ছাত্রলীগের নেত্রীদের অনুমতি ছাড়া হলে ওঠা এটা একটা মারাত্মক অপরাধ ও ক্ষমার অযোগ্য। আর এই অপরাধে একজন নবীন শিক্ষার্থীকে রাত ভর নানা ভাবে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। সেই সাথে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন। হল ত্যাগ না করলে আবার সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি। এই টুকু কি এত বড় অপরাধের কোন সাজা হলো! এটা তো মাত্র একটু শাসন করা। আর বড় বড় মোটা মোটা আপুরা তো এত টুকু শাসন করতেই পারেন। বাহ কি চমৎকার না শাসন ব্যবস্হা ! কি শুনে আঁতকে উঠলেন? বাংলাদেশ এই ঘটনা এখন আর আঁতকে উঠার মত এমন কিছু নয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের একই অবস্হা। দীর্ঘ পনের বছর বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পর এখন তাদের ই ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আজ এক অপ্রতিরোধ্য দানবীয় সংগঠন হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করছে। বর্তমান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন দেশের একটি জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাৎকারে ছাত্রলীগের নেতিবাচক ভাবমূর্তির বড় কারণ সংবাদমাধ্যমে ছাত্রলীগ নিয়ে নাকি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ। সত্যিকারেই কি আমাদের সংবাদমাধ্যম গুলি ছাত্রলীগ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করছে? ছাত্রলীগের যদি গত কয়েক দিনের কার্যক্রম ই আলোচনা করি তা হলেই তো ছাত্রলীগের বর্তমান দেউলিয়াত্ব প্রমানের জন্য যথেষ্ট।
গত ৮ ফেব্রুয়ারী রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ৪ শিক্ষার্থীকে কলেজ ছাত্রাবাসে আটকে রেখে ছাত্র শিবিরের কর্মী আখ্যা দিয়ে সারা রাত সারা দিন ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে নানা ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরের দিন সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের নির্যাতনের তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ঐ চার ছাত্রকে ছেরে দেয়। নির্যাতনের শিকার ৪ শিক্ষার্থী ছিলেন জাহিদ হোসেন ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এম এ রায়হান ও মোবাশ্বের হোসেন শুভ্র। তারা সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ৬২ ব্যাচের শিক্ষার্থী। নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা বাড়ী পাঠাতে বাধ্য করতে পারলে ও চরম নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থী জাহিদ ও সাকিবকে শারীরিক অবস্হার করনে বাড়ী পাঠানো সম্ভব হয় নাই। তাবে তাদের স্হান হয়েছিল আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে। চট্রগ্রামে ছাত্রলীগ বর্তমানে দুই বিশেষ নেতার আশ্রয় ও মদদে যত সব অপকর্ম করে আসছেন । ঐ দুই নেতার নাম অবশ্য আমাদের সকলেরই জানা। এর আগেও ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল । তখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ঐ এক বিশেষ নেতার অনুসারী মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার মাথার খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এরপর চমেক ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের নেতার নির্যাতনের কারন হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা খুবই ভয়ংকর। অবশ্য ছাত্রলীগের এই ভয়ংকর রুপ আমরা গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ও দেখলাম। ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির একটি অকৌশল হল তারা তাদের অনেক অপকর্মকে জামাত- শিবিরের দোহাই দিয়ে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করে। অথচ দীর্ঘ পনের বছর যেই ভবেই হউক আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষনা করার মত সউ সাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চার ছত্রকে নির্যাতন করে ও ঐ একই ফন্দি আঁটে ছাত্রলীগ। ঐ চার ছাত্রকে ছাত্র শিবির ট্যাগের ঘৃন্য চেষ্টা করে তারা। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইম ও যুগ্ম সম্পাদক সোলাইমানের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী একই হলের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী কৃষ্ণ রায়কে নিজেদের অবৈধ কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করে পরে হত্যার ও নাকি হুমকি দেয়। এ ঘটনায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রাধ্যক্ষ ও প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে ওই শিক্ষার্থী দাবি করেন, মারধোরের একপর্যায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের জানার পর তাকে হত্যা করে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একটু সুস্হ্য মস্তিষ্কে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন তো একজন সাধারন শিক্ষার্থী যে নাকি ধর্মগত ভাবে ও ভিন্ন তাকে নির্যাতন করে তার পর প্রয়োজন হলে তাকে হত্যা করবে এবং ঐ হত্যাকে জায়েজ করবে শিবির মানে ইসলামি ছাত্র শিবিরের কর্মী ট্যাগ দিয়ে । তার অর্থ দাড়ায় বাংলাদেশে যদি আওয়ামিলীগ বা তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যদি কাউকে জামাত শিবির আখ্যা দিয়ে অত্যাচার নির্যাতন এমন কি খুন পর্যন্ত করে তা হলে হয়তো সেটা আইনসিদ্ধ হবে!
