somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুর শিষ্টাচার শিক্ষায় মায়ের ভূমিকা পর্ব-২

২৫ শে জুন, ২০১১ ভোর ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মা হলো শিশুর প্রথম শিক্ষক। মা শিশুকে লালন-পালন করে বড় করে তোলেন। প্রকৃতিগত ভাবেই মা এই কাজ করেন। মায়ের কাছে এই আগ্রহটা জাগে তাঁর শিশু সন্তানের প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে। সন্তান সারা জীবন সুখী, সুস্থ আর সফল হোক এটাই সব মায়ের আকাঙ্খা। কিন্তু তাঁর সন্তান যাতে শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলী অর্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে মাকে অবশ্যই একটু বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। এই বিশেষ ভূমিকায় মা হবেন শিশুর ভবিষ্যত নির্মাতা, তিনি তাঁর সন্তানকে সামাজিক হতে শেখাবেন, শেখাবেন মানুষের সাথে ব্যবহার, নৈতিকতা ও মানবিকতা।

সমাজে মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহারিক কার্যকলাপ ও মেলামেশার যে স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়া তার সাথে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, সক্রিয় ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব। আর এ কথা সত্যি যে ব্যক্তিত্ববান মানুষই যে কোন পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ। একজন মা তার সন্তানকে কিভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে বর্তমান আধুনিক সমাজে সফল ও ব্যক্তিত্ববান করে গড়ে তুলতে পারেন তার সাধারন আলোচনা আমরা করতে পারি।

১. একটি শিশু যখন আমি-তুমি সম্পর্ক, নিজের নাম অথবা সকল বস্তু বা ব্যক্তির নাম সম্পর্কে কৌতুহলী হয় তখন থেকেই তাকে হ্যা-না, ভাল-মন্দ, সুন্দর-অসুন্দরের ধারনাকে সুস্পস্ট করে দেয়া মায়ের কর্তব্য।এ থেকেই শিশু বিচার করার সামর্থ অর্জন করে।

২. শিশু অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠলে নিজেকে দেখতে শুরু করে নতুন ভাবে; তার নিজের বিকাশের দিগন্ত তার সামনে অনাবৃত হয়ে যায়। এই সময়ে শিশুর সামাজিক চাহিদার উপরে নজর দিতে হবে। অর্থাৎ শিশুর ভাবাবেগগত ক্ষুধা, ভালবাসা পাওয়ার চাহিদা, উৎসাহলাভের চাহিদা। এই চাহিদা পুরণের দ্বারাই শিশু অপরকে হয় বিশ্বাস নয় অবিশ্বাস করবে। সুতরাং এ সময়ে মাকে শিশুর ভাবাবেগকে পরিচালিত করতে হবে সঠিক পথে; ভাবাবেগের মাধ্যমেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেমন, প্রতিটি শিশুই মায়ের পছন্দের বিষয়গুলোকে বারবার করতে পছন্দ করে, উৎসাহিত হয়, এবং অপছন্দের বিষয়গুলো আর করে না। তাই মাকে ভাল-মন্দের বিচার করে শিশুকে বুঝিয়ে দিতে হবে তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের বিষয়।

৩. শিশুরা বড়দের অনুকরন করে শেখে, মা হচ্ছে তার এই অনুকরনের জন্য আদর্শ ব্যক্তি; তাই মাকেও হতে হবে শিষ্টাচারের জন্য আদর্শ। মায়ের আচরণ যদি মার্জিত না হয় তাহলে শিশুর ক্ষেত্রে মার্জিত ও শিষ্ট আচরন আশা করা যায় না।

৪. দৈনন্দিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাকে খোলাখুলি, সহজ ও অকপট হতে হবে, এমন কি আদোর, ভালবাসার কথাগুলিও সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে হবে।

৫. একটি শিশু বিভিন্ন কারনেই প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি অসন্তুষ্ট হতে পারে। এবং এ ক্ষেত্রে তারা কখনো ক্ষেপে গিয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে বা শারীরিকভাবে হুমকি দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। সেক্ষেত্রে ছোট বলে হেসে উড়িয়ে দেয়া যাবে না, বিষয়টি বয়স অনুপাতে কঠোরতা দেখাতে হবে। মাকে এসব ক্ষেত্রে অত্যান্ত তৎপর হতে হয় এবং কোমলে-কঠোরে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শিশু সন্তানকে। কঠোর দৃষ্টিতে তার দিকে সোজাসুজি তাকানো বা কড়া সুরে নিষেধ করা ইত্যাদি তাকে নিরুৎসাহিত করবে। এর ফলে সে কখনো বড়দের প্রতি আক্রমণাত্মক অঙ্গভঙ্গি করবে না।

৬. অনেক সময় পরিবারের বয়স্করাই তাঁদের আচরন দ্বারা শিশুকে হিংসাত্মক মনোভাব শিখিয়ে দেন। শিশুর বর্ণবাদী মনোভাবও তৈরী করে দেন পরিবারের সদস্যরা। যেমন ''ও হচ্ছে কালো, ওর সাথে মিশবে না'' বা ''আমাদের বাসায় এলে ওকে আমরা মার দেবো''; বড়দের এরকম বুলিই শিশুকে অন্যের প্রতি হিংসাত্মক মনোভাব তৈরী করতে শেখায়।

৭. শিশু কিছুটা বড় হবার সাথে সাথেই তাঁকে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া উত্তম। ধর্মীয় শিক্ষা শিশুর মনোজগতে এক বড় রকমের পরিবর্তন ঘটায়। তাকে শিষ্ট হতে বাধ্য করে এবং ন্যায় ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করে। সামাজিক ও অসামাজিক কাজের পার্থক্য শেখায়, এমনকি সকলের অজ্ঞাতসরেও সে অন্যায় কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করে না। এ সম্পর্কে ধারণা মাকেই দিতে হবে। কেননা শিশু প্রথমত মায়ের কথাকেই একবাক্যে বিশ্বাস করে। এসব কারনেই মাকে শিশুর ব্যক্তিত্বগঠন ও শিষ্ট আচরন শেখাতে হবে।

আজকের এ আলোচনার পরিসর অত্যান্ত সীমিত হলেও, এই সামান্য সময়ে সম্পূর্ণ বিষয়ে আমরা পরিস্কার ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করেছি; এবং এই আলোচনা থেকে আমরা এ কথাই বুঝতে চেষ্টা করেছি যে একটি শিশুকে সঠিকভাবে লালন করে মার্জিত, মানবিক ও সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা এতো বেশী যা বলা বাহুল্য। সর্বপরি এ কথা বলা যায় যে, শিশুকে ভবিষ্যতের নাগরিক হিসেবে তৈরী করতে মায়ের যে বিড়াট ভূমিকা রয়েছে তা শুধু উপলব্ধি করলেই হবে না, মাদেরকে এর জন্য প্রস্তুত হতে হবে, শিক্ষিত হতে হবে। তবেই গঠন হবে শিক্ষিত জাতি।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×