somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা জিয়া ও গয়েশ্বর গংরা জাফর স্যারের লেখাটি কখনই পড়বেনা কিন্তু আরিফ রহমানেরা অনুপ্রেরণা পাবে ঠিকই।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধন্যবাদ,জাফর ইকবাল স্যার।আপনাদের অনুপ্রেরণাই নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে আগামির বাংলাদেশে ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

শহীদের সংখ্যা এবং আমাদের অর্ধশত বুদ্ধিজীবি
++++++++++++++++++++++++++++++

কিছুদিন আগে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, বলেছেন তাদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে_ একেক জায়গায় সংখ্যা একেক রকম। বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনে মনে হতে পারে, বাংলাদেশের গণহত্যার একটা সঠিক সংখ্যা থাকা উচিত ছিল। সংখ্যাটি ত্রিশ লাখ না হয়ে ;ঊনত্রিশ লাখ বায়ান্ন হাজার ছয়শ; পঁয়ত্রিশ জন কিংবা ত্রিশ লাখ তেত্রিশ হাজার তিনশ একুশ জন এ রকম একটি সঠিক-সুনির্দিষ্ট সংখ্যা হলে তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতো। যেহেতু সংখ্যাটি এভাবে নেই, তাই এটাকে নিয়ে তার সন্দেহ প্রকাশ করার অধিকার আছে, সংখ্যাটাকে বিতর্কিত বলা যেতে পারে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে পৃথিবীর কোনো বড় হত্যাকাণ্ড বা গণহত্যার সংখ্যাই কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মতো এত বড় একটা বিষয়, যেটাকে নিয়ে গবেষণার পর গবেষণা হয়েছে, সেখানেও মৃত্যুর সংখ্যা সুনির্দিষ্ট নয় বলা হয় ৫০ থেকে ৮০ মিলিয়ন (কিংবা পাঁচ থেকে আট কোটি)। নিউক্লিয়ার বোমা ফেলা হলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে সেটা সঠিকভাবে অনুমান করার জন্য আমেরিকা কিছু শহর বেছে নিয়েছিল এবং সেখানে তারা আগ থেকে অন্য কোনো বোমা ফেলেনি। ক্ষয়ক্ষতির এ রকম সুনির্দিষ্ট হিসাব বের করার প্রস্তুতি নেওয়ার পরও হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল সেটি সুনির্দিষ্ট নয়। বলা হয়, হিরোশিমাতেই নব্বই হাজার থেকে দেড় লাখ এবং নাগাসাকিতে চলি্লশ হাজার থেকে আশি হাজার লোক মারা গিয়েছিল। চীনের রাজধানী নানকিংয়ে জাপানিদের গণহত্যা পৃথিবীর একটি নৃশংসতম গণহত্যা। গবেষকরা এখনও সেই সংখ্যাটি সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেন না। তাদের হিসাবে সংখ্যাটি দুই থেকে তিন লাখের ভেতর। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদিদের হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা হিসেবে পঞ্চাশ থেকে ষাট লাখ ধরে নেওয়া হয়। মাঝে মাঝেই গবেষকরা সংখ্যাটিকে দেড় থেকে দুই কোটি বলে থাকেন। সাম্প্রতিক গণহত্যার মাঝে রুয়ান্ডাতে তুতসিদের ওপর হত্যাকাণ্ডটি সবচেয়ে আলোচিত। এত সাম্প্রতিক ঘটনা, তথ্য আদান-প্রদানেও কতরকম আধুনিক প্রযুক্তি, তার পরও হত্যাকাণ্ডের সংখ্যাটি সুনির্দিষ্ট নয়। বলা হয়ে থাকে, সেখানে পাঁচ থেকে ছয় লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সোজা কথায় বলা যায়, একটা বড় ধরনের হত্যাকাণ্ডে কখনোই সঠিক সংখ্যাটা বলা যায় না। হত্যাকাণ্ডের এ রকম পরিসংখ্যান দেখে আমরা মোটেও অবাক হই না। কারণ আমরা সবাই জানি, হত্যাকারীরা তালিকা করে হত্যাকাণ্ড ঘটায় না এবং হত্যা করার পর তারা সে তালিকা প্রকাশও করে না। কাজেই সবাই একটা আনুমানিক সংখ্যা বলে থাকেন। আমাদের বাংলাদেশের বেলায়ও তাই হয়েছে, একটা আনুমানিক সংখ্যা বলা হয়েছে। একাত্তর সালে প্রায় এক কোটি শরণার্থী দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাদের একটা বড় অংশ রোগে-শোকে মারা গেছে। তাদের সংখ্যাটা ধরা হলে একাত্তরে শহীদের সংখ্যা খুব সহজেই ত্রিশ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। যারা গণহত্যা করে তারা কখনোই স্বীকার করতে চায় না যে, তারা গণহত্যা করেছে। আর্মেনিয়ানরা প্রায় একশ' বছর ধরে চেষ্টা করে আসছে তবুও তুরস্ককে স্বীকার করাতে পারেনি যে, তারা গণহত্যা করেছে। পাকিস্তানও বলতে শুরু করেছে তারাও বাংলাদেশে গণহত্যা করেনি। যারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়, তারাও সব সময় চেষ্টা করে সংখ্যাটাকে ছোট করে দেখাতে। আমাদের বাংলাদেশের উদাহরণটি সবচেয়ে বিচিত্র। একাত্তর সালে জামায়াতে ইসলামী সরাসরি পাকিস্তান মিলিটারির সঙ্গে এ দেশে গণহত্যা করেছে; তাই তারা চেষ্টা করে সংখ্যাটাকে কমিয়ে আনতে। সে জন্য তাদের কুযুক্তির কোনো অভাব নেই। সবচেয়ে হাস্যকর যুক্তিটি হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু নাকি সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তিন লাখ বলতে গিয়ে ভুলে তিরিশ লাখ বলে ফেলেছিলেন! যার অর্থ তিন লাখ পর্যন্ত হত্যা করা কোনো ব্যাপার নয়, তিরিশ লাখ হলে একটু বেশি হয়ে যায়, তাই সেটাকে মেনে নেওয়া যাবে না! জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারটা আমরা খুব ভালোভাবে বুঝি; কিন্তু আমি আমাদের বুদ্ধিজীবীদের ব্যাপারটা এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা যখন গণহত্যার সংখ্যাটি গ্রহণ করে নিয়েছি এবং সে সংখ্যাট যেহেতু একটা আনুমানিক এবং যৌক্তিক সংখ্যা, তখন সেই সংখ্যাটিতে সন্দেহ প্রকাশ করা হলে যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মান করা হয়, সেটি তারা কেন বুঝতে পারেন না? পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিক হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সংখ্যা এবং আনুমানিক সংখ্যার মাঝে যদি বিশাল ফারাক থাকে এবং সেগুলো নিয়ে যদি আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কখনও কোনো প্রশ্ন না করেন তাহলে তারা কেন আমাদের দেশের গণহত্যার সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যুদ্ধাপরাধীদের সাহায্য করার জন্য এত ব্যস্ত হয়ে যায়? কিছুদিন আগে আমাদের দেশের পঞ্চাশজন বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমাকে একই সঙ্গে বিস্মিত, ক্ষুব্ধ এবং আহত করেছিলেন। তার কারণ যখন এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন প্রকৃত সংখ্যাটির জন্য তাদের গবেষকসুলভ আগ্রহ প্রকাশ পায় না, পাকিস্তানি মিলিটারির নৃশংসতাকে খাটো করে দেখানোর ইচ্ছাটুকু প্রকাশ পায়। যে দেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন করেন, সেই দেশে খালেদা জিয়ার মতো একজন সেটাকে আরও এক কাঠি এগিয়ে নিয়ে গেলে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নেই। পাকিস্তানের জন্য তার মমতা আছে। একাত্তরে তিনি পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন। শুধু যে খালেদা জিয়া এ দেশের শহীদদের অসম্মান করেছেন তা নয়, তার দলও খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে সমর্থন করে গেছে। দলটির মাথা থেকে আরও উদ্ভট কিছু বুদ্ধি বের হয়েছে, সেটি হচ্ছে জরিপ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যাটি বের করে ফেলা! জরিপ করে মানুষের পছন্দ-অপছন্দের কথা জানা যায়, কিন্তু একটি তথ্য বের করে ফেলা যায় - সেটি আমি জন্মেও শুনিনি!

