somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে মজুরদের অধিকার

০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান দুনিয়ার পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থা এবং জমিদারী ও সামন্ততান্ত্রিক ভূমি-ব্যবস্থা মারাত্মকরূপ ধারণ করিয়াছে। একদিকে আজ পুঁজিদার কারখানা মালিকদের হাতে মজুর-শ্রমিকগণ, অপরদিকে বড় বড় জমিদার সামন্তদের কবলে গরীব কৃষকগণ নির্মমভাবে শোষিত ও নিষ্পেষিত হইতে। অভাব ও দারিদ্র, অনশন ও অর্ধাশসনের উপর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম তাহাদের স্বাস্থ্যের মেরুদন্ড ভাঙিয়া দিয়াছে। শ্রেণী বৈষম্যমূলক আচার-আচারণ তাহাদের নৈতিক ও মানসিক শক্তিকে ক্ষুন্ন করিয়াছে।

কৃষক-মজুরদের এই চরম দুরবস্থাকে একদল মানুষ নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করিতেছে। তাহারা মার্কস-লেলিনের প্রেতাত্মা স্ট্যালিন-ক্রশ্চেভের গুপ্তচর হইয়া পৃথিবীর সর্বত্র ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। সমগ্র পৃথিবীকে কমিউনিস্ট সমাজ ব্যবস্থার লৌহ-নিগড়ে বন্দী করিবার উদ্দেশ্যে কুটিল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়া আছে। বর্তমান দু:খী ও বঞ্চিত মানবতাকে চীন রাশিয়ার সুখী (?) সমাজের উন্নত (?) জীবনধারার বিচিত্র কাহিনী শুনাইয়া প্রলুব্ধ করিতেছে এবং দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের কারখানা আর জমির মালিকদের বিরুদ্ধে তাহাদিগকে বিক্ষুব্ধ করিয়া তুলিতেছে। “তোমাদের সকল প্রকার দু:খ এবং দুর্গতির অবসান (?) ঘটাইতে পারে একমাত্র কমিউনিজন এবং কমিউনিস্ট সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা ভিন্ন অন্য কোন আর্দশের তোমাদের দুরবস্থা দূর করিতে পারে না- প্রচ্ছন্ন অপ্রচ্ছন্ন সকল প্রকার কমিউনিস্টদের মুখে এই প্রচারণা বনাম প্ররোচনা খুব জোরালো হইয়া উঠিয়াছে। দুনিয়ার অন্যান্য দেশের ন্যায় এই দেশেও চীন ও রাশিয়ার অসংখ্য গুপ্তচর বিভিন্ন বেশে কাজ করিয়া যাইতেছে। চাষী মজুরদের প্রতি সহনুভূতি প্রদর্শন করিয়া অন্ন বস্ত্রের আওয়াজ তুলিয়া আন্দোলন আর সংগঠনের কাজ অবিশ্রান্তভাবে-আর কতকটা অবাধে-চালাইয়া যাইতেছে।

অপরদিকে কমিউনিজমের এই প্রচারণার গতিরোধ করিবার উদ্দেশ্যে যেসব উপায় অবলম্বন করা হইতেছে তাহা এতই হাস্যকর যে, সমাজ-বিজ্ঞান সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকিলেই ইহার বাতুলতা স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়। কমিউনিজম আর কমিউনিস্টদের দোষ-ত্রুটি, অন্যায়-অনাচার, নির্যাতন আর অসচ্ছরিত্রের কথা বর্ণনা করা, প্রচার করা আর বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়াই উহার সয়লাব-স্রোত রোধ করিবার জন্য কিছুমাত্র যথেষ্ট নয়। সেইজন্য দরকার বর্তমান সমাজের এই অশান্ত ও অসম অবস্থার পরিবর্তন সাধন করা, এক উন্নতকর সুষ্ট অর্থ ব্যবস্থার সাহায্য মজুর-শ্রমিক-তথা কোটি কোটি মানুষের অর্থনৈতিক দুর্গতির চির অবসান ঘটান। বস্তুত কমিউনিজমের সয়লাব স্রোতের এ-ই একমাত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা, অন্য কিছু নয়। ভুল আদর্শই হউক আর বিজ্ঞানসম্মত সত্য আদর্শই হউক, কেবল ফাঁকা বুলি দ্বারা কমিউনিজমের পতিরোধ করা বা উহার প্রচার বন্ধ করা কিছুতেই সম্ভব নয়। যতদিন পর্যন্ত বর্তমান সমাজে এই মৌলিক ত্রুটিগুলি এবং সামাজিক শোষণ-পীড়ণ ও অবিচারের ভিত্তিমূল চূর্ণ করা না হইবে, যতদিন এ অবস্বাভাবিক অর্থনৈতিক অসামাঞ্জস্য দূর করিয়া এক সুস্থ, সুন্দর, সুমৃদ্ধ, সুসমঞ্জস সমাজের সৃষ্টি করা না যাইবে, ততদিন কমিউনিজমের সংক্রামক ব্যাধি কিছুতেই দুর করা যাইবে না।

