জাকারিয়া সবুজ
ঠিক করলাম, এবার যাব থানচি হয়ে নাফাখুম। নাফাখুম কিছুটা দুর্গম, কিন্তু আমাদের ঠেকায় কে? ফেইসবুকে আমাদের গ্রুপ 'বাংলাদেশ অ্যাডভেঞ্চার'-এ পোস্ট দেওয়া শুরু করলাম। দলনেতা শাহীন আর শরীফ ভাইকেও পটিয়ে ফেললাম। দেখতে দেখতে ১৩ জন জুটে গেল। আমরা তিনজন ছাড়াও দলে আরো থাকল নুর, এনাম, আবীর, রাসেল, অহন, জিমি, সিদ্দিক, মহসিন, সাদিক আর ফাহিম। এর আগেও আমরা পাহাড়ে গেছি, হাঁটতে পারি, তাঁবুও বাঁধতে জানি। রওনা দিলাম ১৪ অক্টোবর রাতে। সকালে গাইড মং সিং উ বান্দরবান শহর থেকে আমাদের দলে ভিড়ল। সে আগে থেকেই চাঁদের গাড়ি, নৌকা_সব ঠিক করে রেখেছিল।
থানচি শহর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। মিলনছড়িতে গিয়ে নাশতা খেলাম। বর্ষার সময়ও বান্দরবানে এসেছিলাম, বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম। এখন আকাশজুড়ে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। একে একে আমরা চিম্বুক, নীলগিরি, বলিপাড়া হয়ে দুপুরের দিকে পেঁৗছে গেলাম থানচি। খেয়া নৌকায় শঙ্খ পার হয়ে গিয়ে উঠলাম মংয়ের মেজ বোন পাহাড়িকা দিদির পান্থশালায়। ওখানেই দুপুরের খাওয়াদাওয়া সারলাম পাহাড়ি ওল কচু, মুরগি আর ভাত দিয়ে। এরই এক ফাঁকে শাহীন ভাই আর মং গিয়ে থানচি থানায় নামধাম দিয়ে এলেন।
তিন্দুর পথে
ছোটখাটো একটা নৌকায় সবাই গাদাগাদি করে বসি। মারমা যুবক অংশু নৌকার মাঝি। উজান ঠেলে চলতে শুরু করলাম। শঙ্খ এখানে খরস্রোতা আর পাথুরে। অল্প সময়ের মধ্যেই লোকালয় ছাড়িয়ে নির্জনতায় পেঁৗছে গেলাম। পানিতে দুলছে পাহাড়ের ছায়া, বাতাস বইছে মৃদুমন্দ। কোথাও কোথাও দু-একটা জুমঘর দেখা যায়। নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে হলো তিনবার, ঝোপঝাড় সরিয়ে। মাঝিরা লগি ঠেলে নৌকা এগিয়ে নিলেন, নৌকায় দড়ি বেঁধে আমরাও টানলাম দুবার। প্রকৃতি বারবার টেনে ধরল, শাহীন তাড়া না দিলে পথেই সন্ধ্যা নামিয়ে ফেলতাম। গোধূলিবেলায় এসে নামলাম তিন্দুতে। রাশি রাশি পাথর প্রান্তরজুড়ে। লটবহর নিয়ে বাজারে উঠে গেলাম। বাজার বলতে ১৫-২০টা ঘর। একটা টিনের দোতলা ঘরে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো। বারান্দাও আছে। কিছুক্ষণ এর-ওর খুঁত ধরে হাসাহাসি করে নেমে এলাম নদীতে। আকাশে তখন আধখানা চাঁদ। পানিতে দাপালাম ঘণ্টাখানেক। পেটে ছুঁচো ডন মারলে উঠে এলাম। মুরগি দিয়ে গামলাভরা ভাত মেরে তারপর গেলাম ঘুমাতে।
রেমাক্রি বাজারে
ভোর সাড়ে ৫টা বাজতেই বিছানা ছাড়তে হলো। বাজারের পাশেই একটা ঝিরিতে হাত-মুখ ধুলাম। কাছের বৌদ্ধমন্দির মাঠে শাহীন ভাই খিচুড়ি চড়ালেন। এরপর গিয়ে উঠলাম নৌকায়। এই পথ আরো দুর্গম। কেয়াপেজা বা বড়পাথর জায়গাটায় এসে থামতেই হলো। বড় বড় পাথর নদীটার বুকে চেপে বসেছে। নৌকা এগোলো গাঁইগুঁই করে। শীতে পানি আরো কমে যায়, পাথর যায় বড় হয়ে। দুই ধারের পাহাড়গুলো বিরাট, মাথায় পরে আছে মেঘের মুকুট। পাহাড়ের ফাঁক গলে সূর্যরশ্মি নদীতে নেমে আসে, দেখতে কী যে অদ্ভুত লাগে! প্রায় আড়াই ঘণ্টা লাগল রেমাক্রি বাজারে যেতে। বাজারটি তিন্দুর চেয়ে বড়।
এবার যাব নাফাখুম
