পুরান ঢাকার বাংলাবাজার ফুটপাত থেকে কি কখনও পুরান বই কিনে পড়েছেন।
আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, ১৯৯৮ সালের কথা। মুসলিম স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাংলাবাজারের ফুটপাতের দোকানগুলো পরত।
যাওয়া আসার মাঝে উৎসাহ হয়। দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতাম কি কি বই, বইগুলোর নাম।
গোয়েন্দা বা ডিটেকটিভ ছোট বেলা থেকেই টানতো। এভাবেই একদিন কিনে ফেলি সেবা প্রকাশনীর তিন গোয়েন্দার __ নামটা মনে আসছেনা, বাসায় বইটা এখনও আছে। এই শুরু।
আব্বু পকেট মানি যা দিত, ওখান থেকে টাকা বাঁচিয়ে বই কিনতাম। ফুটপাত থেকে কিনতাম এই কারণে, মার্কেটে ঢুঁকে নতুন বই দেখার বা কেনার সাহস হতো না। একা একা একটা বড় দোকানে যাব, বই দেখবো, দাম যদি বেশি হয়? যদি টাকা কম থাকে? না কিনলে লোকেরা যদি কিছু বলে__ এগুলো ভেবে দোকানে নতুন বই কিনতে যেতাম না।
ফুটপাত থেকে ৮০ টাকার বই ১৫-২০ টাকায় পেতাম। সেই বই পড়া শেষ হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে আরও কিছু টাকা ভরে আবার অন্য বই নিতে পারতাম। এই ফ্যাসিলিটি টা কিন্তু দারুণ ছিল।
এভাবেই বাংলাবাজার ওভার ব্রিজের কয়েকজন দোকানদারের সাথে আমার খুব ভালই সম্পর্ক হয়ে গেছিলো। বাকিতেও বই নিতে পারতাম। পুরান বই পাওয়া যায় এমন একটা মার্কেটও আছে ওখানে। সেখানকার এক দোকানদার সাথে যেন আমার আত্মীয়ের সম্পর্ক হয়ে গেছিল। প্রতিদিন তার দোকানে একবার হলেও যেতাম। প্রতিদিন একেকসে একেক বই নেওয়া যেন নেশায় পরিণত হয়ে গেছিলো। যেসব বই পড়ার পর ভাল লাগতো সেগুলো রেখে দিতাম। যেগুলো কম ভাল লাগতো সেগুলো ফেরত দিয়ে অন্য বই নিতাম। প্রতিটা বই যেগুলো পড়ে শেষ করেছি তার একদম প্রথম পাতায় ডেট আর নিজের নাম লিখে রাখতাম। ভাল, মন্দ, গ্রেট মন্তব্য লিখে রাখতাম।
সেবা প্রকাশনীর বহু অনুবাদ পড়েছি। তিন গোয়েন্দা, রাকিব হাসান, অনীশ দাশ অপু, এই নামগুলো এখনও ভুলিনি। আরও অনেক ছিল, নাম মনে পরছেনা।
বাংলাদেশ, কলকাতার অনেক বাংলা উপন্যাসও পড়েছি।
বহু মনিষী জীবনী পড়েছি, তার মধ্যে সবার প্রথম যে বাইওগ্রাফিটা পড়ি সেটা হল "মেইন কামফ" । হিটলারের পারসোনালিটি, পেটরিয়টিজমের ভক্ত হয়ে যাই। রাশিয়ান "বিশ্ব কাপানো দশ দিন"। "লা নুই বেঙ্গালি"। ___ মনে পরছেনা।
আরেকটা সখ পেয়ে বসেছিল, অনেক পুরনো প্রকাশিত বই সংগ্রহ করার। ১৯২১ সালে প্রকাশিত একটা বই ছিল আমার কাছে। চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট বছর আগের আগের বই আমার কাছে ছিল।
_______ এইসব স্মৃতিচারণ করলে সারাদিন লিখলেও হয়ত শেষ হবেনা। তবে যদি সারাদিনও লেখি আমার খুব ভাল লাগবে। ওইসব স্মৃতি নিয়ে ভাবতেও ভাল লাগে। ইংরেজিতে "নস্টালজিয়া"। সেই রক্তমাংসের মানুষ আমি এখন ইঞ্জিনের রোবট হয়ে গেছি যে______।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:২৮