▌>> পদ্মা সেতু'র দুর্নীতির দায় নিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন
-----------------------------------
>প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন
------------------------------------
-অবশেষে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন।
সোমবার তিনি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কাছে পদত্যাগের কথা স্বীকার করেছেন। এদিন মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকেও যোগ দেননি সৈয়দ আবুল হোসেন।
জানা গেছে, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন তার পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কিছু জানা যায়নি।
তার বিরুদ্ধে পদ্মাসেতু প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে বিশ্বব্যাংক। পদ্মাসেতুতে ১২০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা করার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ঋণসহায়তা বাতিল করে সংস্থাটি।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এখানেও শেষ পর্যন্ত তার ঠাঁই হলো না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, তিনি সারা জীবন স্বচ্ছতার সঙ্গে রাজনীতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতুকে জড়িয়ে কল্পিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তও চলছে। এ অবস্থায় তিনি তদন্তের প্রয়োজনে এবং দেশের স্বার্থে যে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। তবে 'স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে চলে যাচ্ছেন কি-না'_ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, সেটা আল্লাহ জানেন। শনিবার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে 'পদ্মা সেতু : দেশবাসীর প্রতি সৈয়দ আবুল হোসেনের খোলা চিঠি' শিরোনামে প্রকাশিত দীর্ঘ বিজ্ঞাপনে তিনি সবিস্তারে স্বীয় বক্তব্য তুলে ধরেছেন। খোলা চিঠিতে তিনি বলেছেন, তার মন্ত্রিসভায় থাকাটা কিছু কিছু 'সম্মানিত ব্যক্তি' পদ্মা সেতুর স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু তদন্তের বেলায় বাধা মনে করছেন। সে ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার স্বার্থে তিনি যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
তার 'খোলা চিঠি' নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। তবে কি সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করছেন, নাকি এ তার রাজনৈতিক কৌশল। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ ছাড়ার জন্য তাকে কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না।
এ অবস্থায় তিনি মন্ত্রিসভা থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সিদ্ধান্তের অনুকরণ করতে চাইছেন বলে কেউ কেউ মনে
করছেন। তাদের বক্তব্য, দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপনের পর পরই পদত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেন সেটা করেননি।
কিছুদিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে মন্ত্রিসভায় রদবদল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের দু'জন শীর্ষ নেতা বলেছেন, সৈয়দ আবুল হোসেনের স্বেচ্ছায় পদত্যাগের সম্ভাবনা কম। স্বেচ্ছায় পদত্যাগের মানসিকতা থাকলে তিনি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর পরই মন্ত্রিসভা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতেন। খোলা চিঠিতে তিনি পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটা তার মনের কথা নয়।
তবে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, পদত্যাগের বিষয়ে মন্ত্রী একরকমের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কোনো মুহূর্তে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। তবে পদ্মা সেতুর অভিযোগের বিষয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে তিনি আবার মন্ত্রিসভায় ফিরে আসতে পারেন।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৯ জানুয়ারি সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী হন। পদ্মা সেতুসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় ব্যাপক সমালোচিত হন তিনি। বিশেষ করে গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তাঘাট সংস্কারের ব্যর্থতা নিয়ে সরকারি দলের এমপিরাও সংসদের ভেতরে-বাইরে তার ব্যাপক সমালোচনা করেন। অনেকেই সাবেক এ যোগাযোগমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবি তোলেন। একই সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মহল এর নেপথ্যে মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে ঘটনার মূল নায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে।
ফেসবুক পেইজ লিংক