পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। স্বার্থান্ধ
কারণে
বিভিন্ন সময়ে নানা অবৈধ কাজও সমাজে বৈধ হিসেবে গৃহীত
হয়ে যায়।
যেমন ধরুন পাশ্চাত্য সমাজে সমকামিতা বৈধ। প্রকৃতি বিরোধী
একটি কাজ যেটা সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত।
আমাদের দেশেও বেশকিছু গর্হিত কাজ আমরা নিজেদের
প্রয়োজন মাফিক বৈধতার লেবাস লাগিয়ে দিব্যি করে
বেড়াচ্ছি।
প্রশ্ন ফাঁস।
কিছুদিন আগে একজনের সাথে কথা বলছিলাম। তার ছেলে
ভর্তি পরীক্ষার্থী। তো তিনি বেশ দুঃখ করে বলছিলেন তার
ছেলে এখন পর্যন্ত কোথাও চান্স পায়নি (পাবলিক ভার্সিটি)।
তিনি বলতে লাগলেন, অথচ তার ছেলের চেয়ে অনেক
নিম্নমানের স্টুডেন্টও প্রশ্ন পেয়ে ভাল ভাল জায়গায় চান্স
পেয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন
তিনি।
প্রশ্ন ফাঁস এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একটা
জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চাইলে শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে
ধ্বংস করাই যথেষ্ট। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে সেটাই হচ্ছে।
যাকগে, যা বলছি,
আমি ওনার মতামত জানতে চাইলাম পাবলিক পরীক্ষাগুলোর
প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারে।
অত্যন্ত বিস্মিত হলেন তার জবাব শুনে।
তিনি বেশ স্বাভাবিকভাবেই বললেন, "আরে এসএসসি/
এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হইলে কিছু হয় না। ওখানে সবাই
এ+ পাইলেই ক্ষতি কি? কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা হইল জীবন-মরণ
ব্যাপার। এখানে প্রশ্ন ফাঁস একটা জীবন নষ্ট করে দিতে
পারে। ভর্তি পরীক্ষায় একটা সিটের জন্য একটা ছাত্রকে
৫০/৬০জনের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। মুক্তিযুদ্ধেও মনে হয় এতজনের
সাথে একজন যুদ্ধ করে নাই।"
মূল্যবোধ ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছালে একজন মানুষ ভর্তিযুদ্ধ
আর মুক্তিযুদ্ধ এক করে ফেলে।
শুধু কি তাই, তিনি তো পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকে
একরকম বৈধতা দিয়েই ফেলেছেন।
বিষয়টা অনেকটা এরকম যে,
"শুয়োরের মাংস খেলে তুমি মোসলমান নও কাফের,
অথচ মদ খেলে তুমি আধুনিক সমাজের গর্বিত নাগরিক।"
আসলে পাবলিক পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন খুবই অল্প পরিশ্রমে
বেশিরভাগ মানুষের হাতে চলে আসে তাই তা বৈধ। কিন্তু
যেহেতু ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন বিশাল অংকের টাকায়
কিনতে হয় যা সবার দ্বারা সম্ভব হয় না, তাই সেটি অবৈধ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৩৬