বাঁশ বাগানের ভিতর থেকে ফিস করে একটা শব্দ হল। ফজলু টর্চ মেরে জিজ্ঞেশ করলো কেরে? যদিও টর্চ মারার দরকার ছিলনা, চার দিকে এমনিতেই জোছনার ফকফকা আলো। তার ওপর আবার ফজলুর গলায় শিকল বাবার দেওয়া বিখ্যাত তাবিজ। এই বন্ধকি তাবিজ গলায় থাকলে কুকুর, শিয়াল, সাপ খোপ তো দুরের কথা, ভুত প্রেতেরও সাধ্য নেই কাওকে আক্রমণ করে। তাই ভয় পাবারও তেমন কোন প্রশ্ন আসেনা।
কেরে, আবারো ফিস শব্দটা শুনে দ্বিতীয়বার চিৎকার করেলো ফজলু। টর্চ লাইটটা একটু ঘোরাতেই পরিষ্কার দেখতে পেল একটা কালো কুচকুচে বিড়াল ঝোপের ভেতর তিন চারগজ দূরে জ্বলজ্বলে হলুদ চোখে তাকিয়ে আছে। বাশের ছায়া ওঁটার ওপর আবার প্রতিবিম্ব সৃষ্টি করে একটা ভয়ানক পরিবেশও সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এসব পাত্তা না দিয়ে প্রচণ্ড সাহসী ফজলু তার হাতে থাকা ভারি কোদালটা ওই দিকে ছুঁড়ে মারল, ঠিক এমন সময় বাড়ি খাবার আগেই বিড়াল টা সাপের মত ফোঁস ফোঁস করতে করতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল।
প্রায় আধা ঘণ্টার মত হল ফজলু হাঁটছে । তার গন্তব্য মোল্লা বাড়ির পারিবারিক গোরস্থান শামানিল। ওখানে পৌঁছুলেই তার দীর্ঘদিনের অবদমিত বাসনা পুরন হবে। একটুও থামার সময় তার হাতে নেই। কারন ফজলু নিজাম কবিরাজের কাছে শুনেছে একটা লাশ নাকি দীর্ঘ দশঘণ্টা পর্যন্ত সজীব থাকে।
দশ ঘণ্টা হতে এখনও তিন ঘণ্টা বাকি।এই তিন ঘণ্টার মধ্যেই ফজলুর আসল কাজ সারতে হবে। দশ ঘণ্টা পার হলে আর রেহাই নেই। লাশ পচতে শুরু করবে। হাঁটার গতি দিগুন বাড়িয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে গলা ছেড়ে গান ধরল ফজলু। সে জানে এই জায়গাটা একেবারেই নির্জন। আসে পাশের এক মাইলের মধ্যেও কোন বসত বাড়ি নেই। গানের শব্দ তো দুরের কথা, কাউকে খুন করে ফেললেও কেও এগিয়ে আসবেনা। তাছাড়া এই এলাকায় ফজলু ছোটকাল থেকেই আছে। এর নারী নক্ষত্র সব তার জানা। আর জানা বলেই কবরস্থানে এত রাতে গিয়ে এমন একটি কাজ করতে তার একটুও ভয় লাগছেনা।
কবরস্থানের গেট খুলে সোজা পরীবিবির কবরের সামনে এসে দাঁড়ালো ফজলু। মাত্র তিন চারটে কবরের মধ্যে এই কবরটা খুজে পেতে তার একটুও কষ্ট হলনা। তাছাড়া আজ বিকেলেই তো শত শত মানুষের সাথে এসে পরীবিবির লাশ ঠিক এইখান টাতে দাফন করে গেছে ও। আর তখনি মনে মনে পরিকল্পনা এঁটেছে, আজ রাতেই এসে পরিবিবিকে কবর থেকে তুলতে হবে এবং মিটিয়ে ফেলতে হবে তার দীর্ঘদিনের লালসা !
