somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার রাজনৈতিক আশঙ্কা ও ভবিষ্যদ্বাণীই সত্যি হলো

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নির্বাচনের দু'মাস আগে লিখেছিলাম “পত্রিকার কলাম ও টিভি টকশোর শেষ বাক্যগুলোতে মীমাংসার প্রশ্নে জ্ঞানী ও চিন্তাশীলগণ ‘যদি’ করা হয়, করতে ‘হবে’, দিতে ‘হবে’- এভাবে বলেই দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু এই ‘যদি’ বা ‘হবে’টা কিভাবে হবে তা বলেন না বা বলতে পারেন না। অনেকেই আবার ‘দৈবক্রমে’ দেশ ভাল হয়ে যাক- এমনটাই প্রত্যাশা করেন। কিন্তু বাস্তবতা প্রকৃতপক্ষে সম্পূর্ণ ভিন্ন।” ...বাকি মাত্র দু’মাস মাস। এই দু’মাসেও দেশ কতটুকু ‘সুখী’ হবে তা এখন সাধারণ মানুষও চোখ বুজেই একপ্রকার বলে দিতে পারে।

ভয়াবহ সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। কি হবে না হবে কেউ বলতে পারছেন না। আসছে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে আশঙ্কা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা এক কথায় নজীরবিহীন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্ম ভীত সন্ত্রস্ত। ইতিহাস ও বর্তমান ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আশার চেয়ে আশঙ্কাই বেশি। কারণ ইতিহাস সবসময় নিয়ম মেনে চলে না। পূর্বে এ জাতি এরকম কয়েকটি চরম সংকট ভাগ্যগুণে অতিক্রম করলেও ইতিহাসের নিকট বারবার তা আশা করা নেহায়েত বোকামী। একটা সময় ইতিহাস ভেঙ্গে পড়বেই, যদি পূর্ব থেকেই পারস্পরিক সৌহার্দ-সম্প্রীতির উদ্যোগ কার্যকর না থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট যে আকার ধারন করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করা দুরূহ। যদি কোনোভাবে এবারও রক্ষা পাওয়া যায়, তবুও ভবিষ্যত আশঙ্কামুক্ত নয়।
কেননা তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি, হয়েছে ধীরে ধীরে। সুতরাং তাৎক্ষণিক কোনো লেখা, বক্তব্য-বিবৃতি, উপায়-উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদি কোনো ফল বয়ে আনবে না। পদক্ষেপ নিতে হবে সুদূর প্রসারী, বাস্তবমুখী ও গঠনমূলক। আর সামগ্রিকভাবে দেখলে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই আজ ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন; মহাসংকটে নিপতিত। চারদিকে বাজছে যুদ্ধের দামামা, বিশ্ব এখন পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকির মুখে। আল্লাহ না করুন, যদি শিগগিরই বিশ্বনেতাদের পারস্পরিক মতৈক্য ও সমঝোতা-সমন্বয় না হয়; মানবজাতির জন্য সম্ভাব্য এক মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে।


বাংলাদেশ যে ইতোমধ্যেই খাদের কিনারে পৌঁছে গেছে এতে সন্দেহ নেই। তাই আমাদের অতীত ও বর্তমানের তিক্ত বাস্তবতা পর্যালোচনা করে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় দীর্ঘদিন ধরেই বিশিষ্টজনেরা সরকার ও বিরোধীদলকে সংলাপে বসার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয়, এ পর্যন্ত কয়েকটি শক্তিশালী উদ্যোগও গ্রহণ করেছেন। কিন্তু সেগুলো সহসাই ব্যর্থ হয়েছে। আজ জনমতও সংলাপ চায়। পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় সংলাপের বিষয়টিই এখন মুখ্য। কিন্তু দুই নেত্রী যার যার অবস্থানে অটল। এমনকি তারা সংলাপের সম্ভাবনা বারবার জাগিয়েও কেন পিছিয়ে আসছেন, ভেতরে ভেতরে কোন্ খেলা খেলছেন কেউ বুঝতে পারছে না। এর কারণ কি? রাজনৈতিক দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে হয় সংলাপের কার্যকারিতা অস্বীকার করা হোক, না হয় এর বিকল্প হাজির করা হোক- যে বিকল্প উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট পথ নির্দেশক। পুরো একটা জাতিকে এভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুলিয়ে রেখে ক্রমাগত সংঘাতের পথে ঠেলে দেয়া কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সম্প্রতি দেশব্যাপী যেভাবে প্রতিদিন বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, শ্রমজীবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় সংগঠন, নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, সুশীলসমাজ, আলেমসমাজ, বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংঘ-সমিতি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী, সাধারণ জনতা, বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অসংখ্য মানুষ সময়ে অসময়ে সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠছে, আন্দোলন-সংগ্রাম করছে, মিছিল করছে, হরতাল-বিক্ষোভ-ভাঙচুর করছে, বোমা ফাটাচ্ছে, রাস্তায় টায়ার জালাচ্ছে, আগুন দিচ্ছে, সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাচ্ছে, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পেশ করছে, আর পুলিশ যেভাবে তাদের লাঠিচার্জ করছে, গুলি করছে, মারছে, ধরছে, থানায় নিচ্ছে, মামলা দিচ্ছে, হয়রানী করছে, চাঁদা নিচ্ছে- এ চিত্র আমরা যদি মনে করি কেবল আওয়ামী সরকারের ব্যর্থতা তাহলে চরম ভুল হবে। কারণ পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বৈষম্য অনেক বেড়ে গেছে, হিংস্রতা, মূর্খতা, পাশবিকতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব, প্রবৃত্তিজাত চাহিদা আগের তুলনায় অনেক অনেক বেড়েছে।

অপরদিকে এই বিয়াল্লিশ বছরে জনসংখ্যার তুলনায় স্বাভাবিক যে উন্নয়নের একান্ত প্রয়োজন ছিল শিক্ষাব্যবস্থায়, আবাসন খাতে, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি খাতে, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়- ‘বাংলাদেশ’ তার ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। ফলে এই সব সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়বে। তা যে সরকারই আসুক বা থাকুক না কেন। বাংলাদেশ এখন যে অবস্থায় পৌঁছেছে, স্বাভাবিক কোনো ফর্মূলায় তা থেকে উত্তরণের পথ নেই। যদি না বিপ্লবাত্মক কোনো পদক্ষেপ-পদ্ধতি-কর্মসূচি বা ফর্মূলা গৃহীত হয়। আর এমনটা আমরা আশা করতে পারি না এ কারণে যে, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী, সুশীলসমাজ, শিক্ষকসমাজ ও আলেমসমাজের সেই মেধা ও ঐক্য নেই। সুতরাং ‘দৈবক্রমের’ উপর ভরসা করা ছাড়া আমিও এ মুহূর্তে নতুন কোনো পথ দেখছি না।
সূত্র : রাজনীতির মুখোশ- ১২-১৫ পৃষ্ঠা
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×