

Click This Link (১ম পর্ব)
Click This Link (২য় পর্ব)
Click This Link (৩য় পর্ব)
মিলি ও আলেকজেন্দার বো বাসায় ফিরে এল। মিলিকে দেখে মিলির মা- বাবা অনেক অবাক হলেন কারণ মিলি সচরাচর এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরে না। মিলির দুঃখী দুঃখী চেহারা দেখে মাহতাব সাহেবের কিছুটা সন্দেহ হচ্ছিল।কিন্তু সাহস করে কিচ্ছু বলতে পারছিলেন না। তারপরও বলেই ফেললেন,” মিলি মা, আজ এত তাড়াতাড়ি যে!!!ক্লাস হয় নি বুঝি?”মাহতাব সাহেবের আশংকা সত্যি প্রমাণ করে মিলি হুঙ্কার দিয়ে বলল, “ কেন? তাড়াতাড়ি আসাতে কোন সমস্যা হয়েছে? নাকি এই বাসায় তাড়াতাড়ি ফেরা যাবে না। যদি চাও এক্ষুনি আবার বের হয়ে যাই।“
“না, না... সেটা তো বলিনি। তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরায় আমরা তো অনেক খুশি হয়েছি। সবারই উচিত বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা – ফাড্ডা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরা। কি বল, মালিহা?”
মালিহা হচ্ছেন মিলির মা। উনার পুরো নাম মালিহা বেগম ।তিনি সাথে সাথে স্বামীর কথায় সম্মতি প্রকাশ করে বললেন,” একদম ঠিক কথা। এখন হাত-মুখ ধুয়ে সবাই খেতে আস। টেবিলে খাবার দিয়ে দিচ্ছি।“
এই কথা শুনে মিলি তার রুমে চলে যাচ্ছিল কিন্তু কি মনে করে যেন গেল না। মিলি বলল,” বাবা, তোমাকে একটা কথা বলি।আমাদের বিড়ালটা না মানুষ হয়ে গিয়েছে।“
মেয়ের কথা শুনে মাহতাব সাহেব এবং মালিহা বেগম দুজনেরই আক্কেলগুডুম হয়ে যাওয়ার দশা। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে মাহতাব সাহেব বললেন,” মিলি মা, রাতে মনে হয় তোর ভালো ঘুম হয় নি। এক কাজ কর হাত মুখ ধুয়ে খেতে আয়। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ভাল করে ঘুম দিস।“
“বাবা, এইগুলো কিন্তু ঠিক না!তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছ না কেন? “
“ এটা বিশ্বাস করার মত কোন কথা নারে মা!!”
“আচ্ছা।“
বলেই মিলি চিৎকার করে আলেকজেন্দার বো কে ডাক দিল। আলেকজেন্দার বো অদৃশ্য হয়ে আশে পাশেই ছিল। ডাক দেওয়া মাত্র সবার সামনে এসে হাজির।
“ জনাব এবং জনাবা, আমি আলেকজেন্দার বো। এত দিন আপনাদের বাসায় বিড়াল হয়ে ছিলাম। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। মিলি আছাড় না দিলে আরও কত কাল যে বিড়াল হয়ে থাকতে হত কে জানে!!!”
মিলি বলল, “ এখন বিশ্বাস হয়??”
মাহতাব সাহেবের কথা আর কি বলব। নিজের বাহান্ন বছরের জীবনে এমন দৃশ্য কোথাও দেখেছেন কিনা তা মনে করতে পারলেন না!! মালিহা বেগমের অবস্থা ও তদ্রুপ!!
মাহতাব সাহেব আমতা আমতা করে বললেন,” ও আচ্ছা। বিশ্বাস করবো না কেন? এই যে বিশ্বাস করলাম। তারপর বিড়াল রাজকুমার আপনি আজকে আমাদের সাথে ভাল-মন্দ কিছু খান। বুঝতেই পারছেন, গরীবী হালের খাবার-দাবার! আপনাকে তো আর আগের মতো মাছের কাঁটা, হাড্ডি- গুড্ডি দেয়া যায় না। কই মিলির মা? আজকে একটু পোলাও- কোরমা, মুরগী- মুসাল্লাম করো?”
