somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ঔপন্যাসিক জিল্লুর রহমান
চোখের সামনে যেকোন অসঙ্গতি মনের মধ্যে দাগ কাটতো, কিশোর মন প্রতিবাদী হয়ে উঠতো। তার বহিঃপ্রকাশ ঘটতো কবিতা লেখার মধ্য দিয়ে। ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে, নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবিতা। তারপর গল্প, উপন্যাস। এ যাবত প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা-২১ টি।

দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০৬

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রুখাসানা বেগম তখন সবেমাত্র ধামইরহাট উপজেলার একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল আগ্রাদ্বিগুন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাস করেছেন। তখনো এরকম একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাল্য বিবাহ এবং বহু বিবাহ প্রথার বিরুদ্ধে তেমন জনসচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। তাই রুখসানাকে এস.এস.সি পাস করার পর কলেজে ভর্তি করে দেয়ার পাশাপাশি তার বিয়ের জন্য পাত্র খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। অভিভাবকদের ইচ্ছা এইচ.এস.সি পাস করার আগে যদি ভালো পাত্র পাওয়া না যায় তবে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে আর যদি ভালো পাত্র পাওয়া যায় তবে বিয়ে দেয়া হবে।

রুখসানার গায়ের রং ফর্সা, যেন দুধে আলতা, লম্বাকালো কেশ, মুখের গড়ন গোলগাল, নাকটা বাঁশির মতো, চোখ দু'টো মায়াবী, কথাবার্তা এবং চালচলনে একটা বিশেষ ধরণের আর্ট আছে যা সহজে যে কারো দৃষ্টি কাড়ে।
রুখসানার বিয়ের জন্য পাত্র পেতে বেশি দেরি হয়নি, পাত্রের বাড়ি ধামইরহাট। পাত্র পক্ষের অভিভাবকরা মেয়েকে দেখে পছন্দ করেছিলেন। পাত্র নিজেও গোপনে তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় মেয়েকে দেখে পছন্দ করেছিল। মেয়ের লেখাপড়ার ব্যাপারে পাত্রের সামান্য কিছু আপত্তি থাকলেও মেয়ের সৌন্দর্য্যের কাছে তার লেখাপড়ার ব্যাপারটা গৌণ হয়ে গিয়েছিল। পাত্র মহাশয় রুখসানার রুপে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই তিনিও শিক্ষার বিষয়টিকে মেনে নিয়েছিলেন।

পাত্রের নাম আতিয়ার রহমান, মধ্যবিত্ত পরিবারের, বাবা-মা’র একমাত্র সন্তান। তখন তিনি ব্যাংকে অফিসার পদে চাকরিতে জয়েন করেছিলেন। ব্যাংকের চাকরি, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম, সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। অফিস থেকে ফিরে আর কোন কাজে আতিয়ার সাহেব মনোযোগ দিতে পারতেন না। স্বল্পশিক্ষিত হলেও সংসারের সমস্ত দায়িত্ব রুখসানা সুচারুরূপে পালন করতেন। নীলা ভালো রেজাল্ট করে এবছর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। ছোট ছেলে প্রান্ত এবার এস.এস.সি পরীক্ষা দিবে। সেও লেখাপড়ায় ভালো তাকে নিয়ে স্কুলের শিক্ষকরা গর্ববোধ করেন।

