তুই কি আমার তুমি হবি -১
তুই কি আমার তুমি হবি -২
“ তুই কি আমার তুমি হবি?” (পর্ব-৩)
১।
বুধবার রাত ।
হল এ আজ প্রেমের মউসুম চলছে । এম্নিতে শনি, রবি,সোম...কোনদিন ই প্রেমের কামাই নাই । কিন্তু সপ্তাহান্তের এই রাতে প্রেমালাপ যেন আরো জমে ওঠে, তার উপর কাল স্বরসতি পূজা । একটু রাত হলেই দেখা যায় , বারান্দার কোরিডরে শত শত আলো আনির্বাণ জোনাকির মত ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউবা আবার স্থানুর মত ঠায় দাঁড়িয়ে । মুঠোফোনের আলো ওগুলি । প্রায় সমগ্র রাত্রি তারা এমনিভাবে বারান্দার ম্লান অন্ধকারে দুর্বোধ্য সংকেতের মত সঞ্চালিত হয় । এক সময় মাঝ্রাত পার হয় । মুভি দেখা, গেম খেলা ,চোথা পেটানো শ্রান্ত বুয়েটিয়ানরা ঘুমিয়ে যায় ।কিন্তু জেগে থাকে প্রেমিকের দল ।শেষরাতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা মেঘে ঢাকা আকাশে চাঁদ ওঠে । কিন্তু মুঠোফোনের আলো তাও নেভে না ।কমতে থাকে ব্যালান্স , বাড়তে থাকে উত্তেজনা , জমতে থাকে ভালোবাসা,অভিমান আর অবিশ্বাসের একান্ত ব্যক্তিগত খেলা । কিন্তু কবি কি সাধেই বলে গ্যাছেন-
প্রেমিক মিলবে প্রেমিকার সাথে ঠিক-ই
কিন্তু শান্তি পাবে না, পাবে না, পাবে না...
মুঠোফোনের সবুজ আলোয়, ক্লিন শেভড প্রেমিকের মুখ চকচক করে , আধো আলোতে তার মুখের ইঙ্গিতপূর্ণ অভিব্যক্তিতে জীবনটাকে বড্ড সুন্দর মনে হয় ।
আমি বসেছিলাম আমার সদ্য কেনা আরাম কেদারায় । কিন্তু সে বেচারা তো আমায় আরাম দিতে চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ । কেমন এক অস্বস্তি কাজ করছে , কেন জানি আজ বারান্দায় গিয়ে প্রেম শিকারীদের সাথে যোগ দিতে ইচ্ছে করছে । ওর সাথে কথা হয় না অনেকদিন ।
আজ টিউশনিতে যাবার সময় দেখি পাগলী টা ইডেনের সামনে অসহায় চুড়িওয়ালার বংশ উদ্ধার করছে । আরে বাবা, লাল-নীল হলুদ-সবুজ তুই যেটাই পরিস তাতেই তোকে মানায় ।মনে হয় চুড়িগুলোর জন্মই তোর হাতে রিঞ্ঝিন শব্দ করার জন্য । যেই না ঠিক ্করলাম ওকে একটু জ্বালিয়ে আসি,অম্নি মুঠোফোনে ছাত্রীর ক্ষুদে-বার্তা - " ভাইয়া,তাড়াতাড়ি আসেন,আর কতদিন বাদ দিবেন?আম্মু ত রেগে আগুন ।" নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়লাম ৭ নাম্বারে । ভেবছিলাম রাতে ফোন দিব । কিন্তু,ফিরে সেই যে তাস পিটানো শুরু হলো আর আজ কার্ড ও পড়ছিল সেইরকম মাইরি । পরে যখন খেয়াল হল,দেখি রাত গভীর ।
ফোন দেব কি দেব না এই ভাবতে ভাবতে দিয়েই দিলাম । কিন্তু বিধিবাম । এক কোমল নারীকন্ঠ খুব যান্ত্রিক ভাবে বলে দেয় , আমার মুঠোফোনের ব্যালেন্স আজ আমার মতোই নিঃস্ব,রিক্ত । দেহের সবটুকু শক্তি আর মনের সবটুকু ক্ষোভ দিয়ে মুঠোফোনটা ছুড়ে ফেললাম বিছানায় । মনে মনে এয়ারটেল এর মা-বোন উদ্ধার করতে করতে গত জন্মদিনে ওর কাছ থকে গিফট পাওয়া শেভিং কীট টা হাতে নিয়ে চললাম শাওয়ার এ ।ছেম্রীর কত বড় সাহস, বলে কিনা দাড়িতে আমাকে কাঠমোল্লা কাঠমোল্লা লাগে..................