এমন ই একটি ঘটনার শিকার হয়ে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে প্রকাশ্য-দিবালোকে শত শত মানুষ ও আইনরক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে খুন হতে হয় দর্জ্জি দোকান কর্মী বিশ্বজিৎ দাসকে। এই জঘন্য হত্যাকান্ড মিডিয়ার বদৌলতে কঠিন সমালোচিত হলে ও প্রতিকার কিছুই হয় নাই। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অভিযোগ সংবাদমাধ্যম শুধু নাকি ছাত্রলীগের নেতিবাচক সংবাদ ই প্রকাশ করছে। গত কয়েক দিনের ছাত্রলীগের অন্যান কর্মকাণ্ড একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় গত কয়েক দিনে ছাত্রলীগ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদক, কমিটি-বাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানি, শিক্ষার্থী নির্যাতন সহ এহেন কোন অপকর্মের অংশীদার না হয়েছে? তবে সব ঘটনাকে ছাড়িয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। যা বর্তমান আলোচনায় সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়িয়েছে । যদি ও এই উত্তাপ অল্প সময়ের। গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে নির্যাতনের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ফুলপরীকে বিবস্ত্র করে চার ঘণ্টা শারীরিক নির্যাতন করে। ফুলপরী খুবই সাধারন ঘরের একজন মেয়ে বাবা ভ্যান চালক নিজের মেধা আর যোগ্যতার বিনিময় অনেক ত্যাগের বিনিময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ফুলপরীর বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছাড়া আর কুষ্টিয়াতে মাথা গোঁজার মত আর কোন স্হান ছিল না বিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে আশ্রয় নেন। কিন্তু গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ফুলপরী জানতো না যে হলে আশ্রয় নিতে হলে বড় বড় মোটা মোটা আপুদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। তাদের সহানুভূতি একান্তই প্রয়োজন। বড় বড় মোটা মোটা আপুদের অনুমতি আর সহানুভূতি না নেয়ার জেরেই গভীর রাতে গণরুমে চার ঘন্টা বিভৎস আদিম যুগীয় নির্যাতন সহ্য করতে হয় ফুলপরীকে।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় অন্য আর আট দশটা সাধারন ছাত্র ছাত্রীর মত ফুলপরী মুখ বুজে মোটা মোটা আপুদের এই নির্যাতন সহ্য করেন নি। তিনি সকল ডর ভয় উপেক্ষা করে মুখ খুলেছেন প্রতিবাদী হয়েছেন। তার প্রতিবাদে আমরা ও কিছুটা প্রতিবাদী হওয়ার সাহস দেখাচ্ছি। ইতো মধ্যে ফুলপরীর প্রতিবাদের আওয়াজ আমাদের আদালত পর্যন্ত গিয়ে পৌছেছে। বেশ কয়েকটি তদন্ত কমিটি ও তাদের প্রতিবেদন জমা জমা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন ঐ কমিটির প্রতিবেদনের ভাষ্য হলো, " পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফুলপরীকে র্যাগিং এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই অমানবিক, পাশবিক, শারীরিক, ন্যাক্কারজনক, জঘন্য ঘটনার সঙ্গে সরাসরি চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুম ইসলাম এবং মোয়াবিয়ারা জড়িত ছিলেন। আল আমিন নামের কোন এক ব্যক্তির মাধ্যমে অন্তরা ফোনে ও নাকি ফুলপরীকে হুমকি প্রদান করান। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্তরা নির্দেশ দেন যে সবাই যেন ফুলপরীকে একটা একটা চড় মারেন। লিমা ফুলপরীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং সবাই অন্তরার পা ধরতে ফুলপরীকে বাধ্য করেন। এছাড়া প্রভোস্ট হলে থাকা অবস্থায় অন্তরা, তাবাসসুম, মীম, উর্মি, মোয়াবিয়ারাসহ অন্যরা ফুলপরীকে হাত ধরে টানাটানি করে হেনস্থা করেন। এক পর্যায়ে৷ ফুলপরী কে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বরাবরে মুচলেকা দিতে বাধ্য করেন। এ ঘটনায় প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্ট্রার আব্দুর রাজ্জাক, কর্মকর্তা হালিমা খাতুন, একজন আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মোমিতা আক্তার, ইসরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা এবং ফুলপরী ইস্যুতে ব্যাপক গাফিলতি ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া প্রক্টর শাহাদাত হোসেন আজাদের উদাসীনতার কথাও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। আমি এখানে কোন তদন্ত প্রতিবেদনকে ই কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবছি না। কারন এই তদন্ত কমিটি গুলিতে যারা ছিলেন তারা যথেষ্ট জ্ঞান বুদ্ধি সম্পন্ন এবং সামাজিক ভাবে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তবে তাদের প্রতিবেদনে যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে তা সত্যি ভয়ংকর।
