বিঃদঃ স্বামী বদলানো যায়। পিতা বদলানো যায় না। বিয়ে অনেকবার করা যায়। একেক স্বামীর একেক নাম হয়। জন্ম একবারই হয়। পিতাও একজনের একটিই হয়।
প্রাসঙ্গিক "মানুষ" একটি অনুকরণপ্রিয় প্রাণী। আবার "মানুষ" উদ্ভাবনে, আবিষ্কারেও সেরা। অর্থাৎ "মানুষ" কেবলই যে অনুকরণ করে জীবনযাপন করে তা নয়, নিজেও আলাদা নতুন কিছু করে। করার চেষ্টা করে। অনুকরণ "মানুষ" ছাড়া অন্যান্য প্রাণীরাও করতে পারে। কিন্তু নতুন কিছু তৈরি করা, এটা মানুষ ছাড়া অন্য কোনও প্রাণী পারে না। অনেকগুলো কারণের মধ্যে এটাও একটা কারণ "মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব" হওয়ার।
মুল প্রসঙ্গ মেয়েদের বিয়ের পর নিজের নামের সাথে স্বামীর নাম জুড়ে দেয়া, এটা মানুষের আবিষ্কার। আবার এটাই মানুষের অনুকরণ। একবার আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে এই রীতি আজ পর্যন্ত অনুকৃত হয়ে আসছে। এবং কেয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে। প্রথম কথা, এগুলো কেন আবিষ্কার করা হল, কারা আবিষ্কার করলো। "Mr & Mrs" রীতি কোন সংস্কৃতিতে আছে সবাইই জানেন এটা পশ্চিমা সংস্কৃতি।
বিশেষত আমেরিকান। বাস্তবে সেখানে কী ঘটে? ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিচ্ছেদ "ডিভোর্স"। বিয়ের পর নিজের Surname পাল্টানো ওয়েস্টার্ন কালচার, আবার বিয়ের ওর যেকোনো সময় ডিভোর্স দেয়াও ওদের কালচার বিরোধী নয়। বিয়ের পর নিজের নাম বদল করে, অথবা শেষে স্বামীর নাম জুড়ে দেয়। বিচ্ছেদের পর আবার যখন বিয়ে করে কেউ কেউ আগের স্বামীর নাম আজীবন রেখে দেয়, যদিও পরে আরও ৩ টা বিয়ে করলেও। আবার কেউ কেউ প্রতি বিয়ের পরই নিজের নাম স্বামীর নামে বদলাতে দ্বিধাবোধ করেন না। এ তো গেলো "কী হয় অথবা হচ্ছে"। এখন দেখবো "কেন হয় বা হয়ে আসছে"। ওয়েস্টার্নরা যেহেতু সিংহভাগই খ্রিষ্টান, সেহেতু বাইবেল থেকে পাওয়া যায়। কী পাওয়া যায়? দুঃখিত, কিছুই পাওয়া যায় না। "Mr & Mrs" অথবা স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে জুড়ে দেয়া, এমন কোনও কথা জিশু বাইবেলে বলেন নি। যেটা বলেছেন, বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী আর দুই সত্তা থাকে না, এক সত্তায় পরিণত হয়। দুইটা আলাদা দেহ থাকে না, এক দেহে পরিণত হয়। এক মাংসপিণ্ডে। যাই হোক, বাইবেলে মেয়েদের কয়েকভাবে ডাকা হয়েছে। অমুকের কন্যা, অমুকের স্ত্রী অথবা অমুকের অমুকের মা। আবার বাইবেলে এটাও নেই যে, নিজের নামের শেষে স্বামীর নাম জুড়ে দেয়া যাবে না। তার মানে, এটা বাধ্য কোন নিয়ম নয়। যার যার ইচ্ছা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সবাইই নিজের নাম পরিবর্তন/পরিবর্ধন করে ফেলে বিয়ের পর। কেউ বাদ যায় না (হাজারে একজন-দুজন বাদে)
তবে এই ট্র্যাডিশনটার পিছনে আমরা কিছু মানবিক, পারিবারিক কারণ দাড় করাতে পারি। একজন নারী যখন জন্ম হয়, পিতার পরিচয়ে বেড়ে ওঠে। পিতাই তার ভরণপোষণ করে তাকে পরিণত করেন। বিয়ের পর পিতা আর সেই দায়িত্ব পালন করেন না। ভরণপোষণের সকল দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তার স্বামী। জন্মের পর থেকে বিয়ের আগপর্যন্ত পিতা, বিয়ের পরথেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত স্বামী (যদি বাই চান্স এক বিয়েই হয়, দুঃখিত)। স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের পর তাই স্বামীর নাম নিজের নামের সাথে জুড়ে দেয়া হয়। এই যেমন Mr. & Mrs. Smith, যেখানে স্বামীর নাম John Smith, আর স্ত্রীর নাম Jane Smith. (বাস্তবে একজন Brad Pitt, আরেকজন Angelina Jolie, যদিও তারা স্বামী-স্ত্রী। সেটা কথা না, কথা হল) ওয়েস্টার্নরা এখানে ধর্ম পালন করছে না, ট্র্যাডিশন ফলো করছে, অনুকরণ করছে। সবাই করে আমরাও করি, লোকে কি বলবে? ভেবে।
