somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেষের পাতা - ৭

১১ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢ্যাঙা চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষণ ধরে ফাকা দরজাটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম । কি বলে গেল ও’ এটা । সত্যিই কি এমন হতে পারে , নাকি ওর বুঝার ভুল । এতদিন পাশাপাশি থেকে ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারব না, এও কি সম্ভব ? কোনোদিন সামান্য আভাসটুকুও তো পাইনি । সত্যিই যদি হয় তবে আটিস আমাকে কখনো বলেনি কেন ? ব্যাপারটা নিয়ে যতই ভাবতে লাগলাম তত বেশি কৌতুহলটা জাঁকিয়ে বসলো কারন উত্তরটা এমন রহস্যের বেড়াজালে ঘেরা যে আমার পক্ষে এর সমাধানটা অসম্ভব । ফেলে আসা স্মৃতিরগুলো পাগলের মতো হাতরে ফিরতে লাগলাম । একটা ছোট ইঙ্গিত, একটা সামান্য খড়কুটো, যেটা ধরে আমি আমার এই অভিশপ্ত সাগরের মাঝে বেঁচে থাকতে পারব, কিছু পেলাম না ।
এলোপাথাড়ি চিন্তা করতে করতে ঘরে পায়চারী করছিলাম । হাতে বল্টুর কোচিং-এর একটা নোট । কিন্তু সমস্ত মনোযোগ আমার জানালাটার বাইরে আকাশটার দিকে । মাঝে মধ্যে বাইরে এদিক ওদিকও তাকাচ্ছিলাম আর হাঁটছিলাম । হঠাৎ বিকাল পাঁচটার দিকে দেখি আটিস ওদের বাসার বাইরের গেটটা দিয়ে মাথা নিচু করে ঢুকতে গিয়ে থেমে গেল । সটান ঘুরে আমার জানালার দিকে তাকাল । আর আমিও তখন খুব উৎসুক দৃষ্টিতে জানালার গ্রিলটা ধরে তাকিয়ে আছি । বুঝিনি ও’ ঘুরে তাকাবে । থতমত খেয়ে তাড়াতাড়ি জানালা থেকে সরে এসে বিছানায় বসে পড়লাম ।
সাড়ে ছয়টার দিকে হঠাৎ আমার ঘরের দরজার বাইরে থেকে আটিসের কণ্ঠ পেলাম, “সোহানা আসব ?” হাতে খাতাটা নিয়ে কি যেন চিন্তায় মশগুল ছিলাম হঠাৎ আটিসের গলা শুনে চমকে উঠে হৃৎপিণ্ডটা আমার পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটতে লাগলো । হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে এলো । ভয় ভয় করতে লাগলো । ভীষণ অভিমান হল আটিসের উপর । মনে হল সবাই আমাকে নিয়ে খেলছে, আমি যেন সবার হাতের পুতুল । বললাম, “ আসো ”
ঘরে ঢুকে আমার দিকে তাকিয়েই থমকে গেল। একটু চিন্তিত হয়ে ভুরু কুচকে জিজ্ঞাসা করল, “ কী হল, তোমার কি হয়েছে ?”
“ কি হবে ? কই কিছু না ”
“ কাঁদছিলে ? আমি ছিলাম না এর মধ্যে আর কিছু ঘটেছে ?’
“ তুমি কই ছিলে কালকে । কোনো খবর দেওনি কিছুনা , দারগা কাকুকে এই বয়সে কি রকম চিন্তায় যে ফেলে দিয়েছিলে । আর ওই ঢ্যাঙা, তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তোমার চিন্তায় হাফ ডেড । খুব ইরেস্পন্সেবলের মতো কাজ করেছো । তুমি তো কখনই এমন করনা । তোমার কি হয়েছে বল তো ঠিক করে ।”
“ গতকাল লিটন ভাইয়ের কাছ থেকে সোয়েব ভাইয়ের বাসার ঠিকানাটা নিয়ে রোহু আপুর সাথে দেখা করতে গেছিলাম ”
“ কেন ?”
“ তোমার মাথা থেকে বিয়ের ভূতটা নামানোর জন্য ”
“ বিয়ের ভূত ? বিয়ে কি আমি নিজে যেচে করছি নাকি ?”
“ তুমি তো একবারও ‘না’ বলছ না । কাকুকে সরাসরি একবার ‘না’ বলে দেখ না ”
“ ‘না’ বলিনি , লাভ নাই দেখে । আর যদি বা বিয়ে করি অসুবিধাটা কি ?”
আটিস দাড়িয়ে কথা বলছিল । এবার ধপ করে চেয়ারে বসে পরে বলল, “ অসুবিধাটা কি শুনবে ? কালকে রোহু আপু বলল যে ব্যবসায় মন্দা যাওয়াতে রাজিবের বাবার কাছ থেকে কাকু বিরাট অঙ্কের টাকা ধার নিয়েছিলেন । এখনো প্রচুর শোধ দেয়া বাকী । আবার ওইদিকে রাজিবকে ওদের মতো হাই সোসাইটির ফ্যামিলিতে বিয়ে দিলে দুইদিনও টিকবে না । তাই ছেলেরও গতি হবে আর দেনাও এক অর্থে শোধ হবে ।”
খুব খারাপ লাগলো কথাটা শুনে । আব্বা আর যাইহোক আমাকে বলির পাঁঠা নিশ্চয় বানাবে না । খুব রেগে গিয়ে বললাম, “ শোন আটিস, আমার আব্বা এরকম না !”
