somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটা শুধুই একটা গল্প। কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র!!!( পর্ব -২)

০১ লা আগস্ট, ২০১১ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link (১ম পর্ব)

আমি ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষায় টিকে যাই।

শুরুতেই বলে রাখি,আমি ভয়ংকর গুডি টাইপের মেয়ে ; সহজ ভাষায় বললে ভয়ংকর বোকাসোকা!!স্কুল-কলেজের বাইরে কখনও একা একা কোথাও যাই নাই, একা বাসে উঠি নাই, কোন বাস কোথায় যায়, কোন বাসের কাউন্টার কোথায় , এমনকি রাস্তাঘাট ও কিচ্ছু চিনি না। তাই আমি কিভাবে প্রতিদিন ক্লাস করতে যাব এই চিন্তায় আমার আব্বু-আম্মুর ঘুম হারাম হবার জোগাড় হয়েছিল। সেজন্য প্রথম দিন ভার্সিটি গেলাম ভাইয়ার সাথে। ওইদিন ক্লাস ছিল না। শুধু আইডি কার্ড করানো, ফি জমা দেয়া ইত্যাদি সব বিরক্তিকর কাজ ছিল। ভাইয়া আমাকে ডিপার্টমেন্টে রেখে ক্লাস করতে চলে যায়। আমি সেই রকম মন খারাপ করে এইসব বিরক্তিকর কাজ করতে লাগলাম। এক সময় কাজ শেষ হল এবং আমিও লাফিয়ে পড়ে ভাইয়াকে ফোন দিলাম যে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যথারীতি ভাইয়া আসল। তারপর যখন রিকশায় করে চলে যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ দেখি একটা রিকশা আসছে। কিন্তু রিকশায় যে বসে ছিল তাকে দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। অর্ক!!!অর্ক ও আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। একসময় অর্কের রিকশা আমাদের পাস করে চলে যায়।আমি সাথে সাথে ভাইয়াকে বললাম, “আরে, এই যে এইমাত্র যে ছেলেটা গেল সে আমাদের ব্যাচে ক্লাস করতো। ব্যাপক জ্ঞানী ছেলে। এই ছেলেও চান্স পেয়েছে।“
ভাইয়া শুধু বলল,” হুম।“

আমি তখনও জানতাম না যে সে কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে, পজিশন কত ইত্যাদি ইত্যাদি। আর আমিও এই নিয়ে কোন মাথা ঘামালাম না। ভর্তি প্রসিডিউর শেষ হয়ে যাওয়ার পর ক্লাস শুরু হয়ে গেল। কিন্তু কি অদ্ভুত কাণ্ড!! প্রথমদিন ক্লাসে গিয়ে দেখি যে অর্ক আমাদের ক্লাসে। আমি দেখে একটু খুশিই হলাম। কারণ আমার যে স্বভাব তাতে সম্পূর্ণ একটা অপরিচিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে অনেক সময় লাগে। পুরো ক্লাসে আমার পরিচিত কেউ নাই, কোন ফ্রেন্ড নাই, কলেজের একটা মেয়েও যদি চান্স পেত তাহলেও চলতো। তাই ব্যাচ থেকে পরিচিত একজনকে দেখে ভালই লাগল। কিন্তু আমি অতটুকু খুশি হওয়া পর্যন্তই থাকলাম। ওর সাথে কথা বলার কোন চেষ্টা করলাম না। ব্যাপক ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।

কিন্তু কি আশ্চর্য!! কথা আমাকেই বলতে হয়েছে। প্রথম দিনেই ক্লাসে গ্রুপিং করা নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হল। প্রেজেন্টেশনের জন্য দশ জনের গ্রুপ করা লাগবে। সাত-আট জন হলেও সমস্যা নেই। কিন্তু এই ব্যাপারে আমার তেমন কোন আগ্রহ ছিল না।তাই আমি ঠিক করেছিলাম যে কেউ যদি আমাকে গ্রুপে নিতে চায় তাহলে ওই গ্রুপে ঢুকে যাব। অবশ্য ততক্ষণে আমার দুইটা মেয়ের সাথে মোটামুটি খাতির হয়ে গিয়েছিল। তো তিন জন মিলেই ঠিক করেছিলাম যে কোন গ্রুপে ঢুকলে তিন জন এক সাথেই ঢুকব।কিন্তু কিসের কি!!! ক্লাসের মধ্যে এক ছেলে ছিল যে দিনের মধ্যে চৌদ্দবার এসে বলতে লাগল যে আমাদেরকে সে তার গ্রুপে নিতে চায়। এই রকম আরও কয়েকজন ছিল।এদের এত আগ্রহ দেখে আমি সেই রকম ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে গেলাম। যে ছেলে চৌদ্দবার খোঁজ নিতে আসতো সে একদিন আমাকে বলে,” তুমি কোন গ্রুপে জয়েন করবা ঠিক করেছ?”

আমি বললাম,” না। কিন্তু আরও তিনটা গ্রুপের আমন্ত্রণ পেয়েছি।“

“ও , তো কোন গ্রুপে যাবে ঠিক করেছ?”

