somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“ তুই কি আমার তুমি হবি?-১

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“ তুই কি আমার তুমি হবি?- পর্ব ২


তুই কি আমার তুমি হবি- পর্ব ৩


তুই কি আমার তুমি হবি?- পর্ব ৪


বুয়েট এর টার্ম ফাইনাল, ব্যাপ্তির দিক দিয়া মহাকাব্য ( এইবার ত ৫০ দিন ব্যাপি এই মহাযজ্ঞ চল্লো)। আর একেক্টা পরীক্ষা যেন ছোটগল্প- শেষ হইয়াও হয় না শেষ , কী আজাইরা প্রশ্ন করছে, পার্শিয়াল পাবো কিনা, এমুন বালের মত ক্যাল্কুলেশন ভুল আমি কেম্নে করলাম,আরেক্টু সময় দিলেই আরেকটা গ্রেড তুইলা ফেলতাম-এই জাতীয় চিরন্তন ভ্যাদলা প্যাচালের ভীড়ে কখন যে ধাক্কা খাইসি ওর সাথে খেয়াল ই করি নাই । আমার আবার মুখের লাইসেন্স নাই, তার উপর পরীক্ষা ভালো দেই নাই,মেজাজ চ্রম বিলা ।মুখস্থ বুলির মত বাপ-মা তুইলা গালি দিতে যেই না মুখ তুলছি অম্নি দেখি ও ।

আমি কি বল্বো,তার আগেই শুরু হয়ে গেল-
“কীরে, পরীক্ষা খুব ভালো দিছিস বুঝলাম,তাই বলে রাস্তাঘাটে মানুষের গায়ে পড়ে এটা জানাইতে হবে?”

এক্টু আগেই মুখ থেকে প্রায় বের হয়ে যাওয়া গালিটা ম্যালা কষ্টে গিলে ফেলে বললাম-

“তরে কইসে,সবাইরে নিজের মত ভাব্লে হইব? সবাই তর মত আতেল না ।

অবশ্য এই তথা কথিত আতেল মেয়েটা না থাকলে আমার বাবা-মার ইঞ্জিনিয়ার পোলার শখ সেই প্রথম টার্মেই ঘুইচা যাইত, সেইটা আমার থেকে ভাল আর কে জানে । এই যে কেবল ম্যাশিন-১ পরীক্ষায় আমি টাইনা-টুইনা উত্রায় যাবো,তার সিংহভাগ( নাকি সিংহীভাগ) কৃতিত্ত্ব এই মেয়েটার ।

“কেমন দিলি?পারছিস ত? দাগায়া দিসিলাম ত সবই”


জবাবে একটু আগেই লিখে আসা ইন্ডাক্সন মোটর স্টার্টিং এর উত্তরের থেকেও অপ্রাসংগিক ভাবে বল্লাম,

“আরে লিখছি লিখছি, টেনশন নিস কেন এত?”

৯৯ রানে নট আউট থেকে যাওয়া ব্যাটসম্যানের মত আক্ষেপের সুরে বলল-

“আচ্ছা নেব না,যাহ। ৮ নম্বর টা পুরা করছিস?আমার পুরা মিলে নাই ”

চামে দিয়া পার্ট নেবার সুযোগ কে হাতছাড়া করে, তাও আবার এই সাংঘাতিক রকম ভাল ছাত্রী সুন্দরীর সাম্নে।আমার ও ব্যতিক্রম হবার কোনো শখ নাই,তাই জোরসে বলি-

“এক্সাম স্ট্র্যাটেজী বৈলা এক্টা কথা আসে, জানিসনা ত, সারাদিন খালি আতেলের মত পড়লেই এইগুলান শিখা যায় না বুঝলি। লিমিটেড রিসোর্স এর মোস্ট ইফিসিয়েন্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে জানতে হয়। তুই কঠিন ম্যাথ করতে গেছিস ক্যান ? ৮ করলে নম্বর বেশী দিবে? আমি তো ৫,৬,৭ করসি একটা ত হবেই,আর ২টা তে পার্শিয়াল ১০ পাব, শিউর”

ওর অভিব্যক্তিহীন মুখশ্রী দেখে আমার ত আর খুশি তে ধরে নাহ। খুশিতে মনে মনে লাড্ডু খাইতে খাইতে ভাবি- দিছি টিচার ফাইটারের থোতা মুখ ভোতা কইরা ;)


“থাক থাক, এখন দুঃখ কইরা লাভ নাই । বুঝলি তো না, চাইলেই আমি ফোর পাইতে পারি,শুধু আমি তোদের মত এত আতেল না বলে রক্ষে, নাইলে তোরা বেইল পাইতি?”


