somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফতোয়া ২২ - প্রসঙ্গ - বেনামাযির ব্যাপারে শরীয়তের বিধান

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্ন : একজন লোক নিজেকে মুসলমান দাবী করে, কিন্তু সে নামাযও আদায় করে না, রোযাও রাখে না। তাকে কি মুসলমান বলা যাবে? মৃত্যুর পর তার জানাযার নামায আদায় করা যাবে?

উত্তর : উত্তর দেয়ার আগে আমি আপনাকে একটি প্রশ্ন করি। এমন লোক সম্পর্কে আপনার মতামত কি, যাকে সরকার বা কোনো কোম্পানী চাকুরী দিয়েছে, সেই চাকুরীতে সে বেতনও পাচ্ছে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে তাকে জবাবদিহিও করতে হয়, কিন্তু সেই ব্যক্তি নিজের কর্তব্য পালনে অলসতা করে। সুস্থ সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও ডিউটিতে থাকে অনুপস্থিত। কোনো কোম্পানীর সামনে এ বিষয়টি তুলে ধরা হলে তারা বলবে তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হোক। কিছু লোক বলবে জরিমানা করা হোক। অথবা অন্য কোনো শাস্তি দেয়া হোক। তাদের এ রকম শাস্তি নির্ধারণ করাও বৈধ হবে।

বেনামাযীর সাথে ইসলামের ভূমিকাও একই রকম। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নামায আদায় করা যেহেতু মুসলমানদের সর্বপ্রথম কর্তব্য, কাজেই বেনামাযী ব্যক্তি অবশ্যই ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। আলেমদের কারো মতে, শুধু নামায আদায় না করলেই কাফের ফতোয়া দেয়া যাবে না, তবে যে বেনামাযী নামাযের ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে, নামায ফরয হওয়া সম্পর্কে ঠাট্টা তামাশা করে সে অবশ্যই ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে বুঝতে হবে। কিন্তু যদি নামায ফরয হওয়ার কথা স্বীকার করে কিন্তু অলসতা করে নামায আদায় না করে, তবে সে ইসলাম থেকে খারিজ হবে না। যারা নামায নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করে আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে বলেন,
'যখন তোমরা (মানুষদের) নামাযের জন্যে ডাকো, তখন এই (ডাক)-কে এরা হাসি-তামাশা ও খেলার বস্তু বানিয়ে নেয়। এরা হচ্ছে এমন এক সম্প্রদায়, যারা (হক-বাতিলের) কিছুই বোঝে না।' (সূরা আল মায়েদা, আয়াত ৫৮)

এই আয়াতে সেসব লোক সম্পর্কে ধারণা করা যায়, যারা নামায রোযা এবং অন্যান্য এবাদাতকে পশ্চাত্পদতা এবং সেকেলে কাজ বলে অভিহিত করে। যারা আল্লাহর এবাদাত করে তাদের ঠাট্টা তামাশা করে। এ কারণেই সকল আলেম এবং ফকীহর মতে যারা নামায এবং অন্যান্য ইসলামী বিধান সম্পর্কে উপহাস করে, ঠাট্টা করে বুঝতে হবে তারা ইসলামের সীমানা থেকে বের হয়ে গেছে। নিম্নোক্ত হাদীসে এ কথার সমর্থন রয়েছে। রসূল (স.) বলেন, একজন মানুষের মধ্যে এবং কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায।^

যে ব্যক্তি অলসতার কারণে বা দুনিয়ার কর্মব্যস্ততার কারণে নামায আদায় করে না তবে এটা যে তার অন্যায় ও পাপ তা স্বীকার করে, তার সম্পর্কে ফকীহদের অভিমত নিম্নরূপ-

১. হানাফী মাযহাব অনুযায়ী তাকে ফাসেক মনে করতে হবে। নামায শুরু না করা পর্যন্ত তাকে প্রহার করা যাবে।

২. ইমাম মালেক এবং ইমাম শাফেয়ীর মতে সেই ব্যক্তি ফাসেক এবং কাফের। তবে সে যদি নামায ত্যাগে অবিচল থাকে তবে তাকে গ্রেফতার করা বা প্রহার করাই যথেষ্ট নয় বরং তাকে হত্যা করতে হবে।

৩. ইমাম আহমদের মতে সেই ব্যক্তিকে মুরতাদ মনে করতে হবে, তার কাছে তাওবা করার দাবী জানাতে হবে। যদি তাওবা না করে তবে তার শিরচ্ছেদ করতে হবে।

