রিয়াজুদ্দিন রাস্তার রাইট ওয়ে দিয়েই দিয়েই যাচ্ছিলেন। পুলিশের গাড়ি রং ওয়ে দিয়ে। একটা দুর্ঘটনা। একটা মৃত্যু। আদৌ কি দুর্ঘটনা?
যদি পুলিশের ওই গাড়িটা রাস্তার রাইট ওয়ে ব্যাবহার করত। আজ হয়ত রিয়াজুদ্দিনের এমন অপমৃত্যু হতনা।
অনেক গর্জন শুরু হয়েছে। আন্দোলন টাইপের কিছু। চালকের বিচার চাই। চাই। তারপর সন্ধ্যা নামলে যে যার বাসায়।
বাংলাদেশ এমন এক দেশ যেখানে ক্ষমতাই সব কিছু। পুলিশের ক্ষমতা আছে, মন্ত্রি এমপির ক্ষমতা আছে, সচিব সরকারী কর্মকর্তাদের ক্ষমতা আছে। আর যাদের ক্ষমতা আছে তারা আইনের ঊর্ধ্বে।
বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে আইন প্রনেতারাই, সরকারী কর্মকর্তারাই, জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারাই সবচেয়ে বেশি আইন ভাঙ্গে।
আসলেই কি তারা আইন ভাঙ্গে? না।
পৃথিবীর সব দেশে যেটা বেআইনি। বাংলাদেশে সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।
আর সেই অধম বাংলাদেশের নিকৃষ্টতম শহরের নাম 'ঢাকা'।
সব রাস্তার যেকোনো জায়গা ব্যাবহার হয় বাস স্টপ হিসেবে। মূর্খ, নকল লাইসেন্সধারী ড্রাইভার হেল্পার দের কাছে যেন ঢাকাবাসী জিম্মি। যেখানে খুশি, রাস্তার মাঝখানে বাস দাড়িয়ে লোক ওঠা নামা যেন এ শহরের কালচার। সব রাস্তার যেকোনো জায়গা ব্যাবহার হয় রাস্তা পার হতে। যেখানে যেখানে দরকার নেই, সেখানে ফুট ওভার ব্রিজ থাকলেও, যেখানে অবশ্যই দরকার, সেখানে নেই। থাকলেও আমরা মূর্খ-শিক্ষিত আপামর কেউই সেটা ব্যাবহার করিনা। কারন না করলে কিছুই হয়না। বরং সময় বেঁচে যায়। রাস্তার একপাশে ট্র্যাফিক জ্যাম। ক্ষমতাবান রা সেই জ্যামে বসে থাকেন না, তারা রং ওয়ে দিয়ে দিব্বি চলে যান। সাধারণরাও তাদের দেখা দেখি সেই সুযোগ নেন।
রাস্তার যেকোনো জায়গা দিয়ে রাস্তা পার হলে কারও কিছু যায় আসেনা, যদি এক্সিডেন্টে কেউ মারা না যায়।
রাস্তার রং ওয়ে দিয়েও দিয়ে গাড়ি চালালে কারও কিছু যায় আসেনা, যদি এক্সিডেন্টে কেউ মারা না যায়।
যেখানে খুশি গাড়ি থামিয়ে রেখে রাস্তায় জ্যাম লাগালে, যেখানে খুশি সেখানে দাড়িয়ে লোক ওঠানামা করলেও কারও কিছু যায় আসেনা, যদি এক্সিডেন্টে কেউ মারা না যায়।
এই অবহেলা গুলোর কারণে যদি যদি এক্সিডেন্টে কেউ মারা যায় সেটা কি দুর্ঘটনা?
না। হত্যা। রিয়াজুদ্দিন নিহত হননি, উনাকে হত্যা করা হয়েছে।
আর সেই হত্যার দায় সিস্টেম থাকা সত্তেও সেটা না মানা ওই পুলিশের ড্রাইভারের। দায় সিস্টেম না মেনে গাড়ি চালাতে দেখেও চুপ করে থাকা ওই রাস্তার ট্র্যাফিক পুলিশের। দায় ওই দায়িত্ব হীন পুলিশকে যারা নিয়োগ দিয়েছিলেন তাদের। দায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর, দায় সরকারের। আর সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকা, সব কিছু শুনেও না শোনার ভান করে থাকা বাংলাদেশের জনগণের।
আমরা বাংলাদেশীরা তখনই অনেক গর্জন দেখাতে পারি যখন লোহা গরম থাকে। যখন পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। আমরাও চুপ হয়ে যে যার মত যেমন ছিলাম তেমন হয়ে যাই। খাটি বাঙ্গাল হয়ে যাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:১২