২।
সকালের ঘুম যদি কোনদিন ওর ফোনের আওয়াজে ভাঙ্গে সেদিনটা কেন জানি ভাল যায় । আজ এত্তসকালে কে ফোন করল? আজানা এক আশায় সবুজ বাটন টা টিপ্লাম চোখ বন্ধ রেখেই ।
ঘুম ঘুম আওয়াজে বললাম, “হ্যালো”
আমার আশার গুড়ে এটেল মাটি দিয়ে যিশু বলে ওথে-
“কই তুই?”
আড়ষ্ট গলায় আশাহত ভাবে বলি- "ক্যান, রুমে । আর কই যাব ? "
"এখনও রুমে কি করিস ? আমরা পুজার মন্ডপ সাজায়ে বসে আছি , দেবিদের মত তুই ও নখ্রাবাজ হয়ে গেলি ? ইনভিটেশ্ন কার্ড দিতে হবে নিচে নামার জন্য ?নাকি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এর রিটার্ণ টিকেট ?শালার ...পরের গালি টা এতটাই প্রচলিত ও ব্যবহৃত যে এখন আর গায়েই লাগে নাহ,বরং না শুনলে মনে হয় ফর্মাল হয়ে যাচ্ছে সম্পর্কগুলো । তাই,ও গালি না শুনেই লাইনটা কেটে দিলাম । হাজারো নিঃসঙ্গ,অস্থির রাতের সাথী কোল্বালিস টা কে পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়ে আবার স্বরসতী মাতাকে ভুলে নিদ্রা দেবীর প্রেমে মজলাম ।
৩।
শেষ পর্যন্ত স্বরসতী মাতা যখন নিদ্রাদেবীর সাথে জয়ী হলেন, বেলা তখন গড়িয়েছে অনেকদূর ।রুমের দরজা খুলে আড়মোড়া ভাংতে ভাংতে ৩ তলার বারান্দায় দাড়াতেই উৎসবের গন্ধ এসে ধাক্কা মারলো । আমি কেন জানি সব উপলক্ষ্যের একটা গন্ধ পাই । আমি গন্ধ পাই এক ঐশ্বরিক সত্তার , গন্ধ পাই পবিত্র ধূপের, গন্ধ পাই পুরুত মশাই এর নিষ্ঠামগ্ন বিশ্বাসের , গন্ধ পাই বন্ধুত্বের সহিষ্ণুতার , গন্ধ পাই একে অপরকে মুগ্ধ করেতে ব্যস্ত মানব-মানবীর নিরন্তর প্রয়াসের ,গন্ধ পাই লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা পাশবিক পংকিলতায় , আমি গন্ধ পাই প্রাণের স্পন্দনের । এত গন্ধের ভীড়ে আমি খুঁজে বেড়াই সেই চেনা গন্ধ । সেই চেনা গন্ধের খোঁজে আমার ইন্দ্রিয়রা হাতড়ে ফেরে পুজা মন্ডপে, হাতড়ে ফেরে সু-সজ্জিত বাগানে ,হাতড়ে ফেরে প্রেম-পরিপূর্ণ চিপাচাপায়, কিন্তু তার হদিস মেলেনা । ফটিকের মত আওড়াই- "এক বাও মেলে না,দুই বাও মেলেনা" ।
তাহলে কী শয়তান টা আসেই নাই ? ও না এসে থাকতে পারবে ? এতটুকুও বোঝে না ? আমার না হয় ব্যালান্স ছিল না, কিন্তু ও তো কল দিতে পারতো , কিসের এত ঢং ?যত্তসব সস্তা আবেগ - মনের রাফ খাতায় এসব হিসাব কষতে কষতে হঠাৎ চোখ পড়লো বাগানের এক কোণায় । ঐ যে , আসছে তাইলে পাগলীটা ,কিন্তু এসে আমাকে একটা ফোন ও দিলনা ! আর জয় টা ওর হাত ধরে কী করে ? ছেলের অভাব পড়েছিল বুয়েট এ ।ও ভালো মতই জানে জয় ছেলেটা কে আমি দেখতে পারি না । সহ্য করতে পারিনা ।কেন পারিনা, কী জন্য পারিনা এত কেন এর উত্তর আমার জানা নেই, প্রয়োজন ও নেই । ভালোবাসতে কারণ লাগে , ঘৃণা করতে লাগে না । প্রচন্ড রাগ, না না রাগ না ক্রোধে যেন কেপে উঠলাম ।একটু সাম্লে নিতেই বুঝলাম, শুধু আমি না,মুঠোফোনটাও ভাইব্রেট করছে ।রুবিনার ফোন । পরম অনিচ্ছা সত্ত্বেও ধরলাম ।