কোরআন হাদীসের বর্ণনা ইমাম আহমদের অভিমতকেই জোরালোভাবে সমর্থন করে। আমার মতে এই অভিমতই যুক্তিগ্রাহ্য। এ প্রসংগে কোরআন হাদীনের যুক্তি পেশ করা যাচ্ছে।

১. নামায আদায় না করাকে কোরআনে কাফেরদের অভ্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
'এই যালেমদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, এদের যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর দরবারে নত হও তখন তারা নত হয় না।' (সূরা আল মোরসালাত, আয়াত ৪৮)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, 'তবে এরা যদি তাওবা করে (দ্বীনের পথে ফিরে আসে) এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, তাহলে তোমরা তাদের পথ ছেড়ে দাও, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও বড়ো দয়াময়।' (সূরা আত তাওবা, আয়াত ৫)

এই আয়াত থেকে বুঝা যায়, শুধু শেরেক থেকে তাওবা করলেই যুদ্ধ বন্ধ করা যাবে না বরং নামায আদায় না করা পর্যন্ত যুদ্ধ করতে হবে।

সূরা মোদ্দাসসেরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, জান্নাতীরা দোযখীদের জিজ্ঞাসা করবে, কি আমলের কারণে তোমরা দোযখে প্রবেশ করেছো? তারা জবাবে বলবে, কারণ আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না যারা নামায আদায় করে।

২. রসূল (স.) বলেন, বান্দা এবং কুফুরীর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে নামায আদায় না করা।

অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, আমাদের এবং তাদের মধ্যে নামাযের চুক্তি রয়েছে, যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করেছে সে কুফুরী করেছে। (বোখারী, মুসলিম, নাসাঈ)

এক ওয়াক্ত নামায আদায় না করলে নেক আমল নষ্ট হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সেই ব্যক্তির কি রকমের শাস্তি হবে যে ব্যক্তি সকল নামাযই ত্যাগ করেছে !

হযরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যারা জামায়াতে নামায আদায় করে না রসূল (স.) তাদের ঘরে আগুন দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। যে ব্যক্তি মোটেই নামায আদায় করে না তার শাস্তি তো আরো ভয়ানক।

সাহাবায়ে কেরামও নামায ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন। হযরত আলী (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি নামায পড়ে না, সে কাফের। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যে নামায ছেড়ে দিয়েছে, সে কাফের হয়ে গেছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) এবং হযরত আবুদ্দারদা (রা.) থেকেও এ রকম বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে। এই সকল দলীল থেকে প্রমাণিত হয়, যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করবে সে কাফের। কাফের বলা না গেলেও সে যে ফাসেক এ বিষয়ে সর্বসম্মত মতামত রয়েছে। কাজেই যারা নামায আদায় করে না তাদের উচিত আত্মসমালোচনা করা তাওবা করা এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা।

ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, বেনামাযীকে সালাম করা উচিত নয়, তার সালামের জবাবও দেয়া উচিত নয়। তার কাছে নিজের মেয়ে বিয়ে দেয়া উচিত নয়। কারণ প্রকৃতপক্ষে সে মুসলমান নয়।

শরীয়তে কোনো অবস্থায় নামায মাফ হবে না। যতো রকম ওযরই থাক না কেন। পানি যদি না থাকে তবে তায়াম্মুম করে নামায আদায় করতে হবে। অসুস্থতার কারণে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা সম্ভব না হলে বসে আদায় করতে হবে। যদি বসেও বা শুয়েও নামায আদায় না করা যায় তবে ইশারায় নামায আদায় করতে হবে। কিন্তু কোনো অবস্থাই নামায ত্যাগ করা জায়েজ নয়।

রয়ে গেলো বেনামাযীর জানাযার নামায আদায় করা যাবে কিনা এই বিষয়টি। যারা বেনামাযীকে কাফের বলে না, বরং ফাসেক বলে তাদের মতে, বেনামাযীর জানাযার নামায আদায় করা যাবে। যারা বেনামাযীকে কাফের বলে তাদের মতে বেনামাযীর জানাযার নামায আদায় করা যাবে না।

যারা বেনামাযীকে কাফের বলে আখ্যায়িত করেন তারা বলেন, সমকালীন শাসক বা বিচারক নামায আদায়ের জন্যে বললেও সে নামায আদায় করতে অস্বীকার করে, এতে সমাজে সে কাফের হিসেবে চিহ্নিত হবে। এমনটি না করা হলে তার সাথে কাফেরের মতো আচরণ করা হলো না।


^ মুসলিম, মোসনাদে আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী।



*** জবাব দিয়েছেন শায়খ ইউসুফ আল কারদাওয়ী ***
*** অনুবাদ করেছেনঃ হাফেজ মুনির উদ্দীন আহমদ ***
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ১১:২৯
২৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×