২. আমি অনেক দিন থেকে ভেবে এসেছি, বইমেলার আগে আমি আমার কিছু প্রিয় বই নিয়ে লিখব। নতুন এবং অপরিচিত লেখকদের পাঠকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব। কখনোই সেটা হয়ে ওঠেনি। তবে এবারের বইমেলায় আসা আমার সেই সুযোগটি এসেছে। যখন এ দেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা এক ধরনের বিতর্ক শুরু করেছেন, ঠিক তখন আমার হাতে একটি বই এসেছে, বইটির নাম ত্রিশ লক্ষ শহীদ :বাহুল্য নাকি বাস্তবতা বইয়ের লেখকের নাম আরিফ রহমান। (বইটির প্রকাশকের নামটি দিতে পারলে ভালো হতো, কিন্তু আমি যখন এ লেখাটি লিখছি তখন পর্যন্ত বইয়ের লেখক জানেন না, বইটি এ বছর কোথা থেকে পুনর্মুদ্রণ হবে!) আরিফ কম বয়সী তরুণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং মুক্তিযুদ্ধকে সে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছে। যখন এ দেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে তর্কবিতর্ক করছে, তখন সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার মতো করে গবেষণা করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যারা কুযুক্তি-অপযুক্তি দিতে থাকে তাদের একটা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছে! আমি এ বইটির জন্য একটা ভূমিকা লিখে দিয়েছি, ভূমিকাটি এ রকম ত্রিশ লক্ষ শহীদ :বাহুল্য নাকি বাস্তবতা ভূমিকা :১৯৭৮ সালের দিকে আমি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমার পিএইচডি করছি তখন স্টিভ মোজলে নামে এক গবেষক মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বাস্তব কিছু ধারণা নেওয়ার জন্য তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনে আমাকে খুঁজে বের করেছিলেন। নতুন ভাষা শেখার তার এক ধরনের বিস্ময়কর প্রতিভা ছিল এবং আমি তাকে কাজ চালানোর মতো বাংলা শিখিয়ে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশের জন্য তার এক ধরনের মমতার জন্ম হয়েছিল, তাই একাধিকবার এখানে ফিরে ফিরে এসেছেন।স্টিভ মোজলের সঙ্গে আমার এক ধরনের বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ নিয়ে তার অভিজ্ঞতা তিনি আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বলতেন। তার একটি কথা শুনে সে সময়ে আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে তোমাদের দেশে যে ভয়ঙ্কর গণহত্যা, ধর্ষণ, ধ্বংসযজ্ঞ, দেশত্যাগ, গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে; সেটা এত অবিশ্বাস্য যে, আজ থেকে ১০-২০ বছর পর পৃথিবীর কেউ এটি বিশ্বাস করবে না। মুক্তিযুদ্ধের পর তখন মাত্র সাত-আট বছর পার হয়েছে, আমি তাই স্টিভ মোজলের কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। তাকে বলেছিলাম, এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য। এ সত্যটির কথা পৃথিবীর মানুষ ভুলে যাবে - এটি কিছুতেই হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চার যুগ পার হওয়ার আগেই আমি হঠাৎ আবিষ্কার করেছি - স্টিভ মোজলের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। পৃথিবীর কিছু গণহত্যা পশ্চিমা জগৎ জোর গলায় প্রচার করতে চায়; কিছু গণহত্যা নিয়ে তাদের আগ্রহ নেই। আইরিশ চ্যাংয়ের লেখা রেপ অব নানকিং বইটির ভূমিকা পড়লে মনে হয় তিনি যেন আমাদের দেশের ঘটনাটি নিয়েই তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা বলতে গেলে কিছুই হয়নি, বরং শর্মিলা বসুর মতো জ্ঞানপাপীদের দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে গবেষণা করানো হচ্ছে। আমাদের দেশের সত্যটুকু আমাদেরই প্রচার করার কথা; কিন্তু এ দেশে মিলিটারি শাসনের সময় ঠিক তার উল্টো ব্যাপারটি হয়েছে। একাধিক প্রজন্মের জন্ম হয়েছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না জেনে বড় হয়েছে, অপপ্রচার বিশ্বাস করেছে এবং চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর পরও তারা সত্যকে খুঁজে বের না করে নাকি-কান্না কেঁদে অনুযোগ করেছে। প্রকৃত সত্য না বলে তাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। সে কারণে তারা জানে না একাত্তরে কী হয়েছিল। আমরা হঠাৎ আবিষ্কার করেছিলাম, এ দেশের কয়েক প্রজন্মকে আবার নতুন করে পাকিস্তানি মিলিটারি আর তাদের এদেশীয় অনুচরদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস আবার নতুন করে বলতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা; কিন্তু আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য, এ দেশের সব বুদ্ধিজীবী সেই দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন। নিরপেক্ষতা বাক-স্বাধীনতা এ রকম বড় বড় শব্দ ব্যবহার করে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলোর মূল ধরে টানাটানি শুরু করেছেন। ঠিক কী কারণ - জানা