কাজেই আজ বিশেষভাবে কমিউনিজমের মৌলিক দোষত্রুটি এবং ভিত্তিগত ধ্বংসকারিতার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করিবার সঙ্গে সঙ্গে মজুর-কৃষক তথা গোটা সমাজের সম্মুখে অপর একটি পূর্ণাঙ্গ অর্থ-ব্যবস্থা সুষ্ঠুরূপে পেশ করিতে হইবে। এই কাজ শুধু মুখে করিলেই চলিবেনা, বাস্তব কর্মাদর্শ ও কার্যকর প্রোগ্রাম লইয়াই এক দিকে অগ্রসর হইতে হইবে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে উহার পুন:প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করিতে হইবে। বলা বাহুল্য, এই ধরনের অর্থব্যবস্থা-যাহা সর্বপ্রকার সৌন্দর্য ও সার্বজনীনতাপূর্ণ এবং ইহকাল ও পরকালের সকল রকম কল্যাণ ব্যবস্থার মূল উৎস হইতে পারে, তাহা ইসলাম ছাড়া আর কিছুই নহে। বর্তমান প্রবন্ধে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় মজুর-শ্রমিক আর কৃষকদের অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করিতে চাই। এই আলোচনার সুযোগে আমি এদেশের জমি-মালিক, পুঁজিদার ও কারখানা মালিকদিগকে অবিলম্বে ইসলাম নির্দিষ্ট অধিকার সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার জন্য অনুরোধ করিব। কারণ, তাহাতেই সকল শ্রেণীর মানুষ-তথা গোটা দেশের কল্যাণ একান্তভাবে নিহিত রহিয়াছে; আর তাই সকল প্রকার অমঙ্গল ও ভাঙ্গন-বিপর্যয়ের নির্মম আঘাত হইতে গোটা সমাজকে রক্ষা করিতে পারে।

সর্বপ্রথম একথা সুস্পষ্টরূপে জানিয়া লওয়া দরকার যে, মজুরি খাটা অর্থাৎ নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে পরের কাজ করা, অন্য কথায় শ্রমের মূল্য আদায় করা বা গ্রহণ করা-ইসলামের দৃষ্টিতে কিছুমাত্র হীন বা ঘৃণার্হ কিংবা বর্জনীয় নয়। বিশ্ব নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল: اَيُّ الْكَسِبَ اَطْيَبُ “কোন প্রকারের উপার্জন উত্তম ও পবিত্রতর।” উত্তরে তিনি ইরশাদ করিয়াছেন: “ব্যক্তির নিজ শ্রমের উপার্জন এবং সৎ ব্যবসায় লব্ধ মুনাফা।”

