ধতি আবর্তিত হয়েছে নানা ধরনের ফুল ও গন্ধদ্রব্য নিয়ে।জীন নামানোর জন্য একধরনের ফুল,পরী নামানোর জন্যই আরেকধরনের আবার প্রেতাত্মা নামানোর জন্যই আরেকধরনের ফুল ও গন্ধদ্রব্যর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল পরীকে বশ করা ও তাকে বিয়ে করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কয়েক পাতা জুড়ে।আমার মাথায় শয়তানি খেলে গেল। ভাবলাম মাঝে মাঝে তো শুনি কামেল পুরুষরা পরীদের বিয়ে করে আমিও নাহয় সেই চেষ্টা করব। যদি আসলেই কিছু হয় তো হল নাহলে বাদ। এমনিতেও তো চুপচাপ বাসায়ই বসে থাকি। বরং পরীজাতীয় কিছু যদি আসলেই থাকে তবে একটা পরীকে বশ করতে পারলে ভোগটোগ করে পরে ছেড়ে দিব।
কাজে নেমে দেখলাম ব্যাপারটা মারাত্মক কঠিন।বিচিত্র সব ফুলের নাম লেখা। যাদের বেশীরভাগই আমি তো দুরের কথা আশেপাশের কেউই চিনে না বা নাম শুনেনি। এর চেয়ে বরং রক্ত খুলি এসবই সহজ ছিল বলে আমার ধারনা। আমার মাথায় তখন এসব ফুল ঢুকে গেল। পাগলের মত এখানে সেখানে ফুল খুঁজি। ফুল খুঁজতে পাহাড়ে পর্যন্ত ছুটে যাই। কাউকে বলি না আমার উদ্দেশ্য। আস্তে আস্তে একটা দুটা করে ফুল এর সন্ধান পাওয়া শুরু হয়। তারপর বছর তিনেক পর একদিন সবগুলো ফুল এরই সন্ধান পেয়ে যাই আমি। ততদিনে মানুষের কাছে আমি বদ্ধ পাগল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছি।
তারপর একদিন! অবশেষে একরাতে আমি বসলাম সাধনায়। সারারাত বসে রইলাম। বই এ লেখা মন্ত্র জপলাম।ফুল সাজালাম, সুগন্ধি পোড়ালাম কিন্তু হল না কিছুই।হতাশায় ছেয়ে গেলাম আমি। বুঝলাম এক মিথ্যা স্বপ্নের পিছনে অযথা এতদিন ছুটেছি আমি। হঠাৎ করেই তখন আমার বই এ ক্রস দিয়ে আকা নকশাগুলোর কথা মনে পড়ল। আবার শুরু করলাম বই পড়া। বুঝলাম ফুলগুলো দিয়ে বই এ আকা নকশা বানিয়ে মাঝখানে বসতে হবে আমায়।
পরের রাত শুরু করলাম আবার।ঘন্টাখানেক পরেই ঠের পেলাম ঘরের পরিবেশ কেমন জানি বদলে যাচ্ছে। কিছুটা উষ্ণ হয়ে যাচ্ছে রুম।ফুল ও অন্যান্য সুগন্ধির গন্ধ ছাপিয়ে আরও মিষ্টি পাগল করা কিছু একটার সুভাষ ঠের পেলাম আমি। চোখ বন্ধ রেখেই একনাগাড়ে মন্ত্র জপতে লাগলাম আমি।বুঝলাম ঘরে আর কেউ এসেছে।চোখ খুলে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এত সুন্দর নারী আমি আমার সারাজীবনে দেখি নাই। বুঝলাম আমি সফল! পেয়েছি আমি তাকে পেয়ে গেছি!
আমার মাথায় আবার শয়তানি বুদ্ধি খেলে গেল। ভাবলাম এই পরীকে আমি ব্যবহার করব। শুধু সম্ভোগেই নয় টাকা পয়সা ধন সম্পদ ও আনাবো তাকে ব্যবহার করে। তারপর কাজ শেষ হলে ছুড়ে ফেলব ওটাকে। তখন প্রতিরাতেই আমি ওকে ডেকে আনি। শেষরাতে বিদ্ধস্থ আমাকে রেখে চলে যায় সে। কি যে সুখ বলে বুঝানো যাবে না।

