somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিব্রান কাদির
আমি জিব্রান কাদির। জন্ম ২৪ অক্টোবর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর ধানাধীন সাতলা গ্রামে। লিখতে ভালবাসি। পাশাপাশি ফটোগ্রাফার হিসেবে প্রবল ইচ্ছা। সামাজ কর্মী, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতি কর্মকান্ডের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে জড়িত।

বাবরি মসজিদ : শাহাদাতের ২৬ বছর

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ৬ই ডিসেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার ১৯৯২ সালের এই দিনে বাবরি মসজিদকে শহীদ করা হয় ৷ হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবর শাহ-র আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর তারিখে৷

রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৭ সালে সেখানে বাবর শাহের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে মসজিদটির নাম জনমুখে বাবরি মসজিদ৷

আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান’ বলেও পরিচিত ছিল৷ মসজিদ ধ্বংসের পাঁচ ঘণ্টা আগে হিন্দু যুবকরা মসজিদের উপর উঠে পড়ে আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে কথিত আছে৷

১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবার পর মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা সিদ্ধান্ত করেন যে, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷ আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী’-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷

মুসলমান দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের নীচে মন্দির থাকার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই৷ ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির মাত্র দু’বছর পরেই – অর্থাৎ ১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরবর্তী অবস্থা তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থ-কে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, কেননা ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে”৷

সবচেয়ে বড় কথা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং অন্যান্য হিন্দু সংগঠন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-র যে সব বিবরণের উপর নির্ভর করে তাদের দাবি পেশ করে থাকে, মুসলিম দৃষ্টিকোণ থেকে সেই সব রিপোর্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত৷ বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷

অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী ১৮৫৫ সাল অবধি নাকি হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পুজা করেছে৷ কিন্তু সিপাহী বিদ্রোহের পর মসজিদের সামনেটা ঘিরে দেওয়া হয় এবং হিন্দুরা বহিরাঙ্গণের একটি ‘চবুতরা’-র উপর তাদের পুজাপাঠ করতে থাকে৷



১৮৮৩ সালে হিন্দুরা ঐ চবুতরার উপর একটি মন্দির নির্মাণের প্রচেষ্টা করলে পর, জেলা প্রশাসন তা নিষিদ্ধ করেন৷ ১৯৩৪ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মসজিদের চারপাশের প্রাচীর ও একটি গম্বুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু ব্রিটিশ সরকার তা পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করেন৷

ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার আগে বাবরি মসজিদ ১৯৪৯ সালের ২২শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুলিশ গার্ডরা নিদ্রিত থাকা অবস্থায় মসজিদে রাম-সীতার মূর্তি ঢুকিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ কিন্তু যে আন্দোলনে শেষমেষ বাবরি মসজিদ ধ্বংস হবে, তা শুরু হয় ১৯৮৪ সালে, যখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷

১৯৮৫ সালে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷ ১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস’-এর অনুমতি পায়৷

ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আদভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে তাঁর দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রথযাত্রা’ শুরু করেন৷ ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আদভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়ার ইত্যাদি নেতারা পুজা প্ল্যাটফর্মে পৌঁছে একটি প্রতীকী ‘কার সেবা’ করেন

সেদিন দুপুরে এক কিশোর ‘কার সেবক’ একটি গম্বুজে চড়ে – যার পরেই মসজিদের বাইরের কর্ডন ভেঙে ফেলা হয়৷ অতঃপর বাবরি মসজিদ বিনাশের পথে আর কোনো বাধাই থাকে না৷ ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে আর একটি কলঙ্কিত অধ্যায় যুক্ত হয়৷
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×