somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতে আবারো মাওবাদ : স্মরণ করিয়ে দেয় উত্তাল ৬০-এর দশক-প্রথম পর্ব

২৬ শে এপ্রিল, ২০১০ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পার্লামেন্ট শুয়োরের খোঁয়াড়! বন্দুকের নল ক্ষমতার উৎস! নির্বাচন বুর্জোয়াদের ধোঁকাবাজি!!!.......৬০-এর দশকে ভারতে চারু মজুমদারের নেতৃত্বে এ সব শ্লোগান ধারণ করে নক্সালবাড়ি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। হাজার হাজার তরুণ ওই সময় চারু বাবুর আহ্বানে সাড়া দেয়। পরবর্তীতে চারু মজুমদার-কানু সন্যাল-সরোজ দত্ত-আজিজুল হকদের নির্দেশনায় নক্সালবাড়ি আন্দোলন সারা ভারত ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মাওবাদী আন্দোলনের তীব্রতায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মসনদ প্রশ্ন বিদ্ধ হয়। কিন্তু, জনমানুষের অংশগ্রহণ না থাকায় এ আন্দোলন ক্রমশ বিচ্ছিন্নবাদী ধারায় পরিণত হয়। যে জনগণের জন্য তাদের আন্দোলন ছিল, তারাই নক্সাল কর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ভারত সরকারের আক্রমণের তীব্রতায় এক পর্যায়ে ওই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু, সাম্প্রতি ভারতীয় মাওবাদীরা আবারো সংঘটিত হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান মাথা ব্যথা হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছে। বর্তমানে তাদের উপর কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত অপারেশন গ্রীন হান্ট পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু, মাওবাদীদের কোনভাবেই দমানো যাচ্ছে না। গ্রীন হান্ট ঘোষণার পর তারা পাল্টা অপারেশান পিস হান্ট ঘোষণা করে। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণ ক্রমশ জোরদার হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৬ এপ্রিল মাওবাদী গেরিলারা ৭৩ জন পুলিশকে হত্যা করে। ছত্তিশগড়ের দান্তেউয়ারা জেলায় ঘটনাটি ঘটে।

মাওসেতুং

অপারেশন গ্রীন হান্টের নেপথ্যে
মাওবাদী ও সরকার পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নেপথ্যে রয়েছে, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার খনিজ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করা। ছত্রিশগড়ের দান্তেউয়ারা জেলায় লোহার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এ প্রাকৃতিক সম্পদ বহুজাতিকের হাতে তুলে দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। খনি খনন হলে এখানকার আদিবাসীরা তাদের বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে। আদিবাসীদের উচ্ছেদ ছাড়া এখানে লোহা উত্তোলন সম্ভব নয়। বিপরীতে, আদিবাসীরা তাদের বাস্তুভিটা রক্ষার্থে জীবন দিতে প্রস্তুত। এমতাবস্থায়, আদিবাসীদের পাশে মাওবাদীরা অবস্থান নেয়। এ দুই শক্তি মিলে গড়ে উঠেছে তীব্র প্রতিরোধ। মাওবাদীদের উচ্ছেদ করতে না পারলে বহুজাতিক কোম্পানি খনির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না। এমতাবস্থায়, ভারতীয় শাসক শ্রেণী মাওবাদীদের দমনের জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তার অংশ হিসেবে ভারতীয় সরকার অপারেশন গ্রীন হান্টের সূচনা করে। বর্তমানে এ অভিযানে ৪০ হাজার আধা সামরিক বাহিনী ও পুলিশ যুক্ত রয়েছে। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে ছত্রিশগড়ের পাশাপাশি অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের কিছু কিছু এলাকা থেকে মাওবাদীদের সমূলে উচ্ছেদ করা। গ্রীন হান্ট কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি পরিচালনা করছে। ইতিমধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেডের হেডকোয়ার্টার ছত্রিশগড়ে স্থাপন করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি সপ্তায় কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জন আদিবাসীকে হত্যা করা হচ্ছে।
বছর দু’ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং দেশের একক বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ হুমকী হিসেবে মাওবাদীদের অভিযুক্ত করেন। স¤প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্টে এ ব্যাপারে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রয়েছে এমন জায়গাগুলোতে যদি এভাবে বামপন্থি সন্ত্রাসবাদকে বাড়তে দেয়া হয় তাহলে দেশের বিনিয়োগের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” সুনির্দিষ্টভাবে মাওবাদী কারা? মধ্য ভারতের উপজাতি নিপীড়িত মানুষরাই মাওবাদীদের সদস্য। এরা রাষ্ট্রীয় সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভারতের স্বাধীনতার ৬০ বছর পেরিয়ে গেলেও এরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা এখানকার দরিদ্র মানুষকে শোষণ করেছে। এমতাবস্থায় মাওবাদীদের দীর্ঘ সংগ্রামের কারণে দরিদ্রপীড়িত মানুষ তাদের উপর আস্থা রাখে। সরকারের পক্ষ থেকে এই আদিবাসীরা অবহেলা আর শোষণ ব্যতীত অতীতে কিছুই পায়নি। ফলে জমি রক্ষার তাগিদে তারা অস্ত্র ধরতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালে ভারতের পরিকল্পনা কমিশন নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ‘উগ্রপন্থি উপদ্রুত এলাকায় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ’-এর শিরোনামে একটি রিপোর্ট জমা দেয়। তাতে নক্সালবাদী কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করে ভূমিহীন, গরীব কৃষক ও আদিবাসীদের মধ্যে এ আন্দোলনের শক্তিশালী ভিত রয়েছে বলে মত প্রকাশ করা হয়।