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে বাংলাদেশেও এই ট্র্যাডিশন ফলো করা হয়। যেখানে বাইবেল, অথবা কোরান শরীফে কোথাও এটা বলা নেই। তবুও ফলো করা হয়। যার জন্য কারণ হতে পারে, এক) হুজুগে বাঙ্গালী (দুঃখিত), স্রোতে ভাসতে খুব মজা পায়। সবাই যা করে, না বুঝেই, সবাই তাইই করে। কেন করছে সে নিজেও জানে না, কিন্তু সে করছে মহা ধুমধামে। দুই) (ঐযে বললাম) বিয়ের আগে দায়িত্ব পিতার বিয়ের পর স্বামীর। খুব আনন্দ ও দুঃখ দুটো নিয়েই বলছি, আমাদের দেশে এক নম্বর কারণটিই ফলো করা হয়। কেননা এটা আমাদের ট্র্যাডিশন যে, সবাই যা করে আমাকেও তা করতে হবে। আমেরিকানদের চেয়ে এই ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি মনযোগী। আমাদের বাঙ্গালীদের আরেকটা স্বভাব হচ্ছে, আমরা অতি-ই-ই মাত্রায় ইমোশনাল, আবেগি। বিয়ের পর স্বামীর নাম না জুড়লে স্বামীকে যে কত্ত ভালবাসি তা বোঝাব ক্যামনে?, আমার ব্যাটার-হাফ টা রাগ করবে, স্বামীর প্রতি আমার অগাথ শ্রদ্ধা তো নিজের নাম পরিবর্তন করেই প্রমান করতে হবে, শ্বশুর বাড়ীর লোকজন নানান কথা বলবে। দুঃখিত আরও বেশি কথা বললে সংসারই ভেঙ্গে যাবে।
দেখা গেলো কেউ না বুঝে, কেউ ওয়েস্টার্নদের ফলো করে, কেউ স্বামী শ্বশুরবাড়ি রাগ করবে এই ভেবে স্বামীর নাম নিয়ে নেয়। এই ক্ষেত্রে কেউ কেউ আবার বেশি ভালো সাজতে গিয়ে ডালে চালে খিচুড়ি বানিয়ে ফেলে। যদি নাম হয় Kareena Kapoor Khan. একই নামে দুই বংশ। একটা হিন্দু একটা মুসলমান। কি এক সেকিউলাররে বাবা। এগুলোকে বলা হয় অতিআতেল। এগুলো ফাইজলামি। তার ছেয়েও বড় মশকরা হচ্ছে কিছু কিছু স্বামী সকল আবালিয় সীমানা অতিক্রম করে নিজের নামের সাথে স্ত্রীর লাস্ট নেম যুক্ত করে। এদের আপনারা কি ভাববেন আপনাদের ব্যাপার। আমি ভাবি, এরা অন্তঃসারশূন্য অপদার্থ।
কেয়ামতের সময় সকলকে তার পিতার পরিচয়ে ডাকা হবে। অর্থাৎ অমুকের সন্তান অমুক। পবিত্র কোরান শরীফে, হাদিসে এই বলে উল্লেখ আছে। যার কারণে এটা এরাবিয়ান কালচারও হয়ে গেছে বটে। ইবনে অমুক, অমুক বিন তমুক।
এখন যেটা জানা প্রয়োজন, কারা সঠিক? যারা নিজের নামের সাথে স্বামীর নাম জুড়েছেন তারা? যারা জন্মের পর থকেই পিতার নাম নিয়ে আছে, বিয়ের পরেও পিতার নাম নিয়ে আছেন তারা? যদি বলেন কালচার, সেটা ওয়েস্টার্ন। যদি বলেন স্বামী ভরণপোষণ করে বিয়ের পর সব দায়িত্ব তার, বিয়ে ভেঙ্গে গেলে, স্বামী মারা গেলে দ্বিতীয় বিয়েয়, নাম কতবার চেইঞ্জ করবেন? যদি বলেন স্বামীর প্রতি চরম শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়, নাম পরিবর্তন না করে পিতার নাম রেখেও স্বামীর প্রতি অনেক ভাবেই শ্রদ্ধা দেখানো যায়।
বিয়ের পর নাম পরিবর্তন করে, স্বামীর নাম জুড়ে দেয়া কোনও গর্হিত কাজ নয়। এটার কোনও খারাপ দিকও নেই। ভালো দিকও নেই। আছে কেবল আরেকটা ভিনদেশি ট্র্যাডিশনকে অনুসরণ করা, সামাজিক বাধ্যকতা মনে করা, স্বামীর প্রতি লোক দেখানো শ্রদ্ধা।
উপসংহারঃ অর্ধেক উপসংহার সূচনার আগেই বলে ফেলেছি। বাঁকি অর্ধেক হল, আসুন আমরা আমাদের শিকড়কে আঁকড়ে রাখি। মৃত্যুর আগপর্যন্ত শুধু নয়, মৃত্যুর পরেও পিতার পরিচয় বহন করি। এতে স্বামীকে ছোট করা হবে না। ভিনদেশি কোনও কালচারকেও অনুকরণ করা হল না। নিজস্ব স্বত্বা বলে কিছু থাকলো। পাশাপাশি যারা স্বামীর নাম নেয়ার পক্ষে তাদেরও বিরোধিতা করছি না। স্বামীর নাম স্ত্রীর নামের শেষে যুক্ত হওয়ায় দোষের কিছু নেই। তবে করার আগে, ভাবুন। স্বামীর সাথে আলাপ করে নিন। সে কোনটা পছন্দ করবে।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০