somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুদ্রাণীর আয়না

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




চাদেঁর আলো সবসময়ই ঘরের আয়নায় এসে পরে | কেনজানি ওর ঘরের এই আয়নাটার সাথে চাদেঁর আলোর অনেক ভাব |


রুদ্রাণীর নতুন সংসার আর নতুন সংসারের জিনিসপত্র ও হওয়া উচিত নতুন | আসলে অরন্যকে রুদ্রাণী বিয়ে করেছে অনেকটা জেদের বসে | ওর পরিবার ওর বিয়ে অন্য জায়গায় ঠিক করেছিলো কিন্তু রুদ্রাণীর ছেলেটাকে একদম পছন্দ হয় নি |ছেলেটাকে অপছন্দ হওয়ার কথা রুদ্রাণী ওর পরিবার কে বলেছিলো কিন্তু কোন কাজ হয় নি জোর করে ওর বিয়ে দেয়া হচ্ছিলো ঐ ছেলেটার সাথে |


আর এদিকে অরন্য রুদ্রাণী অনেক ভালো বন্ধু ছিলো | অরন্য সাথে রুদ্রাণীর পরিচয় ভার্সিটিতে | ছেলেটা সবসময় একা একা থাকতো | রুদ্রাণী সবসময়ই ওর সাথে যেঁচে কথা বলতো কারণ ছেলেটার এই কম কথা বলাই ওর ভালো লাগতো |

ভার্সিটি শেষ করার পরোও রুদ্রাণী অরন্যর সাথে যোগাযোগ রেখেছিলো | ওর বাড়িতে যখন বিয়ের জন্য এতো জোরাজুরি হচ্ছিলি তখন একদিন রুদ্রানী অরন্যর কাছে যায় আর শুধু বলে আমি তোমার সাথে থাকতে চাই | অরন্য কিছু বলে না ও রুদ্রাণীকে বিয়ে করে আর ওরা এখন একসাথে থাকে | অরন্য একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে আর রুদ্রাণী প্রাইমারি স্কুলের টিচার্স |


পাশাপাশি দুইজন মানুষ দিনর শত ব্যাস্ততা শেষ করে নীড়ে ফেরে |


সংসার নিজের মনের মতো সাজাতে সংসারের সব জিনিস রুদ্রাণী একায় কিনেছিলো অবশ্য অরন্যর এগুলো বিষয়ে কোন আগ্রহ নেই তাই রুদ্রানী আর কোনকিছুর জন্য কিছু বলে না |

দুইদিন হলো রুদ্রাণী এই আয়নাটা কিনে এনেছে | প্রতিদিনরের কাজ শেষে বাড়ি ফিরে একই রাস্তায় কিন্তু সেদিন কি যেন হয়েছিলো ঐ রাস্তায় তার অন্য রাস্তায় বাড়ি ফিরছিলো তখন দেখলো রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধি লোক একটা আয়না নিয়ে বসে আছে | কাঠের ফ্রেমে চমৎকার কারুকাজ করা আয়নাটা প্রথম দেখাতেই ওর খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো তাই কিছু না চিন্তা করে কিনে নিয়েছিলো |


আয়নাটা ও ওর বিছানার সামনে রাখছে | বিছানায় বসলেই আয়নায় চেহারা দেখা যায় |

রুদ্রাণী কেনজানি এখন সবসময়ই আয়নার সামনে বসে থাকতে ইচ্ছা করে | কোন কারণ ছাড়াই ও এখন ওর রুমে থাকে | আর রাতে যখন চাদেঁর আলো আয়নায় পরে তখন মনে হয় আয়নাটা জীবন্ত হয়ে গেছে |

একরাতে অরন্য ঘুম থেকে উঠে দেখে রুদ্রাণী আয়নার সামনে বসে আছে |


= তুমি এতো রাতে আয়নার সামনে কি করছো! !

= বাচ্চাদের খেলা দেখছি ...

