সন্ধ্যা তখন প্রায় সাতটা। সন্ধ্যা বললে ভুল হবে। শীতের সময়। সাতটা মানে রাত।
সময়টা ডিসেম্বরের শুরু। তখন রোজা শীতকালেই হত।
এইতো ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি। সাতটা বাজতেই এশার আযান হয়ে যেত। সেই সাথে বেড়ে যেত তাড়াহুড়ো।
দ্রুত তৈরি হতে হবে, সাড়ে সাতটা থেকে তারাবি যে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তৈরি হয়ে বাসা থেকে দে দৌড়। গলির মাথায় এসে খানিক দাঁড়াতাম। শুধু তো আমিই যাবো না মসজিদে। আরো সাত-আট জন আছে।
খানিক বাদেই সবাই এসে পরতে একসাথে হাটা শুরু মসজিদের উদ্দেশ্যে। জায়নামাজ কাঁধেচাপা, পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি। ও হ্যা, একটা কোটিও ছিল তখন। সেটাও পড়তাম। পাছে ঠাণ্ডা না গেলে যায়। শীত তো।
এভাবে টানা তিরিশ দিন।
আর চাঁদরাতে?
সেদিন তো কোনো কথাই নেই। পারলে সারারাতই বাইরে থাকি। কিন্তু আম্মুর বকার ভয়ে সাড়ে দশটা-এগারোটার বেশি বাইরে থাকা হত না।
অন্যরকম এক অনুভূতি ছিল তখন। রোযা-ঈদ।
এখনো রোযা আসে।
পুরোদস্তুর গরম।
জামাত এখন পৌনে নটায়।
সাড়ে আটটায় দৌড়ুতে দৌড়ুতে বের হই। হাপুশহুপুশ করতে করতে সোজা মসজিদে। গলির সামনে এখন আর কেউ দাঁড়ায় না।
সময় কই দাঁড়ানোর?
দাঁড়াবোই বা কার জন্যে?
মসজিদে তো এখন একাই যাই।
সবকিছুতেই পরিবর্তন।
বাসা বদলেছে। এলাকা বদলেছে। সেই সাত-আটজনের মানসিকতাও এখন ভিন্ন।
সবচেয়ে পাগলাটে ছেলেটা এখন দিনে প্রেম-পড়াশুনো আর রাতে কল সেন্টারে সময় দেয়।
একটু গরম মেজাজের ছেলেটা এখন দেখা হলে (কদাচিৎ) হেসে বলে, "চিটাগাং আসিস একবার। বেড়ায় যাইস।"
ক্লাসের নিয়মিত ফার্স্ট হওয়া সেই ছেলেটি এখন দেখা হলে কেমন যেন গুটিয়ে নেয় নিজেকে আর বলে, "তোরা তো ব্যাটা বস পোলাপান। পাবলিকে পড়িস।"
আর ওইযে ওই ছেলেটা, একটু কালো করে, কেমন যেন এড়িয়ে চলে যায়। কথা বলতে চায় না এখন। অথচ একসময় আমরাই বিরক্ত হয়ে বলতাম, "থামবি তুই? নয় পিডামু।" তার পোষা কুকুরটা এখনো আছে কিনা জানা নেই।
বাকিদের খোঁজখবর খুব একটা জানি না।
অবশ্য খোঁজ রেখেই বা কি করব? দিনগুলো যে এখন ছকে বাঁধা। বাসা-ক্যাম্পাস-টঙ-রেস্টুরেন্ট-এদিকওদিক-পড়ে পড়ে ঘুমানো-টিভি দেখা।
ওহহো! আরেকটা ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস আছে। ফেইসবুক। এটা ছাড়া তো চলেই না।
যাকগে, বকবক শুরু করলে আর হুশ থাকে না। একদিককার কথা অন্যদিক হয়ে যায়।
বাদ।
ভাল থাকুক সবাই। যেখানেই আছে।