প্রথম বর্ষপূর্তি পোস্টঃ বর্ষপূর্তির হালখাতা - প্রথম বর্ষপূর্তি
দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি পোস্টঃ সামহোয়্যারইনব্লগে আমার ব্লগিং এর দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি
(কৈফিয়তঃ আজকের এ লেখাটাতে আমি আমার নিজেরই গত তিন বছরের বিভিন্ন ধরণের লেখার ও মন্তব্যের কিছু পরিসংখ্যান নিয়ে নাড়া চাড়া করেছি। পাঠকের কাছে সেসব অতিশয়োল্লেখ বলে মনে হবার সম্ভাবনা প্রচূর। মূলতঃ গত তিন বছরে এখানে কি করলাম না করলাম, সেসব বিষয়েই একটু হাল্কা পর্যালোচনা করতে চেয়েছি, অনেকটা আমার নিজেরই লেখার পরিসংখ্যান আপডেট করার জন্য। সেই সাথে অবশ্যই পাঠকদের কথাও স্মরণ করেছি, তাই কিছু পাঠকের নাম চলে এসেছে পরিসংখ্যানের সূত্র ধরেই। যাদের কাছে এ লেখা পাঠ বিরক্তির কারণ হয়ে উঠবে, তাদের কাছে সবিনয়ে দুঃখ প্রকাশ করছি।)
আজ এ লেখাটা যখন লিখছি, “সামহোয়্যারইনব্লগে” তখন আমার লেখালেখির তৃতীয় বৎসর পূর্তি হচ্ছে। “আমার পরিসংখ্যান” এ দেখাচ্ছে, আমি এখানে ব্লগিং করেছি ৩ বৎসর ৮ ঘন্টা যাবত। ভাবনাটাকে একটু পেছনে ফিরিয়ে নিলাম। অন্য আরও অনেকের মতই, আন্তর্জালিক সাহিত্য অঙ্গণে ঘোরাঘুরি করতে করতে আমার এখানে আসা। তবে বলতে দ্বিধা নেই, এখানে এসে পেয়েছি অনেক, দিয়েছি যৎসামান্য। পাওয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় পাওয়া সহব্লগারদের শুভেচ্ছা ভালবাসা, আর নিজের আত্মবিশ্বাস। প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতেও পোস্ট লিখেছিলাম, এবারেও আজ সকাল সকাল মনে হলো, একটু ফিরে দেখি না কেন, এতদিন কী করলাম!
আমার নিজের লেখার কিছু রেকর্ড আপডেট শুরু করছি কিছু পরিসংখ্যানের চর্বিত চর্বণ দিয়েঃ
• প্রথম পোস্টঃ কবিতা- বক্ষমাঝে থাকবে তুমি (১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫, রাত ১১টা ২৬ মিনিটে প্রকাশিত।
• প্রথম মন্তব্য পাই প্রামানিক এর কাছ থেকে আমার দ্বিতীয় পোস্ট “পূর্ণতা” কবিতায়। (প্রথম পোস্টে মন্তব্য পেতে দুই মাস চার দিন অপেক্ষা করতে হয়েছিল। প্রথম পোস্টে প্রথম মন্তব্য করেন এহসান সাবির, ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে।)
• আমার কোন লেখায় প্রথম লাইক টা আমি পেয়েছিলাম না মানুষী জমিন এর কাছ থেকে। তিনি আমার প্রথম লেখাটাতে (বক্ষমাঝে থাকবে তুমি) কোন মন্তব্য না করে নীরবে লাইক দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, এর পরে আমি ওনার কাছ থেকে খুব বেশী মন্তব্য পাইনি। তার নীরব প্লাসও বোধ আর তেমন পাইনি।
• আমার লেখা পোস্ট যেটা সবচেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মন্তব্যহীন পড়ে ছিলো, সেটা হচ্ছে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে প্রকাশিত আমার কবিতা সরবে নীরবে। প্রকাশিত হবার ৩৬০ দিন পর ব্লগার বিলিয়ার রহমান প্রথম কবিতাটিতে মন্তব্য করেন।
• আমার কথা - ৬ আমার প্রথম পোস্ট, যার পাঠক সংখ্যা (পড়ুন ক্লিক সংখ্যা) ৫০০ অতিক্রম করে।
• প্রথম বর্ষপূর্তিতে আমার ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা ছিল ৩৪৩৪০। দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে কত ছিল সেটার কোন নোট রাখিনি। আজ তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে যখন এ লেখাটা লিখছি, তখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ১১০৫০১ এ।
• প্রথম বছরে আমার কোন পোস্ট হাজার বা ততোধিকবার পঠিত হয় নাই। দ্বিতীয় বছরে লেখা (০৫ জুলাই ২০১৭) আমার ভ্রমণ কাহিনী শান্তির দেশ ভুটান ভ্রমণ -- ১ ই প্রথম পোস্ট যা হাজারের বেঞ্চমার্ক অতিক্রম করে (বর্তমানে পঠিত সংখ্যা ১২১৭)।
• এর পরে অবশ্য আমার আরো দুটো লেখা হাজারবারের বেশী পঠিত হয় – ভ্রমণের টুকিটাকি – ১ (১১৩৩) এবং পিছু ফিরে দেখাঃ “মেরা জীবন কোড়া কাগজ...” (১০৫০)।
• আমার কোন কবিতা এখনও হাজারবার পঠিত হয়নি। পাঠ সংখ্যার দিকে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে আমার কবিতা ভালবাসার আশা (৮১২) আর দ্বিতীয়স্থানে আছে ভাল থেকো পাখি তুমি (৭৬৬)।
• পাঠক আমার লেখাকে তাদের “প্রিয়” তালিকায় তুলে নিয়েছেন, এমন পোস্টের সংখ্যা আমার খুব বেশী নেই। “প্রিয় তালিকার” সর্বোচ্চ সংখ্যা ৩ মাত্র, এমন ৪ টি পোস্ট আমার ঝুলিতে রয়েছেঃ
একটি সুখের স্মৃতি—করুণাময়ের অপার দান কৃতজ্ঞতায় স্মরণ
বই নিয়ে আলোচনা- রক্তে ভেজা একাত্তর
আমার এ ব্লগ পড়াতেই আনন্দ!
