বাংলাদেশ সহ পশ্চাৎপদ দেশ সমুহে একটি সাধারন বৈশিষ্ঠ্য লক্ষ্য করা যায়। গনতান্ত্রিক মানসিকতার তীব্র অভাব সেই সাধারন বৈশিষ্ঠ্য শোষিত এবং ক্ষুধায় কাতর জনতা নিজেকে রাষ্ট্রের কাঠামোতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ন ভাবতে পারে না। তাই বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার অভাব থেকেই উৎসারিত হয় একরকম ছদ্ম গনতান্ত্রিক রাজনীতির যার কংকাল হয় স্বৈরতান্ত্রিক আর চামড়া ফ্যাসিবাদের।
বাংলাদেশে এই সংকট প্রকট আকারে দাড়িয়েছে। আমার প্রেমিকার প্রিয়দল বিএনপি কারন খালেদার শাড়ী খুব সুন্দর। এবং আমাদের আমজনতাও তার মত গনতান্ত্রিক চেতনা হতে দুরবর্তী এবং অধিকার সচেতন নয়। আমাদের অন্ত:সার শূন্যতার প্রতিফলন আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা যা ইউরোপ আমেরিকার মত শোষণের কোন ছদ্মবেশ পর্যন্ত ধারন করে না , এতটাই নগ্ন! আঠারো শতকে যে দার্শনিক বিপ্লব হয়েছে, ইহজাগতিকতা, যুক্তি এবং বিজ্ঞানের প্রসার হয়েছে তার কোন সুফলই আমরা লাভ করতে পারি নি। সামগ্রিকভাবেই তাই আমরা অন্ধ স্তাবকতাকেই রাজনীতি বুঝে থাকি। বিভিন্ন স্বৈরতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদী প্র্যাকটিসের মাধ্যমেই আমাদের ছদ্ন গণতন্ত্র এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেনীটিও দক্ষতা এবং মানস গঠনের পার্থক্য ত্রুটিপূর্ন শিক্ষাব্যবস্থা, রাষ্ট্রযন্ত্রের কায়েমী স্বার্থ সেইসাথে সঠিক দুরদর্শীতার অভাবের কারনে তাদের কাছে প্রকাশিত হয় নি। বরং বারবার রাষ্ট্রযন্ত্রের শোষণ এবং আখের গোছানোর কাজেই ব্যভৃত হয়েছে। জাতিগত দর্শনের অভাব যে কত নির্মম পরিণতি লাভ করতে পারে তার প্রমান বাংলাদেশ হতে পারে।
অনগ্রসর শিক্ষা এবং বিজ্ঞান, দর্শনের উপযুক্ত আত্নীকরণের অভাবে অনেকটা স্বাভাবিক ভাবেই উদ্ভব ঘটেছে প্রতিক্রীয়াশীলতার এবং প্রগতিবিরোধী মানসিকতার। বিশেষ কিছু উপাদান যেমন ধর্ম কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন পথে ব্যভৃত হয়েছে প্রতিক্রীয়াশীলতার উপাদান হিসেবে। সাধারন মানুষ শিক্ষার অভাব বা সঠিক দার্শনিক গঠনের অভাবে পুতুল হয়ে পরছে প্রতিক্রীয়াশীল গোষ্ঠী দ্বারা।
আমাদের চিন্তায় আসলে প্রভু ভৃত্যের সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্ক নেই। তাই রাজনীতিও অর্থহীন স্তাবকতায় পরিপূর্ন। যে পলিটিক্যাল ভিশনের অভাবে আমরা অতীতেও বারবার ধাক্কা খেয়েছি এবং সুযোগ থাকা স্বত্তেও এগোতে পারি নি তার কোন পরিবর্তন হয় নি। আমাদের রাজনীতি মূলত দুই মৃতপুরুষের প্রভাববলয়ে আবদ্ধ। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের পলিটিক্যাল ভিশনের অভাব(আর যার প্রমান আগেও পাওয়া যাচ্ছিল)সেই সাথে দলের ডানপন্থীদের আখের গোছানোর প্রতিযোগিতা সেই সাথে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রস্তুতি না থাকলে যতধরনের বিপদ ঘটা সম্ভব সবগুলো একসাথে ঘটতে থাকে। তাজউদ্দিন কে কাজে না লাগিয়ে যে ভুল মুজিব করেছেন হয়ত আমরা এখন তারই খেসারত দিচ্ছি। স্বাধীনতার জন্যে মুজিব অপরিহার্য ছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে নিজেকে রাষ্ট্রের জন্যে ততটাই ক্ষতির কারন করে তুলেছিলেন আর হয়ে যাচ্ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন। অথচ জনতার সাথে তার ইন্টারএকশানের জন্যেই সামনে এসেছিলেন একদিন তুলনামূলক ম্যাচিওর পলিটিক্যাল ভিশনের অধিকারী ভাসানীকে পিছনে ফেলে। তারপর তো বাংলাদেশ আর উল্লেখযোগ্য কোন ভাল ঘটনা ঘটার উপায় থাকে নি। একের পর এক সামরিক উর্দী আর সামরিক ফ্যাসিস্ট মেজাজের ছদ্মগনতান্ত্রিক সরকারের অদলবদল হয়েছে কেবল। ক্যান্টনমেন্টে যে দলটির জন্ম তার চরিত্র প্রতিক্রীয়াশীল ডানপন্থী হওয়াই স্বাভাবিক এবং কতগুলো প্রভাবশালী এবং বারবার দলপাল্টানো আমলা ও নষ্ট রাজনীতিকদের খবরদারিতে বিএনপির প্রতিক্রীয়াশীলতার চর্চা সমানে হয়েছে। আওয়ামীলীগ যদিও কিছু গনতান্ত্রিক উপাদানের কথা তোতাপাখির মত আউড়ে যায় কিন্তু প্রতিক্রীয়াশীলতায় তারা কোনভাবেই কম জান না। কখোনো কখোনো সেকুলার গণতন্ত্রের কথা বলা আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট আচরণে ছাড়িয়ে যায় বিএনপিকেও। দলদুটোর আদর্শ কাগজে কলমে আলাদা হলেও তারা প্রধানত কন্ট্রোল ফ্রীক। তাই যুক্তিহীন নিয়ন্ত্রণ আনার সবচেয়ে কার্যকরী উপাদান প্রতিক্রীয়াশীলতার নিয়মিত চর্চা করে থাকে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমেই দরকার গণতান্ত্রিক চেতনার পুনর্গঠন। দুই মৃত রাষ্ট্রনায়কের প্রভাব বলয়ে থাকা রাজনৈতিক দল, বা ধর্মব্যাবসায়ী জামাত , বা এরশাদের জেপি ইত্যাদি কোনভাবেই গণতান্ত্রিক মানসিকতার প্রতিনিধিত্ব করে না। সাধারনত বাম দলগুলো প্রগতিশীল হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই দিকে চরম ব্যর্থতা। বাম দলগুলো বিভক্ত এবং অনেক ক্ষেত্রেই জনবিচ্ছিন্ন। তাছাড়া আখের গোছানোর প্রতিযোগিতাও তাদের কারো কারো মধ্যে শুরু হয়েছে। এজন্যে যতদিন সঠিক গণতান্ত্রিক মানসিকতার গঠন না হবে আমরা ডুবতে থাকব প্রতিক্রীয়াশীল রাজনীতির বিষবাষ্পে।