শিক্ষকরা সমাজের বিবেক মানুষ গড়ার কারিগর। একজন মানুষের কাছে পিতা মাতার পর পরম শ্রদ্ধার স্হান দখল করে আছেন শিক্ষক। আর সেই শিক্ষক যদি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাহলে তাদের সম্মানের স্হানটা পুরো জাতির কাছেই একটু আলাদা। তবে বিগত বছর গুলিতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেওয়াটা যে জাতিকে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন করছে তা ইতোমধ্যে আমরা কিছুটা টের পেতে শুরু করেছি। আজকে শিক্ষকরা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন গুলির ছত্রছায়ায় নিজেদের পরিচালনা করেন। তাই তারা ছাত্র সংগঠন গুলির কাছে নিজেদের আত্মমর্যাদাকে এক ধরনের বিকিয়েই দিয়েছেন। বর্তমানে বিশেষ করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের কাছে। তা না হলে একজন নিরীহ ছাত্রীকে রাতভর নানা ভাবে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেত্রীরা আদিম যুগীয় কায়দায় নির্যাতন করলো অথচ শিক্ষক হয়ে তারা এই অসহায় মেয়েটিকে রক্ষা করার নুন্যতম ব্যবস্হা নিতে ব্যর্থ হলেন তারা কেমন শিক্ষক? কি তাদের আত্মসম্মান বোধ? কি ই বা তাদের নৈতিকতা? এর আগেও বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা ই সারা রাত নির্যাতন করে হত্যা করে ছিল আবরার ফাহাদকে সেদিন ও বুয়েটের শিক্ষকরা ছিল নীরব দর্শক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ও একই কথা। দেশের প্রতিটা শিক্ষাঙ্গনের আজ একই অবস্হা। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন শিক্ষাঙ্গনে সাধারন ছাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়? কে নিবে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব? বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগ তাদের অপকর্মকে আড়াল করতে নিজেদের দায় অন্যের কাধে চাপাতে প্রথমেই তাদের বক্তব্য ছাত্রলীগ একটি বড় সংগঠন এখানে দুই চার জন খারাপ থাকতেই পারে। এর পর অপকর্ম আড়ালের আরেক পন্থা সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার আর সবচেয়ে মজার অভিযোগ হলো যারাই ছাত্রলীগের ভিতর অপকর্মের পটু এবং অপরাধ করে আলেচনায় আসেন তারা নাকি ছাত্র শিবির বা ছাত্রদল থেকে আসা।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। ছাত্রলীগের ইতিহাস ঐতিহ্য আমাদের দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। সময়ের বিবর্তনে ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের লোভে ছাত্রলীগ তার পুরোনো ঐতিহ্যের প্রায় পুরোটাই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাড় করিয়েছে। ছাত্রলীগ শুধু আজ শিক্ষাঙ্গনে ই না পুরো দেশের সাধারন মানুষের কাছে ও এক আতংকের নাম। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলিতে ছাত্রলীগ যেই ধরনের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তাতে সাধারন মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের হাতে জিম্মি। সাধারন শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের অনেকটাই অন্তরায় বর্তমান সময়ের ছাত্রলীগের নানা কর্মকাণ্ড। ফুলপরী আজ তার বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যের প্রতিবাদ করে কিছু সময়ের জন্য হলে ও সমাজ তথা রাষ্ট্রকে দেখিয়ে দিয়েছে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের অগ্রজের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে আজ কি হচ্ছে! ফুলপরী দেখিয়ে দিয়েছে অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করতে হয় না প্রতিবাদ করতে হয়। অথচ আমারা যাদেরকে সমাজের বিবেক হিসেবে জানি বা মানি তারা কি পারছে সমাজ তথা রাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া কোন অন্যায়ের কার্যকর প্রতিবাদ করতে? নাকি তারা নিজেরদের ব্যক্তি সুবিধা হাসিলের জন্য নিজেদের বিবেক বুদ্ধিকে বিসর্জন দিচ্ছে। ফুলপরীর মত আমরা সকলেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে নিশ্চয় মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সোনার বাংলা সত্যিকারেই সোনার বাংলা হবেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:২৩