রূপকথার গল্প যেন বাস্তবে ঘটে গেল
• ব্লগার মাহমুদ ০০৭ এবং অপর্ণা মন্ময় এর অনুপ্রেরণায় প্রথম গল্প লেখার চেষ্টা করি এবং সে গল্পটির নাম একটি অসম্পূর্ণ গল্পের গল্প। যদিও গল্পটির পাঠক সংখ্যা আমার আশার চেয়ে কিছুটা বেশীই ছিল (বর্তমানে ৬৭৯) এবং মন্তব্যকারীগণ গল্পটির ব্যাপারে অনেক সদয় ও সৌজন্যপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন, তথাপি গল্প লিখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছিল গল্প লেখায় আমি স্বচ্ছন্দ নই।
• লেখায় বৈচিত্র আনতে মাঝে মাঝে লেখার ধরণ পাল্টেছি। এটা যে খুব একটা উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে করেছি তা ঠিক নয়, বরং বলা যায় যে যখন ভাবনাগুলো মাথায় যেভাবে এসেছে, সেভাবেই তা পাঠকের সাথে শেয়ার করেছি। যদিও কবিতা পড়ার ও লেখার প্রতিই আমার ঝোঁকটা একটু বেশী, তবুও মাঝে মাঝে কিছু গদ্য ও ভ্রমণ কাহিনী লেখারও চেষ্টা করেছি। নতুন কোন বই পড়ার পর কয়েকটি বুক রিভিউও লিখেছি। এছাড়া কয়েকটি ইংরেজী কবিতাও অনুবাদ করে মূল কবিতাসহ এখানে পোস্ট করেছি। জীবনের টুকটাক অভিজ্ঞতা নিয়েও লিখেছি। স্মৃতিকথা লিখতে আমি স্বচ্ছন্দবোধ করি, তাই আমার ব্লগে নিজের স্মৃতিকথাও অনেক প্রকাশ পেয়েছে।
• গত ৩ বছরের প্রতি বছরেই আমার লেখায় মন্তব্য পাওয়ার চেয়ে অন্যের লেখায় আমার মন্তব্য করার সংখ্যাটা বেশী ছিল। আর সুখের বিষয় যে এ সংখ্যাটা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে- যথাক্রমে +১৫৯, +৬৪৩ এবং +১২৯৫।
অন্য অনেকের বর্ষপূর্তি পোস্ট পড়ে আমি লক্ষ্য করেছি যে এ ধরণের পোস্ট লিখতে গিয়ে অনেকেই নস্টালজিয়া অনুভব করেন। আমিও তাই করছি। প্রথম ও দ্বিতীয় বছরে যাদেরকে আমি নিয়মিত বা প্রায় নিয়মিতভাবে আমার লেখায় পেতাম, তৃতীয় বছরে এসে তাদের অনেককে আর তেমন করে পাইনি। ব্লগে তাদের নিজেদের কোন নতুন লেখাও দেখিনি। এমন যাদের কথা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে, তাদের মধ্যে আছেন মানবী, বিলিয়ার রহমান ও পুলহ। দীর্ঘদিন ধরে ওনারা ব্লগে অনুপস্থিত। অন্ধবিন্দু, রুদ্র জাহেদ, গেম চেঞ্জার, কিরমানী লিটন, কাবিল, ফেরদৌসা রুহী, গুলশান কিবরিয়া, কালিদাস, আরজুপনি, রাবেয়া রাহীম, সিলেক্টিভলি সোশ্যাল প্রমুখ আগে আমার প্রথম দিকের পোস্টগুলোতে আসতেন। ওনারাও বোধকরি এখন অনুপস্থিত, কিংবা অনিয়মিত। এ ছাড়াও MirroredDoll, শামছুল ইসলাম, মাঈনুদ্দিন মইনুল, কথাকথকিথেকিথন, কানিজ ফাতেমা, রক্তিম দিগন্ত, ক্লে ডল প্রমুখেরা আগে আমার পোস্টে প্রায় নিয়মিত আসতেন। এখন বোধকরি ওনারা ব্যস্ততায় আছেন, তাই ব্লগে সেরকম সময় দিতে পারছেন না। বিশেষ করে শামছুল ইসলাম আমার প্রথম দু’বছরের প্রায় সব পোস্টেই মন্তব্য করেছেন। আমিও তার প্রায় সব পোস্টেই মন্তব্য করেছি শেষের কয়েকটা বাদে। সম্প্রতি গত তিন মাস থেকে ব্লগার জুন ব্লগে অনুপস্থিত রয়েছেন। উনি শুরু থেকে আমার একজন নিয়মিত পাঠক ছিলেন এবং আমিও তার লেখার একজন মুগ্ধ পাঠক। তার ট্রাভেলগগুলো এ ব্লগের সম্পদ হয়ে আছে। আশাকরি, উনি যেখানেই আছেন সুস্থ আছেন এবং অচিরেই পুনরায় ব্লগিং এ প্রত্যাবর্তন করবেন।
