somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন রাজপুত্তের গল্প

০১ লা মে, ২০১৫ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাজপুত্ত তখন খুব ছোট ছিল,যখন তার মা মারা যায় । আর কি করার মা মরলে বাপ হয়ে যায় তালই । রাজপুত্তের বাপ রাজা মশাই সে আর এর ব্যতিক্রম থাকলেন না সেও রাজপুত্তের তালই হয়ে গেলেন । মা মারা যাওয়ার এক বছরের ভেতরে সন্তানের দেখপালের জন্য রাজা দৃত্বীয় বিবাহ করল । কিন্তু নিয়তি সেখানেও রাজপুত্তের ঠাই হলো না ।

ঘরে সৎ মা প্রথম এক দুই বছর তার সাথে ব্যবহার ভালো করলেও তার গর্ভে সন্তান আসার সাথে সাথে রাজপুত্তের ভালবাসাও কমতে থাকে, যখন সৎ মায়ের কোলে সন্তান এলো তখন থেকে রাজপুত্তের কষ্টের আর শেষ রইলো না,কখন বাবার মুখে বকনি চর থাপর কখন সৎ মায়ের হাতে মার ।

তিন বেলার বদলে দুই বেলাও ঠিক মত খাওয়া জোটে না । তখন মাত্র রাজপুত্তের বয়স তিন পার হয়েছে ।
তার এক চাচা ছিল সে কেবল পাঠশালায় পাঁচ নম্বর ক্লাসে উঠেছেন । সে চাচা রাজপুত্তকে তার কাছে নিয়ে গেল । চাচা লেখাপড়া করতো তার লেখা পড়ার খরচ থেকে ভাইয়ের ছেলে ভাতিজার জন্য কিছু টাকা কড়ি দিতেন ।
২।
রাজ পুত্তকে পাঠশালায় দিয়ে দিলেন । সেখানে কিছু দিন পাঠ্য শিক্ষা নেওয়ার পরে ঢাকা নামের রাজ্যে রাজপুত্তের আরেক চচা থাকতেন উনি সেখানে রাজমিস্ত্রির কর্ম করতেন । রাজপুত্তের সেই চাচা এখন রাজপুত্তের দেখপালের দায়ত্ব কাদে তুলে নিলেন ।
সেখানে চাচার কাছে থেকে রাজপুত্ত লেখাপড়ায় পাঁচ ঘর পযন্ত যেতে পেরেছেন । সে চাচার কর্ম কমে যাওয়ার কারনে রাজপুত্তের আর পাঠশালায় যাওয়া হলো না ।

তখন থেকে রাজপুত্তের কর্মে যাওয়া শুরু হলো আয় রোজকারের জন্য ।শুরু করলেন রাজপুত্তও চাচার সাথে সাথে রাজ মিস্ত্রি কর্ম ।

দেখতে রাজপুত্ত বেশ বড় হয়ে গেল । এখন আর রাজ পুত্তের কষ্ট নাই । তার বড় হওয়ার সাথে সাথে তার কর্মের গতিও বেড়ে গেল । রাজপুত্ত এখন মেলা টাকা কড়ি কামানো শিখছে ।

এখন রাজপুত্ত তার দাদিকে দেখপাল করে । তখন রাজপুত্তের বাপ আর তার দুই জেঠা ছাড়া আর দুই চাচা বিবাহ করেন নাই । তাই রাজপুত্ত আর তার দাদি ও তার দুই চাচা এই মিলে তাদের চারজনের একটি সংসার হলো ।