মাসখানেক পর চিন্তা করি এবার কিছু ধন দৌলত আনাবো তারপর একটা মিষ্টি সুন্দর দেখে মেয়ে বিয়ে করে ফেলব। দরকার নেই আর ওটাকে।
কিন্তু তখন আমি ঠের পেলাম পরীটি আর আমার নিয়ন্ত্রণে নাই। বরং সেই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন খুশি আসে যখন খুশী যায়। ভাইরে কি যন্ত্রণা যে তখন থেকে শুরু হয়েছে আমার জীবনে তা আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না। কোনও মেয়ের সাথে আমি কথা বলতে পারি না। কোনও খারাপ কাজ আমি করতে পারি না।
এতক্ষণ ধরে ছাগলটার বকবক শুনতে শুনতে বিরক্ত আমি ক্ষেপে গেলাম। বললাম,তাই নাকি? তা কোনও খারাপ কাজ করার চিন্তা করলে পরীটা কি করে শুনি?
আমার পচন্ড অবহেলা আর বিদ্রূপকে পাত্তাই দিল না লোকটি। যেন আমার রাগ ধরতেই পারে নি।বলল, তখন আমার মাথা ঝিমঝিম করে। শরীর গরম হয়ে যায়। হঠাৎ করেই আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
আমি বললাম, ভাই মৃগী রোগ সম্পর্কে ধারনা রাখেন আপনি? এটার কিন্তু ভাল চিকিৎসা আছে।
আপনি কিছুই বিশ্বাস করেন নি তাই না?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লোকটি। তারপর অল্পক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে লাগল,আর আপনাকে দোষ দিয়ে কি লাভ কেউই করে না। ইচ্ছা হয় কাউকে কাউকে ওকে দেখাই। কিন্তু সহ্য করতে পারবে না বলে দেখাই না। কেউ দেখে না ওকে। জানেন আমার দুটি বাচ্চা আছে। ওদেরও কেউ দেখে না।
আমি হো হো করে হাসতে লাগলাম।বললাম, ভাই এটা তো দেখছি সুপারহিট পারিবারিক সিনেমা। আপনি এক কাজ করবেন আপনার সন্তানদের মানুষের সাথে বিয়ে দিবেন তাহলে সাইবর্গ কোনও সময় পৃথিবীতে না হলেও জীনবর্গ নামে একটা নতুন প্রজাতি হতে পারবে।
এবার লোকটা ক্ষেপে গেল।চোখ দুটো তার আরও লাল হয়ে গেল। জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।
বলল, দাঁড়ান আপনাকে আজ বিশ্বাস করিয়েই ছাড়ছি।
লোকটার বেপরোয়া ভাব দেখে কেটে পড়ার চিন্তা করলাম। এ যে সিজোফ্রেনিক রোগী এতক্ষণ ভাল করে আমি বুঝিইনি।
আমি উঠে পড়ার মুহূর্তে লোকটা ঠাণ্ডা গলায় বলল, আমার হাতটা ধরুন। আমি চলে যাচ্ছি দেখে আবারও ধমক দিয়ে বলল, ধরুন বলছি।
কিছুটা ভয়েই আমি তার হাত স্পর্শ করেই চমকে গেলাম। এত গরম শরীর!
লোকটা আমার দিকে থাকিয়ে বলল, সে আসছে। আমার শরীরে সে এখন।
আমি হাত ছেড়ে বললাম, ভাই আপনি একজন ডাক্তার দেখান। আপনার অনেক জ্বর। লোকটার লালচোখের মানে এতক্ষণে বুঝলাম। আমার কিছুটা খারাপ লাগল উল্টাপাল্টা ভাবার জন্য।
লোকটা বিশ্রীভাবে হেসে বলল, জ্বরে এত গরম হয় না শরীর।

হঠাৎ করেই রুমটার পরিবেশ বদলে যেতে লাগল। কেমন জানি নিস্তব্ধ হতে লাগল চারপাশ।বাইরে শতশত লোক হাঁটছে কথা বলছে কিন্তু তারকিছুই শোনা যাচ্ছে না রুমে। যেন সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন।হঠাৎই একটা মিষ্টি সুভাষ এ ভরে গেল রুমটা। রেলস্টেশনের মত নোংরা পরিবেশে এই গন্ধ একদম মানায় না। আমার কানে নূপুরের শব্দ ভেসে এল।মাথা পুরা গরম আমার। পাগলটা উল্টাপাল্টা কথা বলে আমার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। হ্যালুসিনেশন হচ্ছে বুঝলাম আমি।রুম থেকে বের হওয়া দরকার বুঝতে পারলেও বের হতে পারছি না আমি।হঠাৎ আমার চোখের সামনে একটা আলোকিত মূর্তি ভেসে এল।মাথাটা ঝিমঝিম করছে আমার। জ্ঞান হারানোর আগে গালে কোমল হাতের একটা চড় ঠের পেলাম।

৪১টি মন্তব্য ৪০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×