মাওবাদের উত্থান যেভাবে
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মাও সেতুংয়ের মতাদর্শ থেকে মাওবাদ গড়ে উঠেছে। তবে, মাওবাদের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আান্দোলনে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। বামপন্থিদের একটা বড় অংশ মাওকে সমাজতন্ত্রের অথরিটির স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তাদের মতে, মাওয়ের গৃহীত পদক্ষেপ মতবাদ হিসেবে আখ্যায়িত হতে পারে না। কারণ, মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিনের পরে সমাজতন্ত্রের মূল আদর্শে মাওয়ের মৌলিক কোন সংযোজন নেই। ফলে এটি একটি চিন্তাধারা হিসেবে বিবেচিত হবে। আবার বামপন্থিদের অন্য একটি অংশ মাওকে সরাসরি শোধনবাদী হিসেবেও মূল্যায়ন করে থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমরেড আব্দুল হকরা এ অবস্থান নেয়। আলবেনিয়ার তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা আনোয়ার হোজা এ চিন্তাধারা নিয়ে আসেন। তার মতে, স্ট্যালিন পরবর্তী ক্রুশ্চেভ ও মাওসেতুং দু’জনেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। ফলে, মস্কো ও বেজিং-এ দু’য়ের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা করতে হবে। স্ট্যালিনের মৃত্যু পরবর্তী মাওয়ের নির্দেশিত মতবাদের উত্থান হয়। স্ট্যালিনের পর ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মৌলিক কর্মসূচি পরিবর্তন করা হয়। পাশাপাশি স্ট্যালিনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। তার আমলে গৃহীত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিপ্লব প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ ও ‘শান্তিপূর্ণ তত্ত্ব’ হাজির করে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক হবে শান্তিপূর্ণ। অর্থাৎ, যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন দূরে থাকবে। অথচ, একই সময় কিউবা, ভিয়েতনামসহ আরো বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্র হামলা পরিচালনা করছিল। ফলে রাশিয়ার এহেন নীতি বিশ্ব ব্যাপী সমাজতন্ত্রীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পাশাপাশি ক্রুশ্চেভের ঘোষণা হচ্ছে, সোভিয়েত ইউনিয়নে আর শ্রেণী সংগ্রামের প্রয়োজন নেই। কিন্তু, মার্কস নির্দেশিত সমাজতন্ত্রে সুনির্দিষ্টভাবে বুর্জোয়া শ্রেণীর অবস্থান থাকবে। শান্তিপূর্ণ উত্তরণের ব্যাপারেও সে সময় যথেষ্ট সমালোচনা তৈরি হয়। ওই কর্মসূচি মোতাবেক দেশে দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে বামপন্থিরা ক্ষমতায় আসবে। ফলে বিপ্লবের প্রক্রিয়াটি এখানে গৌণ করা হয়। এমতাবস্থায় বিশ্বের কমিউনিস্ট শিবির দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাশিয়ার এ অবস্থানের বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধ করে মাও নেতৃত্বাধীন চীনা কমিউনিস্ট পার্টি। রাশান কমিউনিস্ট পার্টির এমন নীতির কারণে তৎকালীন পূর্ব বাংলাসহ দেশে দেশে বামপন্থি দলগুলো ভেঙে যায়। মস্কো ও বেজিং পন্থার উদ্ভব হয়। এখান থেকেই মাওবাদের উদ্ভব।

