somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার এ ব্লগ পড়াতেই আনন্দ!

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আপনি যখন আমার এ লেখাটা পড়ছেন, হতে পারে, আপনি একাকীত্বে ভুগছেন। আপনার সঙ্গী সাথীরা এ সময়ে কেউ চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে এবং সেখানে বেশীরভাগ সময়েই পরনিন্দা, পরচর্চা চলছে, কেউ বা নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত, কেউ টক শো কিংবা হিন্দী সিরিয়ালে নিমগ্ন, আবার কেউ বা হয়তো ফেইসবুকে সেলফী নিয়ে আত্মপ্রচারে অথবা পরের ছিদ্রান্বেষণে হুমড়ি খেয়ে আছেন। কেউ এই ছুটির দিনে অঘোরে ঘুমুচ্ছে, কেউ চায়ের কাপ হাতে একটা বই খুলে তার রসাস্বাদনের চেষ্টা করছে। কেউ আপন মনে নানা পরিকল্পনা আঁটছে। ভাগ্যবানদের কেউ কেউ হয়তো প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে বৃষ্টি দেখছে, গুন গুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছে। কিন্তু আপনি এ সময়ে ব্লগ লিখছেন, কিংবা ব্লগ পড়ছেন। কেন? আপনি কি সত্যিই বন্ধুহীন? অন্তর্মুখী (Introvert)? না, তা হয়তো নয়। আপনি ঠিকই একজন সামাজিক ব্যক্তি; সামাজিক সব দায়িত্বগুলো পালন করার পরও আপনার নিজের জন্য একটু ইনটেলেকচুয়াল স্পেস প্রয়োজন। সেই স্পেসটুকুই বের করে আপনি বোধকরি ব্লগিং এর জন্য নির্ধারিত রাখেন। ফেইসবুকে হয়তো বন্ধু- পরিজনদের সাথে কানেকটেড থাকা যায়, আলাপচারিতাও করা যায়, কিন্তু সেখানে ইনটেলেকচুয়াল এক্সারসাইজের কোন স্পেস নেই।

হয়তো এ সময়ে আপনার আর করার কিছু নেই। ঘরে একলা, সন্তানেরা বা মাতা পিতারা বা ভাই বোনেরা কেউ কাছে নেই, প্রিয়জন কাছে নেই, কিংবা কাছে থাকলেও সে তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত, আপনারও হাতে অনেক কাজ থাকলেও সেসব করতে ইচ্ছে করছে না। টিভি দেখতে ইচ্ছে করে না, টক শো গিলতে খুবই টক লাগে, খেলাধূলা পাগল আপনি খেলাধূলার ধারা বিবরণী শুনতে বা দেখতেও এখন আর ইচ্ছুক নন। এমতাবস্থায় আপনি ব্লগ খুলে বসলেন, ভাল একটি লেখা পড়ে, কিংবা সেখানে মন্তব্য করতে গিয়ে আপনার নিজের কিছু কথা লিখে আপনার মনটা ভাল হয়ে গেল। ব্লগে এ লেখাগুলো লেখেন কোন বিখ্যাত লেখক নয়, আমার আপনার মতই সাধারণ লেখক, তাদের আটপৌরে জীবনের কাহিনী, কল্পনা কিংবা অভিজ্ঞতা নিয়ে। তবুও এই কাঁচা হাতের লেখাগুলো পড়তেই আপনার ভাল লাগে। কারণ, কিছু কিছু এসব লেখার সাথে আপনি নিজেকেও রিলেট করতে পারেন। কী নেই এই ব্লগে? গল্প, কবিতা, ছড়া, কল্প কাহিনী, ট্রাভেলগ, নয়ন জুড়ানো ছবি ব্লগ, এক চোখে, দু’চোখে, মনের চোখে দেখা রাজনীতি, ধর্মবাণীর পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক, সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা, সঙ্গীত নিয়ে আলোচনা এবং সেই সাথে উপরি পাওনা হিসেবে কিছু পছন্দের সঙ্গীতের লিঙ্ক, কিংবা কারো ভাল লাগুক বা না লাগুক, স্রেফ শখের বৃত্তিগুলোকে মেলে ধরে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু লেখা জোখা।