এই কথা শুনে মালিহা বেগম রাগে জ্বলে উঠলেন।সেই সকাল থেকে এত কষ্ট করে দুপুরের জন্য রান্না করেছেন। এখন সেটাতে চলবে না। আবার রান্না বসাও। মালিহা বেগম গট গট করে কিচেনের দিকে হাঁটা ধরলেন।
মাহতাব সাহেব পরলেন আলেকজেন্দার বোকে নিয়ে।তাড়াতাড়ি করে আলেকজেন্দারকে নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে গেলেন। কৌতূহল আর উত্তেজনা যেন মাহতাব সাহেবের মুখ থেকে ঝরে ঝরে পরছিল। আলেকজেন্দার বো ও মাহতাব সাহেবকে নিরাশ করলেন না। ব্যাপক উৎসাহে তার বাবা-মা- রাজ্য- রাজত্ব – আর ডাইনী বুড়ীর গল্প করতে লাগল।
দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে মালিহা বেগম টেবিলে খাবার দিয়ে দিলেন। খাবারের চেহারা দেখে আলেকজেন্দার বোয়ের জিভে পানি চলে আসার জোগাড়। এত খাবার দেখে তার পুরনো খিদে মাথা চারা দিয়ে উঠল। তার বার বার ঝলসানো খাসির রানের কথা মনে পরছিল। লজ্জা লজ্জা মুখে বলেই ফেলল,” জনাবা, আপনি কি ঝলসানো খাসির রান রাঁধতে পারেন না? প্রাসাদে থাকতে আমার প্রতিদিনের খাবারের মেনুতে এটা ছিল। খেতে যা হত না!!”
এই কথা শুনে মালিহা বেগম নিজেকে আর চুপ করে রাখতে পারলেন না,” বাবা, যা দিয়েছি সেটাই সোনামুখ করে খেয়ে ফেলেন। এখন তো আর আপনাদের রাজত্ব চলছে না যে জিনিসপত্রের দাম কম হবে। এখন সব কিছুর আকাশচুম্বী দাম। চাইলেই এখন প্রতিদিন খাসির রান খেতে পারবেন না!!”
“ ক্ষমা করবেন, জনাবা। অবশ্য অন্যান্য খাবার খুবই চমকপ্রদ হয়েছে। আপনার তো অসাধারণ রান্নার হাত! স্বয়ং আমাদের প্রধান বাবুর্চি ও এত ভাল রাঁধতে পারতো না।মারহাবা,মারহাবা!!!”
এত প্রশংসা শুনে মালিহা বেগম অনেক খুশি হলেন। আলেকজেন্দারের উপর যে রাগ ছিল সেটা ও ধুয়ে মুছে পানি হয়ে গেল। আর মিলি আর মাহতাব সাহেবের কথা কি আর বলব!!! পারলে হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলে এই অবস্থা!!
কিন্তু এই আনন্দদায়ক পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। খাওয়া শেষে সবাই যখন গল্প করছিল তখনই ডাইনী বুড়ী এসে হাজির। আসলে হয়েছিল কি ডাইনী বুড়ী জাদুর আয়নায় ম্যাপ পাওয়া মাত্রই সেটা মুখস্ত করে নিমেষেই ঢাকা শহরে এসে হাজির হয়েছিল।কিন্তু ঢাকা শহরে এসে বুড়ীর দম বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড়। এত মানুষ , এত গাড়ি আর এত ধোঁয়া! ডাইনী বুড়ী তাড়াতাড়ি একটু খোলামেলা জায়গা খুঁজে বের করে আবার জাদুর আয়নাটা নিয়ে বসল।অতঃপর ,আয়না মিলিদের বাসায় যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল।কিন্তু মিলিদের বাসায় যাওয়ার ম্যাপটা অনেক জটিল এবং বিদঘুটে ছিল। হবেই না কেন ?কারন মিলিরা থাকে পুরান ঢাকায়।গলির পর গলি, এত অলি-গলি!!!! আয়না ম্যাপ দিয়ে দিলে কি হবে ডাইনী বুড়ীর সেটা মুখস্ত করতে খবর হয়ে গিয়েছিল। তারপর অনেক কষ্টে সেটা মুখস্ত করে মিলিদের বাসায় হাজির হল।
গল্প করার মাঝখানে হঠাৎ ডাইনী বুড়ীকে দেখে সবাই অনেক ভয় পেয়ে গেল।কিন্তু কেউ কথা বলল না। ডাইনী বুড়ী তার লম্বা লম্বা বিশাল সাইজের দাঁত বের করে হাসতে লাগল। এক ভয়ংকর গম গম পরিবেশের সৃষ্টি হল। এসব দেখে মালিহা বেগম দোয়া-দুরুদ পড়তে শুরু করলেন। মাহতাব সাহেব ভয়ে আমতা আমতা করে বললেন,” আপনি কে? আপনাকে কখনও দেখি নি। আমার নাম মাহতাব আহমেদ!! আপনার পরিচয় তো জানা হল না?”
