ষড়যন্ত্র, বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করনীয়:
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় একটি প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য। যুদ্ধ হয় পূর্বপাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আর পশ্চিমপাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) মধ্যে। তখন পাকিস্তানী হানাদারদের সহায়তা করেছিল আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব সহ বেশ কিছু দেশ। আর তার সাথে এদেশীয় কিছু বেঈমান মীরজাফরের দল যেমন জামায়াতে ইসলামী কিংবা ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমান ছাত্র শিবির)। যারা রাজাকার, আলবদর, আলসামস, ও শান্তি কমিটি সহ বিভিন্ন নামে এবং দলে বিভক্ত হয়ে তাদের সাহায্য সহায়তা করেছে। পক্ষান্তরে বাঙ্গালীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল ভারত, রাশিয়া সহ অল্প কিছু সংখ্যক দেশ। যাই হোক, এ যুদ্ধে পরাজিত হয় পাকিস্তান ও তাদের দোসরেরা।
সেদিন সেই পরাজয়ের গ্লানি তারা এত সহজে ভুলতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে চালিয়ে যেতে থাকে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। অবশেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে ৭১ এর সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে সমর্থ হয় তারা, পরবর্তীতে একের পর এক হত্যা ক্যু এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে পৌঁছাতে থাকে তাদের কাঙ্ক্ষিত জয়ের লক্ষ্যে।
অতঃপর ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে তাদের সুখের ঘরে আগুন লাগে। ক্ষমতার পালাবদলে ৫ বছর পর সেই আগুন তারা নেভাতেও সমর্থ হয়। কিন্তু পুনরায় আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলে শেখ হাসিনার দুর্দান্ত সাহস, দূরদর্শী দৃষ্টি, কূটনীতি ও রাজনীতির কাছে হেরে গিয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার উপক্রম হয়। কিন্ত ভুলে গেলে চলবে না, এরাই সেই পরাজিত শ্বাপদের দল। কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করে তারা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে চক্রান্ত চালিয়ে যেতে থাকে। তারা কেবল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ করার জন্য এত টাকা বিনিয়োগ করছে তা কিন্তু নয়। তারা বিনিয়োগ করছে তাদের স্বার্থে, আরেকটি ১৫ আগস্টের আশায়, একটি পরিপূর্ণ এবং চিরস্থায়ী জয়ের আশায়।
আজকের এই লেখক, ব্লগার, প্রকাশক, বিজ্ঞানী, পুরহিত, ধর্মযাজক, মাওলানা, শিক্ষক, কারারক্ষী হত্যা কিংবা প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে হত্যাচেষ্টা তাদের ঐ ষড়যন্ত্রের অংশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আস্তিক-নাস্তিক একটি ব্রেইনওয়াশ মূলক শব্দ ছাড়া অন্য কিছুই নয়। আস্তিকতা-নাস্তিকতা হাজার বছর আগেও ছিল এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কাজী নজরুল ইসলামকেও একসময় নাস্তিক উপাধি দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তাই বলে তাকে হত্যা করা হয়নি। চ্যানেল আই এর উপস্থাপক জনপ্রিয় একজন মাওলানা কেবল আস্তিকই নয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পরতেন, কিন্তু তাকেও হত্যা করা হয়েছে। কারা করেছে আর কারা করিয়েছে এখনো অজানা!!!
ষড়যন্ত্রকারীরা ভালভাবেই জানে কিভাবে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটাতে হবে, কিভাবে ক্ষমতা দখল করতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বিচক্ষন, তিনি হয়তো এর সব কিছুই জানেন এবং বোঝেন। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বঙ্গবন্ধুও অনেক বিচক্ষন ছিলেন। অথচ ষড়যন্ত্রকারীদের কাছে তিনিও হেরে গেছেন। কারন, ঘরের শত্রু বিভীষণ। আজ শেখ হাসিনার ঘরেও অনেক শত্রু ঢুকে পড়েছে। তিনি যদি তা না বোঝেন, তবে তিনি যতটা না ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে এই অসাম্প্রদায়িক আর প্রগতিশীল বাংলাদেশ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, সময় থাকতে আগাছা পরিষ্কার করুণ। শত্রু চিনতে ভুল করবেন না। প্রত্যেকটি হত্যা, খুন, ধর্ষণ কিংবা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শস্তির ব্যবস্থা করুণ।
উন্নয়ন আমরা সবাই চাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, উন্নয়নের চেয়ে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা অনেক বেশী জরুরী। স্পর্শকাতর ঘটনাগুলোর দিকে স্পেশাল নজর দিন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে এক সপ্তাহে যে কোন কেইসের মোটিভ উদঘাটন করতে পারে, সে বিশ্বাস আমাদের সকলেরই আছে। শুধু প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক নির্দেশনা। এমনিতেই সাধারণ জনগনের মাঝে সবসময় সরকারবিরোধী একটা মনোভাব থাকে। যে কোন কিছুতেই সরকারের দোষ খুঁজে ফেরে। তার উপর স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে তার সাথে আরও ঝোল দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা সাধারণ জনগনকে যেভাবে ক্ষেপীয়ে তুলছে, তাতে তারা তাদের মিশনে এখনো পর্যন্ত শতভাগ সফল। সময় হাড়িয়ে বুঝলে কোন লাভ হবে না। বিপদে আপনজন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নিজে বাঁচুন, বাংলাদেশকে বাঁচান।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