গ্রীষ্মের কোন এক পড়ন্ত বিকেল।
বাসভর্তি কিছু তরুণ-তরুণীর বাধভাঙ্গা হইহুল্ল্রোড়।
আমিও বাসের যাত্রী।তাদেরই অংশ।বসেছি একেবারে পেছনের দিকের আগের সিটে।পাশের সিটটি ফাঁকা নেই।তাতে এক তরুণী বসেছে।কিছুক্ষণ বাস চলার পর হইহুল্ল্রোড় যেন আরো বেড়ে গেলো।নিঃসঙ্গ আমি আর চুপ করে থাকতে পারলাম না।নিরবতা ভাঙলাম।পাশে বসা মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে তার নাম জানতে চাইলাম।উত্তরে লাজুক ভঙ্গিতে নাম জানালো।আমি বিজ্ঞের মত মাথা নেড়ে বললাম, বাহ বেশ সুন্দর নাম তো!
বাস যতই সামনের দিকে এগোতে লাগলো বাতাস যেন ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো।আরো বেশ কিছুদুর যাবার পর টিপটিপ বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেলো।ক্রমেই তা বেশ জোরালো আকার ধারন করলো।বৃষ্টি আমার ভালো লাগে।তন্ময় হয়ে বৃষ্টি দেখছি জানালার ফাঁক দিয়ে।এবার মেয়েটিই নিরবতা ভাঙল।আমার নাম জানতে চাইলো।বললাম।প্রত্তুত্যরে সেও জানালো আমার নামটা নাকি সুন্দর।
বাস একটা ব্রিজ পার হচ্ছে।নিচে পানিতে একটা নৌকা।পানিতে বৃষ্টির ফোটা আর নৌকার ভেসে চলা দেখে মেয়েটা বলে উঠলো কি সুন্দর!আমিও সায় জানালাম।আসলেই অপার্থিব সুন্দর লাগছিলো।মেয়েটা হঠাৎ বলে উঠলো একদিন সে তার মনের মানুষের সাথে এরকম সময়ে একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবে।আমি কিছুটা অবাক হই।কি অবলীলায় কথাটা অপরিচিত একজন মানুষকে বলে ফেলল।আবার ভালো লাগার একটা অনুভূতিও খেলে গেল আমার মাঝে।যেখানে আমার মাঝে কোন স্বপ্ন কাজ করে না,সেখানে একটা মেয়ে কি সুন্দর অবলীলায় তার স্বপ্নের কথা বলল।
খোলামনের মানুষ মনে হওয়ায় মেয়েটাকে ওর নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।জানালো কয় ভাইবোন।কোথায় পড়াশুনা করে।কি কি তার ভালো লাগে।মাঝে মাঝে আমাকেও জিজ্ঞেস করে আমার সম্পর্কে জেনে নিলো।ইতিউতি কথা জানতে জানতে চলমান ট্রাফিকের শব্দে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বাইরে তাকালাম।বাস আমিন বাজার ব্রীজ পার হচ্ছে।মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো এটা কোন জায়গা?উত্তর পেতেই সপ্রসন্ন হয়ে বলল আসাদগেটে নেমে যাবে।বাসা কোথায় জানতে চাইতেই বললো মোহাম্মদপুর।আমি সেন্ট জোসেফের ছাত্র ছিলাম।যেটা মোহাম্মদপুরেই।এটা জানাতেই মেয়েটা বললো,বাহ আপনি দেখছি ভালো ছাত্র।মনে মনে একটু ভাব চলে আসলো।বললাম আমাকে মোহাম্মদপুরের স্থানীয়ই বলতে পারেন যদিও আমি এখানে এখন আর থাকি না।মেয়েটা বলল,আচ্ছা!তারপর কবে পাশ করে বেরোলেন?কই পড়ছেন ইত্যাদি ইত্যাদি আর মোহাম্মদপুর এর একাল সেকাল।
জ্যাম না থাকায় প্রায় মিনিট দশেকের মাথায়ই বাস গন্তব্যে পৌছুলো।মেয়েটা গুছিয়ে নিতে শুরু করলো।বাস থামতেই ভুবন ভোলানো হাসি উপহার দিয়ে বললো, ঠিক আছে চলি।আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো।আমিও মৃদু হেসে বললাম আমারও সময়টা বেশ কেটেছে।কেন জানি বিদেয় দিতে ইচ্ছে করছিলো না।ভালোইতো উচ্ছল।নেমে গেল মেয়েটা।জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিয়ে বললাম,ভালো থাকবেন।আবার একটা স্নিগ্ধ হাসি উপহার পেলাম।
বেশ কতগুলো যাত্রী নামিয়ে বাস আবার চলা শুরু করলো।পাশের সিটটি এখন ফাকা।খেয়াল করলাম বৃষ্টি শেষ হয়ে গিয়েছে।শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে এট্টুসখানি ভালো লাগা আর কিছু বিচ্ছিন্ন আবেগ নিয়ে শহরের কোলাহল আর চলন্ত ট্রাফিকের ভীড়ে হারিয়ে গেলাম।