তারিখ: ০৪ মে ২০১১ খ্রী;
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
বরাবর
থানা নিবার্হী কর্মকর্তা
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম
বিষয়: কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রসঙ্গে।
জনাব,
নিবেদন এই যে, আমি জাহিদা পারভীন, ইকবাল পার্ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা)। গত ১৬ জুন ২০১১ইং তারিখ থেকে আমি এই বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হই, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই আজ অবধি কর্মস্থলে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছি। যা আমাকে মানসিকভাবে প্রচন্ড পরিমান হতাশ ও জীবনের প্রতি বীতশ্রাদ্ধ করে তুলছে। উল্লেখ্য যে, নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমাকে নারী হওয়ার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে চাপের মধ্যে রাখে। এছাড়াও আমি শারীরিকভাবে ভারী মানুষ (মোটা), এ কারনে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষকসহ অন্যান্যরা আমার অজান্তে অথবা প্রকাশ্যে অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দের সামনে এবং ছাত্রীদের নিকট নানা ধরনের কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করে থাকেন।
জনাব, গত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সফলতার দায়-দায়িত্ব নীতিগত ভাবে একজন শরীরচর্চা শিক্ষকের কাঁধে পড়ে, এবং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে যেখানে আমি নিয়োগ প্রাপ্ত, সেই দায়িত্ব আমি পালন করতে পারিনি। আমাকে এসব কাজ থেকে বিরত রেখে তাঁরা নিজস্ব খেয়াল খুশীমতো পরিচালনা করেন। এছাড়াও এ প্রতিযোগীতার যাবতীয় বাজেট এবং খরচাদি আমাকে প্রদর্শন না করিয়ে স্বাক্ষর করতে বললে আমি তা করতে অস্বীকার করায় সেখানে তাঁরা নিজেরাই স্বাক্ষর করেন এবং আমাকে বিভিন্ন কটুবাক্য শোনান।
বর্তমান সরকার শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে-করছে। এসব প্রশিক্ষণ গ্রহন করা প্রতিটি শিক্ষকের অবশ্যই কর্তব্য কিন্তু আমার নামে শিক্ষা অফিস থেকে চিঠি এলেও এসব প্রশিক্ষণে আমাকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয় না। এরূপ শারীরিক শিক্ষকদের এক প্রশিক্ষণে আমাকে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার কারণে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে প্রধান শিক্ষক কারণ দর্শাও নোটিশ পায়। আর এ কারণে আমার প্রতি তাদের হয়রানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও আমি চট্টগ্রাম অঞ্চলের না হওয়ার কারণে আঞ্চলিকতার শিকার হচ্ছি। এসমস্ত কারণে আমাকে বর্তমানে প্রতিনিয়ত হয়রানির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
নিয়োগের পর আমার বেতনের সরকারি অংশ পাওয়ার যাবতীয় কাগজপত্র দিতে ইচ্ছে করে দেরী করে, যার ফলে আমার এমপিও পেতে বেশ কয়েক মাস দেরী হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের পর আমাকে জানায় যে আমাকে আমার দায়িত্বের সাথে সাথে একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন কম্পিউটার শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হবে; এবং এই বাবদ আমাকে বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন ১২০০/-(বার শত) টাকা মাত্র প্রদান করা হবে। কিন্তু নিয়োগপত্রে এই বেতনের কথা উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে ঐ বেতনের পরিমাণ প্রধান শিক্ষক অস্বীকার করেন। নির্ধারিত হয় ৬৫০/-(ছয় শত পঞ্চাশ) টাকা মাত্র। এছাড়াও যেহেতু শরীরচর্চা শিক্ষককে স্কাউট শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার নির্ধারিত ১৫০/-(একশত পঞ্চাশ) টাকা দেয়ার কথা কিন্তু তার কোন উল্লেখ ছিল না। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসা করলে জানানো হয় ঐ বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতনের মধ্যেই তা রয়েছে।
গত ১২জানুয়ারী২০১১ইং তারিখে লাইব্রেরীয়ান ও কম্পিউটার শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিয়ে আমি একটি আবেদন করি কিন্তু প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য সহকর্মীবৃন্দ (বিশেষতঃ সহ-প্রধান শিক্ষক) আমাকে চাপের মুখে এ কাজ করতে বাধ্য করছে। উল্লেখ্য যে, লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমাকে সহ-প্রধান শিক্ষক (আগে তাঁর দায়িত্বে লাইব্রেরী ছিল) কোনরুপ বইয়ের তালিকা সরবরাহ করেনি এবং তালিকা নাই বলেও জানিয়েছেন। এখনও কোন তালিকা তৈরী করা হয়নি। এরূপ অবস্থায় আমার নিকট হতে লাইব্রেরীর চাবি বুঝিয়ে না নিয়েই গত জানুয়ারী থেকে আমাকে লাইব্রেরীয়ানের সন্মানী বাবদ ১৫০/- টাকা বিদ্যালয়ের সম্মানী কর্তন করে। এবং গত ০৩ মে ২০১১ইং তারিখে প্রধান শিক্ষক আমাকে কোন রূপ লিখিত না দিয়ে এক প্রকার জোড় করেই হাত থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়। ফলে এ বিষয়ে নতুন ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছি।
আমি বর্তমানে কর্মস্থলে প্রচন্ড পরিমাণ মানসিক চাপ ও হয়রানির ভেতর রয়েছি এবং আশঙ্কা করছি প্রধান শিক্ষক, সহ-প্রধান শিক্ষক ও ধর্মীয় শিক্ষক-এর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে পারি; যা আমার কর্মজীবনের হুমকি হয়ে উঠবে।
অতএব জনাব নিবেদন এই যে, একজন শিক্ষক হিসেবে এই অবস্থার সমাধান ও প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে আমাকে সন্মানজনকভাবে শিক্ষকতার সুযোগ করে দিয়ে বাধিত করবেন।
নিবেদক
জাহিদা পারভীন
সহকারি শিক্ষক (শরীরচর্চা)
ইকবালপার্ক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