পরিশ্রম করিয়া উপার্জন করিবার প্রতি উৎসাহদান করিবার জন্য তিনি বলিয়াছেন: اَلْكَاسِبُ حَبِيْبُ اللهِ হালাল উপায়ে উপার্জনকারী ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু।
অপর এক হাদীসে বলা হইয়াছে:
اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْعَبْدِ الْمُخْتَرِفِ ـ
উপার্জনের কোন পেশা গ্রহণকারী বান্দাহকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন।
তিনি আরো বলিয়াছেন:
اِنَّ اللهَ يُحِبُ الصّا نِعَ الْحَاذِقَ ـ
চতুর ও দক্ষ শিল্পীকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন।

সদুপায় অর্থ উপার্জনের প্রতি মানুষকে পথনির্দেশ করিবার কাজ তিনি কেবল মুখেমুখে বলিয়াই সমাধা করেন নাই। তিনি নিজে কার্যত পরিশ্রম করিয়া উপার্জনও করিয়াছেন, অন্যের মূলধনে নিজের শ্রম যোগ করিয়া ব্যবসা করিয়াছেন। আলী রা. কুপ হইতে পানি তুলিয়া খেজুরের বাগান সিক্ত করিয়াছেন এবং এই পরিশ্রমের বিনিময়ে তিনি কিছু পরিমাণ খেজুর মজুরী স্বরূপ গ্রহণ করিয়াছেন। এইভাবে যাহারাই একনিষ্টভাবে ইসলামী আদর্শ অনুসরণ করিয়া চলিয়াছেন, তাহারা শ্রম ও মজুরির সাহায্য উপার্জন করিয়া দুনিয়ার সম্মুখে সুস্পষ্ট নিদর্শন সংস্থাপন করিয়া গিয়াছেন। ইমামগণ, প্রায় সকল শ্রেষ্ঠ আলিম ও ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণ পর্যন্ত মজুরি ও সাধারণ পেশার কাজ করিয়া রোজগার করিয়াছেন। এই সম্মানিত ব্যক্তিদের আদর্শ ও জীবন-কাহিনী দুনিয়ার ইতিহাসে উজ্জল অক্ষরে লিখা থাকিবে।

উমর ফারুক (রা) বলিয়াছেন, “তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যেন শ্রম-মেহনত করিয়া অর্থোপার্জনের কাজ বন্ধ করিয়া না দেয় এবং এই বলিয়া যেন বেকার হইয়া বসিয়া না থাকে যে, “হে খোদা তুমি আমাকে খাবার দাও”। কারণ তোমরা ভাল করিয়া জান যে, আকাশ হইতে সোনা চান্দি ঝরিয়া পড়ে না।”

এক কথায় জীবিকা উপার্জনের জন্য কোন পেশা অবলম্বন করা, সৎ চাকরী বা মজুরি খাটিয়া জীবন যাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে মূলত অন্যায় বা নিন্দনীয় নয় এবং উপার্জনের সঙ্গত কোন উপায় অবলম্বন করিবার দরূন কাহারো মনে কোনরূপ হীনতাবোধ জাগ্রত হওয়াও উচিৎ নয়। মজুর নিজে নিজেকে কখনো ছোট ও নীচ মনে করিবে না, আর কারখানার মালিককেও কোনদিকে দিয়াই শ্রেষ্ঠ বলিয়া বোধ করিবে না। পক্ষান্তরে কারখানা মালিক নিজেও নিজেকে মজুর অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর এবং মজুরকে নিজ অপেক্ষা হীনতর বলিয়া মনে করিবে না। বস্তুত পণ্যৎপাদনের ব্যাপারে শ্রম ও মূলধনের সমন্বয় অপরিহার্য। কারণ তাহা ব্যতীত পণ্যৎপাদনের ব্যাপারে শ্রম ও মূলধনের সমন্বয় অপরিহার্য। কারণ তাহা ব্যতীত পণ্যৎপাদন মাত্রই সম্ভব নয়। তাই এই উদ্দেশ্যে পুঁজিদার ও শ্রমিকের সমন্বয় সাধন একান্ত আবশ্যক। অতএব পরস্পর পরস্পরকে পাণ্যৎপাদনের ক্ষেত্রে সহকারী ও সহযোগী বলিয়া মনে করিবে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৬ রাত ৮:১৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×