somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বংগীয় নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে...তোমরা ঠিক হয়ে যাও

১৬ ই জুন, ২০১০ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্যান্য গরীব মুসলিম দেশের মত আমাদের দেশেও নাস্তিকদের সংখ্যা সাধারনত কম। কয়েক লাখের বেশি হবে না। উন্নত বিশ্বে যেখানে জ্ঞান বিজ্ঞান, শিক্ষা আরেকটু বেশি সেখানে নাস্তিকদের সংখ্যাও বেশি। তবে বাংলা ব্লগীয় জগতে নাস্তিকদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তারা প্রায়ই আস্তিকদের সাথে তর্কা তর্কিতে লাগেন এবং আস্তিকদের তুলোধুনা করেন। অনেক সময়ে তাদের গালাগালি করেন, তাদের স্বল্পজ্ঞানকে পুজি করে খোচা দেন বা অবজ্ঞা করেন। যেটি সব সময়ে ঠিক নয়। আস্তিকদের পক্ষ নিয়ে আমি তাদের দিক থেকে নাস্তিকদের উদ্দেশ্যে কিছু আচরন বিধি পালনের আওবান জানাচ্ছি। সকল নাস্তিককুলের উচিত এসব আচরনবিধি মেনে চলা। অন্যথায় তাদের সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে—
আচরনবিধি সমুহ----

১। আস্তিকরাও মানুষ। তাদের সাথে মানুষের মত আচরন করুন। এখন যতই মতপার্থক্য থাক, মৃত্যুর পরেতো সবাই ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হবে। সবার গন্তব্যই একই হবে।

২। মত প্রকাশের অধিকার সবার আছে। আস্তিকদের মতের সাথে আপনার মত না ও মিলতে পারে। তাই বলে তারা মত প্রকাশ করবেন না তা তো হয় না। মাঝে মাঝে তারা তাদের স্রষ্টা এবং তাদের নেতা ও তার চেলাদের কথা বলবেন। আপনারা সেকারনে উত্তেজিত না হয়ে বরং যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করুন। তারা স্রষ্টা, আল্লা বা ভগবানের প্রসংশা করে কিছু লিখলে ক্ষেপে যাবেন না। মনে রাখবেন, গনতন্ত্রে সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে তাই। কাজেই ধর্মীয় মতবাদ কে চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন না। এমনকি সে মতবাদ আপনার বিরুদ্ধে গেলেও।

৩। ধর্মীয় মতবাদ লালন করার জন্য কারো কল্লার দাম ঘোষণা করবেন না। কেউ ধর্মের পক্ষে বললে অথবা নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে বললে তাকে মুরতাদ টাইপের কোন বিষেশণ দিয়ে হুমকী দিবেন না। মনে রাখবেন এটা বর্বর সমাজ আর মতবাদে হয়। আপনারাও বর্বর হবেন না।

৪। আপনার নাস্তিক্য মতবাদের সাথে না মিললে কাউকে মালাউন, নাসারা, নুনুকাটা, যবন এসব বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেন না। সেটি চরম সাম্প্রদায়িক হবে। নাস্তিকতার মত একটি যুক্তিবাদী মতবাদের অনুসারী হয়েও যদি এসব তাচ্ছিল্যজনক শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে মানুষ আর কার কাছে যাবে।

৫। আস্তিকদের যত্নের সাথে ট্রিটমেন্ট করুন। যে কারনেই হোক আস্তিকদের অনুভুতি খুব পাতলা হয়ে থাকে। অল্পতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সেটা তাদের দোষ নয়। যেমন ধরুন, আপনি যখন একটি খরগোশ ধরেন তখন খুবই হালকা ভাবে আদরের সাথে ধরেন। কিন্তু যখন একটি গরুকে নিয়ে যান তখন একটু কর্কশ ভাবে ধরেন। ঠিক সেরকমভাবে আস্তিকদের ডিল করুন। পাতলা অনুভুতি খান খান করে দিবেন না। সেটি তাদেরকে উত্তেজিত করে দিতে পারে। তখন যদি তারা যুক্তিবোধ না দেখায় সেই দোষতো তাদের নয়, তাই না?