অন্যদিন হলে এতক্ষণে নির্ঘাত ও হাসতে হাসতে আমার পিঠে দুই তিনটা থাপ্পড় বসাইত, নাইলে নিদেনপক্ষে কুত্তা-হারামী টাইপ কয়েকটা নিরামিষ গালি। কিন্তু আজ কি হলো,এখনো আমার পিঠ বা কর্ণকুহরে কোন অনুভূতি নাই।

একটু বিরক্তি নিয়াই বললাম-

“কিরে, একটু বেশী হয়া গেল না, আমি না হয় তোর মত টিচার ফাইটার নাহ, তাই বইলা আমাদের কি কিছু পারতে নাই, এত অবাক হবার কি আসে? ভাব তো দেইখা মনে হইতেছে ফেল করবি।মাইয়া মানুষের যত্তসব নখরা”


প্রলয়ংকারী ঝড়ের আগের মত সব এক অদ্ভুত নির্লিপ্ততা ওর চোখে-মুখে – এই ভাবতে ভাবতেই পিঠে আছড়ে পড়লো ওর রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার থাপ্পড়, আর মুখে অনবরত যে তুবড়ি ছুটলো তাতে আমি এই রুদ্রমূর্তি রমণীর সামনে ,আমার এক্সাম স্ট্র্যাটেজী সহ খড়কুটোর মত ভেসে গেলাম ।রাগে গজ-গজ করতে সে হেটে চলে যাবার আগে আরো যা যা ঘটলো তার সারাংশ এই যে- এক্সাম স্ট্র্যাটেজী বলে আমি যেটা নিয়া এতক্ষণ তাফালিং কইরা গেলাম, সেই ৮ নং প্রশ্নটা আসলে “কম্পলসারি” ছিল । পুরাই এক সেটের দফা-রফা।

যাবার সময় ওর চোখের কোণে অশ্রুর মত কি ঝিলিক দিল কি দিল না-এই নিয়ে মনস্থির করতে করতে দেখি আবার ফিরে এসেছে । টকটকে লাল হয়ে যাওয়া নাকের নিচে কয়েক ফোটা ঘাম জানান দিচ্ছে যে এই আবার এক পশলা ধেয়ে আসছে আমার দিকে।কিন্তু অবাক করে দিয়ে দেখি আমাকেই উলটা প্রশ্ন- “ তুই কি জীবনেও শুধ্রাবি নাহ? ভাবিস কী সারাক্ষণ?চুপ করে আছিস ক্যান? ল্যাগ খেয়ে জুনিয়রের সাথে ক্লাস কর,আমার কি?” বলেই হাটা শুরু করলো উলটা দিকে।

পরীক্ষায় ভরাডুবি না বরং আমার সামনের এই আবেগাপ্লুত, ক্রোধান্ধ ,অঘটনঘটনপটিয়সী এই সুন্দরীর জন্য আমার মনের কোন গহীনে যেন বাজছে ব্যাথার রাগীনি ।ও হেটে চলে যাচ্ছে।আমি দেখছি । পড়ন্ত বিকালের এই আলোতে যে ওকে দরকারের চাইতেও বেশী ই সুন্দর লাগে তা কি জানে এই রমণী ? ইচ্ছে করছে এক ছুটে যাই,হাতটা ধরে বলি “না, আমি শুধ্রাবো নাহ,অগোছালো এই আমি এর জন্য যদি একটা তুই থাকিস,তো আমি শুধ্রাবো নাহ। শয়নে স্বপনে,নিদ্রায়-জাগরণে,আকারে-ইংগিতে,ভাবে-ভংগিতে শুধুই তোকে ভাবি।” ইচ্ছা করে মনের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে জিজ্ঞাস করি- “ তুই কি আমার তুমি হবি?”


বিঃদ্রঃ উপ্রোক্ত ঘটনা ৬০% সইত্য আর ৩৫% কল্পনা, বাকী ৫% ডাটা এরর ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৫০
৮১টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×