somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এটা শুধুই একটা গল্প, কারো জীবনের সাথে মিলে গেলে তা অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র ( ৩য় পর্ব)

১৬ ই আগস্ট, ২০১১ রাত ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Click This Link (অর্ক ১ম পর্ব)
Click This Link ( আনুশকা ১ম পর্ব)
Click This Link ( অর্ক ২য় পর্ব)
Click This Link ( আনুশকা ২য় পর্ব)



এভাবে দেখতে দেখতে চার বছর কেটে গেল।

আমরাও BBA ৪র্থ ইয়ারে উঠে গেলাম।আমরা মানে আমি আর অর্ক।ফ্যাকাল্টির সর্বত্র আমাদের এক সাথে দেখা যেত। এমনকি শুরুতে আমাদের ক্লাসের ছেলেমেয়েরা আমাদের কাপল ভাবতো। কিন্তু আস্তে আস্তে তাদের ভুল ভাঙ্গে। আচ্ছা, আমরা খুব ভাল কাপল হতে পারতাম!!তাই না?? কিন্তু এমনটি হয় নি। তাতে কি আমরা খুব ভাল ফ্রেন্ড হয়েছি। কিন্তু আমার সব কথা, না বলা সব কথা আমি ওকে শেয়ার করতে করতে কখন যে ওকে আস্তে আস্তে পছন্দ করে ফেলেছিলাম জানি না।আমি ভেবেছিলাম ও এই ব্যাপারটা ধরতে পারবে।কিন্তু অর্ক কখনই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি। অথচ ওর সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড আমি ছিলাম ,হিসেব মতো ওরই আমাকে সবচেয়ে ভাল বোঝার কথা ছিল।আমার যদি কোন তুচ্ছ কারণে মন খারাপ হত আমি সাথে সাথে ওকে ফোন দিতাম মন ভাল করার জন্য। কিন্তু অর্ক অনেক পাজি। ও মনে হয় ইচ্ছা করেই আমাকে পাত্তা দিত না।খালি সারাক্ষণ ফাজলামি করতো। তখন মনে হত এই ছেলের প্রবলেম কি? সাধারন একটা বিষয় বুঝতে পারে না!!!


কি জানি!! সারাজীবন সবার কাছে পাত্তা পেয়ে অভ্যস্ত তো তাই অর্কের পাত্তা না পেয়ে পেয়ে আমি আরও দূর্বল হতে লাগলাম। ওর সবলতার কাছে আমার দূর্বলতা পাত্তা পেল না। তাই আমিও মুখ ফুটে কিছু বলি নি।আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এই রকম। ভাল লাগার কথা, ভালবাসার কথা মুখ ফুটে একটা ছেলেকেই বলতে হয়। একজন মেয়ে হাজার চাইলেও চোখ বুজে থাকে। আর আমি তো সমাজেরই এক লক্ষ্মী মেয়ে!!!


যা বলছিলাম লাস্ট ইয়ারে চলে আসলাম। সাথে সাথে বাসায়ও বিয়ের বাজারে আমাকে নামাতে পায়তারা শুরু করে দিল। মামা, চাচা, খালু কারো ও কোন বিরাম নাই। একটার পর একটা প্রস্তাব নিয়েই আসছে।দেখে মনে হল উনাদের মামা, খালু হওয়ার সার্থকতা মনে হয় আমাকে একটা ভাল ঘরে বিয়ে দেয়ার মধ্যে। প্রথম দিকে বেশ মজাই লাগতো। অদ্ভুত অদ্ভুত সব প্রস্তাব আসতো। আমি এগুলো আমার ফ্রেন্ডদের বলতাম। ওরা অনেক হাসাহাসি করতো। সবচেয়ে বেশী হাসত অর্ক। রাগে আমার গা জ্বলে যেত। শুধু তাই নয় ,ও আমার বিয়ে নিয়ে অনেক অদ্ভুত সব প্ল্যান করতো। আমার বিয়েতে এই করবে, সেই করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।যত সব ফাজলামোর প্ল্যান!!! অথচ আমি চাইতাম ও আমাকে কিছু একটা বলুক...............!