পাহাড় ডিঙিয়ে ঝিরিতে নেমে এলাম। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর ছাড়ায়। মহসিনের স্যান্ডেল পানিতে ভেসে যাওয়ায় বাকিপথ খুব কষ্ট হলো বেচারার। পথ কোথাও কোথাও খুব পিচ্ছিল, এনাম ভাই আছাড় খেতে ছাড়লেন না। তবে প্রকৃতি এখানে উজাড় করে দিয়েছে। তাই কষ্ট গায়ে মাখলাম না। পাহাড়ে পাহাড়ে কত না ঝরনা! পেলেই পানি খাই, হুল্লোড় করি। ঝিরিটা এক জায়গায় গলা ছাড়াল, না সাঁতরে আর উপায় থাকল না। সাঁতরে উঠে আদিবাসী ভোজ দেখলাম। কাঁচা বাঁশের মধ্যে পুরে চাল, মাছ, চালতা, লবণ-মরিচ আর কাঁকরোল নিয়ে এসেছে বাড়ি থেকে। সূর্যটা মাথায় উঠলে বাঁশটা আগুনে পোড়ায়। তৈরি হয়ে যায় মধ্যাহ্নের খাবার। ঘণ্টাতিনেক চলার পর যেন মেঘের গর্জন শুনলাম। বুঝলাম, এসে গেছি। দিলাম দৌড়। শুভ্র জলরাশি সগর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে আট-দশ ফুট ওপর থেকে। চওড়ায় কম হলেও ৩০ ফুট হবে। পাথরের মেঝেতে আছড়ে পড়ে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। অবাক হয়ে চেয়ে থাকি। মারমা ভাষায় 'নাফা' অর্থ 'মাছ' আর 'খুম' মানে 'জলপ্রপাত'। আমরা থাকতে থাকতেই শুরু হলো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, সব মিলিয়ে এক অন্যলোক। মেজাজ বিগড়ে গেল চানাচুর আর চিপসের প্যাকেট দেখে। মনে মনে বললাম, ওদের মনে মায়া দাও দয়াল। ঘণ্টাখানেক পর নাফাখুমকে বিদায় জানালাম, ফিরলাম রেমাক্রি। রাতে নৌকায় থাকলাম, খুব ভালো লাগল।
যাওয়া ও থাকা-খাওয়া
ঢাকা থেকে বান্দরবান নন-এসি চেয়ার কোচের ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ টাকা। বান্দরবান থেকে থানচি চাঁদের গাড়িতে ভাড়া ২০০ টাকা। থানচি থেকে তিন দিনের জন্য ইঞ্জিন-নৌকার ভাড়া লাগবে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। থাকতে হবে আদিবাসী ঘরে নয়তো তাঁবুতে।
ছবি : শরিফ সাইফুজ্জামান রিপ
**সঙ্গে নিন টর্চলাইট, অনেক ব্যাটারি, পিচ্ছিল পথে হাঁটার উপযোগী স্যান্ডেল, টয়লেট টিস্যু, মশানিরোধক ক্রিম ও শুকনো খাবার
আলোচিত ব্লগ
এই ৩০ জন ব্লগারের ভাবনার জগত ও লেখা নিয়ে মোটামুটি ধারণা হয়ে গেছে?
গড়ে ৩০ জনের মতো ব্লগার এখন ব্লগে আসেন, এঁদের মাঝে কার পোষ্ট নিয়ে আপনার ধারণা নেই, কার কমেন্টের সুর, নম্রতা, রুক্ষতা, ভাবনা, গঠন ও আকার ইত্যাদি আপনার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
আর্তনাদ
গতকাল রাত থেকে চোখে ঘুম নাই। মাথার ব্যাথায় মনে হচ্ছে মাথার রগগুলো ছিঁড়ে যাবে। এমনিতেই ভাল ঘুম হয়না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে উচ্চস্বরে এক ছাগলের আর্তনাদ।... ...বাকিটুকু পড়ুন
মন তার আকাশের বলাকা || নিজের গলায় পুরোনো গান || সেই সাথে শায়মা আপুর আবদারে এ-আই আপুর কণ্ঠেও গানটি শুনতে পাবেন :)
ব্লগার নিবর্হণ নির্ঘোষ একটা অসাধারণ গল্প লিখেছিলেন - সোনাবীজের গান এবং একটি অকেজো ম্যান্ডোলিন - এই শিরোনামে। গল্পে তিনি আমার 'মন তার আকাশের বলাকা' গানটির কথা উল্লেখ করেছেন। এবং এ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ল্যাইকা লেন্সে ওঠানো ক’টি ছবি
ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময়, ক্রসিংয়ে তোলা। ফ্ল্যাস ছাড়া তোলায় ছবিটি ঠিক স্থির আসেনি। ব্লার আছে। অবশ্য এরও একটা আবেদন আছে।
এটাও রেল ক্রসিংয়ে তোলা।... ...বাকিটুকু পড়ুন