somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হীনমানসিকতা ই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের মূল কারণ ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ নানা বিতর্ক চলে আসছে অনেকের ই ধারনা রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হওয়ার কারনে ই এদেশের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বার বার নানা ভাবে নির্যাতিত হচ্ছে । আসলেই কি এমন ধারনা সত্য ? যারা মনে করেন শুধুমাত্র রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হওয়ার কারণেই আমাদের দেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নানা ভাবে অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার তা হলে আমি বলবো তাদের ধারনা পুরো পুরি ঠিক না ।আমাদের সংবিধানে ১৯৮৮ সালে তৎকালিন স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম' যোগ করেন । এর আগে জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) এই কথাটি সংযোজন করেন । যদিও আমাদের ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা । আমি আগেই বলেছি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ার কারনেই আমাদের দেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী নানা ভাবে অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে যারা দাবি করছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ১৯৮৮ সালের আগে কি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কি খুব নিরাপদে ছিলেন ? না মোটেও না আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে মূলচেতনা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার কথা তার পর ও ইতিহাস থেকে জানা যায় বিভিন্ন সময় নানা আজুহাত তুলে স্বাধীনতার পর পর ই আমাদের দেশে শুরু সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর নির্যাতন যা আজো বিদ্যমান । আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথা ই ধরা যাক ভারত বিশ্বের অন্যতম উদার গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেখানে রাষ্ট্র ধর্ম বলতে কিছু নেই সেখানকার প্রায় আশি শতাংশ জনগোষ্ঠি ই হিন্দু বাকী বিশ ভাগের প্রায় চৌদ্দ ভাগ ই মুসলিম জনগোষ্ঠী । ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হওয়ার পর ও দিন দিন দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়েই চলছে । সরকারি হিসেব মতে ২০১৫ সালে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে ৭৫১টি এতে কমপক্ষে ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছে আহত ২,২৬৪ জন ৷বাড়িতে গরুর মাংস রেখে খেয়েছে এমন গুজবে দেশটির উত্তর প্রদেশের কোন এক গ্রামে গত বছর মোহাম্মদ আখলাক নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।এর পর বিভিন্ন সময় মুসলিম সাংসদ থেকে শুরু গরুব্যবসায়ীর উপর হামলার কথা প্রকাশ হয় ভারতের নানা সংবাদ মাধ্যমে । ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গার কথা কারোই অজানা নয় যে দাঙ্গায় নিহত হয়েছিল কমপক্ষে ১২০০ মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলমান ৷সেই দাঙ্গার মদদদানের সন্দেহের তীর বরাবর ই ছিল গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমান ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকেই যার কারনে দীর্ঘদিন তাঁর ইউরোপ, অ্যামেরিকা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ এর পর ও ভারতের মত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীকে ই বেছে নিয়েছেন ৷আমাদের সংবিধানে যেমন রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বিদ্যমান তেমনি অন্য ধর্মের সমান অধিকার ও বিদ্যমান । বর্তমান সরকার ও তার দল আওয়ামিলীগ সবসময় ই ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী বলে আমরা জানি তার পরে ও তার তিন বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পর ও বর্তমানে আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বিদ্যমান । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো গত কয়েকবছরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখতে পাওয়া যায় বেশির ভাগ ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের সক্রিয় সদস্যদের সরাসরি অংশগ্রহণ রয়েছে ৷ এর আগে আমরা দেখেছি বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় থাকা অবস্হায় দেশের নানা স্হানে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর নারকীয় হামলার চিত্র । রাষ্ট্রধর্ম ই যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের মূল কারন তা পুরোপুরি সত্য নয় তবে কোন রাষ্ট্রে রাষ্ট্রধর্ম থাকার কারনে সেখানকার সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের ধর্মান্ধ অংশ আত্মতুষ্টিতে ভোগে নানা আজুহাতে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নানা অত্যাচার ও নির্যাতন চালায় । আর এই নির্যাতনের মূল কারনই হলো সম্পত্তির লোভ । সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের একটি অংশ সুযোগ পেলে সংখ্যালঘুদের সম্পদ আত্মসাতের চেষ্টা চালায় । সেই চেষ্টা স্বার্থক হওয়ার জন্য চাই কোন না কোন বাহানা সমাজের সেই সংখ্যাগরিষ্ঠরা ধর্মকে সেই বাহানা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে । আমাদের দেশের আইন এব্যপারে যথেষ্ট শক্তিশালী অথচ আইন প্রয়োগের দূর্বলতা , একশ্রেনীর মানুষের হীনমনতা ও হীন স্বার্থপরতাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের মূল কারণ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×