সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ একসময় দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল। সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য খ্যাত এই এলাকা এখন ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে এখানে অবৈধভাবে দিনের আলোতে
প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে বিপুল পরিমাণ পাথর লুট হয়ে গেছে। যা নিয়ে গত দুই দিন দেশের সকল গণমাধ্যম ই আওয়াজ তুলেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যৌথ আগ্রাসনে ভোলাগঞ্জ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে। এই অপরাধের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়ি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, নদীর প্রবাহে পরিবর্তন এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। প্রকৃতির নয়নাভিরাম পাথরের রাজ্য ভোলাগঞ্জ পরিনত হয়েছে এক ধুধু বালুকাময় মরুভূমিতে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এত বড় আকারের অবৈধ কর্মকাণ্ডের পেছনে আরও প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জড়িত আছে বলে স্হানীয়দের অভিমত।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অতীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর প্রধান নির্বাহী হিসেবে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তার কৃতিত্ব হিসেবে ২০২৪ সালের বর্ষা বিপ্লবে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পাওয়ার পর আমাদের সাধারন জনগণের প্রত্যাশা করেছি তিনি দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ভোলাগঞ্জ ও জাফলংয়ের অবৈধ পাথর উত্তোলনের ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন, আন্দোলনকারী হিসেবে অতীতে যে সাফল্য অর্জন করেছিলেন, উপদেষ্টা পদে থেকেও এখন তা করতে পারছেন না। তার এই স্বীকারোক্তি দেশের সাধারন মানুষের কাছে ব্যর্থতার প্রমাণ ই হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলাগঞ্জের এই বিপর্যয় শুধু পরিবেশগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটও তৈরি করছে। ভোলাগঞ্জে এই প্রকৃতিকে উপভোগ করতে প্রতিবছর ই দেশ বিদেশের লাখো পর্যটকে মুখরিত থাকে ভোলাগঞ্জ সহ সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। কিন্তু ভোলাগঞ্জে এই অবক্ষয়ের কারনে ইতোমধ্যে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। এতে রাষ্ট্র বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, স্থানীয়দের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে, আর অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষার শপথ নেওয়া একজন দায়িত্বশীল উপদেষ্টার পক্ষে এই পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদ ও নাগরিক সমাজ। ২০২৪ এর বর্ষা বিপ্লবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে জনগণের আস্থা পূরণের জন্য, ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়। তাই পরিবেশ ধ্বংস ঠেকাতে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আজ সম্পুর্ন ভাবে ব্যর্থ। অতএব, তার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে জনগনের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অতি দ্রুত সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের পদত্যাগ করা উচিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