ভালই দিন কাটছিল তাদের চারজনের সংসার । রাজপুত্ত আর এক চাচা দুইজনে মিলে যে আয়রোজকার করে তা দিয়ে তার ছোট চাচার লেখাপড়া এবং তাদের সংসার খুব আরাম আয়েছে চলতেছিল । দেখতে দেখতে রাজপুত্তের ছোট চাচা সেও পাঠশালর দশ ঘরে উঠলেন । এখন আর তাদের দুখ কষ্ট রইলো না ।
৩।
রাজপুত্ত একদিন তার বাপের চাচাতো ভাইয়ের বাসায় যান বেরাতে, সেখানে রাজপুত্তের মেল্লা আয়রোজকারের কথা শুনে তার বাপের যে চাচাতো ভাই ছিল আর চাচি ছিল, আর ছিল তাদের দুই ছেলে ও তার ছিল এক কন্যা । তারা সকলে রাজপুত্তের রুজিরোজকারের কথা শুনে চিন্তা করলেন এ সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না । যেমনেই হোক রাজপুত্তকে ফাছিয়ে রাজপুত্তের কাছে তাদের কন্যাকে বিয়ে দিতে হবে ।

তাই তারা সবাই মিলে যুক্তি করে তাদের কন্যা মারিয়াকে আর রাজপুত্তকে জোর করে একঘরে আটক করে রেখে রাজপুত্তকে ফাছিয়ে রাজপুত্তের বাপ চাচাগো খবর দিয়ে নিয়ে রাজপুত্তের নামে হাছা মিছা কিছু বলে তাদের কন্যার সাথে রাজপুত্তের জোড় করে বিয়ে দিলেন । আর কি করার রাজপুত্ত বেছাড়া ফেছে গিয়ে বিয়ে করতে রাজী হলেন এবং বিয়ে করলেন ।

বিয়ে করার দুই বছর পর রাজপুত্তের ঘরে এলো ফুটফুটে সুন্দর এক রাজ কন্যা । ঠিক যেদিন রাজকণ্যার জম্ম হলো সেদিনি রাজপুত্তের কাছে আর একটি বড় কাজের সংবাদ এলো, যে কাজটি সম্পর্ন্য করলে তখনকার বাজারে প্রায় লক্ষখাণিক টাকা আয় হবে । শুরু হলো রাজপুত্তের নতুন কর্ম ।

শুরু করলেন নতুন কর্ম । দেখতে দেখতে রাজ পুত্ত কর্মটি শেষ করলেন এর মধ্যে একটি বছর পার হয়ে গেল । শুরু হলো রাজপুত্তের সত্যকারের রাজপুত্ত হওয়ার পালা । দেখতে দেখতে রাজপুত্ত আর দুটি ছেলে সন্তানের বাবা হলেন । এখন তার দুই ছেলে এক মেয়ে । তিন সন্তান আর রাজ বেগমকে নিয়ে ভালই দিন কাটছে ।

এবার রাজপুত্ত আর কয়েকটি কর্ম এক সাথে পেয়ে গেলেন ।এবং সেগুলো শেষ করে তা থেকে যে মুনাফা আয় করলেন তা দিয়ে ঢাকা রাজ্যে বাড়ি ক্রয় করলেন । সে বাড়িটির নাম দিলেন চৌদুরী বাড়ি ।
৪।
ইদানিং রাজপুত্তের ঢাকা রাজ্যের গুলশান বনানী মতিজিল ধানমন্ডি নামক গ্রামগুলোতে অনেক কাজ পেয়েছেন তাই সে তার শালা হুমন্ডি যা ছিল হকলরে সঙ্গে নিয়া নিল । হালা হুমন্ডিরাও তার রোজকারের সঙ্গে সঙ্গে হেরাও ভালো টাকা কড়ি গুছিয়ে নিল ।

ঐযে চাচা ছিল চাচি ছিল যারা তাকে কুলে পিঠে করে মানুষ করেছে তাদের কাছে যাওয়া আসাটা রাজপুত্তের রাজ বেগম পষন্দ করতো না । কেননা তারা তখন গরীব হয়ে গেছে আর রাজপুত্ত কোটি কোটি টাকার মালিক তাই তাদের সাথে রাজপুত্তের কোন সম্পর্ক থাকুক তা কখনই রাজপুত্তের শ্ত্রী রাজবেগম চাইতো না ।