৪।
নিচে নাম্লাম অবশেষে ।
চারিদিকে ব্যস্ততা ,সবাই ই দেবীকে তুষ্ট করতে ব্যস্ত ,কেউ পারলৌকিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মন্ডপে বসা দেবীকে নিয়ে, আর ইহলৌকিক সংগসুখের তাড়নায় , রক্ত-মাংসের হেটে চলে বেড়ানো দেবীদের নিয়ে । কিন্ত, আমার মন মন্দির অস্থির-অশান্ত । মনে হল - হরিয়ে যাচ্ছি আমি হাজারো চেনা মুখ আর অচেনা আবেগের ভীড়ে । হাস-ফাস লাগছে ।আমি দুই তৃষিত নয়নে খুজে ফিরি তাকে,খুজে ফিরি তার খোলা চুলের গন্ধ ,আমি আমার অস্তিত্বের সার্থকতা খুজে ফিরি তার স্পর্শে। এই কী রবীন্দ্রনাথের সেই- "জন্তুর মত অবুঝ ভালোবাসা " নাকি Bejamin এর "friendship set on fire." ? এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল,জয়ের রুমে না ত ?
সকালের পর সাম্লে নিয়েছিলাম নিজেকে ।কিন্তু এবার আর পারলাম নাহ । ইচ্ছা হয় বিশ্ব সংসার ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলি । আর জয় , মাতা স্বরসতী তোর সহায় হোন ,নাইলে আজকে তোর কপালে খারাবী আছে । কয়েকবার ফোন দিলাম জয় কে , কলার টিউন বেজেই যাচ্ছে নিরুত্তর ।যেতে চাচ্ছিলাম নাহ ওর রুমে ,না গিয়া পারা গেল না । শালার হাত ধরার শখ আজ মিটায় দিব ।
৫ ।
জয় এর রুমে দরজাতে আসতেই দেখি, সবাই ঐখানে । ঝাঝালো গলায় বলি "জয় তোরে কখন থেকে ফোন দিতেছি, ধরিস না কেন?" ওর দায়সারা উত্তর “কই?ওহ,ফোন তো সাইলেন্ট করা । ” মেজাজ টা আরো বিগড়ে গেল । এমন সময় চোখে পড়লো নীলের চোখ । আমি আর আমাতে নেই ।কোথায় জয়,কোথায় ওর রুম, কোথায় ক্রোধ, কোথায় কী, সবই তখন গৌন । আমার পৃথিবী তখন খোলা চুলের ঐ রমণীতেই শুরু,ঐ রমণীতেই শেষ ।
তুমি অমনভাবে তাকিওনা আমার দিকে-
অমন অপার্থিব স্বর্গীয় দৃষ্টিতে;
তোমার চোখের ঐ অসংজ্ঞায়িত সৌন্দর্য ধারণ করার যোগ্যতা আমার নেই,
এমনকি তা সহ্য করার ক্ষমতাও আমার নেই।
অমন চাহনিতে মেরুর নিরেট বরফ গলে উত্তাল জলধি বয়ে যাবে,
সূর্য জ্বলে ছাই হয়ে যাবে,
আগুন রুপান্তরিত হবে শুভ্র ধোঁয়াতে,
আর তুচ্ছ আমি তো ধূলিকণায় মিশে যাব ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়ে।
তুমি ওভাবে তাকালে আমার হৃদয় ফুটো হয়ে যায়-
যেন কালজয়ী যোদ্ধার তরবারীর মত ভীষণ ধারালো চাহনি তোমার…
তুমি ঢেকে রাখো চোখ দু’টো কোমল পাপড়ি দিয়ে,
নতোবা ইতিহাসের গর্ভ থেকে অমর সুন্দরীদের পুনরুত্থান হবে,
বিপ্লবে বিদ্রোহে ছারখার হবে আকাশ-পাতাল,
উলট-পালট হয়ে যাবে মানচিত্রের বিন্যাস,
এমন অপূর্ব চোখ
জ্বলজ্বলে তারা
চকচকে চাঁদ
তাদেরও যে নেই!