কবিতার বাইরে অন্য কোন বিষয়ে প্রথম যে পোস্ট লিখেছিলাম, সেটা ছিল – অজানা অদেখা কোন এক নাজমা বেগম এর সমাধিতে....। সেখানে ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসা মন্তব্য করেছিলেন,"ভালো লাগল। আপনার কাছ থেকে নিয়মিত আরো লেখা চাই। শুভেচ্ছা জানবেন।" তার এ মন্তব্যটাতে অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমার আরেকটি গল্প অনন্ত ও অনামিকার গল্প পড়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেনঃ "সুন্দর। আপনার লেখালেখির এই প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। আমি মনে করি, আপনি যদি ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি করেন, অন্যদের পোস্টে যান, তাহলে সবার কাছ থেকে আপনি অনেক ভালো ভালো ফিডব্যাক পাবেন, যা আপনার লেখালেখির মানকে আরো বাড়িয়ে তুলবে।" তার এই পরামর্শটা আমলে নিয়ে আমি নিঃসন্দেহে উপকৃত হয়েছিলাম। একই গল্পে ব্লগার blackant মন্তব্য করেছিলেনঃ “শ্রদ্ধা নেবেন সারাটা জীবন কেন লিখলেন না ?” তার এই ছোট্ট মন্তব্যটা আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আমি এখানে ব্লগিং উপভোগ করি। তবে এখানে ভাল লাগেনা এমন অনেক বিষয়ও আছে। তার মধ্যে প্রধান হলো পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। অনেকের কদর্য ভাষা ব্যবহার আমাকে ব্যথিত ও নিরুৎসাহিত করে। বিশেষ করে ধর্ম ও রাজনীতি নিয়ে লেখালেখির সময় অনেকে ভুলে যান যে তিনি যাকে সমালোচনা করছেন, অন্য কেউ তাকে শ্রদ্ধা করতে পারে। তার অশ্রদ্ধাপূর্ণ মন্তব্য অনেককে আহত করতে পারে। সবচেয়ে বেশী খারাপ লেগেছে কারো পোস্টে বিরতিহীন অশ্লীল ফ্লাডিং। সুখের কথা, ব্লগ সঞ্চালকদের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সমস্যাটা এখন অনেকটা স্তিমিত পর্যায়ে রয়েছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে এ আশঙ্কার এখনো যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে যে এই কুআচরণটি আবার আত্মপ্রকাশ করতে পারে, যদি না ব্লগ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ও সাবধান থাকেন। আর তা ছাড়া গতবছরে যেমনটি বলেছিলাম, এবারেও ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে একই অনুরোধ রেখে যাচ্ছি- অনুগ্রহ করে নোটিফিকেশনের বিভ্রান্তিগুলো নিরসনে আশু পদক্ষেপ নিন।
ব্লগিং এ আমার এ তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আমি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি আমার সকল শুভানুধ্যায়ী সহব্লগারগণকে, যাদের নিরন্তর প্রেরণা ও শুভকামনা আমাকে ব্লগিং চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেছে এবং প্রাণিত রেখেছে। এখানে অনেক পরিচ্ছন্ন, রুচিশীল ব্লগারের লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি, তাদের সাথে মতবিনিময় করেছি, তাদের মেধা ও মনন থেকে নিজেও সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রিয় ব্লগারদের মাঝে যাদের নাম এখানে নিলাম না, তার মানে এই যে তাদের সাথে এখনো কানেক্টেড আছি এবং তাদের সাথে ব্লগিং ইন্টার এ্যাকশন অব্যাহত আছে। তাদেরকে এবং অনুপস্থিত সকল শুভার্থী ব্লগারদের জন্য রইলো নিরন্তর শুভকামনা।
ঢাকা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৫৮