somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ৎ-?// আস্তিনের সাপ

১১ ই জুন, ২০০৬ রাত ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ইসলামের বড় বড় দুশমনগুলোর অনেকগুলোই ছিল আস্তিনের সাপ, যারা মুসলমানদের সমাজেই ইসলামের সকল সুবিধা ভোগ করে ও কাজে লাগিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে থাকে। যে আচরণকে আরবীতে নিফাক, বাংলায় কপটতা, ইংরেজীতে Hypocrisy বলে এবং এর ধারকদেরকে যথাক্রমে মুনাফেক, কপট বা ভণ্ড ও Hypocrite বলে ডাকা হয়। সর্বযুগেই ছিল এদের দৌরাত্ম, সময়ের সাথে সাথে এদের পোশাক-আশাকের বদল হয়েছে মাত্র, হয়েছে কর্মপদ্ধতিরও বদল; কিন্তু বদলায়নি চরিত্র। কখনো তাদের নাম হয়েছে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই ইবনে সুলূল, কখনো মীর জাফর, কখনো বা এজাতীয় কিছু। কিন্তু যে সাপ সে সাপই রয়ে গেছে, চরিত্রগত বংশানুক্রমে। দু'মুখো সাপ এরা, একই সত্তায় ধারণ করে দু'টি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র। বিশ্লেষণে পরিস্কার হবে যে, এ চরিত্র দু'টি মূলতঃ বিভাগিত হয় মৌলিক প্রশ্নে, অন্য যে কোন যৌগিকতায় দোষণীয় বটে কিন্তু এতটা ধ্বংসকারী নয়।

পবিত্র কুরআনের মুনাফেকদের ব্যাপারে অনেক কথা আলোচিত হয়েছে, তন্মধ্যে কিছু তুলে ধরছি-
"মানুষের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যারা বলে, 'আমরা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে ঈমান এনেছি', অথচ তারা মুমিন নয়; আল্লাহ্ এবং মুমিনদেরকে তারা প্রতারিত করতে চায়। বস্তুতঃ তারা নিজেদেরকেই নিজেরা প্রতারিত করছে, অথচ তারা তা বুঝে না। তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি। আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছেন আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী। যখন তাদেরকে বলা হয়, 'পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না', তারা বলে, 'আমরাই তো সংশোধনকারী'। সাবধান! এরাই বিপর্যয় সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝেনা। যখন তাদেরকে বলা হয়, 'লোকেরা যেমন ঈমান এনেছে তোমরাও তেমনি ঈমান আন', তারা বলে, 'নির্বোধ লোকেরা যেরূপ ঈমান এনেছে আমরাও কি সেরূপ ঈমান আনবো?' সাবধান! এরাই নির্বোধ, কিন্তু তারা তা জানেনা। যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ঃ 'আমরা ঈমান এনেছি', আর যখন তারা একান্তে তাদের শয়তানদের সাথে একত্রিত হয়, তখন বলে ঃ 'আমরা তো তোমাদের সাথেই রয়েছি; আমরা তাদের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করি মাত্র'; আল্লাহ্ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে বিভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াবার অবকাশ দেন।" [সূরা আল-বাকারাহ্ ঃ 8-15]

আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুনাফেকদের সজজেই চেনার জন্য তাদের স্বভাব সম্পর্কে মুমীনদের জানিয়ে গেছেন যে- 'চারটি (দোষ) যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে খাঁটি মুনাফেক। আর যার মধ্যে এ দোষগুলোর একটি বর্তমান রয়েছে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যায়। (1) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, (2) সে সন্ধি-চুক্তি করলে তার বিপরীত করে, (3) সে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (4),সে ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে।' [মুসলিম ঃ 118]

