somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো লাগা এক অনুভূতি

০২ রা মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

""হার্টবিট "

' স্যার এই আট নাম্বার কেবিনের ফাইলটা মাসুদ স্যার আপনাকে দিতে বলেছেন।এনজিও গ্রামে এই রোগীর তিনটা ব্লক আসছে কিন্তু কিছুতেই অপারেশন করতে চাচ্ছেনা। স্যার আপনাকে ওনার পরিবারের সাথে কাউন্সিলিং করতে... । কথা শেষ করতে না দিয়েই নার্স রেবেকাকে ফাইলটা রেখে যেতে বলে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন ডাক্তার রিশাদ রায়হান।

'শাহিনা আখতার মায়া' ফাইলে হাত দিয়েই চমকে উঠলো রিশাদ। ত্রস্তহাতে আইডি নাম্বার সার্স দিতেই মনিটরে স্পষ্ট হয়ে উঠলো ২০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মায়া নামের মায়াবী সেই মুখ। স্থির তাকিয়ে আছে ছবিটার দিকে রিশাদ।
আমাদের ছিলো একই এলাকা, একই স্কুল। ওর বাবা যখন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসাবে এই এলাকায় এসেছিলেন, তখন থেকেই ওর বড় ভাইয়ের সাথে আমার একটা বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। মায়ার সাথে ও পরিচয় স্কুল থেকেই। পরিচয় থেকে কখন যে আমরা দু'জন ভালোবাসায় জড়িয়ে গেলাম, সেটা কেউই বুঝতে পারলাম না। আসলেই প্রেমের কোনো ভাষা নেই, নেই কোনো বাধ্যবাধকতা।
ইন্টার শেষ করে মায়া ভিক্টোরিয়া কলেজে আর আমি তখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র । এই দুটো কলেজের আনাচে কানাচে, প্রতিটি গাছের ছায়ায়, প্রতিটি ইটের ফাঁকে ফাঁকে হয়তোবা আজও লুকিয়ে আছে আমাদের দু'জনার প্রেমময় অসফল ভালোবাসার করুন কাহিনি। কেমন করে যেন দুই পরিবার ও জেনে গেলো ব্যাপারটা। আর তখনই মূর্তিমান আতংক হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে আমার সর্ব শক্তিধর এলাকার মেয়র জুলুমবাজ বাবা। তার চাচাতো ভাই হলো একই এলাকার এমপি। স্বাভাবিক ভাবেই এই দু'জনের ভয়ে বাঘে-মহিষে এক ঘাটে পানি খায়। ছোট বেলায় যে বাবাকে আমি স্বপ্নে খুঁজে বেড়াতাম, সেই বাবাকে কখনোই দেখতে পাইনি এই বাবার ভিতরে। অনেক কাঠখর পুড়িয়ে , মায়ের হাজারো অনুরোধ সত্বেও মায়ার ব্যাপার টা বাবাকে রাজি করানো গেলো না। উল্টো মায়ার বাবাকে ওদের বাড়িতে তার পোষা দলবল নিয়ে অপমান করে এসেছেন আমার ক্ষমতাধর বাবা।

