somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

☀ মানসিক অসুস্থতা ও আত্মহত্যা থেকে বাঁচার সহজ উপায় ☀

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"জন্ম অবধি আমরা অধিকাংশ মানুষ স্নেহ ভালবাসা এত প্রচুর পরিমাণে পাই যে অনেক সময় সেসবের সঠিক মূল্য দিইনে, অনেক সময় আমরা ইচ্ছে করেই ভালবাসার মানুষের প্রতি অত্যাচার করি, অনেক সময় অনেক ভালবাসা স্নেহ ত্যাগ করেই চলে যাই। কিন্তু- কিন্তু এই পৃথিবীতে অনেক হতভাগ্য মানুষ আছে যারা জন্ম অবধি স্নেহ ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। কখনো কি চিন্তা করে দেখেছি স্নেহহীন, ভালবাসাহীন জীবন মানুষের কেমন হতে পারে?" - আনোয়ারা সৈয়দ হক


আত্মহত্যার প্রধান কারণ মানসিক অসুস্থতা। শারীরিক অসুস্থতাতে আত্মহত্যার হার কম। অথচ আমরা মানসিক অসুস্থতাকে ততোটা গুরুত্ব দিই না যতোটা গুরুত্ব শারীরিক অসুস্থতাকে দিই। মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আমাদের এক ধরণের ব্যক্তিগত ও সামাজিক লজ্জা-শঙ্কা কাজ করে। এক ধরণের অবহেলা কাজ করে। এটা ঠিক না। আধুনিক যুগে এসে এখনও মানসিক অসুস্থতাকে 'পাগল', 'জিনের আসর' - এই সব বলে হেলা-ফেলা করাটা অকাট্য মূর্খতা। শারীরিক অসুস্থতাকে যে দৃষ্টিতে দেখেন মানসিক অসুস্থতাকেও সেই দৃষ্টিতে দেখতে হবে। মানসিক অসুস্থতাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে, বোঝাতে হবে। এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ালে গুরুতর অসুস্থতা এড়ানোর হার শারীরিক অসুস্থতা এড়ানোর হারের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে আমার ধারনা।

'আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ' - এ কথা জীবনে কোন না কোন সময় সবাইকে বলতে শুনবেন। কিন্তু 'আমি মানসিকভাবে অসুস্থ' এমন কথা বলতে শোনা যায় না। কারণ কি? একজন সুস্থ দেহের ব্যক্তি কি কখনও মানসিকভাবে অসুস্থ হয় না? অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু এই অসুস্থতার কথা তিনি প্রকাশ করেন না, পাছে যদি লোকে তাকে পাগল বলে! তাই তিনি সংগোপনে এই অসুস্থতা লালন করতে থাকেন। চক্ষুলজ্জায় মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। তার চেহারায় একটা মলিনতা ফুটে উঠলে লোকের প্রশ্নের জবাবে তিনি হয়তো বলেন, 'তেমন কিছু না' বা 'মনটা একটু খারাপ আছে' অথবা 'নাথিং, খুব টায়ার্ড'। নিজের মনের অবস্থা কার কাছে লুকচ্ছেন তিনি? নিজের কাছেই নয় তো? ধীরে ধীরে অবসাদ-বিষণ্ণতা-ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হচ্ছেন কে? তারপর একসময় হয়তো আত্মহত্যা।


মানসিক অসুখ কী বিভীষণ!

শরীরের রোগের মতো মনের রোগও বিচিত্র রকমের। এতো রকম যে মনের রোগ হতে পারে না জানলে বিশ্বাসই করা যায় না। দিব্যি ভদ্রভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যে লোকটি তার যে বড় রকমের কোন মানসিক সমস্যা আছে তা নির্দিষ্ট কিছু সময় ছাড়া আপনি বুঝবেনই না। কিংবা আপনার ঘরের ছোট্ট মানুষটি এমন কোন অদ্ভুত আচরণ নিয়মিত করছে যা হয়তো আপনি এখন 'বাচ্চা সুলভ' বলে উড়িয়ে দিলেন, যা ডাক্তারের কাছে কোন মানসিক সমস্যার 'প্রাথমিক লক্ষণ'।