নেই সাদা চামড়ার প্রতি আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর এক ধরনের দাসসুলভ আনুগত্য আছে। বছরখানেক আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানুষের সংখ্যা নিয়ে এক সাংবাদিকের উক্তির জন্য তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত শাস্তি দিয়েছিলেন, এ দেশে এ রকম কিংবা এর কাছাকাছি ঘটনা অনেকবার ঘটেছে; কিন্তু কখনোই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সেটা নিয়ে ব্যস্ত হননি। কিন্তু সম্ভবত এবারের মানুষটি সাদা চামড়া হওয়ার কারণে একজন নয়, দু'জন নয়; ৫০ জন বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের অত্যন্ত সুলিখিত বক্তব্যের চাঁছাছোলা বাংলা অনুবাদ হচ্ছে - মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানুষের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটা বিতর্ক তৈরি করার অধিকার দিতে হবে! এ বিষয়গুলো আমাকে আহত করে কিন্তু বাংলাদেশের স্বনামধন্য এত বুদ্ধিজীবীর বিবৃতিকে অস্বীকার করার সাধ্যি কার আছে? এর পরের ঘটনাটি অবশ্য রীতিমতো কৌতুকের মতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন এই বুদ্ধিজীবীদের তাদের বিবৃতিকে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তখন হঠাৎ প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর আদর্শ এবং অধিকারের জন্য বুক ফুলিয়ে সংগ্রাম করার সাহস উবে গেল এবং তারা বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলেন। এ দেশের যে বুদ্ধিজীবীরা এ রকম একটি বিষয়ে এমন কঠিন বিবৃতি দিয়ে চোখের পলকে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করে দেন, তাদের জন্য নিজের ভেতরে সম্মানবোধ বজায় রাখা খুব কঠিন। যে বুদ্ধিজীবীরা এ দেশের তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দেবেন, তারাই যদি উল্টো তাদের বিভ্রান্ত করতে শুরু করেন তাহলে আমার হতাশা অনুভব করা উচিত ছিল; কিন্তু আমি বিন্দুমাত্র হতাশ নই। তার কারণ একদিকে আমি যে রকম বিভ্রান্ত খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের দেখছি ঠিক সেরকম অন্যদিক দিয়ে নতুন প্রজন্মের কিছু তরুণকে দেখছি, যাদের ভেতর নিজের দেশ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই। মাতৃভূমির জন্য ভালোবাসায় তাদের কণামাত্র খাদ নেই। তারা তরুণ কিন্তু অন্য অনেক তরুণের মতো শুধু আবেগকে পুঁজি করে কথা বলে না। তারা তাদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করে, গবেষণা করে; যারা মুক্তিযুদ্ধকে নিজের চোখে না দেখেও সেটিকে শুধু মস্তিষ্কে নয়, হৃদয়েও ধারণ করে। যারা এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেছে, আরিফ রহমান ঠিক সে রকম একজন তরুণ। যে কাজটি এ দেশের বড় বড় গবেষকের করা উচিত ছিল, সে কাজটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হয়েও করে ফেলার সাহস পেয়েছে। ত্রিশ লক্ষ শহীদ :বাহুল্য নাকি বাস্তবতা নামে একটি বইয়ের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানুষের সংখ্যা এবং আনুষঙ্গিক যেসব বিষয় নিয়ে এ দেশে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়, সে বিষয়গুলো নিয়ে লিখেছে। সম্ভাব্য সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, বিশ্লেষণ করেছে এবং সেটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে। এ বইটিতে সে অসংখ্য তথ্যসূত্র দিয়েছে, অনেক ছবি সংযোজন করেছে, তালিকা তুলে ধরেছে। দেশদ্রোহীর যে দলটি এককভাবে মিথ্যাচার করে যে মিথ্যাগুলোকে প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করে ফেলেছিল, আরিফ রহমান সেই মিথ্যাগুলো সবার সামনে প্রকাশ করে দিয়েছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাডেমিক গবেষণা করবেন তারাও এ বইয়ের অনেক তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন। আমি আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এই তরুণ গবেষক মুক্তিযুদ্ধকে নিজের গবেষণার বিষয় হিসেবে ধরে নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কাজ করবে; পৃথিবীর তথ্যভাণ্ডারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাডেমিক গবেষণার যে শূন্যতা আছে, সেই শূন্যতা পূরণ করবে। পঞ্চাশজন নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবী আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আমাকে যেটুকু মর্মাহত করেছিলেন, একজন তরুণ ছাত্র আরিফ রহমান একা আমার মনের সেই পুরো কষ্টটুকু দূর করে দিয়েছে। তার জন্য আমার অভিনন্দন। তার জন্য আমার ভালোবাসা।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১৬-০১-২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৪
২২টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×