শিশুটির বয়স চার-পাঁচ বছর। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রাতারগুলে ওর বাড়ি। আমরা ঢাবির বন্ধুরা সিএনজি থেকে রাতারগুলে নামতেই দৌড়ে এলো। কাছে এসেই “মজা খাইবার ট্যাখা দ্যান” বলে হাসল ছেলেটা। আমি ওর কথায় মজা পেলাম। বললাম, “কি খাইবার ট্যাখা?” চটপট জবাব “মজা খাইবার ট্যাখা।”
আমার পেছনে হাঁটছে ছেলেটা। আমি ওর সাথে কথা বলছি। এতক্ষণে আরো চারটা ছেলে হাজির। “ট্যাখা দ্যান” সবার আবদার। ঠিক সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় Mahmudur Rahaman স্যার থাকায় খুব আস্তে কথা বলছি। ওরা নাসোরবান্দা। টাকা দিতেই ছোট ছেলেটার মুখে আনন্দের বন্যা।
ছেলেটা বলে “এখটা ছবি তোলেন।” তুললাম। ওর মন ভরেনি। বলে “সামনে হাত দিয়ে…।” প্রথমে বুঝিনি। আবার জানতে চাইলাম। যা বললো তাতে… আমি সেলফি তুললাম। ছেলেটা মাথা নাড়ে। ভাবলাম এই ছোট বাচ্চাও সেলফি চেনে।
হাসতে হাসতে ওরা চলে গেল। শিশুটা বারবার পেছনে তাকায়। আমিও তাকাই। ছেলেটার জন্য কষ্ট লাগল। মন খারাপ করে ভাবলাম একটু পরিচর্যা পেলে…।
“শিশুরা শ্রেষ্ঠ নাগরিক। শিশুরাই শ্রেষ্ঠ।” ভাবতে ভাবতে বাংলাদেশের ‘আমাজন’ ঘুরতে নৌকায় উঠলাম।
রাতারগুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। সৌন্দর্যের অপার মহিমা রাতারগুল। জলাভূমির মধ্যে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি গাছের বিশাল জঙ্গল। যতই গহীনে যাচ্ছি ততই গাছের ঘনত্ব। এতই ঘন জঙ্গল যে ভেতরের দিকটায় সূর্যের আলো গাছের পাতা ভেদ করে জল ছুঁতে পারে না।
সূর্যের আলো ছুঁতে পারেনি রাতারগুলের এই শিশুকেও। সামান্য পরিচর্যা পেলে ‘রাতারগুলের সৌন্দর্য-ই’ হাসত শিশুটির চোখ-মুখে। ওর বিজয়-চিহ্নিত হাতে উঠত বাংলাদেশের পতাকা। শিশুটির হাসিতে হাসত বাংলাদেশ। আহারে শিশুটি...
(১৮ আগস্ট ২০১৫)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