দলীলসমূহ থেকে যা পাই তা হলো ঈমান বা বিশ্বাসের প্রশ্নটিই মৌলিক। কারণ, বিশ্বাসই পারে শুধুমাত্র ব্যক্তির জীবনের গতিধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে। যেহেতু প্রতিটি কাজের উৎপত্তি হয় অন্তর থেকে অর্থাৎ, অন্তরের ইচ্ছা থেকে এবং বিশ্বাসের সূত্রপাতও সেই অন্তর থেকেই, সেহেতু একজন মানুষ কি কি কাজ করবে তা মূলতঃ নির্ধারণ করে দেয় তার অন্তর। অবস্থার শিকার হয়ে অনেকক্ষেত্রে অনেক কার্যই মানুষের দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে, কিন্তু সেসব করতে সে বাধ্য হয় মাত্র। তারপরও চাপে পড়ে হোক আর সোৎসাহে হোক অন্তর বা মনের অনুমতি ব্যতিরেকে ব্যক্তি মাত্রেরই কিছু করার ক্ষমতা নেই। তার মন-বিবেক-জ্ঞান সন্মিলিতভাবে কাজটি করতে তাকে অনুমতি দিচ্ছে বলেই সে তা সম্পাদন করেছে, অন্যথায় বিদ্রোহী মনও আমাদের সমাজে বিরল নয়, আর এ বিদ্রোহও মন-বিবেক-জ্ঞানেরই সিদ্ধান্ত। তাই বিশ্বাসের বিভাজনে, অন্যকথায় ব্যক্তির সমস্ত 'চিন্তা-কর্ম-ইচ্ছা'র ভিত্তিমূলে যে মুনাফেকী বা কপটতা লুকানো, সেটাই একজন মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয়; যদিও সাধারণের কাছে সে অন্য সবার মতই একজন বিশ্বাসী বা যে কোন মতবাদ, চিন্তা-কর্মের সমঅনুসারী হিসেবে বিবেচিত হয়, তার সব কাজে-কর্মেই সে সবসময় নিজেকে পাক্কা ঈমানদার হিসাবে প্রচার করার ব্যর্থ চেষ্টা করতে সচেষ্ট থাকে এবং সর্বদা এ শংকায় ভোগে যে, 'কখন ধরা পড়ে যাই'।

অপরপক্ষে, কোন ব্যক্তি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করছে যে, তার প্রতিটি কর্মের জবাবদিহি করতে হবে একদিন, বিচারের দিনে তার মহান প্রভূ আল্লাহ্র সম্মুখে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সৎ-অসৎ কর্মসমূহের পুংখানুপুংখ হিসাব তাকে দিতে হবে। কিন্তু স্বীয় নফ্স বা অন্তরের অসদিচ্ছা ও শয়তানের কুমন্ত্রণায় নিপতিত হয়ে জানা-অজানায় পাপ করছে যাচ্ছে সে। তারপরও তার চিন্তা-চেতনা, কাজ-কর্ম, দান-সদকা ইত্যাদি সে প্রতিনিয়ত ব্যয় করে যাচ্ছে তার বিশ্বাসের স্বার্থে। অর্থাৎ, তাকে আমরা বলতে পারি পাপী ঈমানদার বা দুর্বল বিশ্বাসী। বুঝের স্বল্পতায় হোক আর পার্থিব সুখ-সম্ভারের লোভে হোক তার বিশ্বাসের ভিত কোন না কোনভাবে দুর্বল বলেই সে এখনো পাপের পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কর্মের বৈসাদৃশ্য মূলতঃ বিশ্বাসের কপটতার শাখা বা বহিঃপ্রকাশ মাত্র। অন্যকথায় কাজের অমিল বিশ্বাসের কপটতার চেয়ে গৌণ; ঈমান বা বিশ্বাসের নেফাকী বা কপটতাই মূখ্য ও বড় ব্যাপার। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পরিপূর্ণ বিশ্বাসের কপটতা যদি হয় সমূল-বৃক্ষ তো অন্তরের বিশ্বাস-দুর্বলতা ও কর্মের বৈসাদৃশ্যতা সে মহীরূহের শাখা কিংবা পত্র-পল্লব বিশেষ।