“ এখনও না। যাচাই-বাছাই করে দেখি কোনটা ভালো হবে তারপর জানাবো।“

“ আমাদের গ্রুপ কি তোমার খারাপ মনে হয়?”

“ না। ব্যাপারটা সেরকম না। আমি তোমাকে পরে জানাবো।“

এই ছিল গ্রুপিং এর অবস্থা। আমার ফ্রেন্ডরাও মোটামুটি দিশেহারা। তো কথায় কথায় তানহা বলল যে ক্লাসে পরিচিত কেউ থাকলে অনেক ভালো হত। গ্রুপিং নিয়ে এত্ত সব ঝামেলা হত না। আমি এই কথা শুনে বললাম যে,” ক্লাসে পরিচিত একজন আছে।“
তানহা অনেক অবাক হয়ে বলল,” তাই নাকি!! এই কথা তো আগে বলিস নাই। কে সে?”
আমি অর্কের কথা বললাম। তখন তানহা বলল,” তাহলে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? গিয়ে কথা বল। বল যে আমাদেরকে গ্রুপে নিবে কিনা।“
“ কিন্তু মনে হচ্ছে ওদের গ্রুপ হয়ে গেছে। কথা বলে কোন লাভ নাই।“
“ না ও তো হতে পারে। যা কথা বলে আয়।“
“ আমি পারব না। তুই যা।“
“ পাগল নাকি। তোর পরিচিত আর কথা বলব আমি!! যা তুই যা!”
“ আরে খালি মুখ চিনি। কিন্তু কখনও কথা বলি নাই।“
“ কিন্তু এখন তো কথা বলতেই হবে।“

সবার পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত আমি গেলাম অর্কের সাথে কথা বলতে। ও বসে ছিল। আমি যখন ওর সামনে গেলাম ও অনেক অবাক হয়েছিল।তারপর আমার সব কথা শুনে বলল যে ওদের বার-তের জনের গ্রুপ হয়ে গেছে। যদি আমাদেরকেও নেয় তাহলে সংখ্যাটা আরও বেড়ে যাবে। তো এটাকে ভাঙতে হবে এবং ডিসিশন আমাকে পরে জানাবে। আমি তেমন কোন ভরসা পেলাম না। কিন্তু পরের দিন যখন ক্লাস করতে গেলাম তখন ও এসে আমাকে জানালো যে ওদের তের জনের গ্রুপ ভেঙ্গে দুই টুকরা হয়ে গেছে এবং আমরা জয়েন করতে পারব। আমি ছোট্ট একটা থ্যাংকস বলে চলে এলাম।


যাইহোক, নতুন নতুন ভার্সিটির হাওয়া লাগাতে সবার মধ্যে পড়াশুনা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ক্লাস শেষ হলেই সবাই গ্রুপ নিয়ে পড়াশুনা করতে চলে যেত স্টাডিরুমে। আমরাও এর ব্যাতিক্রম ছিলাম না। দুই-একদিনের মধ্যে অর্কের সাথে আমার ভালো খাতির হয়ে যায়। কথায় কথায় আমি একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,” তোমার বাসা কোথায়?”
ও বলল,” মিরপুর।“
“কিভাবে যাও?”
“ লোকাল বাসে।“
“ তুমি?”
আমি তখন ব্যাপক ভাব নিয়ে বললাম,” ভলভো তে যাই।“
ও অনেক অবাক হয়ে বলল,” সাত টাকা দিয়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট যাও!!!!যেখানে অন্য বাসে গেলে মাত্র দুই টাকা লাগে!! অন্য বাসে যাও না কেন? ”

“ আমি ভলভো ছাড়া অন্য বাসে চড়ি না। আমার ভলভো অনেক পছন্দ।“
ও হাসতে হাসতে বলল,“ তাই নাকি!!ভালো।“
“ মিরপুর কি তুমি ফার্মগেট হয়ে যাও?”
“হুম। কেন?”
“ ভালো তো। তাহলে তো আমরা এক সাথেই যেতে পারি। তুমি মিরপুর চলে যাবে। আর আমি ফার্মগেট নেমে যাব।“

“ তাহলে তোমাকে লোকাল বাসেই যেতে হবে এবং ভলভো ছাড়তে হবে।ভলভো যে পরিমাণ স্লো তাতে তোমার ১০ মিনিটের জায়গায় ২০ মিনিট লাগে। কিন্তু আমার ১ ঘণ্টার জায়গায় ১.৫ ঘণ্টা লাগবে।“

“ না। গেলে ভলভোতেই যেতে হবে।কারন সত্যি সত্যি আমি ভলভো ছাড়া আমি অন্য বাসে চড়ি না।“
“ ওকে। রাজী!!”

তারপর সেদিনই ক্লাস শেষে আমি আর অর্ক ভলভোতে চড়ে বসলাম। এরপর থেকে প্রতিদিন আমরা একসাথে বাসে করে যেতে লাগলাম।

Click This Link ( ৩য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:২৮
২০টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×