আতিয়ার সাহেবের সঙ্গে রুখসানার সম্পর্কটা বেশ মধুর। আর সে কারণেই বোধ হয় প্রায় দিনই একজন আরেকজনকে খোঁটা মেরে কথা বলে দীর্ঘ দিনের ভালোবাসার ভিত্তিটাকে মজবুত করেন।
আতিয়ার সাহেবের পোস্টিং এখন জয়পুরহাটে। ধামইরহাট থেকে জয়পুরহাটের দূরত্ব প্রায় বিশ কিলোমিটার। তিনি প্রতিদিন মোটর সাইকেল নিয়েই জয়পুরহাটে যাতায়াত করেন। বেশিরভাগ দিনেই তিনি সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বাসায় ফিরেন। আজ রাত প্রায় আটটা অতিক্রম করেছে তবুও তিনি বাসায় না ফেরায় রুখসানা কিছুটা চিন্তিত হলেন। ভালোবাসার চমৎকার সম্পর্কের কারণেই বুঝি এমন হয় একজনের সামান্যক্ষণের অনুপস্থিতিও যেন অন্যজনকে চিন্তিত করে তোলে।
আতিয়ার সাহেব বাসায় ফিরলেন তখন রাত সাড়ে ন’টা বাজে। তিনি মোটর সাইকেল রেখে হাত মুখ ধুয়ে তাঁর রুমে গেলেন। রুখসানা তাঁর পিছনে পিছনে রুমে ঢুকলেন, আজ এত দেরি হলো যে?
আচ্ছা রুখসানা প্রান্ত রুমে আছে?
আছে।
আতিয়ার সাহেব আর কিছু বললেন না। আতিয়ার সাহেব জানেন কোন প্রশ্নের উত্তরে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া বা নীরব থাকাটা রুখসানা একেবারে পছন্দ করেন না। তাই তিনি রুখসানাকে ক্ষেপানোর জন্য তাঁর কথার কোন উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেলেন।
রুখসানা রাগান্বিতকন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমাকে কী জিজ্ঞেস করলাম?
আতিয়ার সাহেব বললেন, কী? কী যেন জিজ্ঞেস করলে?
আজ এত দেরি হলো কেন?
ব্যাংকে কাজ ছিল তাই দেরি হলো।
এত রাত পর্যন্ত ব্যাংকে কাজ থাকে না? তুমি আমাকে বুঝালে আর আমি মেনে নিলাম।
তা তুমি মেনে নিবে কেন? তোমার যা বিদ্যার দৌড় তাতে চাকরিরতে ব্যস্ততা সম্পর্কে তোমার ধারণা থাকার কথা না।
রুখসানা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, আমার বিদ্যার দৌড় কম, না? কিন্তু আমি কার জন্য লেখাপড়া শেষ করার আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছি? তোমার মতো একটা ব্যাংকের কেরানির সাথে বিয়ে না হলে আমিও ঠিকই লেখাপড়া শিখে বড় হতে পারতাম। তখন আমি এই ধামইরহাটে পড়ে থাকতাম না, হয়ত ঢাকা শহরে থাকতাম, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম।
তা যখন পারনি, পরের পায়ে ভর করে যখন দাঁড়িয়ে আছ তখন এত কথা জিজ্ঞেস কর কেন?
কি আমি পরের পায়ে ভর করে আছি?
একথা তো আমি বলিনি তুমি নিজেই বলছ।
এমনসময় দরজা নক করার শব্দ পেয়ে প্রান্ত দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিল, আপা তুই?
হ্যাঁ চলে এলাম।
রুখসানা আঁচলে চোখ-মুখ মুছে বেরিয়ে এলো, মা তুই, আয় মা বস্।
নীলা তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে মা?
কিছু না।
কিছু তো নিশ্চয়ই হয়েছে, মা এখন আমি বড় হয়েছি, আমি সব বুঝতে পারি। তোমরা ঝগড়া করেছ।
তোর বাবা আজ দেরিতে ব্যাংক থেকে এসেছে, আমি জিজ্ঞেস করলাম দেরি হলো কেন? তাতে তোর বাবা একেবারে আমাকে যাচ্ছেতাই বলল।
মা বাবা তোমাকে আজকেও তোমার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কথা বলেছে?
আতিয়ার সাহেব বেরিয়ে এলেন, তুই হঠাৎ করে আসলি কেন মা? কোন সমস্যা? আসতে এত রাত হলো কেন? রাস্তায় কোন সমস্যা হয়নি তো? কার সঙ্গে আসলি?
কোন সমস্যা না বাবা, আমি আর বৃষ্টি একসঙ্গে আসলাম। আমার কথা আমি না হয় পরে বলছি তার আগে তো দেখি তোমাদের বিচার করতে হচ্ছে।
আমাদের বিচার করতে হচ্ছে মানে? আমরা আবার কী করলাম?
বাবা তোমরা আজকেও ঝগড়া করেছ?
ঝগড়া না রে মা আসলে তোর মা কখনো কখনো এমন সব কথা বলে যে আর মাথা ঠিক থাকে না। সামনে আমার জুন ক্লোজিং, আমার ওপর দিয়ে কাজের খুব চাপ যাচ্ছে। তাই আজকে আসতে দেরি হয়েছে। বাসায় আসতেই তোর মা জেরা করতে শুরু করেছে। আসতে দেরি হলো কেন?
তোমার হঠাৎ করে অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলে মা তো সেকথা জিজ্ঞেস করতেই পারে, তাই বলে তুমি মাকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে খোঁটা দিবে?
রুখসানা বললেন, সেকথা তো তোর বাবা আমাকে বললেই পারতো যে আমার কাজ ছিল তাই আসতে দেরি হলো। তা না বলে আমাকে আজে বাজে সব কি কথা বলল।
বাবা তোমাকে না আমি কতদিন বলেছি মা’র লেখাপড়া নিয়ে তুমি কোন কথা বলবে না।
আতিয়ার সাহেব হেসে ফেললেন, তুই যা মা হাত মুখ ধুয়ে আয়, রুখসানা আমাদের খাবার ব্যবস্থা কর।
রুখসানা খাবার রেডি করতে চলে গেলেন।
নীলা বলল, বাবা তোমার মোবাইলটা একটু আমাকে দাও তো।
আতিয়ার সাহেব তাঁর মোবাইলটা নীলার হাতে দিলেন।
নীলা জিজ্ঞেস করল, বাবা ব্যালেন্স আছে তো?
আছে, আজকেই রিচার্জ করেছি।
চলবে...



আমার এই উপন্যাসটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:দুর্নীতিবাজের ডায়েরি-০১
আমার সব লেখা একসাথে পড়তে ক্লিক করুন:আমার ঠিকানা
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×