somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেরুদন্ডের ভিসকসিটি বা সিঁড়ি বেয়ে উঠার গল্প

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের মেরুদন্ড চা'য়ে ভেজানো এনার্জি প্লাস বিস্কুট হয়ে উঠতে থাকে, আর আমরা দিন দিন বাঁকা হয়ে যাই। আমাদের পায়ের নিচে মাটি অবশ্য শক্তই থাকে। তার উপর ইট-বালু পড়ে, পিচ কিংবা কংক্রীট ঢালাই হয়। শক্ত মাটিতে আমরা মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকি। সিঁড়িবাজ মানসুর, আমাদের অর্ধতরল কশেরুকাগুলো দিয়ে তার সিঁড়ির ডেকোরেশন করে। আমরা তখন ঘেসো জমি থেকে কেলে ভুতদের শ্যাওড়া গাছ কেড়ে নিতে ব্যাস্ত থাকি।

কখনো সিঁড়িবাজ মানসুরের সাথে আমাদের দেখা হয়। তখন হয়তো সে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে। আমরাও তার সাথে গড়িয়ে গড়িয়ে নামতে থাকি। আমাদের জন্য তার পায়ে তখন অফুরান সময়। তার হাতে যখন চকলেট-ব্রাউন ওয়ালেট বের হয়ে আসে, তখন হয়তোবা আমাদের ঘাড় লম্বা হয়ে ওঠে, ছোবল উদ্যত সাপের মত। উৎসুক চোখগুলো হামলে পড়ে ওয়ালেটের এখানে সেখানে। নিপুন বীণবাদক যেমন বীণের সুরে সাপকে সম্মোহিত করে রাখে, তেমনি ওয়ালেটের দেয়ালে সাজানো বিভিন্ন ব্যাংকের সোনালী বা প্লাটিনাম তৈলচিত্রে আমরাও সম্মোহিত হয়ে পড়ি। আমাদের সহসা কঠিন ভারটেব্রা আবারো অর্ধতরল হয়ে পড়ে।

সিঁড়িবাজ মানসুরের ছুঁড়ে দেয়া উচ্ছিষ্ট নিয়ে আমরা ফিরে আসি শক্ত বা নরম মাটিতে। আর মানসুর মনোযোগ দেয় সিঁড়ি বেয়ে উঠায়। আমরা রাস্তার পাশের পিঠার দোকানে হাঁটুমুড়ে বসি, দোকানীর সাথে আলগা খাতির জমানোর চেষ্টা করি। মরিচ ভর্তা দিয়ে পিঠা খেতে খেতে শব্দ করে শ্বাস নেই। শ্বাসের সাথে মরিচের সব ঝাল টেনে নেই ভিতরে, এই ঝাল আমাদের মেরুদন্ডকে আরো খানিকটা বিষাক্ত করে। গলিত মেরুদন্ডের বিষ নিয়ে আমরা শক্ত মাটিতে দাঁড়াই। ডানপাশের খোলা দেয়ালটার সামনে গিয়ে পেশাব করি। তারপর গভীর রাতের জন্য অপেক্ষা করি। রাতের গভীরতা পর্যাপ্ত ঘণত্বে পৌঁছুলে বাঁয়ের খাল ঘেষা বাঁশের কাঠামোগুলোয় আমাদের মেরুদন্ডীয় বিষ ঢেলে দেই। বিষের কমলা সোনালী রঙ ছড়িয়ে পড়ে সারাটা বামপাশ জুড়ে। আমরা শক্ত মাটির উপর গড়িয়ে গড়িয়ে দুর থেকে আরো দূরে সরে যেতে থাকি।

আমরা বারেকের দোকানে চা খেতে যাই। আমাদের হাতে থাকে এক প্যাকেট এনার্জি প্লাস বিস্কুট। আমরা চা'য়ের কাপে বিস্কুট ডুবিয়ে তাকিয়ে থাকি বারেকের সাদা-কালো টিভির দিকে। যখন আমাদের বিস্কুটের কথা খেয়াল হয়, ততক্ষণে চা'য়ের কাপের তলায় বিস্কুটটা ঘর-বাড়ি বানিয়ে নিয়েছে। আমরা খুব উৎসাহের সাথে সেই ঘণ চা'তে চুমুক দেই। গলিত, অর্ধতরল বিস্কুটের ভেতর আমরা একটা হলেও শক্ত দানা খুঁজে পেতে চাই।