সেদিনের কথা আজও মনে পরে... আমাদের সেদিনই ছিলো শেষ দেখা। মায়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো । ওর চোখের জলের ধারা তখনই আমায় বুঝিয়ে দিয়েছিলো, যুগে- যুগে হাজারো ব্যর্থ প্রেমের কাতারে আমরাও সামিল হচ্ছি।
' আমায় ভুলে যেও রিশাদ, জান ই তো বিয়েটা আমি আমাদের সবার ভালোর জন্য করছি। অনেক দূরে চলে যাব তোমায় ছেড়ে। অনুরোধ করবো তুমিও তোমার জীবনটা গুছিয়ে নিও। তোমার হ্রদয় থেকে একেবারে মুছে দিও আমাকে । আমি ও তোমায় ভুলে থাকার প্রানপন চেস্টা করব। পারব কিনা জানিনা। তবে তোমাকে অনেক মিস করবো রিশাদ' আর্তনাদে ফুপিয়ে উঠলো মায়া।
' চলো আমরা পালিয়ে যাই।তোমাকে ছাড়া কি করে থাকব বলো।' হতাশার মাঝেই যেন সমাধান বের করলো রিশাদ।
' ভেবে দেখ, যদি পালিয়ে যাই তোমার বাবা আমাদেরকে বাড়ি ছাড়া তো করবেই, এমন কি আমার বাবা, ভাইয়াকে মেরেও ফেলতে পারে, কি পারেনা? ' অসহায় দৃষ্টিতে রিশাদের দিকে তাকিয়েছিলো মায়া। আবার বললো, কিন্তু তোমাকে ছাড়া কিভাবে বাঁচতে পারব জানিনা। ২৪ টা ঘন্টা তুমি আমার চোখের সামনেই থাক। হাজার চেষ্টা করে ও তোমায় ভুলতে পারব,মনে হয়না।
'তুমি আমায় একটু জড়িয়ে ধরে দেখ, আমার বুকের ভিতরের প্রতিটি হার্টবিটের শব্দ শুধু তোমার কথাই বলে যাচ্ছে।জানিনা কি করে তোমায় ভুলে থাকব।' সেদিন ওকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ কেঁদেছি আজ আর মনে করতে চাইনা। মনিটর থেকে চোখ সরাতে পারছিলোনা রিশাদ। নার্সের ডাকে চিন্তায় ছেদ পরলো।

'স্যার আসব?
' হুম ' অন্যমনস্ক রিশাদ।
'স্যার, উনি আট নাম্বার পেসেন্ট এর ছেলে, আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন।' বলেই চলে গেলো রেবেকা।
'আংকেল আমি রাহুল, বলেই হাত বাড়িয়ে দিলো। মায়ের কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি । মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। যে করেই হোক এ যাত্রা মাকে বাঁচিয়ে দিন আংকেল। ' রাহুলের কন্ঠে আকুতি ঝরে পরলো।
' আমার কথা শুনেছ মানে?'
' জি আংকেল, আমার মা আমার বন্ধুর মতো। সেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদের সাথে কি কি হয়েছে, মা আমায় সব বলেছে।' রাহুলের কথা শুনে একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো ডাক্তার রিশাদ।
' আচ্ছা, ঠিক আছে, এবার বলোতো কি করে, কবে এসব ধরা পড়লো। যে অবস্থা দেখছি, তাতে তো অপারেশন ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারছিনা ' জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিশাদ।
' এমনিতেই মা অনেক অনিয়ম করত। বাবা মারা যাওয়ার পর সেটা আরও বেড়ে গেলো। আমিও বুয়েটে ভর্তি হয়ে চলে এলাম ঢাকায় । সুগার, প্রেশার দুটোই বাড়তি । দেখার মতো কেউ ছিলো না। ওখানের এক ডাক্তার দ্রুত কার্ডিয়লজিস্ট দেখাতে বললেন। এই হাসপাতালে ডাক্তার মাসুদ আংকেল আমাদের এলাকার, ওনাকে দেখাতে এসে জানতে পারলাম, আপনি এখানের একজন নাম করা সার্জন, হাসপাতাল ও শুনেছি আপনার তাই...অনেক ক্ষন স্থির তাকিয়ে আছে রিশাদ রাহুলের দিকে।
' ঠিক আছে , তুমি এখানে একটু অপেক্ষা করো, আমি দেখি কি করা যায়।' রাহুলের মাথায় ভরষার হাত বুলিয়ে বেরিয়ে গেলো রিশাদ।