মরুক আফ্রোদিতি, সাইকি, ক্লিয়োপেট্রার দল
মরুক তারা ঈর্ষার অনলে,
আমি একা পুড়ে খাক হবো
তোমার চোখের আগুনে!
"আউচ !! " শব্দে ঘোর ভাংলো । রুবিনা, কখন যে পিছে এসে দাড়িয়েছে, খেয়াল ই করিনি । । নীলের নেশায় মত্ত আমি যে ওর পা মাড়িয়ে দিয়েছি ,খেয়াল এ করিনাই । তার উপোর লম্বা হিল ,নির্ঘাত পা মচকেছে বেচারীর ।নিজের দোষটা ঢাকার জন্যই হয়ত বলে বস্লাম “দেখেশুনে চলবি না ।” এক ধরনের অপরাধবোধ থেকেই, তাড়াতাড়ি ওকে ধরে নিয়ে গেলাম রুমে ।
”এই চাপ তো,ওরে বসতে দে ।”
“হ্যা,ওরে বসা ।”
আমার কথা শেষ হতে না হতেই ঝটকা মেরে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বল্ল নীল ।
আমি তো,পুরাই হতভম্ব ।অই পাগলির কী হল আবার ? আমার মত আর সবাই ও অপ্রস্তুত । আমি কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই দেখি বের হয়ে গেল হন হন করে ।পাশে বসা রুবিনা কে এক ঝটকায় সরিয়ে আমিও ছুটে বের হলাম রুম থকে । কিন্তু নীল কৈ ? দৃষ্টি সীমার মধ্যে কোথাও নেই । ঘটনার আক্সমিকতায় করিডরেই বসে পড়ি । কী হল ওর হঠাৎ ।এভাবে করলো কেন ? ও কী বোঝে না নিদারুণ নিঃসংগতায় বাইশটি বসন্ত পার করে দেয়া এক তরুণ শুধু ওর কাছ থেকে বইটা দাগানোর জন্য সারা বছর ইচ্ছা করে ক্লাস করে না ,শুধু ওর অভাবেই নিঝুম রাতগুলোকে তরুণের অর্থহীন মনে হয় , বন্ধু বান্ধবে ঘেরা আড্ডাগুলোকে লাগে যাবজ্জীবন কারাবাসের মত ,কেন বোঝেনা ,তরুণটা তার অস্তিত্বের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে শুধু তাকেই ভালোবাসে
হঠাৎ তরুণ তার কাধে টের পায় স্পর্শের উষ্ণতা । অশ্রুসজল চোখে ফিরে তাকায় সে ।সবার অলক্ষে ,এমন সময় বিধাতাও যে ঠোটের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে দেখছিলেন এই ভাঙ্গা গড়ার খেলা, তা বলাই বাহুল্য।
বি : দ্র : এই লেখাটার ১০% নকল, ২০% আজাইরা , ৪০% তাড়াহুড়ায় লেখা আর বাকীটা অজ্ঞাত কারণে বলা যাবেনা । আর কবিতাটার জন্য ধন্যবাদ স্বপ্ন ও সমুদ্র কে । আর লেখার নকল কোন্টুক এবং কোথা থেকে, সেইটা বলতে পারলে রয়েছে আকর্ষনীয় উপহার।এ সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:০৪