ডাইনী বুড়ী হুঙ্কার দিয়ে বলল,” তুই আমার পরিচয় জানস না?কিন্তু তোর মেয়ে তো বড় সেয়ানা! সে আমার জাদু করা বিলাইকে মানুষ বানিয়ে ফেলে। এত্ত বড় সাহস!! এই সাহসের গুষ্টি কিলাইতে আসলাম।”
এই কথা শুনে সবাই আরও ভয় পেয়ে গেল। আর মিলির কথা কি বলব? ভয়ে একেবারে এতটুকু হয়ে গেল। মাহতাব সাহেব বললেন,” জনাবা, ভুল হয়ে গিয়েছে। বাচ্চা মানুষ তো তাই রাগ করে আছাড় দিয়েছিল!! কিন্তু বিড়াল থেকে মানুষ হয়ে যাবে এই কথা তো জানতো না। আপনি মাফ করে দিন। আপনি অনেক দয়াময়ী। আপনার চেহারা দেখলেও সেটা বোঝা যায়!!”
“ না না…………….এত সহজ না। এর উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। আর এই বাসা খুঁজে বের করতেও অনেক কষ্ট হয়েছে!! আমি সহজে ছাড়ব না।“ এই কথা বলতে না বলতেই একটা আগুনের গোলা এসে ডাইনীর মুখে লাগল। ডাইনী বুড়ী আঁ আঁ আঁ করে চিৎকার দিয়ে উঠল।
আগুনের গোলাটা মেরেছিল আলেকজেন্দার বো। আগেই বলেছিলাম যে আলেকজেন্দার বো ছোট- খাটো কিছু জাদু জানতো। কিন্তু আগুনের গোলায় বিশেষ কোন লাভ হল না। বরং ডাইনী বুড়ী আরও রেগে গেল।
“ পাজি, নচ্ছার, বেয়াদব, হারামজাদা!!! এতো বছর বিড়াল হয়ে থাকার পর ও তুই শোধরালি না!দাঁড়া, কি করি দেখতে থাক!!“
“ ডাইনী, তোর সাথে আমার শত্রুতা। তাই যা করার আমার সাথে কর। কিন্তু খবরদার মিলির সাথে কিছু করবি না! “
“ কেন? মিলি তোর কে হয় রে হারামজাদা?? আমি মিলিকেই শাস্তি দিতে এসেছি।তোকে না।ঐ নচ্ছার মেয়েটা আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিল না।“
“ না ডাইনী, এমন করিস না। আমি মিলিকে অনেক ভালোবাসি। তুই চাস তো আমাকে আবার বিড়াল বানিয়ে দে!!”
এই কথা শুনে ডাইনী আবার অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। সবাই অনেক কাকুতি মিনতি করতে লাগল। শুধু মিলিই কিছু করল না। ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইল।ডাইনী বুড়ী বলল, “ আচ্ছা, যা তোদের মিলিকে ছেড়েই দিলাম।“ এই বলে জাদুর লাঠিটা মিলির দিকে তাক করে অদৃশ্য হয়ে চলে গেল। আলেকজেন্দার বো,মাহতাব সাহেব, মালিহা বেগম কয়েক সেকেন্ড হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল। কিন্তু এই ভাবটা কাটল মিউ মিউ আওয়াজে। সবাই পেছনে তাকিয়ে দেখল যে মিলির জায়গায় একটা ধবধবে সাদা বিড়াল দাঁড়িয়ে আছে। বিড়ালটা অনেক কিউট আর অনেক সুন্দর!!!!!
পরিশিষ্টঃ আলেকজেন্দার বো এখন মিলিদের বাসায় থাকে। মাহতাব সাহেব এবং মালিহা বেগমের মিলি ছাড়া আর কোন ছেলে মেয়ে ছিল না তাই আলেকজেন্দার বোকে তারা নিজের ছেলের মতই দেখেন।ঐ ঘটনার দুই দিন পর মিনার মিলিকে সরি বলতে বাসায় এসেছিল। কিন্তু সব শুনে অনেক কষ্ট পেয়েছিল তাই যাওয়ার সময় অনেক বলে কয়ে মিলিকেও নিজের বাসায় নিয়ে যায়। কেউ কোন নিষেধ করে নি কারণ মিনার সত্যি সত্যি মিলিকে অনেক ভালবাসত।কিন্তু সেটা কখনও সে মিলির মতো করে প্রকাশ করে নি। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, আলেকজেন্দার বো এবং মিনারের মধ্যে এখন অনেক খাতির। প্রায়ই দেখা যায় যে বো আর মিনার রাতে মোবাইলে কথা বলছে..............।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