ও’ হেসে ফেলল, বলল, “ ঠিক আছে এরকম না ” আটিসের হাসিটা খুব সুন্দর, ও’ হাসলে চোখগুলোও সাথে হাসে ।
“ রোহু আপু কিন্তু তোমার সাথে দেখা করতে চান ”
আপুর উপর অভিমানটা তখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি । আমি অন্য প্রসঙ্গ টেনে বললাম, “ রাজিব ভাইয়ের হাই সোসাইটিতে বিয়ে টিকবে না আর আমাদের মতো মিডল ক্লাস হলে টিকবে, মানেটা কি ?”
“ মানে……” একটু ইতস্তত করতে লাগলো আটিস । “ মানে রাজিবের সাথে কোনো ছেলের বিয়ে হলে টিকতো ” কথাগুলো বলতে বলতে আটিসের শ্যামলা বর্ণের চেহারাটা হালকা রক্তাভ লালের ছটায় ভরে গেল । ভারি তো মজা, এই প্রথম কোনো পুরুষকে লজ্জায় লাল হতে দেখলাম । ব্যাপারটা বুঝলেও, একটু মজা করতে ইচ্ছা করলো ।
“ আটিস তুমি কি মনে করো আমি ছেলে ? ”
আমার প্রশ্ন শুনে ও’ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে উঠলো, “ না না না তা ভাববো কেন ?”
“ এই যে বললে রাজিব ভাইয়ের সাথে ছেলের বিয়ে হলে টিকবে । তুমি তো বললে মিডল ক্লাসের বিয়ে টিকবে , মানে আমার সাথে বিয়ে টিকবে মানে আমি ছেলে”
“ সোহানা তুমি ঠিক করে বলতো , বুঝনি ব্যাপারটা ?” ওর মুখটা এবার টকটকে লাল হয়ে গেল ।
আমি আর হাসি চাপিয়ে রাখতে পারছিলাম না । হো হো করে জোরে হেসে উঠলাম । আটিস তৎক্ষণাৎ আমার দুষ্টুমিটা বুঝতে পেরে হাসতে হাসতে দাড়িয়ে দুহাতের আঙুলগুলো দিয়ে আমাকে খামচে ধরবে এমন ভাব করে এগিয়ে এলো, “ দাড়াও দেখাচ্ছি মজা , আমি টেনশনে শেষ আর তুমি মজা করছো ”
আমি অনেকক্ষণ পর হাসি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “ তুমি রাজিব ভাইয়ের এই কথাটা জানলে কিভাবে ? উনি কি জনে জনে বলে বেরিয়েছেন নাকি ?”
“ রোহু আপু বললেন । শুনে যা বুঝলাম এটা তো ওপেন সিক্রেট ”
“ তাহলে উনারা রাজিব ভাইয়ের বিয়ে দিতে চাইবেন কেন ?”
“ সমাজে প্রমাণ করার জন্য যে উনাদের একমাত্র ছেলে গে না । কোন হাই সোসাইটির মেয়ে নিজের কপাল পোড়াবে বলো ?”
“ হাই সোসাইটির পোড়াবে না , মিডল ক্লাস সোসাইটিরই পোড়াবে ”
আটিস আঁতকে উঠলো, “ মানে ?”
“ মানে খুব সহজ । ওইখানে বিয়ে হওয়া তো আমার জন্য খুব ভাল, তা না হলে অন্য কোথাও আব্বা আমাকে সেই জোর করেই বিয়ে দিবে, সেখানে চিনি না, জানি না প্রথম থেকেই দেহ মন সব ঐ স্বামী নামক অপরিচিত লোকটাকে বিসর্জন দিতে হবে । রাজিব ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে আমি অন্ততপক্ষে বেঁচে তো থাকবো ”
“ তুমি ভালবাসা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবে না সোহানা ”
“ এতদিন যখন পেরেছি এখনো পারবো । আম্মা আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসত, ছেড়ে চলে গেল , এরপর যাদের ভালবাসা পেয়েছি তা নিঃস্বার্থ না , আপু আমার কথা একটুও না ভেবে এমন কাজটা করলো আর আব্বাকে তো দেখছই । আমার মনে হয় না নিঃস্বার্থ ভালবাসা বলে কিছু আছে আটিস ”
আটিস আর আমি বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম ।
“ সোহানা, সব মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে তাই তো ?”
“ হুম ”
“ কিন্তু কেউ যদি নিজের থেকেও অন্যকে বেশি ভালবাসে ? তোমাকে বাসে ? তাহলে তুমি এই বিয়ে থেকে সরে আসবে তো ?”
“ যদি ?” হাসলাম একটু । “ আটিস, ভালবাসায় শর্ত ?” হঠাৎ চারদিক অন্ধকার করে লোডশেডিং শুরু হল । আটিস বলল, "সোহানা যাই, কালকে আবার আসবো”
আমার ঘরটা এক কালো গহীন শুন্যতায় ভরে উঠলো ।
...............চলবে

১ম পর্ব

২য় পর্ব

৩য় পর্ব

৪র্থ পর্ব

৫ম পর্ব

৬ষ্ঠ পর্ব

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×