কিন্তু একদিন ছোট খালু একটা প্রস্তাব নিয়ে এলেন। ছেলে আর্মির ক্যাপ্টেন। আমাদের বাসার সবাই প্রায় লুফে নিল সেটা কারণ আমার বাবার দিকের ফ্যামিলি এবং মায়ের দিকের ফ্যামিলির মধ্যে আর্মির কেউ নেই। আমাকে মানানোর জন্য আমার অতি প্রিয় খালারা এবং আমার মা কানের সামনে ঘ্যানঘ্যান শুরু করে দিল। আমি অনেক বিরক্ত হতে লাগলাম।অথচ আমি চিৎকার করে বলতে পারলাম না যে “আমি একজনকে অনেক পছন্দ করি। প্লিজ তোমরা এগুলো বন্ধ করো।“ কিভাবে বলি? কি আশায় বলি? অর্ক তো আমাকে বুঝতেই পারে না।মনের দুঃখে বারান্দায় পায়চারি করতে লাগলাম।ওই প্রথমবারের মতো আমি আমার মন খারাপের কথা ফোন করে অর্ককে বলতে পারলাম না। বলে কি লাভ!! সে তো স্বভাবসলুভ ভাবে হাসতেই থাকবে। আর আমি কাঁদতেই থাকবো।আমি ওর হাসি শুনতে থাকবো।অথচ আমার নীরব কান্না ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাবে না। হৃদয় তো অনেক দূরের ব্যাপার!


আমার বাসার লোকজনের সমস্যা হচ্ছে সব কিছু নিয়ে বেশী মাতামাতি করা। আর্মি পাত্র পেয়ে রীতিমত সবাই ধেই ধেই করে নাচতে লাগল।আত্মীয়- অনাত্মীয় সবাইকে ফোন করে জানানো হল এই সুসংবাদের কথা! আর আমি নীরব হয়ে রইলাম। কি করব কিছু বুঝতে পারছিলাম না। অথচ বাসার সবাই আমার এই নীরবতাকেই সরব সম্মতি হিসেবে মেনে নিল। Engagement এর দিন ফিক্সড করে ফেলল সবাই।


আমি ঠিক করলাম যে Engagement এর ব্যাপারটা আমি অর্ককে জানাবো। এটা ঠিক ও আমাকে ওইভাবে পছন্দ করে না কিন্তু ওই তো আমার সবচাইতে ভাল ফ্রেন্ড।তাছাড়া আমার বিয়েতে হইচই করার ইচ্ছা ওর অনেকদিনের। কিভাবে ওর এই ইচ্ছা ভঙ্গ করি আমি!!! তো যেদিন Engagement তার আগের দিন আমি ভার্সিটি গিয়ে অর্ককে বিষয়টা জানিয়ে দিলাম।এইরকম একটা ঘটনা শুনার পর এই প্রথমবারের মতো আমি ওকে হাসতে দেখলাম না!! আমি অনেক অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু ওটা ছিল খুবই অল্পের জন্য।ওই অল্প সময়টুকু পার হওয়া মাত্র ও হাসতে হাসতে আমার বিয়ে নিয়ে ফাজলামো করতে লাগল।আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।


ভার্সিটিতে বেশীক্ষণ থাকতে ইচ্ছা করে নি। বাসায় চলে এলাম। দুপুর থেকে রাত হয়ে গেল। এতটা সময় কিভাবে কাটল কে জানে।রাত বারোটার দিকে ফোন বেজে উঠল।স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি অর্ক। চোখ-মুখ মুছে বেশ স্বাভাবিক গলায় ওর সাথে কথা বলা শুরু করলাম।কথা শুনে মনে হচ্ছিল ওর বেশ মন খারাপ। আমি জিজ্ঞেস করতেই এড়িয়ে গেল ব্যাপারটা। দুই-তিন মিনিট কেউ কোন কথা বলি নি। হঠাৎ ও আমাকে বলল,
“ আমি তোকে বিয়ে করব।”

আমি জীবনে এত অবাক কখনও হই নি।আনন্দে আমার দুই চোখ বেয়ে পানি এসে গেল।অনেক কষ্টে বললাম,

“ এর মানে কি?”