মাওবাদী গেরিলা যোদ্ধা

ভারতীয় মাওবাদীদের আদি প্রেক্ষিত
ভারতের মাওবাদীদের পূর্ব থেকে নক্সালবাদী হিসেবে চি‎িহ্নত করা হয়ে থাকে। নক্সাল শব্দটির উৎপত্তি হচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোট গ্রাম ‘নক্সালবাড়ি’ থেকে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির (মাকর্সবাদী) একাংশ ১৯৬৭ সালে দলের রণনীতি-রণকৌশলের বিরোধিতা করে। মূলত, ওই সময় সোভিয়েত গৃহীত কর্মসূচির প্রশ্নে সিপিআই (এম)-এর অবস্থান নিয়ে এ বিরোধের সূচনা। তার অংশ হিসেবে ওই পার্টি থেকে চারু মজুমদার, কানু সন্যালসহ আরো একাধিক নেতৃবৃন্দ বের হয়ে আলাদা রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দলের নাম দেয়া হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। ওই দলের নেতৃত্বে পরবর্তীতে, ভারতে মাওবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষিত তৈরি হয়। বিদ্রোহের সূচনা হয় ১৯৬৭ সালের ২৫ মে। ওই সময় নক্সালবাড়ি গ্রামে কৃষকদের উপর স্থানীয় ভূস্বামীরা ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে অত্যাচার করে। কৃষকরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে আন্দোলনের তীব্রতায় অত্যাচারী ভূস্বামীরা নক্সালবাড়ি থেকে উৎখাত হয়ে যায়। পরবর্তীতে, নক্সালবাড়ির উদাহরণ চারু বাবুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সারা ভারতে ছড়িয়ে দেন। নক্সাল আন্দোলন কলকাতার ছাত্রদের ব্যাপক সমর্থন আদায় করে নেয়। ছাত্রদের বড় অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে যুক্ত হয়। ওই সময় কলকাতার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। নক্সালপন্থি ছাত্ররা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে নেয়। প্রেসিডেন্সি কলেজও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রথম দিকে নক্সাল কর্মীরা ভারতের শিক্ষিত শ্রেণীর সমর্থন পেয়েছিল। কিন্তু, ক্রমশ তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। সামন্তীয় ভাবধারা ও মধ্যবিত্ত মানসিকতার বিরুদ্ধে আঘাত হানার অংশ হিসেবে তারা বিদ্যাসাগরসহ অনেকের ভাস্কর্য ভেঙে পেলে। ফলে তাদের সমর্থন ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। পরিস্থিতির তীব্রতায় ভারত সরকার নক্সাল দমনের উদ্যোগ নেয়। তাছাড়া নক্সাল কর্মীরা ইতিমধ্যে জনগণের কাছে ভীতিকর হিসেবে পরিচিতি পায়। সরকার তাদের দেখা মাত্র গুলি ও বন্দির নির্দেশ দেয়। তাদের দমনের জন্য ভারত সরকার হিংস্র ও নোংরা পদ্ধতি অবলম্বন করে। হাজার হাজার মেধাবী শিক্ষার্থীকে নক্সালপন্থি হওয়ার কারণে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। মহশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশি মা’ উপন্যাসে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকারের হিংস্রতা তুলে ধরা হয়েছে। একই সময় দলের অভ্যন্তরেও মতাদর্শগত ভিন্নতা তৈরি হয়। নেতৃত্বের একাংশ চারু মজুমদার নির্দেশিত পথের বিরুদ্ধাচারণ করে। তার অংশ হিসেবে, ১৯৭১ সালে সিপিআই (এমএল) ভেঙে যায়। ১৯৭২ সালে চারু মজুমদার পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। একই বছর বন্দি অবস্থায় তিনি নিহত হন। পরবর্তী দুই সিনিয়র নেতা হচ্ছেন জুঙ্গল সাঁওতাল ও কানু সান্যাল। জুঙ্গল সাঁওতাল এক দশক কারা ভোগের পর ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। মূল নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র কানু সন্যাল বেঁচে ছিলেন। তিনিও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উদ্যোগে তিনি ১৯৭৭ সালে মুক্তি পান। মুক্তির পর কানু প্রকাশ্যে চারু মজুমদারের সমালোচনা করেন। অর্গানাইজিং কমিটি অব কমিউনিস্ট রেভ্যুলিউশনারি (ওসিসিআর) নামে একটি বাম দল গড়ে তুলেন। ৯০ দশকের কিছুকাল তিনি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন বাম ফ্রন্টের সাথে যুক্ত থাকেন। পরবর্তীতে ওই জোট থেকে বেরিয়ে আসেন। স¤প্রতি, গত ২৩ মার্চ দার্জিলিং জেলার নক্সালবাড়ি থানার হাতিঘিসা গ্রামে নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ভারতীয় সামরিকীকরণ ও ক্ষুধা-দারিদ্র