সিঁড়িবাজ মানসুর যখন সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকে, তখন তার চোখকে ঘিরে থাকে সানগ্লাস। সেটা এতই গাঢ় রঙের, যে সিঁড়ির সাজসজ্জা তার চোখের কোনো অংশকেই আঘাত করতে পারে না। গাঢ় সানগ্লাস পড়ে সে আমাদের মাড়িয়ে চলে যায়। আমরা তার চকলেট-ব্রাউন ওয়ালেটের তৈলচিত্র দেখতে পাইনা। আমাদের সম্মোহন কেটে যেতে থাকে। আমরা বারেকের দোকানে ফিরে আসি। এইবেলা আমাদের হাতে এনার্জি প্লাসের প্যাকেট থাকে না। আমরা চা'য়ে সস্তার টোস্ট বিস্কুট ভিজিয়ে ডুবে যাই সাদা-কালো টিভিতে। যখন বিস্কুটের কথা মনে পড়ে, তখন সমগে স্মৃতি জুড়ে এনার্জি প্লাস। আমরা চা'য়ের কাপে চুমুক দিয়ে ঘণ তরল পাই না, বরংকিচছুটা নরম টোস্ট বিস্কুট আমাদের হাতে রয়ে যায়। অনভ্যস্ত আমরা সেই টোস্ট বিস্কুটের দিকে তাকিয়ে থাকি। মুখে পুরে চিবানোর সময় আমরা টের পাই বিস্কুটের কেন্দ্রে কিছুটা মচমচে ভাব। আমাদের বাঁকা পিঠ খানিকটা সোজা হয়ে অঠে। ওদিকে পিচ কিংবা কংক্রীটের জমিতে ফাটল ধরে।

আমরা আস্তে আস্তে চা'য়ে বিস্কুট ভিজিয়ে খাওয়া ভুলতে থাকি। আমাদের নরম পিঠ দৃঢ় হয়ে উঠতে থাকে। আমরা নরম মাটিতেও খাড়া দাঁড়িয়ে থাকি। সিঁড়িবাজ মানসুরের সাথে পাশে পাশে আমরাও সিঁড়ি বেয়ে উঠা শিখি। আমরা একদল ছেলেকে চা'য়ে এনার্জি প্লাস বিস্কুট ভিজিয়ে খাওয়া শেখাতে থাকি।

সিঁড়িবাজ মানসুর একদিন পা হড়কে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। তার সিঁড়ির অর্ধতরল সাজে খাদ ঢোকে। আমরা সতর্ক হতে শিখি। সিঁড়িবাজ মানসুরের পরিণতিই আমাদের সতর্ক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। আমরা সিঁড়ি বানানো বাদ দিয়ে লিফট তৈরীতে মনোযোগ দেই। যদিও আমরা ভিতরে ভিতরে অনুভব করতে পারি লিফটও আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। আমরা নতুন একদল মানুষ সংগ্রহ করি। যারা চা'য়ে এনার্জি প্লাস বিস্কুট ভিজিয়ে খেলেও সেটাকে অর্ধতরল হতে দেয় না। তাদের দাঁত শক্ত বিস্কুট খাবার উপযোগী। আমরা তাদের পাশে নিয়ে লিফটে ঢুকি। কয়েকতলা পর্যন্ত তারা আমাদের সাথী হয়, তারপর আমাদের সম্মান দেখাতে লিফট থেকে নেমে দাঁড়ায়। আমরা আরো কয়েকতলা উঠে যাই। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখি আমাদের লিফট শ্যাফট জুড়ে অনেক সিঁড়িবাজ মানসুর পড়ে রয়েছে। আমরা নির্লিপ্ত ভাবে কফিতে চুমুক দেই আর এনার্জি প্লাস বিস্কুটের প্যাকেট উড়ে বেড়ায় আমাদের ঘিরে।


_________________________
বৃত্ত ভাঙ্গার চেষ্টা করি, বৃত্তে বন্দী থেকেই
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×