ও একজন নিছক বাচ্চা মেয়ে। নেশা কী বোঝার আগেই নেশা ওকে গিলে ফেলে। এ দায় শুধু ঐশীর একার নয়। বন্ধু, পরিবার, সমাজ, কিংবা রাষ্ট্রেরও।
"Oishee wrote an emotional 12 page suicide note before killing her parents. She complained that her parents never understood her and always used to find faults with her, but never appreciated her good side.
Oishee began using drugs, yaba and marijuana, a few years ago, but her parents only found out apparently just three months ago. Since then Oishee has not been allowed to leave the house. She resented her parents for stopping her from indulging in her addictions, and thus decided to get rid of them forever." [ Ittefaq, 19 August, 2013]
কিভাবে নেশায় জড়িয়ে পড়া সন্তানকে বাগে আনতে হয় ঐশীর পরিবার জানতেন না। উনারা সন্তানকে আইন-শৃংখলাবাহিনীর হাতেও তুলে দেননি। তুলে দিলে হয়তো ট্রাজেডি এড়ানো যেত।
আইন-শৃংখলাবাহিনীর লোক হয়েও ঐশীর বাবা "প্রাপ্তবয়স্ক" অপরাধী সন্তানকে ঘরে বন্দি রেখে আইনকেই নিজের হাতে তুলে নিলেন।
ঐশীর বক্তব্যে জানা যায়, আঠারো বছর বয়স হবার আগেই ঐশী নেশায় বুদ হয়ে যায়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে নেশাগ্রস্ত ঐশী কিভাবে সম্বিত ফিরে পাবে-- বয়স আঠারো হোক কিংবা উনিশ বছর হোক, সে তো সবসময় নেশার ঘোরেই ছিল।
অপ্রাপ্তব্যক্তিদের কাছে "অবাধে" নেশাদ্রব্য পৌছায়। এ দায় কী রাষ্ট্র বা সরকারের না?। রাষ্ট্র বা সরকারের আচরণ এমন--- শিশুর কাছে ঔষধ ফেলে রেখে ঔষুধের গায়ে লিখে দেয়া "শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।"
[আমার উদ্দেশ্য রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারক দোষী বানানো নয়। অপরাধের দায় তাদেরও এটা বুঝানো।
বাই দ্যা ওয়ে, বহুদিন আগে একটি মুভি দেখেছিলাম, ছবিটি হলিউড কিংবা বলিউডের ও না। সিনেমাটি পাশের দেশের। কলকাতার বাংলা ছবি। ছবিটির প্রথম চৌদ্দ মিনিটের সারাংশের সঙ্গে সবাই পরিচিত হলেও উপস্থাপনাশৈলী অসাধারণ...আপনারাও দেখতে পারেন https://youtube/ufIOP7gf_Gg ]
আমার কাছে ঐশী আঠারো বৈ উনিশ বছরবয়সী না। পিতা-মাতা হারানো ভাই হলে আমি ঐশীর বিচার চাইতাম না। আমি রাষ্ট্রকে বলতাম, আমি আমার বাবা-মার বিচার চাই না।
বরং, আমি আমার সেই সুস্থবোনকে চাই, যাকে নিয়ে আমরা খুনসুঁটিতে মেতে উঠতাম। জানি রাষ্ট্র পারবে না। পারলেও আড়চোখা সমাজ বাঁধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।
এসবি অফিসারের মৃত্যুতে কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সে বিতর্কে যাব না। অফিসারের পদ কেউ তো পূরণ করেছে। কিন্তু ঐশী কাকে হারিয়েছি? একজন স্নেহময়ী বাবা, একজন স্নেহময়ী মা। নিষ্ঠুর বিচারে অপ্রাপ্তবয়স্ক একমাত্র ছোটভাই একমাত্র প্রিয় বোনকেও হারাতে বসেছে।
আচ্ছা রাষ্ট্র কী জানে আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত একজন ব্যক্তির পেছনে কত ব্যয় হয়? বাবা-মা বা পরিবারকে কত শ্রম ব্যয় করতে হয়? ইউনিসেফের এক হিসেব অনুযায়ী উন্নয়শীল দেশে সতেরো বছর বয় পর্যন্ত বছরে প্রায় 900 ইউএস ডলার ব্যয় হয়। ঐশীর স্কুলের বিবেচনায় নিলে এ ব্যয় নিশ্চয় বহুগুন বেশি ছিল।
বিচারের উদ্দেশ্য কী শুধুই শাস্তি দেয়া, অপরাধীকে আইনতঃ অপরাধী বানানো। অপরাধ নিরোধ ও এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি নয় কী? যদি হয়, ঐশীর বিচার প্রক্রিয়া তো সচেতনতা সৃষ্টিতে শতভাগে সফল। এটা নিয়ে কারো দ্বিমত থাকতে পারে বলে মনে হয় না।
সচেতনতার শতভাগ পারদ যদি বিচার প্রক্রিয়া ছুঁতে পারে... মূল অপরাধ তো, পরিবারের প্রতি পরিবারেরই। পরিবার যদি চাই কেন তাকে সংশোধন হতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে দেয়া হবে না?
স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দিলে নেশায় বুদ হওয়া যুব সমাজের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর এটা হবে অনন্য নজির। হতাশাগ্রস্ত সমাজের জন্য এ বার্তাও হতে পারে, তারা আমাদেরই ভাই কিংবা বোন। তাদের সুন্দর জীবনে ফিরে আসার পথে আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সহায়ক।
যুক্তরাষ্ট্র একটা কথা প্রচলিত আছে---when a person gets sentenced to prison, the whole family serves the time. আদালত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচারের অমানবিক পরিণতির কথা ভুলে গিয়ে, সুবিচারে ব্যর্থ হয়।
আমি চাইবো না ঐশীর সাজা হোক। রাষ্ট্র প্রমাণ করুক, অসভ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন হওয়া রাষ্ট্র সভ্য, বখে যাওয়া নাগরিকদের শুধু আইনের আঁচলেই বাঁধে না, ভালবাসার চাঁদরেও বাঁধে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৬