পরিবিবি এই অঞ্চলের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মোল্লার তৃতীয় স্ত্রী। তার নাম পরী হতে পারে, কিন্তু পরী বললেও তার চেহারাকে অপমান করা হয়। তার মত এমন আগুন সুন্দরিকে শুধুমাত্র ফজলু কেন, এই এলাকার কেওই দেখেনি। যে পুরুষ একবার পরিবিবিকে দেখেছে সেই পরিবিবির রূপ দেখে ঝলসে গেছে। আর সেই হিসেবে ফজলুর তো এতদিনে বদ্ধ উন্মাদই হয়ে যাবার কথা, কারন সিদ্দিক মোল্লার বিশ্বস্ত ভৃত্য হিসেবে ফজলুর পরিবিবিকে দেখতে হয়েছে বারবার।
যদিও পরিবিবিকে দ্যাখাটা ফজলুর জন্য এত সহজ ছিলনা। কারন জীবদ্দশায় এই নারী অত্যন্ত পরহেজগার ছিল। পাঁচ অক্ত নামাজ তো পরতই, সেই সাথে পর পুরুষের সামনে পর্দাও করত। কিন্তু বুদ্ধিমান ফজলু কাছারি ঘড়ে টিন কেটে চমৎকার বেবস্থা করে রেখেছিল তাকে দেখবার। সে চাইলেই যখন তখন ফুটো দিয়ে পরিবিবির যৌবন উপভোগ করতে পারত।
শুধু শোবার ঘর নয়, পরীবিবির গোসল খানা তেও খুব সুন্দর করে ফুটো করে রেখেছিল ফজলু। ওই ফুটো দিয়ে কতবার যে সে, পরীবিবির নগ্ন শরীর দেখেছে তার কোন হিসাব নেই। এই পরিবিবিকে নিয়ে রাতের পর রাত তার নিরঘুম কেটেছে তার। নির্ঘুম কেটেছে বললেও ভুল হয়, বলা যায় রীতিমত যন্ত্রণায় কেটেছে। শুধু একটিবার পরিবিবিকে পাবার জন্য তার শরীরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি উঠত। আমাবসশা পূর্ণিমায় মাঝে মাঝে বিশেষ অঙ্গে ব্যাথাও হত। কিন্তু হায়, গরিবের শরীরটাও যে গরিবের কপালের মতই ফাটা। মরে গেলেও এইসব হুরপরীরা তার মত হতভাগ্য চাকরের ভাগ্যে জুটবে না, জুটবে লম্পট সিদ্দিক মোল্লার মত ধনীদের কপালে!
একঘণ্টা ধরে কবর খুরতে খুরতে ভীষণ ক্লান্ত ফজলু। মনে মনে বার বার চিৎকার করতে লাগলো আর কত? সে জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। কাপড় ধুয়েছে, বাজার করেছে, উঠোন ঝাট দিয়েছে, এমনকি শীতের সকালে বিলে নেমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাছও মেরেছে। কিন্তু গোর খুরতে গিয়ে এই প্রথম বুঝল এরচে কঠিন কাজ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। এতক্ষণ ধরে কবর খুরছে কিন্তু সেই লাশ এর দ্যাখা নেই। নাকি অতিরিক্ত উত্তেজনায় তার সময়ও থেমে গেছে বলে এমন লাগছে?
কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার কোদাল হাতে তুলে নিল সে। দুই হাত দিয়ে জোরে কবরে কোপ দিতেই খটাশ করে শব্দ হল। তারমানে কি কোদাল বাশের চাটাই পর্যন্ত পৌঁছে গেছে? দারুন উৎসাহে কিছুক্ষণ মাটি খোঁড়ার পরই তার সেই কাঙ্ক্ষিত মরদেহর সন্ধান মিলল! একে একে বাশের চাটাই ফেলে দেবার পর টর্চ মেরে পরিষ্কার সে দেখতে পেল কাফনে মোড়া পরিবিবির আগুন শরীর নিস্তেজ হয়ে গুটিয়ে আছে।
প্রায় তিন হাত কবর থেকে পরিবিবিকে টেনে ওপরে তুলল ফজলু। এর পর সে পরীবিবির কাফনের কাপড় খুলে ফেলল এবং আবিষ্কার করলো নিষ্প্রাণ পরীবিবির নগ্ন শরীর চাদের আলোয় আরও সুন্দর দেখাচ্ছে। আহা ওইতো সেই সুন্দর মুখ, সুন্দর ঠোঁট, সুন্দর গ্রীবা, সুন্দর বক্ষ যা দেখে রাতের পর রাত ঘুম হারাম করেছে ফজলু। হাত দিয়ে শরীর ছুয়ে দেখতেই মনে কেমন যেন শিহরন জাগে। একি স্বপ্ন না বাস্তব? নিজের শার্ট খুলতে খুলতে হাতে আলতো করে চিমটি কাটল ফজলু।
পরিবিবিকে সে জড়িয়ে ধরেছে জোরে। এই জড়িয়ে ধরা কোন সাধারন জড়িয়ে ধরা নয়। এই জড়িয়ে ধরার জন্য সে লক্ষ কোটি বছর ধরে অপেক্ষা করেছে। আজ এই মাঘি পূর্ণিমায় এত অসাধারন জোছনায় যে তার মনের সাধ পূরণ হবে তা সপ্নেও ভাবেনি ফজলু। আবেগে চোখ বন্ধ করে পরীবিবির কপালে চুমু খেতেই সে লক্ষ করলো পরীবিবির মুখটা হটাত নড়ে উঠেছে। মনের ভুল নাতো? চোখ খুলতেই সে দেখতে পেল পরীবিবি ভীষণ ক্রোধের বীভৎস দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে। ও মাগো বলে চিৎকার করে নিজের শরীর ছুটিয়ে নিতে আপ্রাণ চেষ্টা করলো ফজলু। কিন্তু বুঝতে পারল পরিবিবি তার দুইবাহু সাজরে চেপে ধরেছে।
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:২৭