৬। কথায় কথায় মৃত্যুর পরে ব্যাকটেরিয়া- পোকামাকড়ের ভয় দেখাবেন না। কারন ভয় আর লোভ দিয়ে কোন মতবাদ প্রচার করা কোনভাবেই উচিত নয়। শুধুমাত্র চিন্তাহীন মতবাদই এভাবে চলতে পারে। আপনারা সেটা করবেন না।

৭। পাড়ায় পাড়ায় আপনারা নাস্তিক সভা করতে পারেন। তাই বলে ধার্মিকদের করতে দিবেন না তা তো ঠিক না। তারা যদি পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ বানাতে চায় এবং শীতকালে প্রতিদিন ওয়াজ মাহফিল করে শব্দ দুষন করেও তারপরেও ধৈর্যের সংগে সেগুলো শুনবেন। গনতন্ত্রের খাতিরে এটুকুও সহ্য করতে না পারলে আমরা কিভাবে উন্নত সভ্যতা গঠন করব। কোন ওয়াজ শুরু হলে ধর ধর, ধর্মব্যবসায়ী এসব বলে তেড়ে যাবেন না। নিজেরা এত বাধাহীনভাবে নাস্তিকতার সভা করতে পারেন আর ওয়াজ হতে দিবেন না সেটা তাহলে স্বচ্চাচারিতার উদাহরন হয়ে থাকবে।

৮। কেউ যদি নাস্তিকতা ছেড়ে আবার আস্তিকতায় ফিরে যেতে চায় তাহলে তাকে সহজে যেতে দিন। মতবাদ পরিবর্তনের কারনে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট বা তার উপর ও তার পরিবারের উপর হামলা করবেন না। তাকে মৃত্যুদন্ড দিবেন না। নিজের মতবাদ ছেড়ে গেলেই মৃত্যুদন্ড – এটি একটি স্বেচ্চাচারি নিয়ম। মনে রাখবেন আধুনিক সমাজে যে কারোরই যেকোন মতবাদ গ্রহন, বর্জন ও প্রচারের অধিকার থাকে। আপনারা মধ্যযুগীয় কায়দায় এসব বিষয় নিয়ে ডিল করবেন না।

৯। মেয়েদের জোর করে বোরখা না পরে থাকতে বলবেন না। কারন বোরখা পরা বা না পরার অধিকার সবারই আছে। কেউ যদি পরতে চায় তাকে পরতে দিন। জোর করে কাউকে বোরকা ছাড়া থাকতে বলা শুধু নারী স্বাধীনতাই হরন করে তা না, সেটা অন্যের স্বাধীন ইচ্ছাকেও অসম্মান করে।

১০। নিজের নাস্তিক্য মতবাদই শ্রেষ্ঠ আর অন্য সব মতবাদ ভুয়া এসব বলবেন না। মনে রাখবেন শুধুমাত্র চিন্তাহীন ব্যক্তিরাই এসব বলতে পারে। তখন তাকে মৌলবাদ বলা হয়। কাজেই নিজের মতবাদ শ্রেষ্ঠ – এরকম ভুল বিষয় প্রচার থেকে বিরত থাকুন।

১১। আস্তিকরা যদি আপনাদের সম্পর্কে কোন কঠিন সমালোচনা করে বা কড়াভাবে ব্লগে বা ফেইসবুকে বা ইউটিউবে কিছু লিখে বা পোষ্ট করে তাহলে সে ব্লগ গুলোকে নিষিদ্ধ করবেন না। সেটি হবে চরম কুপমুন্ডকতা।

১২।আস্তিকদের উপর অযথা হয়রানী বা বাড়তি ট্যাক্স এসব আরোপ করবেন না। এগুলো চরম বিদ্বেষ ভাবাপন্ন কাজ। আইন সবার জন্য সমান। কারো উপরে মতবাদিক কারনে বাড়তি ট্যাক্স আরোপ একটি বর্বর আইন। নাস্তিকদের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবেনা- এধরনের ইনডেমনিটি তথা ব্লাসফেমি আইন অত্যন্ত একপেশে এবং অমানবিক।

১৩। আর সর্বশেষে বলি, প্রতি দু দিন পর পর নাস্তিক্যবাদ নিয়ে পোষ্ট দিবেন না। পোষ্টের অর্ধেকই যদি আপনারা নাস্তিক্যবাদ দিয়ে ভরিয়ে রাখেন তাহলে কিভাবে হবে। তাহলেতো মানুষ আপনাদের ছাগু টাইপ কিছু একটা বলবে। আর বার বার একই বিষয় নিয়ে, একই ধরনের প্রসংশামুলক বা ব্যাখ্যামুলক প্যান প্যানানি পোষট দেয়া থেকে বিরত থাকুন। সেটা যেমন একঘেয়ে লাগবে তেমনি সেটা আস্তিককুলের বিরক্তির কারনও হবে।


- আজ এ পর্যন্তই। এর সাথে আরো কোন আচরন বিধি যদি আপনাদের মনে পড়ে তাহলে জানাতে ভুলবেন না।
২৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×