এসব অতি সাধারণ এবং কখনো কখনো কিছু অসাধারণ লেখা পড়ে, মন্তব্য করে আপনি আনন্দ অনুভব করছেন, এটাই লেখকের বড় পাওনা। তার নিজের জন্যেও এটা একটা বড় আনন্দ যে তার ভাবনাগুলো নিয়ে পাঠকও ভেবেছে, ভাবছে এবং এর সূত্র ধরে তাদের নিজের অভিজ্ঞতার কথাও সবাইকে জানাচ্ছে। এসব করতে করতে আমরা কোন কোন সময় একে অপরের বিপদের কিংবা হতাশা, দুর্ভাগ্যের কথা জেনে ব্যথিত হই, তাদের খুশীর খবর জেনে আনন্দিত হই, তাদের ভাল লাগা কোন বই এর বা গানের কথা জেনে নিজেরাও একটা ভাল বই পড়ে ফেলি কিংবা একটা ভাল গান শুনে ফেলি, তাদের ভ্রমণ কাহিনী পড়ে কোন স্বপ্নের দেশ সম্বন্ধে জেনে ফেলি। কিছু কিছু ঝগড়া বচসা যে এখানে হয়না তা নয়, তবে সে ক্ষেত্রেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, একটা ফয়সালা করে দেন। তাতে কেউ সন্তুষ্ট হন, আবার কেউ কেউ সন্তুষ্ট না হয়ে রাগে কিংবা অভিমানে ব্লগ ছেড়ে চলে যান। তাদের চলে যাওয়ার পর, বিশেষ করে যারা নিয়মিত লিখে থাকেন তাদেরকে আমরা মিস করা শুরু করি, তাদের প্রতি আবেদন জানাই ফিরে আসার, কেউ কেউ অচিরেই ফিরে আসেন, কেউ দীর্ঘ বিরতি নেন, আবার কেউ চিরতরেই হারিয়ে যান। কিন্তু হারিয়ে গিয়েও তারা একেবারেই হারান না। তাদেরকে নিয়ে ব্লগারগণ মাঝে মাঝেই স্মৃতি তর্পণ করেন, সেখানে নতুন পুরনো অনেক ব্লগারই অংশ নেন। এসব পড়ে দীর্ঘদিন পরে হলেও হয়তো তাদের কেউ কেউ সাড়া দেন।

এইসব সুখ দুঃখের, হাসি-কান্নার দোলাচলে দুলতে দুলতেই লেখকেরা এখানে লিখে চলেছেন, পাঠকেরা পড়ে চলেছেন, এভাবেই এ ব্লগটা প্রায় এক যুগ পার করে দিল। আজ আমি এখানে আছি, কাল হয়তো থাকবো না, কিন্তু আমার লেখাগুলো এখানে থেকে যাবে বলে বুকে আশা বেঁধে রাখি। নিকট কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে কেউ এমন একটা লেখা পড়ে আন্দোলিত হবেন, স্পর্শিত হবেন, এমন একটা ক্ষুদ্র আশা মনের ভেতর পোষণ করতেই পারি। আর তা না হলেও কিছু যায় আসে না। আমার নিজেরই কোনদিন যখন নিজের লেখা পড়তে ইচ্ছে হবে, তখন নিভৃতে বসে একদিন এই ব্লগবাক্সটা খুলে বসতে পারি (ততদিনে আই ডি আর পাসওয়ার্ডটা মনে থাকলেই হলো!), যেমন করে আমাদের সময়ে বালিকারা আকাশে মেঘ দেখলে পুতুল বিয়ে দেবার জন্য তাদের পুতুল বাক্স খুলে বসতো।



ঢাকা
২৯ এপ্রিল, ২০১৮
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।





আজকের সকালটা শুরুতে বেশ রৌদ্রকরোজ্জ্বলই ছিল। সকাল আটটার দিকে মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। সাড়ে আটটার সময় আকাশটাতে হঠাৎ করে রাতের আঁধার নেমে আসে। শুরু হলো গাছ দোলানো ঝড়ো বাতাস, আকাশ থেকে নেমে এলো মুষলধারায় বৃষ্টি।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:০৪
৪৯টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×