= কোথায় বাচ্চা! !
= ঐ তো ...জানো বাচ্চাগুলোর এরকম খেলাধূলা দেখতে আমার ভীষণ ভালোলাগে জানো এরা যদি রাতে আমায় না দেখে তাহলে কান্নাকাটি শুরু করে তাই বসে আছি | বাচ্চাগুলো ঘুমিয়ে গেলে আমিও শুতে যাবো ....


অরন্য কিছু বুঝতে পারলো না কারণ রুদ্রাণী আয়নার দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে যা বলছে তার কোনটাই সে দেখছে না |


তাই অরন্য নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রুদ্রাণীকে বললো অনেক রাত হয়েছে শুতে যাও | রুদ্রাণী কিছুক্ষণ অরন্যারের দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বাধ্য মেয়ের মতো শুতে গেলো |



এভাবে কয়েকরাত চলে গেলো অরন্য রোজ রাতে দেখে রুদ্রাণী আয়নায় কি যেন দেখে খুব মনযোগ দিয়ে কিন্তু ওকে জিগাস করলে শুধু একই কথা বলে |

অরন্য বুঝতে পারছিলো না সে ভাবলো হইতো কাজের চাপ আর নিজের পরিবার থেকে দুরে থাকার জন্য রুদ্রাণী একাকিত্বে ভুগছে আর তাই. এমন করছে |


অরন্য ভাবলো আয়নাটা ঘর থেকে সরাতে হবে তাই সে রুদ্রাণীকে কিছু না বলেই আয়নাটা সরিয়ে ফেললো |


সেইরাতেই রুদ্রাণী পাগলের মতো হয়ে গেলো | ও বার বার আয়না দেখতে চাচ্ছিলো গভীর রাতে রুদ্রাণীর এমন অবস্থা দেখে অরন্য খুব ভয় পেয়ে গেলো |


রুদ্রাণীকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় ঘুম পারানো হলো |

সকাল ডাক্তার এসে রুদ্রাণীকে দেখে গেলো কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না |

সেইরাতে অরন্য ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ অনেক বাচ্চার কান্না শুনতে পেলো | কান্নার শব্দ এতো জোরে মনে হচ্ছে ওর রুমে ওনেক বাচ্চা একসাথে কাঁদছে | কিন্তু ঘরে আলো জালিয়ে দেখে কোন বাচ্চা নেই ঘরে এভাবে রোজ রাতে অরন্য বাচ্চার কান্না শুনতো আর পুরোরাত ঘুমাতে পারতো না আর রুদ্রাণী প্রায় পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলো এভাবে আর সম্ভব না তাই অরন্য আয়নাটা আবার রুদ্রাণীকে এনে দিলো | রুদ্রাণী স্বাভাবিক হচ্ছিলো সারাদিন নিজের কাজ করতো আর রাতে আয়নার সামনে বসে থাকতো | ভালো দিন যাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ একদিন রোড একসিডেন্ট এ রুদ্রাণী মারা যায় | অরন্য জীবন আবার এলোমেলো হতে শুরু হয় ও রাতে আবার বাচ্চার কান্না শোনা শুরু করে তাই সে আয়নাটাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখে আয়না আবার ভালো হয়ে গেছে | তারপর সে আয়নাটাকে মাটি চাপা দিয়ে রাখে কিন্তু ঘরে এসে দেখে আয়না আগের জায়গায় এভাবে অরন্য প্রায় পুরো পাগল হচ্ছিলো |একদিন ও আয়নাটা হাতে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পরে হঠাৎ রাস্তায় এক মহিলা অরন্যকে পিছন থেকে ডাকে আর জিগাস করে আয়নাটা সে বিক্রি করবে নাকি | অরন্য কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহিলাটা কিছু টাকা অরন্যের হাতে দিয়ে আয়নাটা নিয়ে চলে যায় |


মহিলাটা যখন আয়নাটা তার হাতে নিলো অরন্য এই প্রথম বার আয়নায় কিছু বাচ্চাকে দেখতে পেলো দেখলো বাচ্চাগুলো হাসছো | ||||||||
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×