আমরা যেমন আমাদের প্রিয়জনদের শারীরিক খবর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাখি তেমনি মনের খবরও ভালোভাবে রাখা দরকার। শরীরের খবর রাখাটা অনেক সহজ, যেহেতু দৃশ্যমান এবং সবাই সহজে দিতেও চায়। কিন্তু মনের খবর সংগ্রহ করাটা অনেকটা গোয়েন্দাগিরির পর্যায়ে পড়ে। গোয়েন্দাকে সহজে কেউ কিছু বলতে চায় না, লুকাতে চায়। তাই যাকে বলে চোখ-কান খোলা রাখা সেটাই করতে হবে। সহজভাবে মিশতে হবে যেন আপনার প্রতি তার আস্থা বাড়ে, মনের কথা অবলীলায় বলতে পারে। তবে সবার আগে যেটা প্রয়োজন তা হলো, মানসিক অসুস্থতার প্রতি আমাদের 'জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি' বদলানো। আপনার শারীরিকভাবে অসুস্থ যে সঙ্গী-স্বজনটিকে খুব সেবা-শুশ্রূষা করেন, মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে সেভাবেই যত্ন নিতে হবে। মধ্যযুগীয় কায়দায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে, অন্ধকার ঘরে তালাবন্ধ করে, পাগল আখ্যা দিয়ে, জিনের আসর হয়েছে বলে নিজের মানসিক দীনতার পরিচয় দিবেন না।


চোখের ভাষা মনের কথা বলে, পড়ার চেষ্টা করুন...

প্রিয় আনোয়ারা সৈয়দ হকের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি- "মানুষ যত বিপদেই পড়ুক না কেন, তার সমস্যার একটা সমাধান সব সময় তার হাতে থাকেই, যদিও সে অন্যের মতামত যাচাই করতে চায়।"

যে কোন মানসিক সমস্যা ঘনীভূত হওয়ার আগেই যাবতীয় লজ্জা-শঙ্কা পাশ কাটিয়ে সাইকোলজিস্ট/সাইকিয়াট্রিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে। জীবন বাঁচাতে ও মনের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এটুকু সাহসী পদক্ষেপ আপনাকে নিতেই হবে!

দয়া করে কেউ আবার ভেবে বসবেন না, লেখক বুঝি কোন ডাক্তার যে তার প্রসার বাড়ানোর জন্য উপদেশ আওড়াচ্ছে। মোটেও তেমন কিছু না। সচেতন দৃষ্টিভঙ্গিতে যা দেখছি নৈতিক দায়িত্ব থেকে তা-ই লিখছি। আমাদের দেশে তো কেউ কারও উপকার করতে চাইলে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয়। এটা কিন্তু এক প্রকার 'জাতীয় মানসিক সমস্যা'! তাই এমন ঋণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গিকে অবশ্যই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গিতে বদলাতে হবে।

নরম্যান ভিনসেন্ট পীল লিখেছিলেন, "যদি সদর্থক সঠিক চিন্তা করতে হয় তা হলে প্রথমেই দূর করতে হবে সমস্ত নঞর্থক ভাবনা"। আর "সঠিক চিন্তা হল এক ধরনের চিন্তা যা সবচেয়ে খারাপ অবস্থার মধ্যে সবচেয়ে সেরা ফল খুঁজে পতে চায়"। জানেন তো, "আপনি যখন ভালো কিছু চাইবেন, আপনি সম্ভবত তা পেয়েও যাবেন"।

তাই কখনও আশাহত হবেন না। মন থাকলে সমস্যাও থাকবে। সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেকে চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে অন্যের সহায়তা নিতে হবে। নিজের চেষ্টা ও অন্যের সহায়তা কোনটাতেই কার্পণ্য করা যাবে না।


প্রিয়জনের এমন পরিস্থিতি থেকে এখনই সাবধান!

কখনও কখনও মানুষ মৃত্যুটাকেই পরিত্রাণের উপায় ভেবে বসে। কিন্তু মৃত্যু বরণের পর ভুলটা তো আর বোঝা যায় না। কতো তুচ্ছ কারণেই না মানুষ আত্মহত্যা করে! ভাবতেই ভীষণ দুঃখ লাগে। আমরা কি কিছুই করতে পারি না? আশেপাশের নিরাশাগ্রস্থ মানুষগুলোকে কি একটু সাহস যোগাতে পারি না? যারা নিজেরা নিজেদেরকে সহায়তা করতে পারছে না তাদের মনোবল বৃদ্ধিতে আপন করে একটু কথা বলতে পারি না?

হ্যাঁ পারি। যারা মরতে চায় তাদের মনে জীবনের প্রতি ভালবাসা তো জাগাতে পারি! বেশি কিছু না, একটু উদ্যোগী হতে বলছি। অশনি সংকেত পেতে চোখ-কান সজাগ রাখতে হবে। আমাদের আশেপাশে কেউ যেন মানসিক সমস্যায় গুমরে না মরে।

_______
মনের রহস্য অনুসন্ধান
★ সর্বকালের বিশ্বসেরা ২১টি সাইকোলজিকাল মুভির তালিকা ★
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:২৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×