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০-১১ অর্থবছরের ভারতীয় বাজেট ঘোষিত হয়েছে। অন্যান্য বছরের ন্যায় বাজেটে যথারীতি সামরিক খাতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় এবার সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করা হয় ৪ শতাংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার বাজেটে সামরিক খাতে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৪ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। গত অর্থ বছরে এ ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪১ হাজার ৭০৩ কোটি রুপি। মুম্বাই হামলার অজুহাতে ভারত সরকার গত অর্থ বছরে ৩৪ শতাংশ সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে। যা ভারতীয় ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা। গত এক দশকে ভারতের সামরিক ব্যয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। ১৯৯৯-২০০০ সালে এ খাতে ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ৬৯৪ কোটি রুপি। ভারতীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৮.৩৩ শতাংশ হারে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। ফলে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে সামরিক খাতে বরাদ্দ হবে ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৯ কোটি রুপি। এর মাধ্যমে দেশটির পরাশক্তি হওয়ার খায়েশ স্পষ্ট হয়। ইতিমধ্যে এ দেশ সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। নৌ শক্তির র‌্যাঙ্কে ভারত বিশ্বে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের বিমান বাহিনীর শক্তিমত্তার বৈশ্বিক অবস্থান হচ্ছে চতুর্থ। ফলে সহসা ভারতীয় সামরিক বাজেটের এই বিশালত্ব গোটা উপমহাদেশের জন্য বিপদজনক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। নেপাল পরিস্থিতি আমাদের তা-ই ঈঙ্গিত দেয়। ভারত বর্তমানে সামরিক ব্যয়ে বিশ্বে দশম অবস্থানে রয়েছে। ১২২টি দেশে ভারতীয় পুঁজি লগ্নি খাটছে। এদেশ এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে কারখানা স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত ভারতীয় কারখানায় ৩ লক্ষ মার্কিন শ্রমিক কাজ করছে। ১৯৯১ সালের আগস্ট থেকে হিসাব ধরে এপ্রিল ২০০৯ পর্যন্ত ভারতের ক্রমবর্ধমান বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩৫৫ কোটি রুপি। ২০০৭ সালে ভারতের জিডিপি ছিল ১.২৩৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক অবয়বের দিকে ১২তম অবস্থানে আছে। ২০০৩-এ গোল্ডম্যান সার্চের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে ২০২০-এর মধ্যে ফ্রান্স ও ইতালিকে অতিক্রম করবে, ২০২৫ সালের মধ্যে জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়াকে পেছনে ফেলে গড়ে তুলবে শক্তিশালী অবস্থান। ২০৩৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরবর্তী পর্যায়ে অবস্থান করে ভারত হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। ২০০৩ সালের গোল্ডম্যান সার্চের সেই ভবিষ্যদ্বাণী বর্তমানে অনেকদূর বাস্তবায়িত।
কিন্তু, ভারতের সাধারণ মানুষের অবস্থা এর বিপরীত। সামরিক বাজেট ক্রমশ স্ফীত হলেও কোটি কোটি ভারতীয় দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা দেশ-বিদেশে তাদের বাণিজ্য প্রসার করলেও সাধারণ জনসাধারণের মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে কিঞ্চিত। অর্থাৎ, এখানকার শ্রেণী বৈষম্য ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের জন্য মাত্র ২২ হাজার ৬৪১ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতের ৪৫ কোটি মানুষ দৈনিক ১ দশমিক ২৫ ডলারের কম আয়ে জীবনযাপন করে। ইউএনডিপি প্রকাশিত দারিদ্র সূচকে ১৮২টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান ১৩৪তম। কর্মক্ষম জনগণের ১০ শতাংশ বেকার। ভারতের অর্ধেক গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। গত লোকসভায় কোটিপতি ছিল ১৫০ জন। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৩০০ জন। ভারতীয় চিত্র দেয়ার কারণটা হচ্ছে এখানে মাওবাদ বা অন্যান্য বিদ্রোহী দলগুলো কেন তৈরি হয়েছে তা বুঝার জন্য। ভারত রাষ্ট্রের কতিপয় ব্যবসায়ীর সমৃদ্ধি শত কোটি মানুষের জন্য দুর্ভোগ নিয়ে আসার উদাহরণ আজ স্পষ্ট। এখানকার ৩৪ শতাংশ লোক নিরক্ষর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে প্রতিবছর দূষিত পানি ও বাতাসের কারণে মারা যায় ৯ লাখ মানুষ। এ অসম পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে এখানে সশস্ত্র সংগ্রামের বিকাশ। একদিকে মুষ্টিমেয় লোক সমস্ত সম্পদের অধিকারী হচ্ছে, অন্যদিকে অধিকাংশ জনগণ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। এ শ্রেণী বৈষম্য মাওবাদীসহ অন্যান্য বামপন্থি দলগুলোকে ক্রমশ সংহত অবস্থানে নিয়ে গেছে।
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×