বলা প্রয়োজন যে, দু'টোর মধ্যে ব্যবধান বিরাট, একজন তো প্রস্তাবিত কিংবা আনীত বিষয়ে মোটেও বিশ্বাস রাখে না, শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের থেকে সাময়িক পার্থিব-স্বার্থ হাসিলের লোভে নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবী করছে, কিন্তু তার অন্তর নিফাক বা কপটতায় পরিপূর্ণ। অপরপক্ষে, অন্যজন পরিপূর্ণ বিশ্বাসী হয়েও স্বীয় দুর্বল চিত্তের কারণে গ্রহণ করা বিশ্বাসের নীতিমালা-বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে কদাচিৎ, নিতান্তই শয়তানের কুমন্ত্রণায় কিংবা লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ প্রভৃতি ক্ষতিকারক অন্তর-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে। এখন যে সত্তায় সে বিশ্বাস করেছে, সেই সত্তার বিচারে এসব পাপের প্রতিফল কি, তা তার জানা আছে বলে সর্বদাই সে ভীত-কম্পিত থাকে, তার প্রভূর নিকট সর্বদা বিনত চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে; অন্ততপক্ষে বিবেক দংশনে ভোগে। আর এ থেকেই আশা করা যেতে পারে যে, কোন একদিন সে তার কর্মের এসব ত্রুটি দূর করতে সক্ষম হবে, যদি নাও হয় তথাপি তার প্রভূর কাছে সে শুধু একজন পাপী বিশ্বাসী হিসেবেই বিবেচিত হবে, যাকে তিনি ইচ্ছে করলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন আবার ইচ্ছে কররে শাস্তিও দিতে পারেন।

কিছু অন্যকথা- ক'দিন আগে ব্লগে কীব্রিয়্যাহ্র উদয় ঘটে, তো মহাশয়ের লেখালেখি বলছে তেনার আগমনই ছিল মূলতঃ এই খোয়াইশে। আপনারা নিশ্চয়ই ঐ চোরের কেচ্ছা শুনেছেন- হাঁক উঠেছে, চোর! চো. . . র!! ব্যস্ আর কি শুয়ে থাকা যায়? গ্রামে চোর পড়েছে, লাঠি-ঘটি-বাটি হাতের কাছে যে যা পাও নিয়ে দে ছুট। চারদিক থেকেই আসছে হাঙ্গামার শব্দ, চোর ব্যাটা প্রমোদ গুনলো, কি করা যায় এখন, ঝটপট গায়ের জামাটা খুলে, মুখে পেঁচানো গামছাটা খুলে হেঁচকা টানে বেঁধে নিল কোমরে। তারপর মহুয়াদের বাঁশের বেড়া থেকে হেঁইয়ো জোরে খুলে নিল একটা বাঁশ, আর পায় কে, সেও চোর চোর চেঁচামেচি করতে করতে ছুটতে ছুটতে হয়ে গেল চোর ধরাদের একজন। চোরকে আর কোনদিনও ধরতে পারে না গাঁয়ের সহজ-সরল মানুষগুলো। তো কি আর করবেন, কীব্রিয়্যাহ্ ছা-হেবজাদা ইবলীসের আদেশ পেয়ে আমাদের এই ব্লগ নামক মিষ্টির দোকানের দেয়ালে একটুখানি রসগোল্লার শিরা লাগিয়ে দিল, ব্যস তেনার কম্ম এই পর্যন্তই, বাকীটা সম্পাদন করে যাচ্ছেন পর্যায়ক্রমে মাছি, টিকটিকি, বিড়াল, কুকুর থেকে নিয়ে মানুষেরাও। সে কাহিনী না হয় অন্য কখনো বলবোক্ষণ, বলেই বা কতটুকু, কথায় আছে না- 'চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী', তারপরও নিজের ঈমানী দায়িত্ব বলে কথা, সেই আর কি
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×