ছবি সুত্রঃ https://phys.org
ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরির জ্যেষ্ঠ গবেষক বলেছেন, “পৃথিবী গত ৫০ বছরের তুলনায় এখন দ্রুত গতিতে ঘুরছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি আরো বাড়লে হয়তো নেগেটিভ লিপ সেকেন্ডের প্রয়োজন হবে। যদিও এটা সম্ভব কিনা তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে এই লিপ সেকেন্ড সংযোজনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট সময় আমরা গণনা করি এবং ২৪ ঘণ্টায় পৃথিবী তার নিজ অক্ষে একবার ঘুরে আসে। এই ঘূর্ণনের ওপর নির্ভর করেই আমাদের সময়ের হিসাব নির্ধারিত।
ভবিষ্যতে প্রচলিত সময়ের ধারণা পরিবর্তন হয়ে হয়ত মিনিটে কমবে সেকেন্ডের সংখ্যা। বিশ্বের অনেক বিজ্ঞানী ধারণা করছেন বিগত পাঁচ দশকে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি বেড়েছে। ফলশ্রুতিতে, কমছে দিনের সময়সীমা এবং ২৪ ঘন্টার পূর্বেই একদিন সম্পন্ন হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণার বরাত দিয়ে এমন তথ্যই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজ্ঞানীদের কাছে এই চমকপ্রদ ঘটনার যথাযথ প্রমাণও আছে।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বিগত কয়েক বছরে পৃথিবী তার নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নিয়েছে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৫৯.৯৯৯৮৯২৭ সেকেন্ড ফলে ২০২১ সাল সাধারণ হিসাবের থেকে ১৯ মিলি সেকেন্ড ছোট হবে, যা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ০.৫ মিলি সেকেন্ড কম।
লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে সবচেয়ে ছোট দিনের সংখ্যা ছিল ২৮টি। ১৯৬০ সালের পর থেকে যা সর্বোচ্চ। ডেইল মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯২০ সালের ২০ জুলাই ছিল সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দিন এবং পরবর্তিতে ২০২০ সালের আগে সবচেয়ে ছোট দিন রেকর্ড হয়েছে ২০০৫ সালে। তবে গত বছর এই রেকর্ড ভেঙেছে মোট ২৮ বার। ২০২১ সালে এই রেকর্ডও ভাঙবে এমন পূর্বাভাস করা হয়েছে।
পারমাণবিক ঘড়ির হিসেব অনুযায়ী, সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী গড়ে প্রতি ৮৬,৪০০ সেকেন্ডে একবার ঘোরে যা একটি সৌর দিনের সমান।
সময়ের এই অসামঞ্জস্য নতুন নয়। হ্রাস পাওয়া সময়ের এই হেরফের সমাধান করতেই কোনো কোনো বছরে এক “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয়। ষাটের দশকে আণবিক ঘড়ি আবিষ্কারের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ বার এমন “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে “লিপ সেকেন্ড” যোগ করা হয় ।
গবেষণা বলছে, তারপর থেকেই পৃথিবী তার স্বাভাবিক ঘূর্ণন গতির থেকে জোরে ঘুরছে। তাই বিজ্ঞানীরা সমতা ফিরিয়ে আনতে “ঋণাত্মক লিপ সেকেন্ড” প্রণয়নের পরামর্শ দিয়েছেন।
আপাতদৃষ্টিতে এই সময়ের হেরফের আমাদের নিকট খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা, স্যাটেলাইট সিস্টেম পরিচালনা এবং নেভিগেশন সিস্টেমের ওপর এর প্রভাব রয়েছে।
এই লিপ সেকেন্ড সংযোজনে ২০১২ সালে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সময় নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অনেক নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে এই পদ্ধতি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন এবং ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক বেতার যোগাযোগ সম্মেলনে তারা এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩১