‘রাজনীতি’ ‘রাজনীতি’ করে “জনমানুষের নীতি”র উন্নতি ঘটানো যাবে না। তাই এ শব্দটিই সমূলে উৎপাটন যোগ্য। এ শব্দটি দূষিত, এটি সমাজে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আসুন, আমরা ‘গণনীতি’ চর্চা করি। এখান থেকেই, এই ছোট্ট একটি পয়েন্ট থেকেই আমরা পরিবর্তন শুরু করি। কোথা থেকে কে এসে কোটি মানুষের ‘রাজা’ বনে যাবে- এই একুশ শতকে, গণপথ রাজপথ হয়ে যাবে, তারা ইচ্ছেমতো পরিবারতন্ত্র ও রাজতন্ত্র কায়েম করবে, আর আমরা তাদের প্রজা ও গোলাম হব, এটা অসম্ভব! টকশোবাজদের বলে দিন, গণনীতির সালাম নিন, রাজনীতি বিদায় দিন।
বিচার মানি তবে তালগাছ আমার! পরিবর্তন পরিবর্তন করি কিন্তু গতানুগতিক পথেই, নিজের স্বার্থ, দূষিত ধ্যান-ধারণা, ব্রিটিশ-কল্পিত শিক্ষা ও কুবুদ্ধি একটুও ছাড়তে রাজি নয়, আবার পরিবর্তনও চাই, এটা কীভাবে সম্ভব? তারা শিক্ষার নামে আমাদের যা বুঝিয়েছে, ধর্ম বলতে দুই প্রান্তিক বলয়ের যে মগজধোলাই করেছে, তাই দিনের পর দিন আমরা আকড়ে থাকব? কঠিন বলে নিজের সম্পর্কে, নিজের মনুষ্যত্ব ও স্বাতন্ত্র সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তুলব না
বলেছিলাম শীঘ্র দেশব্যাপী “সামাজিক সভা” নিয়ে কাজ করব। এতে ক’জনকে পাই জানি না। তবে আমি আশাবাদী, অল্পকজন হলেও চলবে। আমি নিজে সবদিক থেকে খুবই দুর্বল। তবু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘সামাজিক সভা’য় আমার আহ্বানে অনেকেই সাড়া দিয়েছিলেন। সামাজিক সভা আসলে কী? তা আগে আমরা আলোচনা করব। এর উপর আমার একটা লেখা আছে। পরে দেব। সংক্ষেপে এর ওপর প্রথম আলোর চিঠিটা দেখে নিতে পারেন। আমাদের দেশে অনেক ‘সামাজিক সংগঠন’ ও ‘সামাজিক কার্যক্রম’ আছে। কিন্তু ‘সমাজ’ বিষয়টা কী তা না বুঝলে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড ব্যর্থ হতে বাধ্য। হচ্ছেও তাই।
ইসলাম ও গণতন্ত্রে “রাজনীতি”, ‘রাজ’ বা ‘রাজা’র কোনো অস্তিত্ব নেই, থাকার প্রশ্নই আসে না। ইসলাম ও গণতন্ত্রে যা তা হচ্ছে “গণনীতি”। আমরা আমাদের চলাচলের যেসব পথকে ‘রাজপথ’ বলি তা আসলে রাজপথ নয়, ‘গণপথ’। রাজনীতি শব্দের অর্থ ‘নীতির রাজা’ বা ‘রাজার নীতি’ যাই হোক, এসব “রাজা-প্রজা’ সম্পর্কে আমাদের কোটি কোটি জনগণ বিশ্বাসী নন। ভাল নীতিকে ইসলাম নীতির রাজা বলে না, বলে উত্তম বা শ্রেষ্ঠ নীতি। সুতরাং এটা নিশ্চিত যে, ইসলাম বা ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।
সম্প্রতি একজন মার্কিন লেখিকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “ধর্ম ও রাজনীতি ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত”। আমি কথাটির তীব্র প্রতিবাদ করছি। যদিও তিনি ধর্মবিশ্বাসী না হয়েও ইসলাম তথা ধর্মের পক্ষেই বলতে চেষ্টা করেছেন। আমি এটাকে ‘পক্ষে’ বুঝি না।
সমসাময়িক কথিত ‘গরম’ ইস্যু নিয়ে সাধারণত আমি কথা বলি না। কারণ এসবের আড়ালে সাধারণ মানুষের মৌলিক স্বার্থ এবং ‘সর্বজনীন মৌলিক আলোচ্য বিষয়’ চাপা পড়ে যায়। আমার লেখা কেউ পড়ে না, কথা কারও কাছে পৌঁছে না। কারণ কঠিন। সবাই সহজ খুঁজে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ওসব কথিত ‘সহজ বিষয়’ সমাজের কঠিন থাবা থেকে রক্ষা করতে পারে না। আসলে আগে-পরে যেকোনো একটা কঠিনকে বেছে নিতেই হবে।
ফেসবুক-ব্লগে লিখছি চার বছর ধরে। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এমনকি ফেসবুকে আমার পুরনো বন্ধুরাও আমার সাথে নেই। অন্যদিকে বহু নাবালক ছেলে-মেয়ে অল্পসময়ে সেলিব্রেটি হয়ে গেছে, গরম গরম কথা বলে। খালি কলসি নাকি বাজে বেশি। যাহোক, এসবের পরোয়া করি না। আমি আগেও বলেছি, সমাজ একদিনে নষ্ট হয়নি, তাই একদিনে ভাল হবে না। ধীরে ধীরে পরিবর্তনের চিন্তা করতে হবে। আর সেজন্য দরকার জ্ঞানগত বিপ্লব। সেদিক থেকে আমি ঠিকমতোই কাজ করছি। শীঘ্র দেশব্যাপী “সামাজিক সভা” কর্মসূচী হাতে নিতে পারি। কেউ সাথে থাকার ইচ্ছে হলে জানাবেন। তবে সবচেয়ে বড় কথা, আগে আমাদের প্রত্যেকের নিজের পরিবর্তনটা দরকার।