শুধু তাই না রাজপুত্তের কোন আত্মীয়স্বজন দেখলে বা তাদের বাড়ি গেলে তার শ্ত্রী তার সাথে ঝগড়া করতো । তার শ্ত্রীর টান ছিল শুধু তার মা বাপ ভাই বোনগো লেইগা । আর শশুর এবং শশুরের আত্মীস্বজন দেখলে মনে করতো মনে হয় তার সামনে কোন শত্রু দাড়িয়ে আছে ।

যাই হোক দেখতে দেখতে রাজপুত্তের ঘরে রাজপুত্তের বড় মেয়েটি বেশ বড়ই হইছে । এখন রাজপুত্তের কন্যার বিয়ের ঘর আসতে শুরু হলো ।

দেখতে দেখতে মেলাঘর আইলো এর মধ্যে তারা বাছাই করে একজন পাত্র ঠিক করলেন যার হাতে রাজপুত্তের আদরের ধন কন্যাকে তুলে দিবেন ।

পাত্রপক্ষের সাথে কথা বলে দিন তারিখ ঠিক করলেন । শুভ দিন দেখে কন্যার শুভ কাজটি শেষ করলেন । রাজপুত্তের ভাঙ্গনের পালা শুরু হলো । কন্যাকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে বিবাহ দিলেন ।
৫। শেষ
কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার পর কন্যা বেশ কয়েক বছর ভালই সংসার করেছেন । দেখতে দেখতে কন্যার ঘরেও এক ছেলে হলো । কন্যা একদিন হঠাৎ করে তার স্বামীর সাথে কি নিয়ে যেন ঝগড়া করে বাবার বাড়ি চলে আসলেন ।

বেশ কয়েক দিন কন্যা বাপের বাড়ি থাকার পর একদিন রাজপুত্ত তার কন্যার স্বামী অর্থাৎ মেয়ের জামাইকে খবর দিয়ে এনে মেয়ে এবং জামাইকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে দুজনকে জামাইয়ের সাথে মেয়েকে তার স্বামীর বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন ।

এক বছরের মত ভালই সংসার করতে ছিল মেয়ে হঠাৎ যেন মেয়ের মাথায় কোন অজানা এক ভূত চাপলো সে স্বামী সন্তান রেখে ওখান থেকে চলে গেল অন্য একটি ছেলের সাথে । এই দুঃখে রাজপুত্ত মনে অনেক বড় আঘাত পেলেন কাউকে বুঝতে দিলেন না ।

এক দিকে কন্যার এই কর্ম অন্য দিকে তার যত কর্ম স্থান ছিল সব কমে যাচ্ছে এবং তার এ দূর দিনে যে তার পাশে থেকে তার শ্ত্রী তাকে সহযোগিতা করবে তাও করছে না বরং তার শ্ত্রী তাকে উল্টাপাল্টা পেশার দিতে শুরু করলেন । সব চিন্তা তার মনটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিল ।

যখন রাজপুত্তের সুখের দিন তখন এরকম কিছু পেশারের কারনে মানুষটা এক এক করে কয়েকবার শাররীক অসুস্থ হয়ে পড়লেন ।
এভাবে চলতে তার জীবনে প্রায় ৭ থেকে ৮টি বছর ।
এই সব নানান টেনশন জমাট বাঁধে তার বুকে ও মাথার ভেতর ।
আর বুকে জমাট থাকা ব্যথা দুঃখ কষ্টগুলো একদিন সকালে তাকে
অচেতন করে দেয় । তাকে এ জগৎতের চিন্তা ভাবনা থেকে মুক্তি দিয়ে চিরদিনের জন্য এ জগৎতের সকল কর্ম থেকে তাকে ছুটি দিয়ে দেয় ।



২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×