নার্সকে হাতের ইশারায় যেতে বলে নিজেই মায়ার রুমে গিয়ে দেখলো ও ঘুমিয়ে আছে। কি মায়াময়, উজ্জ্বল এক মায়াবী মুখ। এখনো তেমনই আছে, শুধু একটু বয়স বেড়েছে । অপলক তাকিয়ে আছে রিশাদ। ওর হাতে মায়ার পছন্দের এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ।
' মায়া ঘুমাচ্ছ? ' অজান্তেই শব্দ দুটো বেরিয়ে এলো।
' কে' আমার রিশাদের গলা না, চমকে উঠলো মায়া।
' আমি রিশাদ, দেখতো চিনতে পার কিনা।' বলেই ওর হাতে ফুলের তোড়াটা ধরিয়ে দিলো রিশাদ। অপলক চেয়ে আছে মায়া। অনেক অনেক দিন পর চার চোখের মিলন যেন অপ্রত্যাশিত এক চাওয়া- পাওয়ার আলিংগন।
' রিশাদ তুমি , কি করে সম্ভব? তোমার সাথে আবার কোনোদিন দেখা হবে ভাবতেই পারিনি। উহ! রিশাদ তুমি, আমার সামনে, স্বপ্ন দেখছিনাতো ? '
' স্বপ্ন হবে কেন? উপরওয়ালা চাইলে সবকিছুই সম্ভব। '
' তুমি এখানের ডাক্তার আমি জানতাম না।'.
' হুম, শুধু ডাক্তার না, এই "রিমা জেনারেল হাসপাতাল" টাই আমার ।'
" কার নামে রেখেছ। মেয়ে না বৌ?'
'চিন্তা করে দেখতো রিমা নামের মাঝে আর কিছু খুঁজে পাও কিনা?' স্থির দৃষ্টিতে মায়ার মুখে কি যেন খুঁজে যাচ্ছিলো রিশাদ। চার চোখেই যেন বিষাদের ছায়া।
'তুমি এতো দিনে ও আমায় মনে রেখেছ, আমাদের দু'জনার নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে মেয়ের নাম রেখেছ। মেয়েকে বুঝি খুব ভালোবাস? পরিবার নিয়ে এখন কেমন আছ রিশাদ?
' হুম, মেয়েটা আমার খুবই লক্ষ্মী একটা মেয়ে। তবে বউ খুব অসুস্থ্য, খাদ্যনালীর ক্যান্সারে ভুগছে, লাস্ট স্টেজে ধরা পরেছে। এখানেই ভর্তি আছে।'
' কি বলছ?
'হ্যাঁ, সুগার, প্রেশার ও অনেক বাড়তি। লাবনীকে তো তুমি চেনই, আগেও অনেক মোটা ছিলো, এখন আরও ওজন বেড়েছে।'
' তুমি লাবনী আপাকে বিয়ে করেছ? উনি তো তোমার ঐ এম পি চাচার মেয়ে।'
' আমি শুধু তোমাকেই হ্রদয়ে রেখেছি সেখানে অন্য কারুর অস্তিত্ব নেই। বাবা, চাচা মিলে এই কাজ করেছে। এখন এসব কথা বাদ দাও । তুমি বলোতো, অপারেশন করাতে চাচ্ছনা কেন?'
' কি হবে এতো বেঁচে থেকে।' রিশাদের চোখে চোখ রেখে অপলক তাকিয়ে আছে মায়া। 'তবে এখন তোমায় দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীটা আসলেই বেঁচে থাকার জন্য খুব সুন্দর একটা জায়গা। চাইলে আরও কিছুদিন বেঁঁচে থাকা যায়। '
অনেক অনেক দিন পর মায়ার কথাগুলো যেন রিশাদের হার্টবিট আরও খানিকটা বাড়িয়ে দিলো। ভালোবাসা এমনই হয়। সত্যিকারের প্রেম কোনো দিন বৃথা যেতে পারেনা। একদিন না একদিন ঠিক তার ভালোবাসার প্রিয়জনকে যত্ন করে কাছে টেনে নেয়, সেটা সময়ে হোক অথবা অসময়ে।
-------
জিনাত নাজিয়া






সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:২৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×