ইদানিং টিভি এ্যাডগুলোতে শিশুদেরকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।শিশু হয়েও তারা যেন শিশু নয়--শিশুর দেহে বন্দি পূর্ণবয়স্ক মানুষ।তাদের চিন্তা ভাবনা,রুচি,কথার ধরনে একটা অনাবশ্যক পরিপক্কতার ছাপ।
হরলিক্স মিনি প্যাকের একটা বিজ্ঞাপনে দেখা যায় শিশু শিল্পি(মেয়ে) বৃষ্টিস্নাত রাতে, রাত জেগে লেখাপড়া করছে ।রাত জেগে পড়ালেখা করার কারণ হিসাবে মা কে বলছে,“শুধু পরীক্ষার জন্য পড়লেই কি হবে?রাত জেগে না পড়লে ডাক্তার হবো কি করে?তখন বারান্দায় বসে তোমার সাথে বৃষ্টি দেখব।”এ্যাডে শিশু শিল্পীর বয়স ১০/১২ বছরের বেশি না।ক্যারিয়ার চিন্তা করার জন্য নেহায়েৎ অল্প বয়স।আর এত অল্প বয়সে ডাক্তারি পড়ার প্রিপারেশন শুরু হয় জানা ছিল না।হয়তো হরলিক্সের ওভার ডোজ হয়ে গেছে।মায়ের সাথে বৃষ্টি উপভোগের বিষয়টা আরও দৃষ্টিকটু।বৃষ্টির সৌন্দয্য উপভোগ করার জন্য যে সৌন্দর্য্যবোধ বা মানসিক পরিপক্কতা থাকার দরকার তা শিশুদের না থাকারই কথা।বৃষ্টির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আর তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে একজন হুমায়ূন আহমেদ কে হুমায়ূন আহমেদ হতে হয়।কিন্তু বিজ্ঞাপন দেখে মনে হয় হরলিক্স খেলেও জ্ঞানী-গুনি ব্যক্তিদের সেই রুচি ও ম্যাচুরিটি অল্প বয়সে অর্জন করা যায়।বৃষ্টি হলে শিশুদের স্বভাবিকভাবে স্কুল ফাকি দেওয়া বা রান্নাবাটি খেলার দিকে মন দেওয়ার কথা।বৃষ্টি নিয়ে নান্দনিক চিন্তা ভাবনা করার কথা না।সবই ডিএইচএ’র খেল রে ভাই,ডিএইচএ’র খেল। ডিএইচএ ছাড়া এই পৃথিবী এতোদিন কিভাবে চললো তাই ভাবছি।
হরলিক্সের আরেকটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় শিশু শিল্পী (ছেলে) তার মাকে বলছে,“ আমি বড় তো হচ্ছি ,কিন্তু বেড়ে উঠছি না কেন?”যে শিশু বড় হওয়া আর বেড়ে ওঠার পার্থক্য জানে আর তা নিখুঁত ভাবে প্রকাশ করতে পারে সে আর শিশু থাকে কিভাবে সে তো সাক্ষাৎ আমার পরদাদা।
বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের উচিৎ শিশুদেরকে বিজ্ঞাপনে শিশুদের মতো করে উপস্থাপন করা।শিশুদেরকে শিশুদের মতো উপস্থাপন করেও বিজ্ঞাপন বানানো যায়।সার্ফ এক্সেলের বিজ্ঞাপনগুলো দেখুন।শিশুসুলভ চঞ্চলতার কারণে কাদা ময়লায় মাখামাখি হওয়া শিশুদের নিয়ে এ্যাড বানিয়েছে তারা।একুয়াফিনা মিনারলে ওয়াটারের এ্যাডটাও কতো সুন্দর-- মেয়েটি পানি বিশুদ্ধকরন ধাপের নাম বলার সময় আটকে গেলে ছেলেটি মনে করিয়ে দেয়।শিশুসুলভ ভুল নিয়ে নির্মাতাদের কতো ডিটেইল চিন্তা-ভাবনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪১