ঝরনার নাম হামহাম
রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেস্টের লাগোয়া গ্রাম কলাবনপাড়া। শ্রীমঙ্গল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। আমরা ৯ জন রাতে থাকব এ গ্রামে। আমার স্ত্রী আর ছোট মেয়েটাও আছে দলে। মাধবপুর থেকে দুই ঘণ্টা লাগল। পথে কুরমা বিট বাজার থেকে লাকড়ি আর ভানুগাছ বাজার থেকে তরিতরকারি কিনে নিয়েছি। কলাবনপাড়ায় বিদ্যুৎ নেই, থাকার ব্যবস্থা হয়েছে এক ছনের ঘরে। চাটাই আর বস্তা বিছিয়ে শোবার ব্যবস্থা হলো। রান্নায় হাত লাগালাম সবাই, মুরগি সেদ্ধ হতে রাত গভীর হলো। চাঁদের আলোয় খেতে বসলাম।
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। রাতে অল্প বৃষ্টি হয়েছিল। বাসি মুরগি-ভাত পেটে চালান দিয়ে হামহাম ঝরনা দেখতে বেরিয়ে পড়লাম।
মোজার ভেতর প্যান্ট ঢুকিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে আর বাঁশের লাঠি নিয়ে হেঁটে চলেছি। জঙ্গল ক্রমেই গহিন হচ্ছে। বনটি প্রায় আট হাজার একরজুড়ে কমলগঞ্জ উপজেলায়। কিন্তু এটি যে এমন বুনো ধারণায় ছিল না। এখানে বানর, হরিণ, ভাল্লুক, বন্য শূকর আছে। সাপ তো আছেই। জোঁক নিবারণ নিমিত্তে কেরোসিন তেলের বোতল সঙ্গে নিয়েছি। বনে বাঁশও আছে প্রচুর। সাপের সঙ্গে এরই মধ্যে দেখা হয়ে গেছে। সাপের পিছু ছুটতে যেয়ে করিম আছাড়ও খেয়েছে। অপরূপ ছিল দেখতে।
আমাদের সবার আগে গাইড সুনীলদা। আছাড় খাওয়া করিম তার পেছনে। দলের নেতা আশরাফ সবার পেছনে। বাঁশবন এমনভাবে মাথা হেলিয়ে রেখেছে যে আমাদের পথ আটকে গেছে। প্রথমে কুর্নিশ ভেবেছিলাম এখন দেখি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এর মধ্যে সোহান আছাড় খেতে শুরু করেছে। খোশমেজাজি রাজিব তাঁকে ট্রেনিং দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল স্বেচ্ছায়। পথ ছিল পাথরে ভরা। ঝিরির পানি ঘোলা। লাঠি বড় ভরসা হয়ে উঠেছিল। দু'পাশে ঘন জঙ্গলের পাহাড় উঠে গেছে। কখনো গোড়ালি, কখনো হাঁটু আবার কখনো কোমর সমান পানি পার করছি। আকাশ বেশি সুবিধের ছিল না। নামবে, নামবে_ভয় দেখাচ্ছিল। বৃষ্টি নামলে বড় বেকায়দা হবে তাই তাড়া দিচ্ছিলাম। কিন্তু তাড়াতাড়ি হাঁটার জো নেই। একটু অসাবধান তো ঝপাৎ ক্যামেরাসমেত। অনেক বাঁক ফেলে গহিন বনের নীরবতা ভেঙে ঝরনার শব্দ কানে এল। এভাবে বাঁশবন মাড়িয়ে তেলসুর ছাড়িয়ে সাড়ে চার ঘণ্টা হেঁটেছিলাম। গহিনের ভেতর থেকে শব্দ আসছে ঝরঝর। আর মোটে পাঁচ মিনিট তার পরই স্বপ্নের দরজা খুলে গিয়েছিল। চোখ বড় বড় হয়ে উঠেছিল। হামহাম ঝরনা আমাদের চোখ ভাসিয়ে নিয়ে গেল। ১৩০ ফুট ওপর থেকে নেমে আসছে জলধারা। শরীর ভেজাতে ভেজাতে যে যার মতো গল্প জুড়ে দিল হামহামের সঙ্গে। নামটা যে কেন এমন হয়েছে তা জানতে পারিনি। তবে বনের ভেতর জল পড়ার শব্দটা কেমন যেন শোনায়!
কিভাবে যাবেন
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে উপবনে (রাত পৌনে ১০টা) শ্রীমঙ্গল যেতে ভাড়া লাগে ১৫০ টাকা (শোভন চেয়ার)। শ্রীমঙ্গল থেকে কলাবনপাড়া পর্যন্ত জিপ রিজার্ভ করে গেলে খরচ পড়বে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।
আলোচিত ব্লগ
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
গাজার শিশুদের উদ্দেশ্যে - আমরা তোমাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছি

তোমরা এসেছিলে মাথার উপর বোমা পড়ার ভয়ার্ত গল্প নিয়ে। যে বোমা তোমাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে, লোকালয় ধ্বংস করেছে। আমরা কান বন্ধ করে উদাসীন হয়ে বসে ছিলাম। তোমরা এসেছিলে ছররা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।