“ মানে হচ্ছে তোকে বিয়ে করব। রাজী কিনা বল?”

পুনরায় বিয়ের প্রপোজাল শুনে আমার তো বিশ্বাস হয় না। অত্যধিক আনন্দে আমি চুপ মেরে গেলাম। এটা আমার প্রবলেম। বেশী আনন্দে অথবা বেশী দুঃখে চুপ মেরে যাই।

“দেখ তোকে ছাড়া থাকতে হবে এটা আমি কখনো ভাবি নাই। এখন তোর সাথে আরেকজনের বিয়ে হয়ে যাবে, তুই রাতে আরেকটা ছেলের সাথে শুয়ে থাকবি ভেবে অনেক খারাপ লাগতেসে। অনেক। তার চেয়ে তুই আমাকে বিয়ে কর, আমি তোকে ঐ আর্মির বাচ্চার চেয়ে অনেক ভাল রাখব।“

আয়-হায়, একি কথা শুনি!!! অনেক কষ্টে হাসি আটকালাম। কিন্তু অন্য কেউ বললে মাথা ভেঙ্গে দিতাম।যাইহোক ,এতদিনে বাছাধন লাইনে এসেছে। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। একটু উনাকে ঘুরানো যাক!! তাই বললাম,

“বিয়ে করে তুই আমাকে খাওয়াবি কি ? তোর রেজাল্ট তো আমার চেয়েও খারাপ।?পথে পথে ঘুরবি। “

“আমি খাওয়াব কেন, আমার বাপ খাওয়াবে। আমরা যদি দুবেলা দুমুঠো খেতে পারি, তুইও পারবি ।আর আমার মায়ের এমনিতেও একটা মেয়ের অনেক শখ। তুই আমার মায়ের মেয়ে হিসাবে থাকবি, শুধু আমরা রাতে একসাথে ঘুমাব এই আরকি !”

এই কথা শুনে আর হাসি আটকাতে পারলাম না। হাসতে হাসতে পারলে বিছানা থেকে পড়ে যাই।পুরা বাংলা সিনেমার ডায়ালগ।কোত্থেকে যে এইগুলা পায় আল্লায় জানে!!! হাসাতে হাসতে মাথা খারাপ করে দেয়।এজন্যই তো এত ভাল লাগে!

“বিয়ে করবি?তাহলে সারাজীবন এভাবে হাসাব। তোর আর্মির বাচ্চা তো সারাজীবন বাইরে বাইরে থাকবে। বাজে বাজে আর্মি জোকস বলে হাসানোর চেষ্টা করবে। করবি বিয়ে ?”

শুনে মনে মনে বললাম, তুই না হাসালেও আমি সারাজীবন হাসতে থাকবো। তুই শুধু সাথে থাকলেই হবে।কিন্তু এটা না বলে শুধু বললাম,”করব বাবা করব।“

“গুড। তাহলে এক কাজ কর, কালকে এনগেজমেন্ট কখন ?”

কি আজিব!! রাজী হয়ে যাওয়াতে এখন তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে দিচ্ছে। বদ ছেলে!! কিন্তু মুখে হাসি হাসি ভাব ফুটিয়ে বললাম,”রাতে।“

“তাহলে তুই কালকে সক্কালবেলা চলে আসবি। বাসা থেকে আসতে না দিলে বলবি, একটা শীট ফটোকপি করতে হবে, পরশু মিড আসে।“

শুনে তাজ্জব হয়ে গেলাম।“আমি আসলে কি হবে ?”
“আসলে দেখবি”। বলে খট করে ফোন কেটে দিল।

এই হল উনার মূল সমস্যা। কিছু জিজ্ঞেস করলে সাথে সাথে কখনই বলবে না। সব কিছুতে খালি রহস্য। মাথা!!


পরদিন এতকিছু ঘটবে কখনও ভাবি নি। আমরা বিয়ে করে ফেললাম!! যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন শুধু মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিলঃ

আমি এখন বিবাহিত!! কিন্তু এটা এখন বাসায় কিভাবে জানাই!

চলবে............

Click This Link ( শেষ পর্ব)


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৫:২৪
২২টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×